বাংলাদেশ রিপোর্ট | শুক্রবার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রে কোনো বিদেশি যদি এসাইলাম আবেদন করেন, সেক্ষেত্রে আবেদন করার পর এসাইলাম অফিসগুলো যাতে ছয় মাসের মধ্যে আবেদন নিস্পত্তি করতে পারে সেজন্য ইউএস সিটিজেনশিপ এন্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেকে ৪ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব কংগ্রেসে বিবেচনাধীন রয়েছে। প্রেসিডেন্টের সম্মতিপ্রাপ্ত একটি বাইপার্টিজান বিলের ওপর এ সপ্তাহেই হাউজে প্রথম ভোট হওয়ার কথা। এটি কার্যকর হলে এসাইলাম অফিস থেকে ইমিগ্রেশন কোর্টে পাঠিয়ে দেওয়া এসাইলাম কেসের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে। ইমিগ্রেশন কোর্টগুলোতে বিবেচনার জন্য ইতোমধ্যে ৭ লক্ষাধিক এসাইসলাম আবেদনকারীর মামলা ঝুলে আছে। এগুলো দ্রুত নিস্পত্তির জন্য যথেষ্ট সংখ্যক বিচারক না থাকায় মামলা জট বেড়েই চলেছে। নতুন আইনে এতে তারা নতুন আবেদনের বোঝা লাঘব করতে সক্ষম হবে। এজন্য তারা ৪,৩০০ এর বেশি এসাইলাম অফিসার নিয়োগ করতে পারবে।
এসাইলাম অফিসে আবেদন নিস্পত্তি করতে হলে তার এসাইলাম আবেদনের কারণ প্রমাণ করতে উপযুক্ত দলিলপত্র পেশ করতে হবে। তারা যদি তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয় এবং দ্রুত ডিপোর্টেশনের মধ্যে পড়ে, তাহলে সংশ্লিষ্ট এসাইলাম আবেদনকারীদের জন্য বিনা খরচে আইনজীবী নিয়োগ দেয়ার ব্যবস্থাও করা হবে। ১৪ বছরের নিচে অভিভাবকহীন শিশুদের এসাইলাম আবেদন নাকচ হলে ডিপোর্টেশন আদেশ বাতিল বা পুনর্বিবেচনার জন্য তারাও বিনাখরচে আইনজীবী নিয়োগের সুবিধা লাভ করবে। এজন্য ডিপার্টমেন্ট অফ হেলথ এন্ড হিউম্যান সার্ভিসেসকে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়া হবে। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন নেতারা এ ধরনের ব্যবস্থার প্রতিবাদ করে বলেছেন যে, এর ফলে ইমিগ্রান্টদের জন্য দীর্ঘদিন যাবত চলে আসা নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিলুপ্ত হবে। ন্যাশনাল জাস্টিস সেন্টার বলেছে যে, এ ধরনের বিধি চালু হলে যারা যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে পোর্ট অফ এন্ট্রিতে এসাইলাম আবেদন করেছেন, তাদের জন্য এসাইলাম পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
এসাইলাম অবৈধ ইমিগ্রান্টদের আটক করার দায়িত্বে নিয়োজিত ইমিগ্রেশন এন্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) নতুন বরাদ্দ পাবে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার, যা তাদের বার্ষিক প্রায় ৯ বিলিয়ন বাজেটের অতিরিক্ত। জরুরী ব্যয়ের মধ্যে ৩ বিলিয়ন ডলার থাকবে ডিটেনশন ক্যাপাসিটি বৃদ্ধির জন্য। এছাড়া এসাইলাম আবেদন দ্রুত নিস্পত্তির জন্য, যাতে এসাইলাম অফিসে কোনো আবেদন নিস্পত্তিতে যাতে ছয় মাসের বেশি সময় না হয়, এবং অধিকাংশ আবেদন যাতে ইমিগ্রেশন কোর্টে না পাঠানো হয়, সেজন্য ইউএস সিটিজেনশিপ এন্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেসকে ৪ বিলিয়ন ডলার দেওয়া হবে।
এই বিলে এমন বিধি রয়েছে যে, সীমান্ত ফটকগুলো দিয়ে যদি দৈনিক সাড়ে আট হাজার ইমিগ্রান্ট প্রবেশ করে এবং অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করা ইমিগ্রান্ট সংখ্যা যদি ৫ হাজার হয়, তাহলে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সীমান্ত বন্ধ করতে বাধ্য হবে। তবে মেক্সিকো এবং কানাডা ছাড়া অন্য দেশ থেকে আসা অপ্রাপ্তবয়স্কদের এই সংখ্যার মধ্যে ধরা হবে না। অবৈধ অতিক্রম যদি ৭৫ শতাংশ হ্রাস পায় কেবল তখনই কর্তৃপক্ষ সীমান্ত ফটক খুলবে। এছাড়া এক সপ্তাহে প্রতিদিন যদি ৪ হাজারের বেশি ইমিগ্রান্ট প্রবেশ করে, তাহলে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সীমান্ত বন্ধ করে দিতে পারবে। সীমান্ত বন্ধ করে দিলে যারা যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত অবৈধভাবে অতিক্রমের চেষ্টা করে আটক হবে, তাদেরকে অবিলম্বে ডিপোর্ট করা হবে। কিন্তু অভিভাবকহীন শিশুদের ক্ষেত্রে এ বিধি প্রযোজ্য হবে না, যারা ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার রুলস এর শর্ত পূরণ করতে পারবে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জরুরী ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সম্মতিতে ২০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় বরাদ্দ সম্বলিত একটি কঠোর বাইপার্টিজান ইমিগ্রেশন বিলের ওপর চলতি সপ্তাহেই হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টিভে প্রথম ভোট গ্রহণ করা হবে। সাম্প্রতিক ইতিহাসে কোনো ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট কর্তৃক অনুমোদিত ইমিগ্রেশন বিষয়ক এটিই সবচেয়ে কঠোর ইমিগ্রেশন বিল, যা বাস্তবায়নের সঙ্গে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ জড়িত। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিলটিকে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন এবং ন্যায়সঙ্গত বলে বর্ণনা করেছেন। কংগ্রেসের প্রগ্রেসিভ সদস্যরা এ বিলকে সাবেক প্রেসেডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুগে প্রত্যাবর্তন বলে অভিহিত করছেন। তবে বিলটি নিয়ে ডেমোক্রেটরা একটু বিপদে পড়েছে। হাউস রিপাবলিকান নেতারা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন যে, তারা দীর্ঘ আলোচনামূলক প্যাকেজে কখনই ভোট দেবেন না। তাদের সাথে রক্ষণশীল সিনেটররা এই যুক্তিতে যোগ দিয়েছেন ১১৮ বিলিয়ন ডলারের অধিক ব্যয়বরাদ্দ সম্বলিত আইনের মাধ্যমে ইউক্রেন, ইসরায়েল ও তাইওয়ানে কয়েক বিলিয়ন ডলার সহায়তা পাঠানো হবে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে বেড়ে চলা অবৈধ ইমিগ্রেশন বন্ধ করার জন্য কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটের প্রগ্রেসিভ সদস্যরা বিলটির ব্যাপারে তাদের আপত্তি উত্থাপন করেছেন যে এটি ডোনাল্ড ট্রাম্প-স্টাইলের সীমান্ত নীতির গ্রহণ করার শামিল। এই বিলে, অসহায় ইমিগ্রান্টদের নিরাপত্তা দেওয়ার সুযোগ না রেখে বরং বিদ্যমান সুযোগ সংকুচিত করা হয়েছে। তবুও প্রেসিডেন্ট বাইডেন বিলটি পাসের ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি বলছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র মেক্সিকো সীমান্তকে আরো সুশৃঙ্খল, নিরাপদ, এবং মানবিক করার জন্য এই ধরনের একটি আইন প্রণয়ন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এটি গতবছরের অক্টোবরে ১৪ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দাবীর চেয়ে অনেক বেশি, যা জরুরী ভিত্তিতে নগদ সরবরাহ করার সুযোগ সৃষ্টি করবে। উল্লেখ্য, মেক্সিকো অবৈধ সীমান্ত অতিক্রম গত ডিসেম্বরে সর্বকালের সর্বোচ্চে পৌঁছেলি যা গ্রেফতার সহ প্রায় আড়াই লাখ।
Posted ৭:৪৫ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh