নিউইয়র্ক : | বৃহস্পতিবার, ০১ আগস্ট ২০২৪
বক্তা আবুল কাসেম, আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু ও কাজী শামসুল হক
গত ২৯ জুলাই সোমবার জ্যাকসন হাইটসে আয়োজিত কবিতা সন্ধ্যায় আলোচকরা বলেছেন যে, কবিতা মানুষের কথা বলে, কবিতা মানুষের হৃদয়ে আবেগ সৃষ্টি করে, মানুষকে কল্পনার জগতে নিয়ে যায়। তারা আরও বলেন, মানুষের চোখের সামনে ঘটে যাওয়া বাস্তব চিত্রকে কবিতা উপক্ষো করতে পারে না। তাই শব্দের বিন্যাস কবিতাকেও দ্রোহের অস্ত্রে পরিণত করে এবং প্রতিবাদের ভাষা হয়ে উঠে কবিতা। ‘প্রবাহ সাহিত্য সাংস্কৃতিক পরিষদ, যুক্তরাষ্ট্র’ আয়োজিত ‘কবিতায় দ্রোহ- কবিতায় প্রতিবাদ’ আলোচনা ও কবিতা আবৃত্তি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রবীণ সাংবাদিক এমসিটিভির সিইও কাজী শামসুল হক। প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট লেখক সাংবাদিক আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আবদুল হামিদ সোহেল।
কবি ফারুক খান তাঁর স্বরচিত কবিতা ‘অপেক্ষায় আছি’ এবং নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতা ‘উলঙ্গ রাজা’ আবৃত্তি করেন। সাংবাদিক রিমন ইসলাম কবিদের উৎসাহ দিয়েছেন তাঁর বক্তব্যে। কবিতায় দ্রোহ ও প্রতিবাদের গুরুত্ব নিয়ে আলাপচারিতায় টেনে এনেছেন বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি। তিনি বলেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে কয়েকশ’ ছাত্রছাত্রীকে হত্যা করা আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে স্মরণ করিয়ে দেয়। সীমা লংঘন ও সন্ত্রাস মুক্ত একটি শান্তি পূর্ণ সমাজের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সাপ্তাহিক রানার নিউজ সম্পাদক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন বলেন, কবিতা যত পজিটিভ হবে, আমাদের সাহিত্য তত সমৃদ্ধ হবে। মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী তাঁর রচিত নাটক ‘এক নদী রক্ত’ এর স্মৃতিচারণ করে তিনি সকলকে সাহিত্য সংস্কৃতিতে উদ্যোগী হওয়ার এবং স্বাধীনতাহীনতার গ্লানিমুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান। কবি মোহাম্মদ শাহীনুল ইসলাম চৌধুরী তাঁর রচিত কবিতা ‘প্রতিকার’ পাঠ করেন ও তাঁর লেখনীতে বর্তমান সময়ের সমস্যার প্রতিবাদ করেন ও সমস্যা উত্তরণের দিক নির্দেশনা দেন।
বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম কিরণ, যিনি মুক্তিযুদ্ধে ৯ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন, তিনি তার স্মৃতিচারণ করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৈন্যতায় হতাশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ভারতের কাছে অবনত থাকার জন্য স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়নি। অসংখ্য ভূঁয়া মুক্তিযোদ্ধার আবির্ভাব আমাদের চেতনাকে বিদ্ধ করেছে। চাকুরিতে কোটা রক্ষার নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয়েছে দেশে। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের রক্তের দাগ সহজে মুছে যাবে না। অনুষ্ঠানে আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু ‘প্রবাহ সাহিত্য সাংস্কৃতিক পরিষদের’ সফলতা কামনা করেন। তিনি ভারতের তরুণ কবি আমির আজিজের এর উর্দু কবিতার অনুবাদ ‘সব কিছু মনে রাখা হবে’ পড়ে শোনান, যে কবিতায় আছে কবি মনের ক্ষোভ, অভিমান, আবেগ, অনুভুতির। তিনি এ মাসে কবি আল মাহমুদের জন্ম ও কবি আসাদ বিন হাফিজের মৃত্যুর কথা স্মরণ করেন । অনুষ্ঠানে উভয় কবির জন্য দোয়া করা হয় এবং আল মাহমুদের ‘ক্যামোফ্লজ’ ও কবি আসাদ বিন হাফিজের ‘একটি অনিবার্য বিপ্লবের ইশতিহার’ এবং আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর অনুদিত কয়েকটি শের আবৃত্তি করেন আবদুল হামিদ সোহেল।
অনুষ্ঠানের মূল সমন্বয়ক ও পরিষদের আহ্বায়ক, বেশ কয়েকটি গবেষনা গ্রন্থের লেখক ডঃ আবুল কাশেম সত্য ও সুন্দরের চর্চা করতে সকলকে প্রবাহ সাহিত্য সাংস্কৃতিক পরিষদের সাথে যুক্ত হবার আহ্বান জানান। তিনি তার স্বরচিত কবিতা ‘বীর শ্রেষ্ঠ শহীদ আবু সাঈদ’ ও প্রবাসের বিশিষ্ট কবি কাজী জহিরুল ইসলামের একটি কবিতা আবৃত্তি করেন । নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের সাধারন সম্পাদক মমিনুল ইসলাম মজুমদার সুস্থ সাহিত্য সংস্কৃতিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য প্রবাহকে অগ্রনী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন এর সভাপতি মোহাম্মদ সোলায়মান সুস্থ সাহিত্যের বিকাশ নিয়ে কথা বলেন ও কবি আল মাহমুদের একটি কবিতা পড়ে শোনান। বোর্ড অব এডুকেশনের আইটি স্পেশালিষ্ট সোহেল মাহমুদ, রূপসী চাঁদপুর ফাউন্ডেশনের সভাপতি ফখরুল ইসলাম মাসুম সহ অনুষ্ঠানে অনেক কাব্যানুরাগী উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের সভাপতি কাজী শামসুল হক আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে প্রবাহ সাহিত্য সাংস্কৃতিক পরিষদ ছোট আঙ্গিকে শুরু হলেও ভবিষ্যতে এ সংগঠনের সম্প্রসারণ ঘটবে। অনুষ্ঠানে ঘোষণা করা হয় যে প্রবাহ সাহিত্য সাংস্কৃতিক পরিষদ প্রতিমাসে একটি সাহিত্য সভার আয়োজন করবে এবং বাংলা সাহিত্য চর্চা ও বিস্তারে একটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করবে। এতে সকলের সহযোগিতা কামনা করা হয়।
Posted ১২:৩৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০১ আগস্ট ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh