বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করার উদ্দেশ্যে মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্ত অতিক্রমের ঘটনা অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে। সীমান্তে ওপারে মেক্সিকো ভূখণ্ডে অসংখ্য বিদেশির উপস্থিতিতে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ইমিগ্রেশন ইস্যু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অফ স্টেট অ্যান্টনি জে. ব্লিঙ্কেন গতকাল বুধবার মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডরের সঙ্গে মেক্সিকো সিটিতে বৈঠকে মিলিত হন। তারা এমন এক সময়ে আলোচনায় মিলিত হলেন যখন সীমান্তে জড়ো হওয়া হাজার হাজার অভিবাসন প্রত্যাশী বিদেশি ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র সীমান্ত অভিমুখে আরো অধিক সংথ্যক বিদেশি অগ্রসর হচ্ছিল।
চলতি বছরের শেষ মাসে এমনও দিন গেছে যে দিনগুলোতে ইউএস বর্ডার পেট্টল এজেন্টরা মেক্সিকো সীমান্তে ১০ হাজারের অধিক অভিবাসন প্রত্যাশীর মুখোমুখি হয়েছে। মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে সেক্রেটারি অফ স্টেটের সঙ্গে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি আলেজান্দ্রো এন মায়োরকাস এবং হোয়াইট হাউসের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি উপদেষ্টা লিজ শেরউড-র্যান্ডালও ছিলেন। গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন লাভের আশায় বিদেশিদের এক বিশাল কাফেলা মেক্সিকোর ভেতর দিয়ে উত্তর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত অভিমুখে ধেয়ে যাচ্ছিল, সেটিকে ঠেকানো মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশের জন্য চ্যালেঞ্জের মতো। মেক্সিকোর স্থানীয় কর্মকর্তারা এবং সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী এ ধরনের একটি কাফেলায় লোকসংখ্যা ছিল ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার। বারশো মাইলের বেশি দীর্ঘ সীমান্তে অন্যান্য পয়েন্টের দিকেও এ ধরনের বিপুল জনস্রোত ধেয়ে যাচ্ছে বলে রিপোর্ট পাওয়া গেছে।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে দেশের দক্ষিণ সীমান্ত তাঁর জন্য অব্যাহত এক রাজনৈতিক দুর্বলতা এবং সার্বক্ষণিক মাথাব্যথা, যিনি ট্রাম্পের মেয়াদে আরোপিত বহু ধরনের বিধিনিষেধের পর যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন ব্যবস্থায় মানবতা ও আমেরিকান মূল্যবোধ পুনরুদ্ধার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনে। তবে প্রেসিডেন্ট বাইডেন সীমান্তে এসাইলাম আবেদন গ্রহণের সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ায় এবং অভিবাসন প্রত্যাশীদৈর ভেনিজুয়েলা ও কিউবায় ডিপোর্ট করার জোর প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।
যদিও মেক্সিকো ভূখন্ড পেরিয়ে আসা বিদেশিদের দলবদ্ধ হয়ে উত্তরের দিকে আগমণের দৃশ্য সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে এবং আমেরিকান সীমান্তে পৌঁছার আগেই মেক্সিকো কর্তৃপক্ষ সেগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে, সেক্রেটারি ব্লিঙ্কেনের মেক্সিকো সফরের ঠিক আগে এ ধরনের বিপুল সমাবেশের আয়োজন মনোযোগ আকৃষ্ট করেছে এবং এটি বিশেষভাবে আয়োজন করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই সমাবেশে হন্ডুরাস, এল সালভাদর, ভেনিজুয়েলা এবং হাইতি সহ অন্যান্য দেশের লোকজন রয়েছে। গত নভেম্বরে মেক্সিকোর কর্মকর্তারা কয়েকশ অভিবাসন প্রত্যাশীলে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পর তারা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে সীমান্ত অভিমুখে যাচ্ছিল। রিপাবলিকানরা বাইডেনের ইমিগ্রেশন নীতির কঠোর সমালোচনা করছে এবং সীমান্ত পরিস্থিতি আগামী নির্বাচনে বাইডেনের পুন:নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনাকে এক নাজুক অবস্থার মধ্যে ফেলেছে। টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবোট একটি আইনে স্বাক্ষর করেছেন যে, আইন স্টেট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে অধিকার দিয়েছে যে তারা সীমান্ত অতিক্রমকারী যেকোনো অভিবাসন প্রত্যাশীকে গ্রেফতার করতে পারবে। এজন্য পূর্বানুমোদনের প্রয়োজন হবে না।
যুক্তরাষ্ট্র অভিমুখে হাজারো অভিবাসনপ্রত্যাশী
মেক্সিকোর দক্ষিণাঞ্চল থেকে প্রায় সাত হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীর একটি দল গত ২৪ ডিসেম্বর হেঁটে যুক্তরাষ্ট্র সীমান্ত অভিমুখে যাত্রা করেছে। এদের বেশির ভাগই দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার দেশ থেকে মেক্সিকোয় ঢুকেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদরের সঙ্গে অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা কিভাবে হ্রাস করা যাবে, তা নিয়ে আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন। এই বৈঠক হওয়ার কথা।
এদিকে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ওব্রাদর বলেছেন, অভিবাসনপ্রত্যাশী সংকট নিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আবারও একত্রে কাজ করতে আগ্রহী। এদিকে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ওব্রাদর তাঁদের যৌথ সীমান্তে অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যার নাটকীয় বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। হোমল্যান্ড সিকিউরিটির তথ্যে জানা গেছে, ২০২২ সাল এবং ২০২৩ সাল উভয় অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তে অবৈধভাবে পাড়ি জমাতে গিয়ে ২০ লাখের বেশি মানুষ ধরা পড়েছে। গত সেপ্টেম্বরে মাত্র এক মাসেই যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দুই লাখ অবৈধ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে আটক করে।
সর্বশেষ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দলটি খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের উৎসব বড়দিনের আগে গুয়েতেমালা সীমান্তের কাছে মেক্সিকোর দক্ষিণাঞ্চলীয় টাপাচুলা শহর থেকে রওনা দিয়েছে। এই দলে অন্তত তিন হাজার শিশু রয়েছে বলে এক অধিকারকর্মী জানিয়েছেন। স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, এই কাফেলার বেশির ভাগ অভিবাসনপ্রত্যাশী কিউবা, হাইতি ও হন্ডুরাসের বাসিন্দা। তবে কেউ কেউ বাংলাদেশ ও ভারত থেকেও সেখানে গেছে। অনেকে বলেছে, ট্রানজিট অনুমতির জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার পর তারা একত্রে রওনা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। অধিকারকর্মী লুইস গারসিয়া ভিলাগ্রান অভিবাসনপ্রত্যাশীদের এই কাফেলায় সঙ্গী হয়েছেন।
তিনি জানান, গুয়েতেমালার সঙ্গে মেক্সিকোর দক্ষিণ সীমান্ত খোলা থাকে। সেখানে সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন ৮০০ থেকে এক হাজার মানুষ ঢুকছে। টাপাচুলা শহর থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা বের না হলে শহরের পুরো শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে।তিনি জানান, এই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কাছে উপকূলীয় মহাসড়ক হয়ে হেঁটে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় খোলা নেই। এই অভিবাসনপ্রত্যাশীর বিশাল দলটি গত ২৪ ডিসেম্বর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার পথ হেঁটে পাড়ি দেয়।
মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের এই বিশাল মিছিল বাইডেনের অভিবাসননীতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। বাইডেনের অভিবাসননীতিতে বড় পরিবর্তন আনতে দাবি জানিয়ে আসছে রিপাবলিকানরা। এই বিষয়ে বাইডেনের ওপরে চাপ বাড়াতে তারা ইউক্রেন ও ইসরায়েলের জন্য বড় অঙ্কের মার্কিন সহায়তা তহবিল আটকে দিয়েছে। সূত্র : বিবিসি
Posted ৫:৫৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh