বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩
ছবি : সংগৃহীত
নিউইয়র্ক সিটি কম্প্রট্রোলার সিটিতে গত প্রায় দেড় বছর যাবত আগত লক্ষাধিক ইমিগ্রান্টের জন্য ৪৩২ মিলিয়ন ডলারের ‘মাইগ্রেন্ট সার্ভিসেস কন্ট্রাক্ট’ অডিট করে কোনো যাচাইবাছাই ছাড়াই মেয়র এরিক অ্যাডামস কর্তৃক এ ধরনের কন্ট্রাক্টে ঢালাও অনুমোদন দেওয়ায় আপত্তি উত্থাপন করেছে। কম্পট্রোলার বিভাগ মেয়রের অবাধ অর্থব্যয়ের প্রবণতা ও সামর্থ হ্রাস করার চিন্তাভাবনা করছে বলে নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টে একথাও উল্লেখ করা হয়েছে যে ইমিগ্রান্ট পরিস্থিতি শোচনীয় হয়ে উঠায় এর মোকাবিলা করতে মেয়র অ্যাডামস তার জরুরী এখতিয়ার কাজে লাগিয়ে দ্রুততার সঙ্গে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয়ের অনুমোদন দিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে যে, মেয়রের এই এখতিয়ার রহিত করা হলে সিটি প্রশাসন সামগ্রিকভাবে ইমিগ্রান্ট পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খাবে।
সিটি কম্পট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডার সতর্ক করেছেন যে ইমিগ্রান্ট সংকট মোকাবিলা করার উদ্দেশ্যে কম্প্রট্রোলারের অফিস মেয়রকে জরুরী চুক্তিতে উপনীত হওয়ার যে এখতিয়ার দেওয়া হয়েছিল তা রহিত করা হতে পারে। তিনি বলেন, এ সংকট গত ১৮ মাসের এবং এটি এখন আর অনাকাংখিত কোনো পরিস্থিতি নয় যে, জরুরীভাবে সমাধান করতে হবে। সিটির অর্থ অবশ্যই বিজ্ঞতা ও সতর্কতার সঙ্গে ব্যয় করতে হবে। তিনি নিউইয়র্ক টাইমসকে জানান যে, গত শুক্রবার তিনি সিটি প্রশাসনকে পাঠানো এক চিঠিতে জানিয়েছেন যে, সিটি কীভাবে ‘ডকগো’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ৪৩২ মিলিয়ন ডলার ব্যয় সম্বলিত ইমিগ্রান্ট সার্ভিস চুক্তি সম্পন্ন করেছে তা জানার জন্য তিনি এ বিষয়ের ওপর অডিট করতে যাচ্ছেন।
প্রতিষ্ঠানটি নিজেদেরকে একটি মেডিক্যাল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান বলে বর্ণনা করেছে। কিন্তু বেশ কয়েক দফা অনুসন্ধান চালিয়ে এবং প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে নিউইয়র্ক টাইমসসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টের ভিত্তিতে তাদের সম্পর্কে কোনো সন্তোষজনক তথ্য পাওয়া যায়নি। বিশেষ করে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী বা এসাইলাম আবেদনকারী নিয়ে কাজ করার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতাই তাদের নেই। কম্প্রট্রোলার ল্যান্ডার অবশেষে ‘ডকগো’র অনুমোদন অস্বীকার করেন, যা ছিল তার দ্বারা সিটির কোনো জরুরী চুক্তি বাতিল করার প্রথম ঘটনা। চুক্তিটি সম্পাদন করা হয়েছিল ৫ মে, কিন্তু কম্প্রট্রোলারের অফিস ১৬ আগস্ট পর্যন্ত এ সম্পর্কে জানতো না অথবা তার ফাইলটি বিলম্বে পেয়েছে এবং এটি পরীক্ষা করে প্রকিউমেন্ট বা উপকরণ সংগ্রহ প্রক্রিয়ার মধ্যে অনেক ত্রুটি পেয়েছে। এছাড়া কোম্পানি যাদেরকে বিভিন্ন কারণে সাব-কন্ট্রাক্ট দিয়েছে, সেক্ষেত্রেও পর্যাপ্ত প্রমাণ নেই এবং যথাযথ মূল্যায়ন করে সাব-কন্ট্রাক্ট দেওয়া হয়নি।
নিউইয়র্ক টাইমস ‘ডকগো’র সঙ্গে সম্পাদিত সিটির চুক্তি পরীক্ষা করে দেখেছে যে, এর মধ্যে বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যা এককভাবে কোম্পানির পক্ষে যায়। এর একটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে, ইমিগ্রান্টদের আবাসনের ব্যবস্থার জন্য প্রতিটি হোটেল রুমের জন্য ‘ডকগো’ কোম্পানিকে প্রতি রাতের জন্য ১৭০ ডলার করে বরাদ্দ করা হয়েছে, কিন্তু বাস্তব অবস্থা হলো, আপস্টেটের মোটেলগুলোর প্রতিরাতের ভাড়া অনেক কম। ফলে কোম্পানিটি অনেক আর্থিক ফায়দা লুটেছে। এই কোম্পানির কার্যক্রমে প্রশ্ন তোলার মতো আরো অনেক দিক আছে, যা সিটি চুক্তি করার সময় খেয়াল করার প্রয়োজন বোধ করেনি, অথবা সিটিকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে।
এছাড়া কোম্পানিটির গড়ে উঠা ও কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ‘ডকগো’র চিফ এক্সিকিউটিভ অ্যান্থনি ক্যাপোন গত শুক্রবার তার চাকুরি ছেড়ে চলে গেছেন। কারণ অ্যালবেনি টাইমস ইউনিয়নের কাছে তিনি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে, তার রিজ্যুমে বা জীবনবৃত্তান্তে উল্লেখ করা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ওপর গ্রাজুয়েশন ডিগ্রির দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা ছিল। এই স্বীকারোক্তি কোম্পানিটির অবস্থার চিত্র সুস্পষ্ট করেছে এবং সিটির সঙ্গে চুক্তি নিয়ে সন্দেহ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। মেয়রের একজন মুখপাত্র চার্লস ক্রেচমার লুটভাক এলছেন যে, কম্পট্রোলার যদি ‘ইমার্জেন্সি মাইগ্রেন্ট সার্ভিসেস কন্ট্রাক্ট বাতিল করেন, তাহলে এসাইলাম প্রার্থী পরিবারগুলো শোচনীয় পরিস্থিতির সম্মুখীণ হবে। কম্প্রট্রোলার যদি এসাইলাম প্রার্থী মানুষগুলোর কল্যাণের ওপর রাজনীতি চাপিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং ইমিগ্রান্ট সংকটকে এখন আর জরুরী সংকট বলে বিবেচনা না করেন, তাহলে সিটির চুক্তিতে তার অনুমোদন না আসা পর্যন্ত এসাইলাম প্রার্থী বিপুল সংখ্যক ইমিগ্রান্টকে রাস্তায় ঘুমাতে হবে।
‘ডকগো’কে কেন্দ্র করে নানা প্রশ্ন উঠা সত্ত্বেও মেয়র এরিক অ্যাডামস ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, বিদ্যমান চুক্তি থেকে তার পিছু হটার কোনো ইচ্ছা নেই এবং এ ব্যাপারে কম্পট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডার তাকে ইতোমধ্যে সবুজ সংকেত দিয়েছেন। এমনকি কম্পট্রোলার যদি কোনো আপত্তি উত্থাপনও করেন, সেক্ষেত্রে মেয়র এককভাবে তার ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। অপরদিকে কম্প্রট্রেলার বলেছেন যে, ‘ডকগো’ যদি চুক্তির বাধ্যবাধকতা প্রতিপালন করে কাজ করে তাহলে তাদের বিল আটকে দেওয়া হবে না। কিন্তু সিটি কম্প্রট্রোলার বিভাগ কোনো ভূঁয়া বিল পরিশোধ করবে না। সিটি বলেছে যে ‘ডকগো’র দায়িত্বে নিউইয়র্ক ও আপস্টেটে ৪,২০০ জন ইমিগ্রান্ট রয়েছে এবং তাদের সিটির কাছে তাদের অপরিশোধিত পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে আনুমানিক ৭০ মিলিয়ন ডলার, অর্থ্যাৎ প্রতি ইমিগ্রান্টের আবাসনের পেছনে গত ৫ মে থেকে ১৬,৭০০ ডলার করে ব্যয় হয়েছে।
Posted ২:০৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh