বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন ২০২২
নিউইয়র্ক সিটির স্কুলগুলোতে অধিকতর গণতান্ত্রিক উপায়ে ছাত্র ভর্তি করার চেষ্টার উদ্যোগ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নতুন ভর্তি পদ্ধতিতে সিটির বোর্ড অফ এডুকেশন ভতিচ্ছু ছাত্রদের গ্রেড, হাজিরা ও টেস্ট ফলাফলের চেয়ে বরং লটারির ওপর বেশি নির্ভরশীল হওয়ার চেষ্টা করছে। কাক্সিক্ষত স্কুলগুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে সমতা আনার জন্য এই পদ্ধতি গৃহীত হয়েছে বলে বোর্ড জানিয়েছে। কিন্তু নতুন পদ্ধতিতে ভালো শিক্ষার্থীদের পক্ষে ভালো স্কুলে ভর্তি হওয়া কঠিন হয়ে যাবে।
ক্ষুব্ধ অবিভাবকরা বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশনের সঙ্গে এক অনলাইন আলোচনায় এক শিক্ষার্থীর মা বলেছেন যে তার ছেলের ভালো গ্রেড আছে, তার নামে শৃঙ্খলা ভঙ্গের কোনো অভিযোগ নেই, কিন্তু তাকে তার ১২টি পছন্দের স্কুল থেকে একটিকেও বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি, যা একটি প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয়। অপর এক শিক্ষার্থীর বাবা অভিযোগ করেছেন যে তার মেয়ের পছন্দের প্রতিটি স্কুলে ভর্তির তালিকা থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে, এখন তার অবস্থা হলো, তাকে হাজারটি স্কুলের ভর্তি তালিকায় অপেক্ষমান রাখা হয়েছে, যা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তিনি জানতে চেয়েছেন এ অবস্থায় তার ও তার কন্যার করণীয় কী। এ ক্ষোভ শুধু দু’জন শিক্ষার্থীর অভিভাবকের নয়, বরং অনেকের, যাদের সন্তানদের ভালো গ্রেড থাকা সত্বেও তারা তাদের পছন্দের স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত এবং এজন্য তারা শিক্ষা বোর্ডের হঠকারি সিদ্ধান্তকেই দায়ী করেছে। তাদের মতে, নতুন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের আগে অভিভাবক, স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মতামত গ্রহণের প্রয়োজন অনুভব করা হয়নি। বোর্ডের একতরফা সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার নয়। গত সপ্তাহের মঙ্গলবার কুইন্সের এক সিটি কাউন্সিলম্যান শিক্ষা বিভাগের কাছে লেখা এক চিঠিতে অবিলম্বে ছাত্রভর্তির নতুন নীতি প্রত্যাহার করার আহবান জানিয়েছেন।
বুধবারের মধ্যে অবিভাবকদের একটি গ্রুপ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে যে তারা তাদের ক্ষোভ ব্যক্ত করার জন্য “মেরিট ম্যাটারস” এর ব্যানারে ‘টুইড কোর্টহাউজের’ সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করবে। তারা অভিভাবকদের প্রতি আহবান জানিয়েছে যে যেদিন কর্মসূচি পালিত হবে সেদিন সকলকে এসে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে।
ভর্তি ব্যবস্থার মধ্যে এ ধরনের উদ্যোগের কোনো কাক্সিক্ষত ফললাভ হবে কিনা। কারণ ভর্তির নতুন উপায় নিয়ে শুরুতেই যে আপত্তি ও প্রতিবাদ উঠেছে, এ উপায় ভবিষ্যতে স্থায়ী হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। শিক্ষা বিভাগ যদি এ বছর তাদের নতুন নীতি প্রত্যাহার করে নিতে অসমর্থও হয়, আগামী বছর এটি যে বহাল থাকবে না তা অনেকটাই নিশ্চিত। তাছাড়া সিটির বাজেটে শিক্ষাখাতে ব্যয়বরাদ্দ হ্রাস করায় পরিস্থিতি আরও সঙ্গীন হয়ে উঠবে। সিটি যুক্তি দিয়েছে যে স্কুলগুলোতে ছাত্রসংখ্যা কমে গেছে, অতএব বাড়তি ব্যয়বরাদ্দ অপ্রয়োজনীয়।
নিউইয়র্ক টাইমস ভেরেনসিয়া ফিল্ডস নামে এক একক অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলেছে, চার সন্তানের এই মা এমটিএ’তে কাজ করেন। তিনি বলেছেন যে, তিনি চান যে তার কন্যা ভালো একটি স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ লাভ করুক, যেখানে তার মেধা বিকাশের সুযোগ থাকবে। তিনি ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের এক ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে অন্যান্য অভিভাবকের সঙ্গে তার নিজের ক্ষোভও প্রকাশ করছেন। তারা বিশ্বাস করেন যে স্বল্প-আয়ের পরিবারের শিশুদের চেয়ে তাদের সন্তানদের ভালো স্কুলে যাওয়ার যোগ্যতা বেশি। নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তানদের মাঝেও ভালো স্কুলে ভর্তির অধিকার ও যোগ্যতা রয়েছে। কিন্তু ভর্তি ব্যবস্থার গণতান্ত্রিকীকরণ ও সমতা সৃষ্টির নামে যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে তা কোনো আদর্শ ব্যবস্থা নয়।
শিক্ষা বিভাগের তথ্য উপাত্ত অনুসারে দেখা যায় যে ভর্তি ব্যবস্থার চিত্র পাল্টে যাওয়ায় কিছু কিছু কাক্সিক্ষত স্কুলে শিক্ষার্থীদের সংখ্যায় পরিবর্তন এসেছে। কুইন্সের টাউনসএন্ড হ্যারিস স্কুলে কৃষ্ণাঙ্গ ও ল্যাটিনো ছাত্র সংখ্যা গত বছর যেখানে ১৬ শতাংশ ছিল, চলতি বছর তা ২৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ব্রুকলিনের মিলেনিয়াম স্কুলে কৃষ্ণাঙ্গ ও ল্যাটিনো ছাত্রসংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ৪৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। যেসব স্কুলে ফ্রি অথবা স্বল্পমূল্যে লাঞ্চ সরবরাহ সহ আরও কিছু সুবিধা ঘোষণা করা হয়েছে, সেসব স্কুলে ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু সিটির নয়টি স্পেশালাইজড স্কুলে ছাত্রভর্তির চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। স্পেশালাইজড স্কুলে ভর্তির জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ছাত্রদের মধ্যে এক পঞ্চমাংশ কৃষ্ণাঙ্গ হলেও সবগুলো স্পেশালাইজড স্কুলে কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্র ভর্তির গড় ৩.২ শতাংশ। এ বছর স্টাইভ্যাসেন্ট স্কুলে ৭৫৬ জন ছাত্র ভর্তির সুযোগ লাভ করেছে, যার মধ্যে মাত্র ১১ জন কৃষ্ণাঙ্গ এবং ২৩ জন ল্যাটিনো।
Posted ৬:২৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh