বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০
নিউইয়র্ক সিটি স্মরণকালের ভয়াবহ আর্থিক মন্দাবস্থা মোকাবিলা করছে। সিটির লাখ লাখ বাসিন্দা বেকার। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ। বন্দুক সহিংসতা ও আইন শৃংখলা পরিস্থিতির নজিরবিহিন অবনতি। অপরিচ্ছন্নতা ও বিরাজমান নিরাপত্তাহীনতার উদ্বিগ্ন মানুষ শহর ছাড়ছেন। চুতর্থ দফায় সিটির বিভিন্ন ব্যবসায় বাণিজ্য পুনরায় খুলে দিলেও প্রাণ ফিরেনি তাতে। নাগরিক জীবনে ছাপ পড়েনি স্বাভাবিকতার। উল্টো উদ্বেগ-উৎকন্ঠা ও অনিশ্চয়তা বাড়ছে জনমনে। চলমান এসব সমস্যা সমাধানে মেয়র বিল ডি ব্লাজিও কার্যকর কোন উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেননি। করোনা মহামারিকালে গর্ভনরের সাথে যৌথ উদ্যোগে সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারলেও এখন অনেক অনেক কিছ্ইু সামলাতে পারছেন না মেয়র। বরং তিনি জড়িয়ে পড়ছেন নানাবিধ বিতর্কে। এড়িয়ে চলছেন সিটির প্রাণ ব্যবসায়ী মহলকে। ফলে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা ফুঁসে উঠেছেন মেয়র ব্লাজিওর বিরুদ্ধে। প্রভাবশালী এসব ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ রাজনীতি ছেড়ে নিউইয়র্ক সিটি বাঁচানোর তাগিদ দিয়েছেন মেয়রকে।
ডেমোক্র্যাট দলীয় বিল ডি ব্লাজিও ২০১৪ সাল থেকে নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এখন চলছে তার দ্বিতীয় মেয়াদের তৃতীয় বর্ষ। নিজেকে তিনি মনে করেন প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাট এবং কর্মজীবী মানুষের বন্ধু। কিন্তু সাম্প্রতিককালে সিটির আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশ প্রশাসন, স্কুল খুলে দেয়া নিয়ে শিক্ষা বিভাগ, করোনা মহামারি নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ সহ সিটির অন্যান্য বিভাগীয় প্রধানদের সাথে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন তিনি। এসব কারণে সিটির স্বাভাবিক ও উন্নয়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নিউ্ইয়র্ক সিটিবাসীর সার্বিক নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতা ও নিম্নগামী জীবনমান প্রশ্নে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন শীর্ষ ব্যবসায়ীগণ। সিটির ১৬৭০টি শীর্ষ স্থানীয় ও প্রভাবশালী ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীগণ চিঠি লিখেছেন মেয়র ব্লাজিওকে। গত ১১ সেপ্টেম্বর সম্মিলিতভাবে লিখিত পত্রে সিটির আইনশৃংখলা পরিস্থিতির নজিরবিহিন অবনতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অপরিচ্ছন্ন ও অস্বস্থিকর পরিবেশ নগরীকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছে। ঝুঁকিতে ফেলেছে করোনা পরবর্তী সময়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের বিষয়টি। এসব কারণে সিটির বাণিজ্যিক এলাকা সহ পাঁচটি বরোর বাসিন্দারা ব্যাপক উৎকন্ঠার মধ্যে সময় কাটাচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয় চিঠিতে। এজন্য ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ মেয়রকে দায়ী করেছেন দুর্বল নেতৃত্ব ও ব্যবসায়ের প্রতি অবান্ধবসুলভ আচরণের জন্য।
মহামারি করোনায় টানা চার মাসে নিউইয়র্ক সিটিতে প্রাণ হারায় ২৪ হাজার মানুষ। লকডাউনকালীন প্রতিদিন সিটিকে লোকসান গুণতে হয় ১৭৩ মিলিয়ন ডলার। বন্ধ হয়ে যায় ছোট বড় সব ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত। বেকার হয়ে পড়ে লাখ লাখ মানুষ। ভেঙ্গে পড়ে গোটা সিটির অর্থনীতি। বিধ্বস্ত এই অর্থনীতিকে কিভাবে চাঙ্গা করা যায় এ নিয়ে মেয়র ব্লাজিওর সাথে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ। গত জুলাই মাসে হার্স্ট মেডিয়া কনগ্লুমারেটের প্রধান নির্বাহী স্টিভেন সুয়ার্জ মেয়র ভবন গ্রেসী ম্যানসনে সাক্ষাত করেন ব্লাজিওর সাথে। সিটির ব্যবসায় বাণিজ্য সচল করে জনজীবনকে স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে সিটি প্রশাসনের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রস্তাব দেন তিনি। মেয়র ব্লাজিও প্রস্তাবটি গ্রহণ করে ইতিবাচক সাড়া দেন। কিন্তু প্রায় দু’মাস অতিক্রান্ত হলেও এব্যাপারে বাস্তব কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেননি মেয়র। উল্টো সিটির আইন শৃংখলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি ও অন্যান্য অব্যবস্থাপনা ব্যবসায়ী মহলেেক চিন্তিত করে তুলে। তারা মনে করছেন মেয়র ব্যবসায়ীদের গুরুত্ব না দিয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন সিটিকে। মেয়র ব্লাজিওর মেয়াদকাল শেষ হবে ২০২১ সালে। শেষ পর্যায়ের এসময়ে তার সাথে ব্যবসায়ীদের বুঝাপড়ার বিষয়টি সম্পর্কের জটিলতা আরো বাড়িয়েছে। মেয়র ব্লাজিও দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৪ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর সিটির কর্মজীবী মানুষের প্রতি তার আনুকূল্য দেখানোর চেষ্টা করছেন। অপরদিকে দূরে ঠেলে দিচ্ছেন ব্যবসায়ী মহলকে। অথচ তার উত্তরসূরী মেয়র ব্লুমবার্গ ব্যবসায়ীদের সাথেই একটি চমৎকার সম্পক বজায় রেখেছিলেন।
মেয়র ব্লাজিওকে লিখিত চিঠিতে ১৭০জন স্বাক্ষরকারীর মধ্যে আছেন গোল্ডম্যান স্যাক্সস, জেট ব্লু, মাস্টার কার্ড, মর্গাণ স্ট্যানলি, ফাইজার ও ওয়ার্বী পার্কারের মতো প্রতিষ্ঠান। এছাড়া রয়েছে বড় বড় রিয়েল এস্টেট ও ল’ ফার্ম। এসব ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ তাদের কর্মস্থল ও প্রতিষ্ঠানে ফিরতে চান। এজন্য তারা সর্বাগ্রে জন নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। তারা মনে করেন সিটি কর্তৃপক্ষের উচিত হবে এই মুহূর্তে প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান সমূহের দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়া। সিটিতে সাম্প্রতিক কালে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে ওয়ান ইলেভেনের পর স্বল্পকালীন এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এর আগে সত্তুরের দশকে আর্থিক মন্দায় পড়ে নিউইয়র্ক সিটি। বিরাজমান অপরাধ কর্মকান্ড ১৯৯০ সালে সংঘটিত অপরাধ কর্মকান্ডের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ভয়ানক আকার ধারণ করেছে বন্দুক সহিংসতা। এমতাবস্থায় রাস্তায় এবং বিশেষ করে রাতের বেলায় কাজ করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ মেয়র এবং সিটি প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করে তাকে রাজনীতি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। তবে মহামারিকালীন মেয়রের কার্যক্রমের কোন সমালোচনা করেননি ব্যবসায়ীরা। নজিরবিহিন বেকারত্ব, গৃহহীন মানুষদের নিয়ে চিন্তিত ব্যবসায়ী মহল। করোনার কারণে গৃহহীনদেরকে হোটেলে স্থান দেয়া হয়েছে। সিটির বিপুল সংখ্যক মানুষ উপশহর এবং অনেকে অবকাশকালীন বাড়ীতে চলে গেছেন। দ্রুত স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে না পারলে তারা সহসা সিটিতে ফিরবেন না। এসব প্রশ্ন ও দাবি দাওয়াকে অবশ্য স্বাগত জানিয়েছেন মেয়র। তিনি এক টুইট বার্তায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ী মহলের প্রতি। তিনি সিটির বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছেন বাজেট ঘাটতিকে। বিশেষ করে ফেডারেল সহায়তা না পেলে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ কঠিন বলে মন্তব্য করেন তিনি। আর্থিক দূরাবস্থা কাটিয়ে উঠতে তিনি অতিরিক্ত ট্যাক্স প্রদানের আহ্বান জানান ব্যবসায়ীদের প্রতি। দু’বছরে বিদ্যমান ৯ বিলিয়ন ডলার বাজেট কাটিয়ে উঠতে সিটির অনেক সার্ভিস বাতিল করতে হতে পারে বলে জানান মেয়র ব্লাজিও।
Posted ৭:৩৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh