| বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২০
মানুষ যেসব বিষয়ের চর্চা করে সেগুলোর মধ্যে শিক্ষার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কোনো বিষয় নেই। মানুষ যদি নিজেকে জানতে চায়, নিজের মেধা ও যোগ্যতার বিকাশ ঘটাতে চায় এবং সেই মেধাকে মানুষ তথা পৃথিবীর সার্বিক কল্যাণের জন্য কাজে লাগাতে চায়, সেজন্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। তাই শিক্ষা নিয়ে গবেষণারও অন্ত নেই। শিক্ষা গবেষণার ইতিহাস মানব সভ্যতার ইতিহাসের মতই প্রাচীন। ইতিহাসের প্রতিটি পর্যায়ে প্রয়োজনের তাগিদে শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন এসেছে, সময়ের সাথে শিক্ষার সামঞ্জস্য বিধানের জন্য পরিমার্জন ও সংশোধন করতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, মানুষের উন্নয়ন ও বিকাশের স্বার্থে নতুন নতুন পেশার উদ্ভব ঘটেছে এবং সেসব পেশায় লোকবলের প্রয়োজনের নিরিখেও শিক্ষা ব্যবস্থা এবং কারিকুলাম বা পাঠ্যক্রমে নতুন নতুন বিষয়ের সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। এজন্য নিবিড় শিক্ষা গবেষণার প্রয়োজন অপরিসীম। এ বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করেই তরুণ শিক্ষা গবেষক বিদিতা রহমান শিক্ষা বিজ্ঞানের ওপর তাঁর পড়াশোনা ও অভিজ্ঞতার আলোকে একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন, যে গ্রন্থটি ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর বইটির নাম ‘২১ শতাব্দী শিক্ষা বিজ্ঞান।” নাম থেকেই বোঝা যায় এই বইয়ের বিষয়বস্তুগুলো কী। তিনি আভাস দিয়েছেন যে, শিক্ষাকাজে নিয়োজিত ব্যক্তি থেকে শুরু করে অভিভাবকদেরও কাজে লাগবে বইটি, বিশেষ করে সন্তানের শিক্ষার ব্যাপারে অভিভাবকরা সবসময় উৎকণ্ঠিত থাকেন, তাদের মনে অনেক প্রশ্নের সৃষ্টি হয়, এ বইয়ে তারা অনেক প্রশ্নের উত্তর পাবেন। বইটিতে কিছু সমস্যা নিয়ে সমাধান খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে যুক্তি ও বৈজ্ঞানিক উপায়ে, যেখানে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসক এবং অভিভাবকদের মধ্যে মৌলিক ধারণাগুলো পরিস্কার হবে। যেমন: শিক্ষা দানে শিক্ষার্থীদের সহায়তা দান, প্রযুক্তি ব্যবহার, শিক্ষক ও প্রশাসকদের মনোবিজ্ঞানের প্রশিক্ষণ গ্রহণ ইত্যাদি বিষয় সহজভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
বিদিতা রহমান তার “২১ শতাব্দীর শিক্ষা বিজ্ঞান” বইটির উদ্দেশ্য হিসেবেও উল্লেখ করেছেন, ‘দেশ ও জাতির জন্য শিক্ষার সুস্পষ্টতা ও অগ্রগতি।” তিনি আশা করেছেন যে, শিক্ষার নতুন আলো হিসেবে বইটি একটি গাইড হিসেবে কাজ করবে। এক্ষেত্রে তিনি একজন বিশ্বখ্যাত শিশু মনোবিজ্ঞানি জিন পাইগেট এর উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছেন, “শিক্ষার লক্ষ্য জ্ঞানের পরিমাণ বাড়ানো নয় বরং একটি শিশুর মধ্যে আবিস্কার করার সম্ভাবনা তৈরি করা, যা দ্বারা তারা নতুন কিছু শিখতে ও আয়ত্ত করতে সক্ষম হবে, যাতে সে অনুযায়ী তাদেরকে তৈরি করা সম্ভব হয়।” ১১০ পৃষ্ঠার বইটিকে তিনি এগারোটি অধ্যায়ে সাজিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে: শিক্ষার মূল বিষয়, শিক্ষায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, শিক্ষায় পারিবারিক ভূমিকা, মনোবিজ্ঞান, শিক্ষায় সামাজিক নিরাপত্তা, সংস্কৃতি ও ভাষা শিক্ষা ইত্যাদি। বিষয় সন্নিবেশে বোঝা যায় এটি শিক্ষক, শিক্ষা প্রশাসন ও অভিভাবকদের জন্য একটি সহায়ক বই হিসেবে কাজ করবে। বইটির প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নাম ‘আবিস্কার’ এবং মূল্য রাখা হয়েছে ২২০ টাকা। লেখিা নিজেই প্রচ্ছদ তৈরি করেছেন।
উল্লেখ্য, বিদিতা রহমান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। তিনি বৃত্তি নিয়ে নিউইয়র্কের সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটি থেকে ‘স্কুল বিল্ডিং লিডারশিপ এডুকেশন সায়েন্স’ বিষয়ে মাষ্টার্স ডিগ্রি নেওয়ার পর পিএইডডি প্রোগ্রাম শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ‘হাইয়ার এডুকেশন পেডাগজি’তে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং গত চার বছর যাবত শিক্ষা প্রযুক্তি ও মনস্তত্ব, শিক্ষানীতি, শিক্ষাদান ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা করছেন। এছাড়া তিনি সাহিত্য চর্চার সাথে জড়িত। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলা ও ইংরেজিতে তার বই প্রকাশিত হয়েছে। কমিউনিটি এক্টিভিষ্ট হিসেবে ২০১৮ সালে তিনি নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের সম্মাননা পুরস্কার লাভ করা ছাড়াও অন্যান্য পুরস্কার পেয়েছেন।
-আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু
Posted ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh