বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১২ মে ২০২২
যুক্তরাষ্ট্রের ৮ কোটি ৩০ লাখ মানুষ তাদের নিজ বাড়িতে বসবাস করেন। সময়ের ব্যবধানে তাদের বাড়ির মূল্য বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অনেকে তাদের বাড়ি বিক্রয় করে অন্য খাতে বিনিয়োগ করছেন এমনও আছে। সমাজবিজ্ঞানিরা বর্তমান সময়কে বিরাট রাজনৈতিক বিভাজন ও নাটকীয় সাংস্কৃতক উত্থানের যুগ হিসেবে দেখছেন। এর মধ্যে নীরবে এমন এক সময়ের আবির্ভাব ঘটেছে যখন বিপুল সংখ্যক আমেরিকানের জন্য সুযোগ আর্থিকভাবে পুরস্কৃত হওয়ার। ১৫ কোটি ৮০ লাখ আমেরিকানের কর্মসংস্থান রয়েছে, মানুষ যখন চাঁদে পা রেখেছে ওই সময়ের পর কর্মজীবীদের সম্ভাবনা আর কখনও এত উজ্জ্বল ছিল না।
মোট কর্মী সংখ্যার প্রায় অর্ধেকের রিটায়ারমেন্ট একাউন্ট আরও স্ফীত হয়ে ওঠেছে স্টক মার্কেটে দীর্ঘকাল যাবত বিনিয়োগ করার কারণে। যারা নিজ বাড়ির মালিক, তাদের বাড়ির মূল্য বৃদ্ধি তাদের ভাগ্যতারকাকে আরও উজ্জ্বল করেছে। কিন্তু এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে তেমন কোনো আলোড়ন নেই। যে দেশে চমক সৃষ্টিকারী খবরও কয়েক ঘন্টার মধ্যে বাসি হয়ে যায়, সেখানে স্থাবর সম্পত্তির মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না, যারা বিশেষ করে তাদের নিজ বাড়িতে বাস করেন এবং কখনও বাড়ি বিক্রয় করার কথা ভাবেন না। কিন্তু যারা আসলেই রিয়েল এস্টেট সম্পত্তির মূল্য নিয়ে ভাবেন, তারা যারা বাড়ি কেনার সম্ভাব্য ব্যক্তি, তাদের ও মালিকদের সম্পদের মধ্যে অসমতার কথা ভাবেন।
অস্থির স্টক মার্কেট হয়তো ইঙ্গিত দিচ্ছে যে বাড়ির বর্তমান মূল্য বাড়ি মালিকদের জন্য লোভনীয় দ্রুততার সঙ্গে বৃদ্ধি পেলেও তা অচিরেই শেষ হবে। অর্থনীতিতে মন্দা আসবে, মুদ্রাস্ফীতি আরও বাড়বে, জ্বালানির মূল্য এবং যেকোনো বিনিয়োগে ব্যাংকের সূদের হার যেভাবে বৃদ্ধি পাবে তাতে বিগত বছরগুলোতে স্থাবর সম্পদ, বিশেষ করে বাড়ির মূল্যে আয়ের যে স্বপ্ন দেখতেন তা সামান্যই অর্জিত হবে। কিন্তু এ মুহূর্তে রিটায়ারমেন্টর অর্থের প্রবাহ সহায়ক হচ্ছে অবসর ও বিনোদনে কাটানোর জন্য সিলিকন ভ্যালিতে বাড়ি কেনার কাজে। এর ফলে নজীরবিহীনভাবে কর্পোরেট মুনাফা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং কাজের যোগ্যতা রয়েছে এমন সকলকে কর্মস্থানের সম্ভাবনার আভাস প্রদান করছে যে ভালো বেতনের চাকুরি তাদের নাগলের মধ্যেই।
গত মার্চ মাসে ৪৫ লাখ লোক স্বেচ্ছায় তাদের কাজ ত্যাগ করেছে। ২০২০ সালে ব্যুরো অফ লেবার স্ট্যাটিসটিকস পরিসংখ্যার রাখতে শুরু করার পর এটাই ছিল চাকুরি ত্যাগের সর্বোচ্চ সংখ্যা। কয়েক বছর আগে স্বেচ্ছায় কাজ ছেড়ে দেওয়ার মাসিক গড় ছিল ৩০ লাখ থেকে ৩৫ লাখ। একজন অর্থনীতিবিদ মধ্যপন্থী সেন্টার ফর ইকনমিক পলিসি রিসার্চের কো-ফাউন্ডার ডিন বেকার বলেছেন, কাজ ত্যাগ করার প্রবণতা থেকে সহজে নেতিবাচক দিক ধারণা করা যেতে পারে, কিন্তু কর্মত্যাগকারী ৪০ হাজার পরিবার হয়তো ভালোই করছে। তিনি বলেন, ১৯৯০ এর দশকের কথা ভাবলেও একই অবস্থা দেখা যাবে এবং এর আগে ১৯৬০ এর দশকেও একই ঘটনা ঘটেছিল। ইউএস ফরেস্ট সাভিস থেকে অবসর গ্রহণকারী ডিউইট মেকিনসন বলেন, “আমাদের বিনিয়োগের কারণে মোট সম্পদের পরিমাণ মিলিওনিয়ারের পর্যায় ছাড়িয়ে গিয়েছিল, যা ৪০ বছর আগে আমরা যখন বিয়ে করি তখন ধারণা করার মত ছিল না। ক্রেডিট সুইসের হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে মিলিওনিয়ারের সংখ্যা ২২ মিলিয়ন বা ২ কোটি ২০ লাখ, যা ২০১৪ সালে ছিল ১৫ মিলিয়ন। মেকিনসন বলেন, ‘কোনোকিছু কিনতে আমি কুপন ব্যবহার করি। আমার এক মেয়ে বলেন, মা এধরনের স্বভাব খুবই বিব্রতকর।’ কিন্তু আমরা সঞ্চয়ে বিশ্বাস করি, এখন আমার কন্যাও কুপন ব্যবহার করে।”
প্রতিটি অর্থনৈতিক লেনদেনের বিভিন্ন দিক থাকে। ২০০০ সালে কেউ বাড়ির দাম কম বলে ভাবতো না। কিন্তু ছয় বছর পর বাড়ির দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যায় এবং দেশের যেকোনো স্থানে ভাড়াটেদের পক্ষে বাড়ি কেনা বাস্তবে অসম্ভব হয়ে পড়ে। এক দশক আগে হাউজিং মার্কেট চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে ছিল। পরিস্থিতি এমন শোনীয় অবস্থায় চলে গিয়েছিল যে বাড়ির জন্য নেয়া ঋণের মর্টগেজ পরিশোধ করতে না পারায় ২০০৭ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়ে ৭০ লাখের অধিক বাড়ি ফোরক্লোজারে চলে যায়। যারা দ্বিতীয় বাড়ির মালিক হওয়ার আশা করছিল তাদের সেই আশা দুরাশায় পরিণত হয়। কিন্তু এখন এর বিপরীতটাই সত্য। লোকজনের কাছে বাড়ির চেয়েও বেশি অর্থ আছে, তাদের কাছে ব্যাংকের দায়দেনও কম। ফোরক্লোজারের সংখ্যা অনেক কমে এসেছে, যা ২০১৯ সালে মাত্র ১ লাখ ৪৪ হাজার ছিল। করোনা মহামারীর কারণে মরাটরিয়ামের সুবিধার কারণে ফোরক্লোজার কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।
Posted ১০:০৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১২ মে ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh