শনিবার, ১৬ আগস্ট ২০২৫ | ১ ভাদ্র ১৪৩২

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে কার লাভ হলো?

বাংলাদেশ অনলাইন :   |   শনিবার, ১৬ আগস্ট ২০২৫

ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে কার লাভ হলো?

ছবি : সংগৃহীত

কোনো ধরনের চুক্তি ছাড়াই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে বহুল আলোচিত আলাস্কা বৈঠক শেষ হয়েছে। বৈঠকের পর উভয় নেতাই আলাস্কা ছেড়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যের অ্যাঙ্কোরেজ শহরের একটি সামরিক ঘাঁটিতে শুক্রবার প্রায় তিন ঘণ্টা দীর্ঘ এ বৈঠক শেষে পুতিনের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। পরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাদের বৈঠকে আলোচনায় অগ্রগতি হলেও এখনো লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেননি তারা।

তবে তিনি এটিও বলেছেন, পরবর্তীতে এ নিয়ে অগ্রগতি অর্জনের জন্য খুব ভালো সুযোগ রয়েছে। যৌথ এই সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ হোক তা তিনিও আন্তরিকভাবে চান। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধের জন্য এই যুদ্ধের ‘মূল কারণগুলোও’ নিরসন করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে দুই নেতাই বক্তব্য দিলেও তারা সাংবাদিকদের কাছ থেকে কোন প্রশ্ন নেননি। বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম ফক্স নিউজকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, খুব ভালো বৈঠক হয়েছে।

বহুল আলোচিত এই বৈঠকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ট্রাম্প জানিয়েছেন যে আলোচনা শেষে তিনি জেলেনস্কি এবং ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলবেন।

এদিকে এই বৈঠকের এই নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ক্রেমলিন। ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ট্রাম্প ও পুতিন বৈঠকটি ছিল খুবই ইতিবাচক।

উত্তর আমেরিকা থেকে বিবিসি সংবাদদাতারা ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের সংবাদ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করেছেন।

এই বৈঠকের ফলাফল যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার জন্য কী অর্থ বহন করে এবং ইউক্রেন যুদ্ধের পরবর্তী ধাপ কী হতে পারে সেটিও বিশ্লেষণ করেছেন তারা।

আলাস্কা ছেড়েছেন পুতিন ও ট্রাম্প

প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠক শেষে আলাস্কা ছেড়েছেন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার দুই প্রেসিডেন্টই। শুরুতেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট তাকে বহনকারী উড়োজাহাজে ওঠেন। পুতিন বিমানে ওঠার মিনিট দশেক পরে ট্রাম্পও তাকে বহনকারী বিমানে চড়েন।

এর কিছুক্ষণের মধ্যেই উড়োজাহাজ দুটি নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা করে।

এর আগে স্থানীয় সময় শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে আলাস্কার এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসন সামরিক ঘাঁটিতে পুতিনকে বহনকারী উড়োজাহাজ অবতরণ করেন। এর কিছুক্ষণ আগেই আগেই ট্রাম্পকে বহনকারী উড়োজাহাজও সেখানে এসে পৌঁছায়।

বিমানবন্দরে পুতিনকে লালগালিচায় উষ্ণভাবে বরণ করে নেন ট্রাম্প। এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্টের গাড়িতে করে দুই নেতা বৈঠকস্থলে যান। সেখানে তাদের মধ্যে ঘণ্টা তিনেকের বৈঠক হয়। বৈঠকে দুই দেশের পক্ষ থেকে আরও দুজন করে কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে ট্রাম্প ও পুতিন যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আসেন। তারা বৈঠক ‘ফলপ্রসূ’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। কিন্তু রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি বা এ যুদ্ধ বন্ধের চুক্তি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা আসেনি।

তবে ট্রাম্প ও পুতিন শিগগির আবার দেখা করতে পারেন, এমন একটি ইঙ্গিতের মধ্য দিয়ে সংবাদ সম্মেলন শেষ হয়। পুতিন বলেন, তাদের পরবর্তী বৈঠক হতে পারে মস্কোয়।

‘আলাস্কা বৈঠক ট্রাম্পের খ্যাতি নষ্ট করলো’

বিবিসির উত্তর আমেরিকান সংবাদদাতা অ্যান্থনি জুরচার তার বিশ্লেষণে বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে ‘চুক্তির কারিগর’ হিসেবে উপস্থাপন করার যে চেষ্টা করে আসছিলেন, আলাস্কা বৈঠক তার সেই অবস্থান নষ্ট করেছে।

কেননা প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে বৈঠকের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, চুক্তি সই না হওয়া পর্যন্ত আসলে কোনো অর্জনই নেই।

জুরচারের মতে, ট্রাম্পের এই বক্তব্যের মানে দাঁড়ায় আসলে এই বৈঠক থেকে কিছুই অর্জিত হয়নি, সংবাদ সম্মেলনে যেটিকে একটু ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে উত্তর দিয়েছেন ট্রাম্প।

বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে শত শত সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। তাদের কোনো প্রশ্ন না নিয়েই সংবাদ সম্মেলনস্থল ত্যাগ করেন উভয় নেতা। এতদূর থেকে এসে দীর্ঘ বৈঠকের পর ট্রাম্প গণমাধ্যমের উদ্দেশে যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটিও ছিল একেবারে অস্পষ্ট।

তবে এই বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় মিত্র ও ইউক্রেন হয়তো সাময়িকভাবে স্বস্তি পাবেন যে, এই বৈঠকে একপাক্ষিক কোনো ছাড় বা চুক্তি হয়নি যা ভবিষ্যতের আলোচনায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই নিজেকে শান্তির দূত বা চুক্তির কারিগর হিসেবে তুলে ধরতে পছন্দ করতেন। কিন্তু আলাস্কা বৈঠকে শান্তি বা চুক্তির বার্তা নিয়ে ফিরতে পারেননি ট্রাম্প।

অন্যদিকে, বলা হচ্ছে এ নিয়ে পরবর্তী বৈঠক মস্কোতে অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু সেই বৈঠকে জেলনস্কি থাকবেন কি-না, কিংবা কী চুক্তি হতে পারে সেখানে সেটি নিয়েও কোনো স্পষ্ট বার্তা নেই।

যদিও আলাস্কার এই আলোচনায় ট্রাম্পের চেয়ে রাশিয়া কিংবা ইউক্রেনের ঝুঁকি কম ছিল। তবুও এটি তার খ্যাতিতে আঘাত করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

কেননা এই বৈঠকের আগেই ট্রাম্প বলেছিলেন এই বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা মাত্র ২৫ শতাংশ।

তাছাড়া, পুতিন যখন সংবাদ সম্মেলন শুরু করেন, তখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও ছিলেন চুপচাপ। এটি ওভাল অফিসের সাধারণ রুটিনের চেয়ে একেবারে আলাদা। কেননা, সেখানে সাধারণত মার্কিন প্রেসিডেন্টই শুরুতেই বক্তব্য দিয়ে থাকেন।

যদিও মার্কিন মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেখানে তিনি এই বৈঠককে মূল্যায়ন করেছেন ‘১০–এ ১০’ নম্বর দিয়ে। তিনি এটিও বলেছেন যে আমাদের মধ্যে আলোচনা খুব ইতিবাচক হয়েছে।

এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, ট্রাম্প কি রাশিয়ার ওপর তার হুমকি অনুযায়ী নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন?

ফক্স নিউজের সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, হয়তো দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে বিবেচনা করবো। তবে এর আগে তিনি সতর্ক করে বলেছিলেন যে, যুদ্ধবিরতির জন্য রাশিয়া এগিয়ে না আসলে তার পরিণতি ভয়াবহ হবে।

ইউক্রেনের স্বস্তি, কিন্তু ভবিষ্যতের ভয়

আঙ্কোরেজের এই বৈঠকে যে ধরনের ফলাফলের কথা ধারণা করা হচ্ছিল তা হয়নি। ফলে এই বিষয়টি সাময়িকভাবে কিয়েভকে কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে বলে মনে করেন বিবিসি মনিটরিংয়ের রাশিয়ান সম্পাদক ভিটালি শেভচেঙ্কো।

ইউক্রেনের মানুষ জানবে যে, রাশিয়ার সাথে তাদের যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি ভেস্তে গেছে সেটি যদি আঙ্কোরেজের বৈঠকে ঘোষণা করা হতো সেটি সন্দেহের চোখেই দেখা হতো। যদিও তেমনটি হয়নি।

তবে ইউক্রেনের মানুষ আতঙ্কিত, কারণ পুতিন যৌথ সংবাদ সম্মেলনে “সংঘাতের মূল কারণ” উল্লেখ করেছেন এবং এই সংকট সমাধান করেই স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন।

ক্রেমলিনের ভাষায় এর অর্থ দাঁড়ায়– ইউক্রেনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ধ্বংস করার ব্যাপারে এখনো দৃঢ় প্রতিজ্ঞ রাশিয়া।

যে কারণে তিন বছর ধরেও এই যুদ্ধের অবসান ঘটানো সম্ভব হয়নি। এমনকি আলাস্কার বৈঠকও পুতিনের মন পরিবর্তনে ব্যর্থ হয়েছে। বৈঠকের পর যে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে তা উদ্বেগজনক। আগামীতে কী হবে? রাশিয়ার হামলা অব্যাহত রাখবে কী?

গত কয়েক মাসে পশ্চিমা দেশগুলো নির্ধারিত সময়সীমা দিয়ে হুমকি দিলেও কোনো ফল হয়নি। ইউক্রেনের জনগণ মনে করছেন ভবিষ্যতেও চলবে এই হামলা। যে কারণে মনে করা হচ্ছে যে আলাস্কায় আসলে কোনো অর্জনই হয়নি।

Posted ১১:১৭ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১৬ আগস্ট ২০২৫

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩১৫
১৬১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

86-47 164th Street, Suite#BH
Jamaica, New York 11432

Tel: 917-304-3912, 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.