বাংলাদেশ ডেস্ক : | বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩
ইমিগ্রান্টদের স্বাগত জানাতে সব বর্ণের, সব অভিবাসীর মিশ্রণের আদর্শ ভূমি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র পরিচিতি পেয়েছিল ‘মেল্টিং পট’ বা মিশ্রণের দেশ হিসেবে। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। দেশটিতে নিয়মিত ঘটছে বর্ণবাদী সহিংসতা। আগে এসব সহিংসতায় কেবল কৃষ্ণাঙ্গদের বেশি ভুক্তিভোগী হিসেবে দেখা গেলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইমিগ্রান্ট বিরোধী ঘৃণা থেকে উদ্ভূত অপরাধের লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে এশীয় বংশপরিচয়ের ইমিগ্রান্টরা; বিশেষ করে চীন, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনসহ এশীয় দেশগুলোর ইমিগ্রান্টদের প্রতি হামলা বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। ক্যালিফোর্নিয়া এবং নিউইয়র্কে সবচেয়ে বেশি এশিয়ান আমেরিকানের বসবাস। এসব এলাকায় এশিয়ান-আমেরিকানদের ওপর সহিংসতার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে ঘটেছে। যার সর্বশেষ নজির লস অ্যাঞ্জেলেসে চীনা চান্দ্র নববর্ষের অনুষ্ঠানে নির্বিচারে গুলিবর্ষণে ১০ জনের প্রাণহানির ঘটনা।
যুক্তরাষ্ট্রে এশীয়দের চরম ঝুঁকির বিষয়টি সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে আলোচিত হয় ২০২১ সালের ২০ মার্চের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়। জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের রাজধানী আটলান্টায় এশীয় মালিকানাধীন তিনটি ম্যাসাজ পারলারে গুলি করে ৮ জনকে হত্যা করা হয়। নিহতদের ৬ জনই এশীয় নারী। এই হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন একে বর্ণবাদী হামলা বলতে চায়নি। হত্যাকাণ্ডের দায়ে দক্ষিণ জর্জিয়ার চেরাকি কাউন্টির উডস্টক থেকে ২১ বছর বয়সী রবার্ট অ্যারন লংকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন সে বর্ণবাদী বিদ্বেষ থেকে এ হামলার কথা অস্বীকার করেছে বলে প্রচার করা হয়। কিন্তু পরে গোয়েন্দারা জানান, এটি পুরোপুরি বর্ণবিদ্বেষমূলক ঘটনা। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে এশীয়দের ওপর হামলা বেড়ে যায় ২০২০ সাল থেকে।
বিবিসিসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বলা হয়, এশিয়ান লোকজনের কারণে কভিড-১৯ রোগের বিস্তার ঘটেছে বলে একটি ধারণা এসব বিদ্বেষের পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করা হয়। উগ্র ডানপন্থিদের এই চিন্তাকে উসকে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিভিন্ন স্থানে কয়েকবারই তিনি কভিড-১৯কে ‘চায়না ভাইরাস’,‘কুংফ্লু’ ইত্যাদি নামে অভিহিত করেন। স্বাভাবিকভাবেই এটি বর্ণবাদীদের জন্য উসকানিমূলক। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জেনিফার লি বলেন, ‘যখন দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট শে^তাঙ্গবাদীদের ভেতর জাতিগত দোষের আগুন খুঁচিয়ে তোলেন, তখন অবশ্যই অসুরক্ষিত সংখ্যালঘুদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ বাড়বে; বিশেষ করে চাইনিজ আমেরিকান, ব্যাপক অর্থে এশিয়ান আমেরিকানদের ওপর।’ ঘৃণা থেকে উদ্ভূত অপরাধে আতঙ্কের মধ্যে আছেন উন্নত জীবনের স্বপ্ন নিয়ে পরিশ্রম করা এশীয়-আমেরিকানরা।
এই আতঙ্কজনক পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা সংস্থা পিউরিসার্চ গত বছর মে মাসে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি ১০ জনে ৬ জন পূর্ণবয়স্ক এশীয় ব্যক্তিই মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের প্রতি সহিংসতা চরমে পৌঁছেছে। মনিটরিং গ্রুপ স্টপ এএপিআই হেইটের হিসাব বলছে, কভিড নিয়ে ছড়ানো বিদ্বেষে ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ১০ হাজারের ওপর ঘৃণামূলক অপরাধের ৮২৪টি ঘটেছিল এশীয়দের সঙ্গে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ভক্স বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে এশীয়দের ওপর এই বিদ্বেষ বেশ পুরনো। বলা যেতে পারে একেবারে অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রে আসতে শুরু করার সময় থেকেই; বিশেষ করে আঠারো শতকে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসাদের শুরুতেই বর্ণবাদী ঘৃণার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ইতিহাসবিদ বেথ লিউ উইলিয়ামস বলেন, ‘আমেরিকানদের একটি প্রচলিত ধারণাই ছিল চীনারা ইঁদুর খায়, নোংরা-ঘিঞ্জি জায়গায় থাকে।’
চীনা অভিবাসী ঠেকাতে ১৮৮২ সালে পাস করা হয়েছিল দি চাইনিজ এক্সক্লুশন অ্যাক্ট। এর মূলে ছিল জাতিগত ক্ষোভ এবং কর্মসংস্থান দখলের আশঙ্কা। ঐতিহাসিকভাবে ঘৃণার এই উলম্ফন দেখা যাচ্ছে এখন। আটলান্টায় এশীয় ৬ নারী হত্যার ঘটনায় ফুঁসে উঠেছিল সাধারণ মানুষ। এরপর এশীয়দের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী সহিংসতায় নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার। এরপর দেশটির সিনেটে ‘অ্যান্টি এশিয়ান হেইট ক্রাইমস’ বিল পাস হয়।
Posted ২:১৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh