নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের করেছেন একচল্লিশ বছর বয়স্ক পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত আমেরিকান ট্যাক্সি ড্রাইভার ইশতিয়াক আহমেদ। গত সপ্তাহে ব্রুকলিনে সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট ফেডারেল কোর্টে মামলা দায়ের করেছেন তিনি। তিনি অভিযোগ করেন যে গত জুন মাসের এক শুক্রবার জুমা নামাজের সময় তিনি কনি আইল্যান্ডের মক্কি মসজিদে ভলান্টিয়ারের দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ সময় এনওয়াইপডি’র দু’জন সদস্য একটি ঘোষণা দান ও জুমা নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে আসেন। তখন কোভিড ১৯ এর সতর্কতা বিধি হিসেবে দু’জন মানুষের মধ্যে ছয় দূরত্ব রাখা হতো। একজন পুলিশ সদস্য মসজিদের প্রথম তলায় প্রবেশ করার পর সেখানে আর জায়গা না থাকায় ইশতিয়াক দরজা বন্ধ করে দিয়ে অপর পুলিশ সদস্যকে দ্বিতীয় তলায় যেতে বলেন। পুলিশ সদস্য নাতাশ মোসেলি জোনস রাগান্বিত হয়ে ইশতিয়াকের সঙ্গে তর্ক করেন এবং জোর করে প্রথম তলায় প্রবেশ করেন।

বিষয়টি এখানেই নিস্পত্তি হয়ে গেছে বলে ইশতিয়াক আহমেদ মনে করলেও পুলিশ সদস্য নাতাশ জোনস ৭০ প্রিসিঙ্কটে গিয়ে একটি পুলিশ রিপোর্ট তৈরি করেন, যাতে ইশতিয়াকের বিরুদ্ধে থার্ড ডিগ্রি অ্যাসল্টের অভিযোগ আনা হয়। তিন সপ্তাহ পর শুক্রবার ওই দুই পুলিশ সদস্য আবারও মক্কি মসজিদে যান। সেদিনও ইশতিয়াক ভলান্টিয়ারের কাজ করছিলেন। নামাজের আগেই তারা তাকে আটক করে ৭০ প্রিসিঙ্কটে নিয়ে যায়। তিনি জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ভয়েস অফ সাউথ এশিয়া মসজিদের সিসিটিভি ফুটেজ এর দৃশ্য ও ইশতিয়াকের বক্তব্য দিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।

ফুটেজে সুস্পষ্ট যে ইশতিয়াক নাতাশ জোনস অথবা অন্য কাউকে স্পর্শ পর্যন্ত করেননি। অথচ পুলিশ অফিসার জোনস তার রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন যে ইশতিয়াক আহমেদ তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে।

ঘটনাটি ব্রুকলিনের সিটি কাউন্সিল সদস্য শাহানা হানিফের দৃষ্টিতে আসে এবং তিনি ভিডিও ফুটেজ দেখার জন্য ব্রুকলিন ডিস্ট্রিক্ট এটর্নিকে অনুরোধ জানান। ডিস্ট্রক্ট এটর্নি ফুটেজে কোনো হয়রানি বা পুলিশ অফিসারকে ধাক্কা দেওয়ার কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় ইশতিয়াক আহমেদের বিরুদ্ধে আনীত থার্ড ডিগ্রি অ্যাসল্টের মামলা বাতিল করে দেন। ‘দ্য সিটি’ নামে একটি পত্রিকা গত সপ্তাহে এ ঘটনার ওপর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় যে নাতাশ জোনস ২০০৮ সালে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে একটি সমন জারি করেন এবং এ কারণে নাতাশ জোনসের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলে এনওয়াইপিডি বিভাগীয় শাস্তি হিসেবে নাতাশের ৫ দিনের ছুটি বাতিল করে। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে অপর এক ঘটনায় এনওয়াইপিডি নাতাশ জোনসের বিরুদ্ধে এক অভিযোগের তদন্ত করে এবং অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় তার ১৫ দিনের ছুটি বাতিল করে।

ইশতিয়াক আহমেদ পুলিশ অফিসার নাতাশ জোনসের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ দাবী করলেও এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানা যায়নি। মামলা দায়ের করার পর ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, আমার কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড নেই। আমি জীবনে কখনো গ্রেফতার হইনি। মসজিদে হাজারও মুসল্লির সামনে আমাকে জুমা নামাজ আদায় করতে না দিয়ে গ্রেফতার করে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে।