বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে নিউইয়র্ক সিটি

বাংলাদেশ রিপোর্ট :   |   বৃহস্পতিবার, ২৭ মে ২০২১

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে নিউইয়র্ক সিটি

ছবি : সংগৃহীত

নিউইয়র্ক সিটির সবকিছু চালু হচ্ছে, ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ১৪ মাসের কঠোর লকডাউন ও নিষেধাজ্ঞা শেষে অবারিত জীবনের স্বাদ পাচ্ছে নিউইয়র্কবাসী। এ অঙ্গরাজ্যের অধিকাংশ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে। ২৬ মে থেকে বার ও রেস্টুরেন্টের ওপর জারি থাকা নিষেধাজ্ঞাও আর বহাল নেই।এর ফলে অনেকটাই প্রাণ ফিরে পেয়েছে নিউইয়র্কবাসী। তবে এর মধ্যে অনেকে করোনা পূর্ববর্তী সামাজিক জীবনে ফিরতে এখনও কিছুটা দ্বিধান্বিত রয়েছে। এদিকে নিউইয়র্কে এতোদিনের স্থবির হয়ে পড়া ব্যবসা বাণিজ্যও গত সপ্তাহ থেকে সচল হতে শুরু করেছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য যে কোনো সিটির তুলনায় নিউইয়র্ক সিটির পরিস্থিতি ছিল বেশি নাজুক। গত বছরের ফেব্রুয়ারী মাস থেকে শুরু করে গত ২৩ মে পর্যন্ত নিউইয়র্ক সিটিতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণে মারা গেছে ৩৩,১২৫ জন লোক, যার মধ্যে সংক্রমণ শুরু হওয়ার প্রথম তিন মাসেই মৃতের সংখ্যা ১৮,৬৭৯ ছাড়িয়ে যায়। ফলে নিউইয়র্ক সিটি কার্যত বিশ্বের কোভিড ১৯ রাজধানীতে পরিণত হয়েছিল। সিটি কর্তৃপক্ষের কাছে যে হিসাব রয়েছে তাতে সিটিতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৯ লাখ। করোনা সংক্রমণের আশংকায় সিটির বিত্তবান এলাকাগুলো থেকে অনেকেই পাড়ি জমিয়েছিলেন দেশেই অপেক্ষাকৃত নিরাপদ ও খোলামেলা স্থানে। যারা ঘিঞ্জি এলাকায় থাকতে বাধ্য হয়েছেন, তারা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেছেন, কেউ বা চিকিৎসা গ্রহণ করে সুস্থ হয়েছেন। গত বছরের প্রথম ধাক্কায় করোনা ভাইরাস যেভাবে জীবন নাশ ঘটিয়ে যাচ্ছিল, তাতে রীতিমতো আশংকার সৃষ্টি হয়েছিল যে, বিশ্বের অর্থনৈতিক রাজধানী খ্যাত এই নগরী পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে সক্ষম হবে কিনা।

গতবছরের মার্চ মাস থেকে করোনাভাইরাস মহামারী শুরু হওয়ার পর লকডাউন ঘোষণার কারণে যে কর্মহীনতার সৃষ্টি হয়েছিল, তার ধকল এখনো কাটেনি। নিউইয়র্ক টাইমসের গত সপ্তাহের এক রিপোর্ট অনুযায়ী মহামারীর কারণে সিটির ৯ লাখের বেশি মানুষ কর্মহীন হয়েছে এবং লোকজন কাজে ফিরে আসলেও গতি অতি মন্থর। গত মার্চ মাসে নিউইয়র্ক সিটির রেস্টুরেন্টগুলোতে ১৫ হাজার লোক যোগ দিয়েছে। অন্যান্য ব্যবসাও চালু হচ্ছে এবং শীঘ্রই বেকার হয়ে পড়া লোকজন কাজে ফিরে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। স্টেট লেবার ডিপার্টমেন্টের হিসাব অনুযায়ী নিউইয়র্ক সিটিতে গত এপ্রিল মাসে বেকারত্বের হার সামান্য হ্রাস পেয়ে মার্চ মাসের ১১.৭ শতাংশ থেকে ১১.৪ শতাংশে নেমেছে। অবশ্য লেবার ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুযায়ী গত বছরের বসন্তে দুই মাসের মধ্যে কাজ হারানো ৯ লক্ষাধিক লোকের মধ্যে ৩ লাখ ৭৫ হাজার লোক কাজে যোগ দিয়েছে, যা ওই সময়ে হারানো কাজের ৪০ শতাংশ। এখনো ৫ লাখের বেশি লোক বেকারত্ব কাটিয়ে উঠতে পারেননি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সামগ্রিক শ্রমবাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে অন্তত কয়েক বছর সময় লেগে যাবে। সিটি প্রশাসনের দায়িত্বশীলরা বলছেন যে মহামারী জনিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়া শুরু হয়েছে এবং অর্থনীতির চাকা স্বাভাবিকভাবে ঘুরতে শুরু করবে।


কিন্তু ঘুরে দাঁড়াচ্ছে নিউইয়র্ক সিটি। ধীরে ধীরে সব প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হচ্ছে। যারা ভ্যাকসিনের উভয় ডোজ নিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে গণপরিবহন ও অধিক লোকের সমাবেশস্থল ছাড়া অন্যত্র মাস্ক পরিধানের উপর থেকে বিধনিষেধ তুলে নেয়া হয়েছে গত ১৯ মে থেকে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ সতর্কতাবশত বা গত এক বছরের বেশির ভাগ সময়ে রপ্ত করা অভ্যাসের বাইরে বের হতে পারছে না।

কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হলো এক বছর আগেও যে নগরীতে করোনা আতংকে মানুষ বাড়ির বাইরে বের হতেও ভয় করতো, নগরীর রাস্তাগুলো ছিল প্রায় শূন্য, এম্বুলেন্সের সাইরেনের শব্দ শুনলেই শরীর ঠান্ডা হয়ে যেতো, সেই নগরীতে গত প্রায় ছয় মাসে ভ্যাকসিন নিয়েছে নগরীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও কম। মাত্র ৪৯.১ শতাংশ। ভ্যাকসিনেশন সেন্টারগুলোতে কোনো ভিড় নেই, কোনো কোনো ভ্যাকসিনেশন সেন্টার ইতোমধ্যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর মাঝেও নগরীতে মানুষের কর্মচাঞ্চল্য বেড়েছে অনেকগুণ। সাবওয়ে ট্রেনগুলোতে দিনের শুরুতে ও বিকেলে যাত্রীতে ঠাসাঠাসি অবস্থায় দেখা যায়, মাসখানেক আগেও যা কল্পনা করা যেত না। হাসপাতালে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা যথেষ্ট কমেছে। গত ২৪ মে পর্যন্ত এক সপ্তাহে নিউইয়র্ক সিটিতে গড়ে ৩২ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে এবং মৃতের গড় সংখ্যা ছিল ১০। রিয়েলটরদের সূত্র জানিয়েছে যে সিটিতে বাড়ি বিক্রয় বৃদ্ধি পেয়েছে, ভাড়ার জন্য বাড়ির সংখ্যাও হাস পেয়েছে। পর্যটকেরা ফিরছে, ব্রুকলিন ব্রিজে সেলফি তুলছে এবং প্রিয় রেস্টুরেন্টগুলোতে ভিড় করছে। এসব রেষ্টুরেন্ট মাসের পর মাস বন্ধ ছিল। তবে ব্রডওয়ে শো আগামী হেমন্তের আগে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানা গেছে। কিন্তু হ্যামিল্টনের যে শো আগামী সেপ্টেম্বর মাসে শুরু অনুষ্ঠিত হবে সেটির টিকেট আগাম বিক্রি হয়ে গেছে।


স্কুলগুলো পুরোপুরি চালু হতে আগামী বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। বর্তমানে সীমিত সংখ্যক ছাত্র স্কুলে যাচ্ছে, অধিকাংশ ছাত্র ভার্চুয়াল ক্লাস করছে, আবার একটি অংশ আছে হাইব্রিড, যাদেরকে ফিজিক্যালি ক্লাস করতে হচ্ছে, আবার ভার্চূয়াল ক্লাসও করছে। নগরীর স্বাভাবিক হয়ে আসার সঙ্গে বড় একটি সংকট সৃষ্টি হবে বহু ভাড়াটিয়া বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করতে না পারায় বাড়ি মালিকদের দ্বারা ভাড়াটিয়াদের উচ্ছেদ করার জন্য নোটিশ প্রদান ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ, যা আগামী আগষ্ট মাসের শেষাবধি পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়েছে। তা সত্বেও গত বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত নিউইয়র্ক সিটিতে ৫১ হাজারের বেশি এভিকশন নোটিশ ফাইল করা হয়েছে। এ সংখ্যা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। নিম্ন আয়সম্পন্ন নিউইয়র্কারদের বাড়ি ভাড়া সহায়তা দেয়ার জন্য স্টেট বাজেটে ২.৪ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে, কিন্তু ইতোমধ্যে অভিযোগ উঠেছে যে, এ সহায়তা লাভ করা অত্যন্ত কঠিন। কারণ এর আগে ভাড়া সহায়তা বাবদ বরাদ্দ করা একশ মিলিয়ন ডলারের তহবিল থেকে সহায়তা পাওয়ার জন্য যারা আবেদন করেছিলেন তাদের মধ্যে ৫৭ হাজার আবেদন বাতিল করা হয়েছে। অনেকে বলছেন যে, আবেদনের সঙ্গে এমন সর্ব শর্ত পূরণ করতে বলা হয়েছে যা পূরণ করা কঠিন। এর ফলে আশংকা প্রবল হয়ে উঠেছে যে বহু লোক হোমলেস হয়ে পড়বে। ২০১৯ সালে ৭০ হাজারের মত নিউইয়র্কার হোমলেস হয়েছিল। যারা বার্ষিক ৫০ হাজার ডলারের নিচে আয় করছে তাদের অন্তত এক চতুর্থাংশ গৃহহীনতায় পড়তে পারে।

গত ডিসেম্বরে নির্মাতা ও ভাড়াটিয়াদের সংগঠক ও প্রবক্তারা ৪ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব করেছিলেন অ্যফোর্ডেবল হাউজিংকে আরও সহজ ও দ্রুততর করার উদ্দেশে। কিন্তু তা তড়িঘড়ি বাস্তবায়ন করার মত কোনো কর্মসূচি নয়। গত জানুয়ারী মাসে গভর্নর এন্ড্রু ক্যুমো প্রস্তাব করেন যে ৯/১১ এর ঘটনার পর বহু হাউজিং ও অন্য কোম্পানি ম্যানহাটান ছেড়ে যাওয়ার কারণে শুধু ম্যানহাটান এলাকাতেই ৭৯ মিলিয় বর্গফুট জায়গা পরিত্যক্ত ও অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। সেগুলোকে আবাসিক ও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করার উপযোগী করে তোলার জন্য তিনি স্টেটের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার উদ্যোগ নেবেন।


advertisement

Posted ১:৫১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৭ মে ২০২১

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.