বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন ২০২৪
ছবি : সংগৃহীত
দেশ বিদেশে প্রতারণা ব্যবসায়, নানা অপকর্মের হোতা ও বিতর্কের বরপুত্র অলরাউন্ডার ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান আয়োজিত নিউইয়র্কের ফান্ড রেইজিং ফ্লপ করেছে। সাকিব আল হাসান ক্যান্সার হাসপাতালের নামে গত ৮ জুন নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সের সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটির বলরুমে আয়োজিত ফান্ড রেইজিং ডিনারে তার অনুগত গুটিকয়েক ব্যক্তি ছাড়া সাড়া দেননি প্রবাসী বাংলাদেশীরা। প্রবাসী বাংলাদেশীদেও কষ্টার্জিত অর্থ হাতিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে অভিনব কৌশলে ফান্ড রেইজিং ডিনারের আয়োজন করেন সাকিব।
বাংলাদেশে সাকিব আল হাসান ক্যান্সার ফাউন্ডেশন নামে একটি ওয়েব সাইট থাকলেও ক্যান্সার হাসপাতালের নামে কোন সরকারি নিবন্ধন নেই। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির প্রাথমিক কোন ভিত্তি স্থাপিত হয়নি এখনো। যুক্তরাষ্ট্রে ভিন্ন ‘সাকিব আল হাসান ক্যান্সার অ্যাওয়ারনেস ইন্ক’ নামে গত মাসে একটি কোম্পানীর আবেদন করেছে নিউইয়র্ক স্টেটে।
অথচ নাম, ঠিকানা, ফোন নাম্বারবিহিন একটি পত্রে আমন্ত্রণ জানানো হয় অনেককে। সম্পূর্ন হাওয়ার উপর প্রতারণামূলক এই ফান্ড রেইজিংয়ের নৈতিকতা ও বিভিন্ন দিক নিয়ে গত সপ্তাহে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিউইয়র্কের সাপ্তাহিক বাংলাদেশ।
ক্যান্সার হাসপাতালের নামে সাকিবের চাঁদাবাজি সংক্রান্ত সংবাদটি প্রকাশের পর প্রবাসী বাংলাদেশীরা বিরত থাকেন সাকিবের ফান্ড রেইজিংয়ে অংশ নেয়া থেকে। শুধু তহবিল সংগ্রহ অনুষ্ঠান নয় দেশ-বিদেশে বিভিন্ন সময় সাকিবের অসংখ্য অপকর্মের তথ্য উঠে আসে প্রতিবেদনটিতে। বিশেষ করে ‘টি-২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে খেলতে এসে নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডে তার সেকেন্ড হোমে পিকনিক এবং টাকার সন্ধানে সাকিবের ছুটে বেড়ানোর বিষয়টি।
তারপরও সাকিব আয়োজন করে ফান্ড রেইজিং ডিনারের। সেখানো হাঁটাপথে গিয়ে যারা অংশ নেন তারা ডিনার সেরে হাত মুছে চলে যান বলে জানান ডিনারে অংশ নেয়া কেউ কেউ। তবে ওয়ালেট খোলার মতো ব্যক্তিবর্গ সেখানে ছিলো না বললেই চলে। ফান্ড রেইজিংয়ে নিজ নামে নির্মিতব্য ক্যান্সার হাসপাতালের প্রয়োজনীয় কোন তথ্য তুলে ধরতে পারেননি সাকিব। গোটা অনুষ্ঠানে বিমর্ষ দেখায় তাকে। তার এসব ভাওতাবাজি প্রমাণিত হয়েছে ইতোমধ্যে। কাংখিত বিজয়ের মুখে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে হেরে গেছে বাংলাদেশ। ডুবন্ত সাকিব ডুবিয়েছে গোটা বাংলাদেশকে।
সাকিবের খেলা এবং আচরণে ক্ষুব্ধ আইল্যান্ডের নাসাউ স্টেডিয়ামের ২০ হাজার বাংলাদেশী দর্শক সহ দেশ ও প্রবাসের বাংলাদেশীরা। ‘সাকিব ভূঁয়া-ভূঁয়া’ চিৎকারে কেঁপে উঠে গোটা স্টেডিয়াম। শ্লোগান উঠে ‘সাকিব ঠেকাও দেশ বাঁচাও’। ‘ফুলটাইম এমপি-গিরি পার্টটাইম ক্রিকেটার প্রয়োজন নেই’। সাকিব গোটা জাতিকে হতাশ করেছে। সাকিব এখন দেশের সম্পদ থেকে পরিণত হয়েছে জাতির বোঝায়। ফাঁস হয়ে পড়েছে তার সকল ধান্ধাবাজি। আর এভাবে নড়ে উঠে ধর্মের কল।
নিউইয়র্কে সাকিবের অশোভন আচরণে সাংবাদিকরা হতবাক
নিউ ইয়র্কে সাকিবের অশোভন আচরণে হতবাক হয়েছেন বিশ্বকাপ কাভার যুক্তরাষ্ট্রে আসা ক্রীড়া সাংবাদিকরা। গত ১০ জুন সোমবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ শেষে ছবি তোলার বিষয় নিয়ে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার ক্রীড়া সাংবাদিকের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন সাকিব। তার মোবাইল নিয়ে বাংলাদেশ দলের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা কর্মীদের হাতে তুলে দেন সাকিব। এ ঘটনায় হতবাক হয়ে পড়েন উপস্থিত সকল সাংবাদিকরা। সোমবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ৪ রানে হারে বাংলাদেশ। বোলিংয়ে ১ ওভার হাত ঘোরানোর পর ব্যাটিংয়ে ৪ বলে ৩ রান করে উইকেট ছুড়ে দেন সাকিব। ম্যাচ শেষে সবাই যখন বিমানবন্দরে উদ্দেশ্যে বাসে উঠে পড়েছেন।
এমন সময় বিশ্বকাপ কাভার করতে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা মানবজমিনের রিপোর্টারসহ আরও একাধিক সাংবাদিক দূরে দাড়িয়ে ছিলেন। টিম বাসে খেলোয়াড়রা ওঠার সময় সাধারণত সাংবাদিকরা সবসময়ই পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন। হয়তো বিভিন্ন ফুটেজ নেওয়া বা কারও সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে থাকেন তারা। তবে এদিন ভিডিও করতে নিষেধ করায় কোনো সাংবাদিকই সেটা করেননি। এর মধ্যে বাসের একপাশে সাকিব পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছিলেন। স্ত্রী ও তিন সন্তানের সঙ্গে ছিলেন তরুণ দুই যুবকও।
তখন সাকিবের সন্দেহ হয় মানবজমিনের রিপোর্টার হয়তো ভিডিও করছেন। তার হাতে মোবাইল ও ট্রাইপড ছিল, কিন্তু আসলে তিনি কোনো ভিডিও করেননি। তবুও সাকিবের সন্দেহ হলে তিনি এসে জানতে চান ভিডিও করছেন কিনা। তখন রিপোর্টার সাকিবকে বলেন তিনি কোনো ভিডিও করছেন না। তারপরও সাকিবের সন্দেহ হয়, ‘দেখি, আপনার মোবাইলটা দেখি’ বলতে বলতে তিনি সেটি নিয়ে যান। তবে একবারও নিজে মোবাইলটি চেক করেননি সাকিব। সেটি নিয়ে বাংলাদেশ দলের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তাকর্মীর হাতে তুলে দেন। তবে তারা মোবাইলে কোনো ভিডিও খুঁজে পাননি। তারপর সেই নিরাপত্তাকর্মী এসে রিপোর্টারকে মোবাইলটি ফেরত দিয়ে যান। তবে এরপরও সাকিবের সংশয় কাটেনি। তিনি বারবার ওই সাংবাদিককে বলতে থাকেন, ভিডিও করে থাকলে ডিলেট করে দিয়েন। যদিও ভিডিও ধারণা করার মতো কিছুই সেখানে ঘটেনি। ওখানে উপস্থিত থাকা সবার কাছেই পুরো ঘটনা বিষ্ময়কর লেগেছে।
ব্যর্থতায় ঘুরপাক খাওয়া সাকিবের মহাপতন
বেশ কিছুদিন থেকেই ফর্মে নেই সাকিব আল হাসান। বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের প্রথম দুই ম্যাচে নিজের ছায়া হয়েই থেকেছেন। ব্যাটে রান তো পাননি, বল হাতেও ব্যর্থ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এক ওভার বল করার পর তার হাতে আর বলই দেননি টাইগার অধিনায়ক। ক্যারিয়ারের কোনো পর্যায়েই আগে এমন খারাপ সময় আসেনি সাকিবের। একে একে হারাচ্ছেন নিজের রাজত্ব। টি-টোয়েন্টি অলরাউন্ডারদের র্যাঙ্কিংয়ে বড়সড় পরিবর্তন।
গত সপ্তাহে নিজের সিংহাসন ফিরে পাওয়া সাকিব আল হাসানের এবার মহাপতন ঘটেছে। এক ধাক্কায় নেমে গেছেন চার ধাপ। টি-টোয়েন্টি অলরাউন্ডারের র্যাঙ্কিংয়ে পাঁচ নম্বরে নেমে গেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা। শীর্ষে উঠেছেন আফগান অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবি।টি-টোয়েন্টি অলরাউন্ডারদের র্যাঙ্কিং গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই অদলবদলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। শীর্ষস্থান নিয়ে লড়াই চলছিল সাকিব ও লঙ্কান দলপতি ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার মধ্যে। গত সপ্তাহে হাসারাঙ্গাকে পেছনে ফেলে এককভাবে শীর্ষে ওঠেন সাকিব। কিন্তু ঠিক সাতদিনের মাথায় শীর্ষস্থান তো হারালেনই, নেমে গেছেন পাঁচ নম্বরে। ২৩১ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে উঠেছেন আফগানিস্তানের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ নবি।
বিশ্বকাপে উগান্ডার বিপক্ষে ম্যাচে ব্যাট হাতে ১৪ রান করে অপরাজিত ছিলেন তিনি। সেই ম্যাচে বল হাতে খরচ করেছিলেন ৮ রান। আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ১৬ রানে ২ উইকেট শিকার করে ঐতিহাসিক জয়ে দারুণ ভূমিকা রেখেছিলেন নবি। এই পারফরম্যান্সই তাকে শীর্ষে বসিয়েছে।
পতন হয়েছে সাকিবের সঙ্গে শীর্ষস্থানের লড়াইয়ে থাকা হাসারাঙ্গারও। বিশ্বকাপে ভালো করতে না পারা লঙ্কান দলপতি নেমে গেছেন ৩ নম্বরে। তিন ধাপ এগিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন মার্কাস স্টয়নিস। বিশ্বকাপে দারুণ পারফরম্যান্সের স্বীকৃতি পেয়েছেন এই অজি অলরাউন্ডার। ওমানের বিপক্ষে ৬৭ রান ও ৩ উইকেট শিকার করে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতে বিশ্বকাপ শুরু করেন তিনি। এরপর ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও ৩০ রান করার পাশাপাশি ১ উইকেট শিকার করেন। তৃতীয় ম্যাচে নামিবিয়ার বিপক্ষে ব্যাট করতেই হয়নি তাকে। তবে বল হাতে ২ উইকেট শিকার করে দলের জয়ে অবদান রেখেছেন স্টয়নিস।সেরা পাঁচে জায়গা ধরে রেখেছেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক সিকান্দার রাজা। চার নম্বরেই আছেন তিনি। সেরা দশে উন্নতি করেছেন হার্দিক পান্ডিয়া ও নেপালের দীপেন্দ্র সিং এইরি। এক ধাপ করে এগিয়ে আট ও নয় নম্বরে আছেন তারা। ২ ধাপ পিছিয়ে ১০ নম্বরে আছেন প্রোটিয়া অধিনায়ক এইডেন মার্করাম।
Posted ১:০৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh