মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪ | ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

‘রক্ষণশীলদের কাছে প্রমাণ করেছি মুসলমানদের জঙ্গী-সন্ত্রাসী নয়’

মোহাম্মদ আজাদ :   |   বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩

‘রক্ষণশীলদের কাছে প্রমাণ করেছি মুসলমানদের জঙ্গী-সন্ত্রাসী নয়’

নাসের ফয়জুল্লাহ একজন বাংলাদেশী আমেরিকান। জন্ম পুরোনো ঢাকায়। পড়াশোনা করেছেন ঐতিহ্যবাহী সেন্ট গ্রেগরিজ হাইস্কুলে। এরপর উচ্চতর ডিগ্রির জন্য পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। বিজনেস নিয়ে পড়াশোনা করেছেন ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন মিসিসিপি, বিশপ কমিউনিটি কলেজ ও ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ আলাবামাতে। যুক্তরাষ্ট্রে চাকুরি করেছেন একাধিক মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে। চাকুরি ছেড়ে বর্তমানে তিনি টেনেসির মিমফিসে একটি কনসাল্টিং ফার্ম পরিচঅরনা করছেন। মেমফিসের ছোট্ট বাংলাদেশী কমিউনিটিকে তিনি আগলে রেখেছেন। থাকেন জার্মান টাউনের অভিজাত আবাসিক এলাকায়।

নাসের ফয়জুল্লাহ যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে তিনি রক্ষণশীল স্টেট টেনেসির সিলবি কাউন্টির রিপাবলিকান পার্টির নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট। দু’সপ্তাহ আগে সাপ্তাহিক বাংলাদেশ প্রতিবেদক মোহাম্মদ আজাদ ব্যক্তিগত সফরে সেখানে যাওয়ার পর নাসের ফয়জুল্লাহর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি তো মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে মিশে গিয়ে রাজণিিত করছেন। কিভাবে এই যাত্রা শুরু হয়েছিল। উত্তরে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে টিভি অন করলে প্রায় শোনা যেত মুসলমানদের বদনাম। টিভি নিউজে বলা হতো মুসলমানরা জঙ্গী, সন্ত্রাসী, আইসিস বা আল কায়েদা ইত্যাদি। আমার ৮০ শতাংশ বন্ধু শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান। একসময় দেখলাম এরা মুসলমানদের দিকে বাঁকা চোখে তাকাচ্ছে। কোনো রাজনৈতিক নেতা দশ মিনিট বক্তৃতা করলেই ৭ মিনিটই মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতেন। সে পরিস্থিতিতে আমার মনে হলো, একটা কিছু করা প্রয়োজন, এবং তা করতে হলে এখানকার রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে রাজনীতির মাঠে থাকতে হবে। এরপর আমি সুযোগ খুঁজতে থাকি এবং সুযোগ পেয়েও যাই। একসময় আমি টেনেসির সিলবি কাউন্টির রিপাবলিকান পার্টিতে যোগ দেই। শুরু হয় আমার রাজনৈতিক পথচলা।


তিনি বলেন, রিপাবলিকানদের সাথে মিশে আমি রক্ষণশীল শ্বেতাঙ্গ ও রিপাবলিকানদের মুসলমানদের সম্পর্কে তাদের পুষে রাখা ধারণা ভুল প্রমাণ করতে পেরেছি। যারা আমাদের বাঁকা চোখে দেখতেন, তাদের ধারণা ভুল বলে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। তাদের অনেকে আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। অনেকেই বলেছেন মুসলমানদের সম্পর্কে আমাদের ধারণা যে সম্পূর্ণ ভূল ছিল তা নাসের প্রমাণ করে দিয়েছে।

সাউথের একটি রক্ষণশীল স্টেটে বসবাসে তিনি অথবা সেখানেকার মুসলমানরা কোনো অসুবিধা বোধ করেন কিনা জানতে চাইলে নাসের ফয়জুল্লাহ বলেন, আমি লক্ষ্য করেছি যে আগে এই এলাকার নেতৃবৃন্দ মুসলমানেদের নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। সবাই বলতেন যে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম সমস্যা রয়েছে। আমি যখন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কাজ শুরু করি তখন আমি আমার কঠোর শ্রম দিয়ে তাদেরকে বোঝাতে সক্ষম হই যে আমরা আমেরিকাকে কতটা ভালোবাসি। আমরা জঙ্গী-সন্ত্রাসী নই, আমরা আমেরিকারই একটি অংশ। ধীরে ধীরে গভর্নর, সিনেটর, মেয়র ও স্থানীয় রাজনীতির সংস্পর্শে আসার পর তারা আমার কাছে তাদের ভুল দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ক্ষমা চেয়েছেন এবং বলেছেন যে নাসের আমাদের ধারণা পাল্টে দিয়েছে এবং এখন আমরা বুঝি যে মুসলমান কারা।


স্থানীয় রিপাবলিকান পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ হাসিল করা সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে নাসের ফয়জুল্লাহ বলেন, দেখুন, এটি একটি নির্বাচিত পদ। ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টি উভয় পার্টির ক্ষেত্রে একই বিধি প্রযোজ্য। প্রত্যেকের কাজের একটা সুন্দর নিয়ম ও ধারাবাহিকতা রয়েচে। পার্টিতে যোগ দেওয়ার পর আমাকে যেকোনো কাজের দায়িত্ব দেওয়া হলে আমি সেটা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পালন করতাম। পার্টিতে যারা আমার ওপরে ছিলেন তারা আমার কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। সিনিয়ররা বলছেন, নাসের তোমাকে আবারও একই পদে দাঁড়াতে হবে। আমি তাদের বলেছিন, “না, আমি তো আমার কাজ করেছি।” আমি কখনো একই পদে দ্বিতীয় বার নির্বাচন করিনি। তিনি বলেন, আমি কোনো পদ চাইনি, পদই আমাকে টেনে নিয়েচে।

ইমিগ্রান্ট ও যুক্তরাষ্ট্রের মাইনরিটি জনগোষ্ঠী ডেমোক্রেটদের সমর্থক ও ডেমোক্রেট রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সেক্ষেত্রে তিনি কেন রিপাবলিকান পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হলেন এ সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘দেখুন, গর্ভপাত, গে-লেসবিয়ানদের ইস্যুসহ অনেক সামাজিক বিষয় আছে, যেগুলোতে মুসলমান ও রিপাবলিকানরা একই মানসিকতা পোষণ করে। সেজন্য আমি রিপাবলিকান পার্টিকে বেছে নিয়েছি।


যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা শেষে টেনেসি তার সেটেল হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি একাধিক কর্পোরেট কোম্পানিতে কাজ করেছি। সর্বশেষ যে কোম্পানিতে কাজ করি ১৫টি স্টেটে তাদের ব্যবসা ছিল। প্রতিদিন আমাকে সকালে ফ্লাই করে বিকেলে বাসায় ফিরতে হতো। আমি সর্বশেষ যে কোম্পানিতে কাজ করেছি সেটি টেনেসির মেমফিসে মুভ করে। তখন থেকে আমি মেমফিসে স্থানীয়ভাবে বসবাস করছি। বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনের সময় নির্বাচনী প্রচারণাং অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন কিনা জানতে চাওয়া হলে নাসের ফয়জুল্লাহ বলেন, আপনি যে পদগুলোর উল্লেখ করেছেন, শুধু সেসব পদে যারা প্রার্থী শুধু তারা নন, এখানকার স্কুল বোর্ড মেম্বার, এমনকি বিচারকরা পর্যন্ত নির্বাচিত। আমরা চেষ্টা করি, যাতে যোগ্যতম ব্যক্তি নির্বাচিত হন। তাদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে কখনো কোনো সমস্যায় পড়িনি।
পার্টির পদে দায়িত্ব পালনের জন্য কোনো সম্মানী ভাতা দেওয়া হয় কিনা প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সম্মানী ভাতা তো দূরের কথা প্রতি বছর আমাদেরকেই পার্টি জন ১৫ থেকে ২০ হাজার ডলার অনুদান দিতে হয়।

নাইন ইলেভেনের পর টেনেসির রক্ষণশীল শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গরা এক জোট হয়ে একটি মসজিদ জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনার দৃষ্টি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ঘটনাটি সত্য। কিন্তু পরে স্টেট অফ টেনেসি, পুলিশ ও এফবিআই এর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় আমরা মসজিদটি পুন:নির্মাণ করেছি। ২০১৬ সালের একটি ঘটনার উল্লেখ করেন নাসের। তিনি বলেন, ওই বছর ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার পর মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিষোদগার শুরু করেন। একটি ট্রাম্প বলেই ফেলেন যে যুক্তরাষ্ট্রে সকল মুসলমানকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। নাসের বলেন, “এ ঘোষণা শোনার পর আমার শরীর ও মন জ্বালাপোড়া করতে থাকে। এর ঠিক দুদিন পর আমাদের পার্টির বোর্ড মিটিং ছিল। পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমাকে উপস্থিত থাকতে হবে। কিন্তু সেদিন আমি মিটিং এ গেলাম বিলম্ব করে। আমার ভেতর চাপা ক্ষোভ। আমি হলরুমে প্রবেশ করা মাত্র এক সহকর্মী বললেন, ‘নাসের, আমরা তো তোমার জন্যই অপেক্ষা করছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তুমিসহ আমরা সবাই একসাথে মুসলিম হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করব।’ তখনই আমার ক্ষোভ হালকা হয়ে যায়। আমি দেখতে পেলাম, পার্টির সকলেই আমাকে বন্ধু হিসেবে দেখছেন। ট্রাম্পের সেই ঘোষণা অধিকাংশ রিপাবলিকান পছন্দ করেননি।”

advertisement

Posted ২:১৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.