বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন ২০২১
কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট ডনোভান রিচার্ডসের হাতে সম্মাননা তুলে দেন আবু জাফর মাহমুদ।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশী মালিকানাধীন প্রথম হোম হেলথ কেয়ার প্রতিষ্ঠান বাংলা সিডিপ্যাপ। এক যুগেরও অধিককাল সময় ধরে স্থানীয় বাংলাদেশী আমেরিকান সহ বিভিন্ন কমিউনিটির মানুষকে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে আসছে বাংলা সিডিপ্যাপ। বিশেষ করে পরিবারের কাজকর্মে অক্ষম বয়স্কদের সেবাদানই প্রতিষ্ঠানটির মুখ্য উদ্দেশ্য। সময়ের ব্যবধানে বাংলা সিডিপ্যাপ’র সেবাদান কার্যক্রমের বিস্তৃতি ও প্রসার ঘটেছে নিউইয়র্ক সিটি জুড়ে। জ্যাকসন হাইটস, ব্রুকলীন, জ্যামাইকা সহ বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকাতে বাংলা সিডিপ্যাপ’র রয়েছে বেশ কয়েকটি অফিস। গ্রাহক সেবা দ্রুততর করতে জ্যাকসন হাইটসে বর্তমান অফিস ভবনের নীচ তলায় বৃহত্তর পরিসরে আরো একটি অফিস খুলেছে বাংলা সিডিপ্যাপ। জ্যাকসন হাইটসের ৭২-২৮ ব্রডওয়েতে নূতন এই অফিস ভবন উদ্বোধন করা হয় গত ১০ জুন, বৃহস্পতিবার বিকেলে। নূতন এই অফিস ভবন আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন বর্তমান কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট ডনোভান রিচার্ডস। যিনি পুনরায় ২২ জুন অনুষ্ঠেয় ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে একই পদে লড়ছেন। নূতন এ অফিস উদ্বোধন উপলক্ষে ত্রিমাত্রিক এবং ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলা সিডিপ্যাপ। উদ্বোধনী পর্ব ছাড়াও কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডনোভানের নির্বাচনী তহবিলে বাংলা সিডিপ্যাপ পরিবারের পক্ষ থেকে বড় ধরণের অনুদান দেয়া হয়। এছাড়া একই অনুষ্ঠানে সম্মানিত করা হয় প্রতিষ্ঠানটিতে বিগত এক দশক ধরে কর্মরত শিউলি ফেরদৌস বেগমকে।
উদ্বোধনী পর্বে বাংলা সিডিপ্যাপ’র প্রাণ পুরুষ, প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী আবু জাফর মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় সংক্ষিপ্ত আলোচনা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট ডনোভান রিচার্ডস এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশী আমেরিকান ডেমোক্রেট নেতা মুর্শেদ আলম। বাংলা সিডিপ্যাপ’র প্রতিষ্ঠা, উত্থান এবং কমিউনিটি সেবায় বিশেষ অবদান রাখার প্রসঙ্গ উঠে আসে আবু জাফর মাহমুদের বক্তব্যে। বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আবু জাফর মাহমুদ নিজ প্রতিষ্ঠানের সেবামূলক কর্মকান্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে বার বার হয়ে পড়েন আবেগ প্রবণ। তিনি বলেন, ব্যবসায়িক নয় বরং সেবার আদর্শ নিয়েই হোম কেয়ার ব্যবসায় নিজেকে নিবেদিত করেছি। বিশেষ করে পরিবারের বয়স্ক অসহায় মানুষদের সেবা প্রদানের জন্য বাংলা সিডিপ্যাপ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। হোম কেয়ার সেবার মধ্য দিয়ে মানুষের যে ভালোবাসা ও দোয়া পেয়েছি সেটাই আমার জীবনের বড় পাওয়া। তিনি এই সুযোগ বঞ্চিতদের মাঝে সেবা পৌছে দেয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এবং নিউইয়র্ক স্টেট প্রশাসনের প্রশংসা করে আবু জাফর মাহমুদ বলেন, মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে এদেশের সরকার যে ধরণের নিরাপত্তার বিধান করেছে তা অনন্য। এ প্রসঙ্গে তিনি মেডিকেইড ও মেডিকেয়ার পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বাংলা সিডিপ্যাপ’র মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মাঝে সেবা পৌছে দিতে আমাদের প্রয়াস অব্যাহত থাকবে। করোনা মহামারির সময় বাংলা সিডিপ্যাপ পরিবার মানুষের সেবায় নির্ভিকভাবে কাজ করেছে। তিনি বলেন, সেবা ও কর্ম দক্ষতার মধ্য দিয়ে আমরা হিমালয় শৃঙ্গ সম উচ্চতায় পৌছতে চাই। জাতি হিসেবে বাংলাদেশীদের যে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে মানু্েযষর সেবার মধ্য দিয়ে সে ইতিহাস প্রবাসে তুলে ধরতে চাই। আবু জাফর মাহমুদ কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট ডনোভান রিচার্ডসের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় কুইন্স কাউন্টিকে তিনি সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে চলেছেন। ভবিষ্যতে এ ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী ২২ জুনের প্রাইমারিতে তাকে পুনরায় নির্বাচিত করার আহ্বান জানান আবু জাফর মাহমুদ।
ডনোভান রিচার্ডস আবু জাফর মাহমুদ এবং তার প্রতিষ্ঠিত বাংলা সিডিপ্যাপ’র কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন। কুইন্স কাউন্টির বিভিন্ন সমস্যার সমাধান এবং বর্তমান অবস্থান উঠে আসে তার বক্তব্যে। ইমিগ্র্যান্ট পরিবারের সন্তান হিসেবে নিউইয়র্ক সিটির রাজনীতিতে কিভাবে তার অভিষেক তার বর্ণনা দেন। ডোনাভান রিচার্ড বলেন, আমিও আপনাদের মতো ইমিগ্র্যান্ট পরিবারের সন্তান। আমি আমার পরিবারের কষ্ট দেখেছি। যে কারণে আমি আপনাদের কষ্ট বুঝি। তিনি বলেন, আমি সিটি কাউন্সিল থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম। আপনাদের ভোটেই আমি কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হই। এবার আবারো নির্বাচন করছি। এবারের নির্বাচনটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমরা যারা ইমিগ্র্যান্ট এবং মুসলিম কমিউনিটির মানুষ আমাদের রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আভিভূত হবে। আমাদের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। তিনি বলেন, এই স্বল্পসময় আমি মেয়র ব্লাজিওর কাজ করে কুইন্সের জন্য ৭০ মিলিয়ন বাজেট পাস করেছি। এই কুইন্সে ১৯০ দেশের প্রায় ৩৫০টি ভাষার মানুষ বসবাস করছে। তাদের পাশে আমাদের দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, আমি এবার নির্বাচিত হলে কুইন্সের স্কুলগুলোতে শতভাগ হালাল খাবার পরিবেশনের উদ্যোগ নেবো। যদিও এখন কিছু কিছু স্কুল এটি পাইলট প্রকল্প হিসেবে চলছে। কুইন্সে রয়েছে দুটো এয়ারপোর্ট। জেএফকে আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট এবং লাগোর্ডিয়া এয়ারপোর্ট। এই দুটো এয়ারপোর্টে ২০ হাজার জব সৃষ্টি হচ্ছে। যার মধ্যে ১০হাজার ইউনিয়ন জব। এছাড়া অ্যাসেম্বলিওম্যান কাটেলিনা ক্রুজের সহযোগিতায় আমরা কুইন্সে ইমিগ্র্যান্ট ওয়েলকাম সেন্টার করছি। যাতে থাকবে ওয়ান স্টপ সার্ভিস।
স্থানীয় বাংলাদেশীদের ব্যবসায় বাণিজ্য সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দেন ডনোভান রিচার্ডস। আগামী ২২ জুনের প্রাইমারীতে পুনরায় তাকে নির্বাচিত করার জন্য বাংলাদেশী কমিউনিটির প্রতি আবেদন জানান তিনি। বক্তব্য শেষে তিনি ফিতা কেটে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন বাংলা সিডি প্যাপ’র নূতন অফিস। অনুষ্ঠানে আবু জাফর মাহমুদ বাংলা সিডিপ্যাপ পরিবারের পক্ষ থেকে ৮ হাজার ৯শত ডলারের চেক তুলে দেন ডনোভান রিচার্ডসের হাতে। নির্বাচনী তহবিলের জন্য আর্থিক এ অনুদান পেয়ে অভিভূত হয়ে পড়েন কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট। বাংলা সিডিপ্যাপ’র সাফল্যের ঝুড়িতে বড় ধরণের যে সংযোজন ঘটেছে এজন্য আবু জাফর মাহমুদ তার অফিসের কর্মকর্তা ও সহকর্মীদের অবদানের কথা উল্লেখ্য করেন। আর তারই অংশ হিসেবে তিনি শিউলি বেগমের হাতে তুলে দেন ১০ হাজার ডলারের চেক ও সম্মাননা। প্রধান অতিথি ডনোভান রিচার্ডস শিউলী বেগমকে সম্মাননা ও চেক হস্তান্তর করেন। এসময় প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক লেনদেন কর্মকর্তা কামরুল হাসান উপস্থিত ছিলেন। সম্মাননা চেক প্রাপ্তির প্রতিক্রিয়ায় গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শিউলী বেগম। প্রধান অতিথির হাতে বাংলা সিডি প্যাপ’র পক্ষ থেকে সম্মাননা তুলে দেন আবু জাফর মাহমুদ। বিশেষ অতিথি মোর্শেদ আলমকেও সম্মাননা ক্রেষ্ট প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত ও দোয়া মুনাজাত পরিচালনা করেন জ্যাকসন হাইটস ইসলামী সেন্টারের ইমাম ও খতিব মওলানা মোহাম্মদ সাদেক। বাংলা সিডিপ্যাপ’র অধিকতর সমৃদ্ধি কামনায় দোয়া করা হয়। অনুষ্ঠানে সিডিপ্যাপ’র সকল অফিস কর্মকর্তা সহ শুভানুধ্যায়ীগণ অংশ নেন। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কামরুল ফেরদৌস, কানিজ সুলতানা রুবি, রাজশ্রী, খুরশিদা লাকি, জুবায়ের আহমেদ, ববিতা আক্তার নাজমা, ওয়ালিদুল ইসলাম, আব্দুল হাকিম, সাজেদা আক্তার, তফুরা প্রমুখ। উল্লেখ্য বাংলা সিডি প্যাপ নিউইয়র্ক স্টেটের একটি লাইসেন্সড হোম হেলথ কেয়ার কোম্পানী। বিগত ১৩ বছর যাবত নিউইয়র্ক সিটিতে অত্যন্ত বিশ্বস্থতা সুনামের সাথে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে আসছে। হোম হেলথ এইডদের প্রশিক্ষণ এবং সার্টিফিকেট ক্লাশের ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। এছাড়া মেডিকেইড, মেডিকেয়ার সহ এমএলটিসি সম্পর্কিত হেলথ ইন্সুরেন্সের ব্যাপারে সহযোগিতা করা হয়ে থাকে।
Posted ১:০৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৭ জুন ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh