বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২২
ফিফথ সার্কিট কোর্ট ‘ডাকা’ কর্মসূচিতে অন্তর্ভূক্ত ৬ লাখের অধিক তরুণ ইমিগ্রান্টকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডিপোর্ট করার প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার জন্য বাইডেন প্রশাসন যে ঘোষণা দিয়েছিল সেটি পর্যালোচনার জন্য টেক্সাসের এক নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দিয়েছে। সার্কিট কোর্টের এ আদেশে ‘ডাকা’ (ডেফারড অ্যাকশন অন চাইল্ডহুড অ্যারাইভেল) কর্মসূচিতে অন্তর্ভূক্তদের যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমোদন লাভের বিষয়টি আবারও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। নতুন বিধি আগামী ৩১ অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। উল্লেখ্য, এই কর্মসূচির আওতায় এমন ইমিগ্রান্টরা পড়েছে, যাদেরকে তাদের শৈশবে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে এনেছিল তাদের অবিভাবকরা। আদালতের এ আদেশের বিরুদ্ধে ‘ডাকা’র আওতাধীন তরুণ ও ইমিগ্রেশন প্রবক্তারা প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে।
নিউ অরলিন্সের ফিফথ সার্কিট কোর্ট অফ আপিলস গত ৫ অক্টোবর টেক্সাসের একজন ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট জজকে দেয়া এক আদেশে বলেছে যে, গত আগস্ট মাসে বাইডেন প্রশাসন ‘ডাকা’ সংক্রান্ত যে ঘোষণা দিয়েছে তার প্রেক্ষিতে এই কর্মসূচিকে আরও চুলচেরা বিশ্লেষণের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে এবং ডিষ্ট্রিক্ট কোর্ট সে দায়িত্ব পালন করবে। এ সম্পর্কে ইমিগ্রেশন বিষয়ক আইনজীবী ও এডভোকেসি সংগঠন ইমিগ্রান্ট লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টারের ভেরোনিকা গর্সিয়া বলেছেন, ফিফথ কোর্টের আদেশ ‘ডাকা’র আওতাধীন ইমিগ্রান্টদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করলেও এতে বিদ্যমান অবস্থা বজায় রাখার কথাও বলা হয়েছে এবং শঙ্কিত হওয়ার যৌক্তিক কারণ নেই।
টেক্সাস ভিত্তিক ইউএস ডিষ্ট্রিক্ট জজ অ্যান্ড্রু হ্যানেন গত বছর ‘ডাকা’ কর্মসূচিকে অবৈধ ঘোষণা করে বলেছিলেন যে এই কর্মসূচি নিয়ে বলেছিলেন যে এ কর্মসূচি সংক্রান্ত কোনো জনমত গ্রহণের কোনো আবশ্যকীয়তা নেই, যা অন্যান্য নীতি নির্ধারণী ফেডারেল অ্যাডমিনিষ্ট্রেশন প্রসিডিংস অ্যাক্টের আওতায় প্রয়োজন পড়ে। ডাকা’র অনেকে যেসব সুবিধা ভোগ করে আসছিল, অ্যান্ড্রু হ্যানেন এর আদেশে সাময়িকভাবে হলেও তা স্থগিত হয়ে যায় এবং এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তের ওপর আপিল আবেদনের প্রেক্ষিতে ফিফথ সার্কিট কোর্ট এ আদেশ দেয়। সার্কিট কোর্ট আপিলের সিদ্ধান্তে জজ অ্যান্ড্রু হ্যানেন এর আদেশের প্রাথমিক বিশ্লেষণকে বহাল রেখে পুনরায় তার কাছে পাঠিয়েছে ডাকা’ সম্পর্কে গত আগস্ট মাসের শেষ দিকে বাইডেন প্রশাসনের ইস্যুকৃত ঘোষণার অধিকতর বিশ্লেষণের জন্য।
ফিফথ সার্কিট কোর্টের প্রধান প্রিসিলা রিচম্যান, যিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের মনোনীত, তিনি বলেছেন, বিধি তৈরি প্রক্রিয়ার মধ্যে প্রশাসনিক দিকগুলোর অধিকতর যাচাই বাছাই ও মূল্যায়নের জন্য একটি ডিষ্ট্রিক্ট কোর্টই উপযুক্ত স্থান। কোর্টের অপর দুই সদস্য বিচারপতি কূর্ট এঞ্জেলহার্ডট ও জেমস হো – উভয়েই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক মনোনীত। ফিফথ আপিল কোর্টের রায়ের বিস্তার ৪৫৩ পৃষ্ঠা, যা ২০১২ সালে প্রেসিডেন্ট ওবামার সৃষ্ট ‘ডাকা’ কর্মসূচির আইনগত সুক্ষ্ম বিষয়গুলোর প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে এবং মূল বিষয়ে তেমন কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। গত জুলাই মাসে ফিফথ কোর্টে ‘ডাকা’ নিয়ে যে শুনানি হয়েছিল তখন জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট এ কর্মসূচির পক্ষে বক্তব্য দিয়ে কর্মসূচির অন্তর্ভূক্ত তরুণদের বৈধতা দেওয়ার যুক্তি প্রদর্শন করে। বিভিন্ন ইমিগ্রান্ট এডভোকেসি গ্রুপ, আমাজন, অ্যাপল, গুগল ও মাইক্রোসফটের মতো প্রতিষ্ঠানসহ কয়েক ডজন শক্তিশালী কর্পোরেশনের একটি কোয়ালিশন ‘ডাকা’র পক্ষে যুক্তি দেয় যে, ডাকা’র সুবিধাভোগীরা সবাই উদ্যোগী তরুণ হিসেবে বেড়ে ওঠেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির চালিকা শক্তিতে পরিণত হয়েছে। এমনকি তাদের মধ্যে অসংখ্য তরুণ কর্মসংস্থানেও অবদান রাখছে।
আপিল কোর্টের রুলিং এর প্রেক্ষিতে আইনজীবী ও পর্যালোচনাকারীরা মনে করছেন যে ডাকা’র বিষয়টি আবারও সুপ্রীম কোর্টে যাবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য। ২০১৭ সালে সুপ্রীম কোর্টের চার জন বিচারপতি ডাকা’র পক্ষে এবং চার জন ডাকা’র বিরুদ্ধে তাদের নিজ নিজ মতামত ব্যক্ত করলে আদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। ২০২০ সালে সর্বোচ্চ আদালত ৫-৪ সিদ্ধান্তে বলে যে ট্রাম্প প্রশাসন অযৌক্তিকভাবে ‘ডাকা’ কর্মসূচির অবসান ঘোষণা করেছে কোনো ফেডারেল প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই। বাইডেন প্রশাসন ‘ডাকা’ কর্মসূচির সুবিধাদি বহাল রাখার কৌশল গ্রহণ করেন এবং আদেশ জারি করা হয় যে, এই কর্মসূচিতে যারা সুবিধা লাভের উপযুক্ত, তাদেরকে প্রমাণ দেখাতে হবে যে তারা ২০০৭ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্রে ছিল। উল্লেখ্য, ‘ডাকা’র আওতায় ৬১১,২৭০ জন তরুণ রয়েছে, যার মধ্যে ৪৯৪,৩৫০ জনই মেক্সিকোর এবং অবশিষ্ট বেশির ভাগই গুয়েতেমালা, হন্ডুরাস, পেরু ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আগত।
Posted ৩:০৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh