| বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই ২০২২
যুক্তরাষ্ট্র সফররত গণঅধিকার পরিষদের আহবায়ক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া বলেছেন, বাংলাদেশের হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হলে দেশের সাধারন মানুষের পাশাপাশি প্রবাসীদেরকেও ভূমিকা রাখতে হবে।
মার্কিন রাজনীতিবিদদের সাথে যোগাযোগ করে দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা জানিয়ে তাদের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ, নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে হবে। সুষ্ঠ নির্বাচন হলেই দেশে হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে আসবে বলে। এজন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি। গত ১৬ জুলাই শনিবার বাংলাদেশ প্রগতিশীল জোট (বাংলাদেশ প্রোগ্রেসিভ এলায়েন্স অফ নর্থ আমেরিকা আয়োজিত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়লসটন হলের ফং মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে চ্যালেঞ্জ ও উপায়’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
আজাদ খানের সঞ্চালনায় ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে চ্যালেঞ্জ ও উপায়’ শীর্ষক উক্ত সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ প্রোগ্রেসিভ এলায়েন্স অফ নর্থ আমেরিকা (বিডিপানা)-এর সাধারন সম্পাদক তানভির নেওয়াজ। তিনি তার বক্তবের সাথে দেশের বিভিন্নখাতে সরকারের নানা দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বৃহৎ সেতুর নির্মাণ খরচের কথা তুলে ধরে পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যাপকহারে দুর্নীতি হয়েছে উল্লেখ করেন তিনি। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও বক্তা ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, বর্তমান সরকারের দুর্নীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, অতীতে কোন সরকারের আমলেই এত পরিমাণের দুর্নীতি আর হয়নি।
তিনি সাম্প্রতি অর্থনৈতিক সংকটে পড়া দেশ শ্রীলঙ্কান প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের উদাহরন টেনে ড. কিবরিয়া বলেন শ্রীলঙ্কান প্রেসিডেন্ট দুপুরের খাবার খেতে বাসার গিয়ে আর অফিসে ফিরে আসতে পারেনি। সরকারি বাসভবনে ঢুকে পড়েছিল হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। এর পর থেকে মূলত আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। তবে বাংলাদেশেও এমন ঘটনা আস্বাভাবিক কিছু না। তিনি আরও বলেন, বিনা পরীক্ষায় বাংলাদেশে শিক্ষার্থীরা যেমন জিপিএ-৫ পাচ্ছেন, ঠিক তেমনি বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে এমপি ও মন্ত্রীরা এখন গণতন্ত্র চর্চা করছেন। দেশে এখন আর কোন গণতন্ত্র নেই। দেশের গণতন্ত্র ফেরাতে হলে অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ, নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠ নির্বাচন দিতে হবে। এজন্য দেশের সাধারন মানুষের পাশাপাশি প্রবাসীদেরকেও ভূমিকা রাখার আহবান জানান তিনি। মার্কিন রাজনীতিবিদদের কাছে বারবার গিয়ে দেশের বর্তমান অবস্থার কথা জানানোর জন্য তিনি প্রবাসীদেরকে অনুরোধ করেন।
১৪ বছরেও তারা বাবার হত্যার কোন বিচার হয়নি আক্ষেপ প্রকাশ করে রেজা কিবরিয়া বলেন, আমার বাবা শাহ এএমএস কিবরিয়া সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যেরবাজারের এক জনসভা থেকে ফেরার সময় গ্রেনেড হামলায় হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডে কোন দল সঙ্গে জড়িত ছিল তা জানতে আমি আগ্রহী নই। আমি সত্যটা জানতে চাই। কারা এই হত্যাকাণ্ডের মদদদাতা ছিল? ঢাকায় বসে কারা জড়িত ছিল এবং এলাকায় যারা জড়িত ছিল এবং গ্রেনেডর উৎস কি-এই প্রশ্নগুলো অনেক আগে তুলেছি। এই দুই প্রশ্নের উত্তর কোনো দিনও পাইনি। সেদিন তদন্তকারীদের রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করেছে, এটাও সবাই জানে। কারা প্রভাবিত করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, যারা ক্ষমতায় ছিল। আওয়ামী লীগ এটা করেছে। বিএনপি ঠিক মতো কাজ করেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুটি ইউজলেস লোক ছিল। ফখরুদ্দীন আহমেদ বলে একটা দুষ্ট লোক ছিল যে দেশের অনেক ক্ষতি করেছে। সে ছিল জেনারেল মঈন। তারা এই হত্যাকাণ্ডের বাপারে কোন উদ্যোগ নেয়নি ইচ্ছাকৃত ভাবে।
ড. রেজা বলেন, আমার বাবা হত্যাকান্ডে অনেকেই জড়িত। কিছু লোক টাকার বিনিময়ে কাজ করেছে, কিছু লোক রাজনৈতিক কারণে কাজ করেছে। এক দলে যে এটা হয়েছে তা আমি মনে করি না। ওনার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) দলের ভেতরে যদি ভালো করে তাকান তিনি হয়তো বুঝতে পারবেন ঘটনাটি কি ঘটেছে বা তিনি উপলবদ্ধি করতে পারবেন ঘটনাটি আসলে কি ঘটেছিল। আমার বাবাকে কারা হত্যা করেছে তিনি এটা খুব ভালো করে জানেন।
ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘আমি বিদেশে বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সংস্থায় বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে বড় বড় পদ-পদবি ছেড়ে দেশে ফিরে এসেছি শুধু দেশের মানুষের সেবা করার উদ্দেশ্যে। আমার মনে হয়েছে, নিজ দেশের জনগণের জন্য কাজ করার সময় এসেছে।’ তিনি বলেন, ‘গণফোরাম ছেড়ে দিলেও আমার বাবা শাহ এএমএস কিবরিয়ার মতো আমিও জনগণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই। বাংলাদেশে যারা গণতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে আমি তাদের সঙ্গে কাজ করে যাব।’ আগামী নির্বাচনে ৩শ’ আসনেই গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি, তবে শেখ হাসিনার অধীনে বা আমলে কোন নির্বাচনে নয়। ড. রেজা কিবরিয়া অর্থনীতিবিদ হিসেবে বিদেশি নানা সংস্থায় কাজ করছেন। বাবার মৃত্যুর পর তার মা আসমা কিবরিয়া যে প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করতেন, দেশে এসে তাতে সক্রিয় হন তিনি। বাংলাদেশ প্রোগ্রেসিভ এলায়েন্স অফ নর্থ আমেরিকা (বিডিপানা)-এর প্রতিষ্ঠাতা মোয়াজ্জেম কাজী, সদস্য মাহমুদ রহমান এবং সাজ্জাদ হোসেনসহ অন্যান্য সদস্যরা উক্ত সেমিনারের জন্য সর্বাত্বক সহযোগিতা প্রদান করেছেন। বোস্টন ও পার্শবর্তী বেশ কয়েকটি শহরের প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশি উক্ত সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন। বিপি, নিউ ইয়র্ক
Posted ৬:৪৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh