বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০৪ নভেম্বর ২০২১
অনশনরত ট্যাক্সি চালকদের দাবি মেনে নিলো নিউইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষ। ফলে ঋণের ভারে জর্জরিত হাজার হাজার ক্যাবীরা ঋণমুক্ত হতে পারবেন। গত বুধবার সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাজিও ইউএস সিনেটের মেজরিটি লিডার চাক শুমারের উপস্থিতিতে ট্যাক্সি ওয়ার্কার্স এসোসিয়েশনের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এতে প্রাথমিকভাবে ১০০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। আর এর মধ্যদিয়ে অনশন ভঙ্গ করেছেন ক্যাবীরা।
ঋণের চাপে জর্জরিত নিউইয়র্ক সিটির ট্যাক্সি চালকরা তাদের জন্য বরাদ্দকৃত ৬৫ মিলিয়ন ডলারের প্রনোদনাকে অপ্রতুল বিবেচনা করে অধিকতর আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করার দাবিতে অনশন ধর্মঘট শুরু কওে গত ২০ অক্টোবর থেকে। গত মার্চ মাসে মেয়র বিল ডি ব্লাজিও যখন নিউইয়র্ক সিটির চালকদের সহায়তার জন্য বহু মিলিয়ন ডলার ব্যয় করার কথা ঘোষণা করেছিলেন তখন অনেকে তার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে যে পরিমাণ অর্থ ক্যাবিদের সহায়তার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে, তা নিউইয়র্ক ট্যাক্সি ওয়ার্কার্স এলায়েন্সের (এনওয়াইটিডব্লিউএ) ২০ হাজারের অধিক সদস্যকে ঋণভার থেকে মুক্ত করার জন্য যৎসামান্য।
কারণ বহু বছর যাবত ট্যাক্সি চালকরা ঋণ থেকে উদ্ধারের জন্য সহায়তার দাবি করে এলেও এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এগিয়ে না আসায় সূদে আসলে তাদের মাথাপিছু অপরিশোধিত ঋণের পরিমাণ শুধু বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক ট্যাক্সি চালক দেনার দায়ে আত্মহত্যার পথও বেছে নিয়েছেন বলে এলায়েন্সের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। ট্যাক্সিচালকদের একটি প্রভাবশালী গ্রুপ ঋণগ্রস্থ চালকদের প্রতি আহবান জানিয়েছে যে সিটি যদি সহায়তার পরিমাণ বৃদ্ধি না করে তাহলে সিটি বর্তমানে যে সহায়তা দিতে চাইছে তা গ্রহণ না করতে। এই গ্রুপ এনওয়াইটিডব্লিউএ’র সভাপতি ভৈরবী দেশাই বলেছেন, অধিকতর সহায়তার দাবী মেনে নিতে আমি এবং আরো এক ডজন ট্যাক্সি চালক অনশন শুরু করেছি। দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা পিছু হটবো না।
বিল ডি ব্লাজিও সম্প্রতি ট্যাক্সিচালকদের ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছেন, কিভাবে ঋণের চাপ কমানো সম্ভব হয়, কিন্তু তার পরিকল্পনার কোনো ফলোদয় হয়নি। চালকদের সঙ্গে সিটির পুরো কংগ্রেসনাল ডেলিগেশন এবং সিনেট মেজরিটি লিডার চাক শ্যুমার সিটির পক্ষ থেকে সহায়তা বৃদ্ধির জন্য দেনদরবার করলেও সিটি বরাদ্দের পরিমাণ এখন পর্যন্ত বৃদ্ধি করেনি। ট্যাক্সি মেডেলিয়ন নিয়ে দীর্ঘ বছর যাবত চালকদের আন্দোলন পুলিশের সঙ্গে সম্প্রতি সংঘাতে রূপ নেয়। তারা রাস্তা থেকে যাত্রী না তোলার ব্যাপারে সিটির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্যও চাপ দিয়ে আসছে।
উল্লেখ্য, ট্যাক্সি মেডালিয়নকে দুই দশক যাবত সিটির আমলাতন্ত্র একটি বাজে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে, যার ফলে ট্যাক্সি মালিকদের একটি গ্রুপ কৃত্রিমভাবে মেডালিয়নের দাম বৃদ্ধি করে এক মিলিয়ন ডলারের উর্ধে উঠায়। মেডালিয়নের পারমিট নেয়ার জন্য ড্রাইভাররা মোটা অংকের ঋণ গ্রহণ করে, এবং ঋণদাতারা এই সুযোগে বহু মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেয়। ২০১৪ সালে মেডালিয়নের দর পতন হলে ক্যাবিরা বিপদে পড়ে যায় এবং অনেক ক্যাবির ঋণে বোঝা ৫ লাখ ডলার বা আরো বেশি দাঁড়ায়। শত শত ক্যাবি দেউলিয়া হয়ে পড়ে এবং বেশ ক’জন আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এর পেছনের অসৎ চক্রটি এ পরিস্থিতির দায়ভার নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ক্যাবিদের আর্থিক দুর্গতির জন্য উবার ও লিফটের মত যাত্রী পরিসেবাকে দোষারূপ করে।
২০১৯ সালের পর মেডালিয়নের বিপরীতে ক্যাবিদের প্রতারণামূলক ও শোষণকারী ঋণ প্রদানের কারণে ক্যাবিদের দুর্দশার উপর নিউইয়র্ক টাইমসে বেশ কিছু রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে এবং ক্যাবিদের সহায়তার জন্য সিটি টস্কফোর্স গঠন করে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ এবং ঋণ প্রদানকারীদের প্রতারণামূলক উপায় অবলম্বনের কারণে তাদের বিরুদ্ধে ৮১০ মিলিয়ন ডলারের দাবী সম্বলিত মামলা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এ উদ্যোগের পেছনে ছিলেন স্টেট এটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস।
কিন্তু করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে গত প্রায় দুই বছর যাবত এ উদ্যোগে নজীরবিহীন ভাটা পড়েছে এবং সকল ক্ষেত্রের মত ট্যাক্সি শিল্পেও আর্থিক সংকটের সৃষ্টি করেছে। মেয়র ক্যাবিদের উদ্ধারের জন্য ফেডারেল স্টিমুলাস প্যাকেজের আওতায় ৬৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিয়েছেন, যাতে একক মেডালিয়ন মালিক ২৯ হাজার ডলার করে পাবেন। তাছাড়া এই প্যাকেজে ঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করে ঋণ হ্রাসের উপায় বের করার জন্যও সহায়তার কথা বলা হয়। কয়েক হাজার ক্যাবি এতে সম্মত হয়েছে এবং গত সপ্তাহ পর্যন্ত ১৫৫ জন ক্যাবি তাদের ঋণ পুন:তফসিলীকরণের ব্যবস্থাও করেছে। তারা এজন্য তাদের ব্যক্তিগত সঞ্চয়ও ব্যবহার করেছে। এ কর্মসূচি চালু করার আগে সিটির হিসাবে দেখা যায় যে অনেক ক্যাবির ঋণের পরিমাণ ৩ লাখ ১০ হাজার ডলার। তবে মাথাপিছু গড় ঋণের বোঝা ১ লাখ ৮০ হাজার। সিটির ট্যাক্সি কমিশনার বলেছেন যে প্রায় এক হাজার ক্যাবি সিটির কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে।
Posted ৬:৫৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৪ নভেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh