নিউইয়র্ক : | বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই ২০২৩
সম্মাননা গ্রহণ করছেন তরুণ প্রজন্মের চিত্রশিল্পী জিহান ওয়াজেদ।
ঠিকানা’র জন্মদিন উদ্যাপন ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান ছিল গত ১৬ জুলাই রোববার দুপুরে নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ডস ফেয়ার মেরিনা পার্টি হলে । পত্রিকাটির ৩৪ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে সম্মাননা প্রদান করা হয় ৭ বিশিষ্ট লেখক ও তরুণ প্রজন্মের ২ জন প্রতিভাবানকে। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন জনপ্রিয় ও প্রখ্যাত অভিনেত্রী শিরীন বকুল এবং জনপ্রিয় উপস্থাপক ও সাংবাদিক আশরাফুল হাসান বুলবুল। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী। ওইদিন দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে শুরু হয়ে অনুষ্ঠান চলে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত। অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্বে ছিল উদ্বোধনী পর্ব, উদ্বোধনী নৃত্য, স্বাগত পর্ব। অনুষ্ঠনের শুরুতে ঠিকানার পরিচিতি তুলে ধরা হয়। এর পরই আসে উদ্বোধনী ঘোষণা।
বাজানো হয় বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ও আমেরিকার ন্যাশনাল অ্যানথাম। এ সময় উপস্থিত অতিথিরা দাঁড়িয়ে দুই দেশের প্রতি সম্মান জানান। অনেকেই বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে কণ্ঠ মেলান। এরপর মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদ এবং বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের প্রতি দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালনের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপরই ছিল উদ্বোধনী নৃত্য। এই পর্বে দেশাত্মবোধক গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে নীলা জেরিন ডান্স একাডেমি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ঠিকানার প্রধান সম্পাদক মুহম্মদ ফজলুর রহমান ঠিকানার পথচলা, সাফল্য এবং কমিউনিটি বিনির্মাণে ঠিকানার অবদানের কথা তুলে ধরেন। এরপর বক্তব্য দেন ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার (প্রেস) এজেডএম সাজ্জাদ হোসেন এবং নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের ফার্স্ট সেক্রেটারি প্রসূন চক্রবর্তী। তারা ঠিকানার সাফল্য কামনা করেন।
অনুষ্ঠানের মূল বক্তা ছিলেন ঠিকানার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি ও সাবেক এমপি এম এম শাহীন। তিনি তার বক্তৃতায় ঠিকানার পথচলা এবং ৩৪ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশনা অব্যাহত রাখার সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন। ঠিকানা কমিউনিটির জন্য যে অবদান রেখে চলেছে, তাও উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ করবেন বলেও উপস্থিত অতিথিদের অবহিত করেন এবং তাদের দোয়া কামনা করেন। আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হলে প্রবাসীদের জন্য কী কী ভূমিকা রাখতে চান, সেটাও উল্লেখ করেন।
তিনি সংসদ সদস্য থাকাকালে যেসব কাজ করেছেন, তা তুলে ধরেন।বক্তৃতার একপর্যায়ে আবেগপ্রবণ হয়ে এম এম শাহীন বলেন, রাজনীতি করতে গিয়ে আমি আমার আমেরিকার সম্পদ, ঢাকার সম্পদ এবং কুলাউড়ার সম্পদ বিক্রি করেছি। আমি মানুষের জন্য রাজনীতি করি, নিজের জন্য নয়। তাই আগামী নির্বাচনে প্রবাসীদের তার পাশে থাকার অনুরোধ জানান। তিনি ঠিকানা পরিবারের মুহম্মদ শামসুল হক, মুশরাত শাহীন অনুভা, শহিদুল ইসলাম এবং নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরীসহ অন্য সবাইকে ঠিকানায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য ধন্যবাদ জানান। ঠিকানা পরিবারের সবাইকে মঞ্চে ডেকে নেন। মূল বক্তব্যের পর অনুষ্ঠিত হয় ঠিকানা সম্মাননা পদক প্রদান অনুষ্ঠান।সাহিত্য, কবিতা ও ছড়া লিখে ঠিকানার পাতাকে সমৃদ্ধ করায় ঠিকানার পক্ষ থেকে সাতজনকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। সাহিত্যে এবিএম সালেহ উদ্দিন ও রোমেনা লোদী, কবিতায় কাজী আতিক, বেনজীর শিকদার ও রওশন হাসান এবং ছড়ায় মনজুর কাদের ও মামুন জামিল পুরস্কার লাভ করেছেন।
সম্মাননাপ্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন নিউইয়র্কের স্টেট অ্যাসেম্বলি মেম্বার জেনিফার রাজকুমার, নিউইয়র্ক সিটি মেয়র অফিসের ডেপুটি কমিশনার ফর ট্রেড ইনভেস্ট অ্যান্ড ইনোভেশন দিলীপ চৌহান, নিউইয়র্ক সিটি মেয়র অফিস অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসেস চিফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার মীর বাসার, সিটি মেয়র অফিসের এথনিক অ্যান্ড কমিউনিটি মিডিয়া এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মিস্টার হোজে বেওনা এবং ঠিকানা গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এম শাহীন ও প্রধান সম্পাদক মুহম্মদ ফজলুর রহমান। খাবারের পর্ব শেষে ঠিকানার নতুন ওয়েবসাইট এর উদ্বোধন করা হয়। এখন থেকে ঠিকানার নতুন ওয়েবসাইটে পাঠক ঠিকানার সর্বশেষ সব খবর পড়তে পারবেন।
এরপর আমেরিকায় বেড়ে ওঠা ও মূলধারায় বিশেষ অবদান রেখে চলেছেন এমন দুজন ব্যক্তিত্বকে পুরস্কৃত করা হয়। ‘বাংলাদেশিস ব্রেকিং বেরিয়ার অ্যাওয়ার্ড’ শিরোনামে যে দুজন নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিকে সম্মাননা জানানো হয় তারা হলেন, নাবিল আলমগীর (সিইও, লাঞ্চ বক্স ডট আইও) এবং জিহান ওয়াজেদ (মূলধারার চিত্রশিল্পী)। তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন জেনিফার রাজকুমার। ঠিকানার পক্ষ থেকে রুহিন হোসেন তাদের সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। ঠিকানার এই আয়োজনে বীর মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার, ব্যবসায়ী নেতা, কবি, সাহিত্যিক, ছড়াকার, প্রাবন্ধিক, গল্পকার, রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর, মর্টগেজ বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক, আইনজীবী, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং ঠিকানার শুভানুধ্যায়ী, শুভাকাক্সক্ষী ও বিজ্ঞাপনদাতারা উপস্থিত ছিলেন।
ক্যালিফোর্নিয়া ও টেক্সাসসহ বিভিন্ন স্টেট থেকে আগত অতিথিরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। অনুষ্ঠানে মূলধারার রাজনীতিবিদ, কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, কবি-সাহিত্যিক, লেখক-সাংবাদিকসহ প্রবাসের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন । তারা জানান ফুলেল শুভেচ্ছা ঠিকানাকে । অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা বলেন, প্রবাসীদের আস্থা ও বিশ্বস্ততার আরেক নাম ঠিকানা। পত্রিকাটি ছোট-বড় সকল মহলের পাঠযোগ্য। কেবল সংবাদ প্রকাশের মধ্যেই পত্রিকাটি নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেনি, প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটি বিনির্মাণেও প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। সত্যকে পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ করতে ঠিকানার বিকল্প নেই। প্রবাসে বাংলাদেশের কৃষ্টি-সংস্কৃতি তুলে ধরে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ঠিকানা। বক্তারা আগামী দিনেও ঠিকানার পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এই মিলনমেলায় বিশিষ্টজনদের সামনে ঠিকানার পক্ষ থেকেও সত্য প্রকাশে অবিচল থাকা এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের কল্যাণে নিরন্তর কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।
নিউইয়র্কের স্টেট অ্যাসেম্বলি মেম্বার জেনিফার রাজকুমার ঠিকানাকে প্রক্লেমেশন উপহার দেন। শুভেচ্ছা বক্তব্যে তিনি ঠিকানার সাফল্য তুলে ধরে অব্যাহত পথচলা কামনা করেন। অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সফল করতে সহযোগিতার জন্য ওয়ার্ল্ডস ফেয়ার মেরিনা কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞা জানানো হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানা হয়। এই পর্বে সংগীত পরিবেশন করেন উদীপ্ত চৌধুরী ও জনপ্রিয় শিল্পী পলি সায়ন্তী। অনুষ্ঠানটি সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় ঠিকানার পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি এম এম শাহীন।
Posted ১:৪৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh