বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন ২০২২
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন নর্থ আমেরিকা ব্যতিক্রমী একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গত ২৪ জুন সন্ধ্যায়। জ্যাকসন হাইটস্থ বাংলা সিডিপ্যাপ মিলনায়তনে আয়োজিত দ্বিমাত্রিক এ অনুষ্ঠানে বিশেষ সম্মাননা জানানো হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ছাত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদকে। বর্ষার গান ও কবিতা ছিলো অনুষ্ঠানটির বাড়তি চমক। আবু জাফর মাহমুদকে বিশেষ সম্মাননা জানাতে সেদিন ছুটে আসেন তার সতীর্থ, অগ্রজ, অনুজ সহ অনেকে।
পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে সূচনা হয় মুল অনুষ্ঠানের। কোরআন তেলাওয়াত করেন মাওলানা মোঃ আব্দুস সাদিক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশন উত্তর আমেরিকা-চবিএলামনাই’র সভাপতি মাহমুদ আহমেদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি আবু জাফর মাহমুদ ছাড়াও মঞ্চে আসীন হন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জাহাঙ্গীর শাহনেওয়াজ ডিকেন্স। অনুষ্ঠানের শুরুতে আবু জাফর মাহমুদকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান সংগঠনের কর্মকর্তাগণ। পরে সম্মাননা পদক আবু জাফর মাহমুদের হাতে তুলে দেন জাহাঙ্গীর শাহনেওয়াজ ডিকেন্স। তিনি আবু জাফর মাহমুদকে অনন্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ জাতির একজন শ্রেষ্ঠ সন্তান।
তিনি সাহসিকতার সাথে মুক্তিযুদ্ধে মাউন্টেন ব্যাটেলিয়ন কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই’র উপদেষ্টা আবু জাফর মাহমুদ একজন লেখক, কলামিস্ট ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষক। সফল ব্যবসায়ী আবু জাফর মাহমুদ নিউইয়র্কে হোম কেয়ার ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে পাইওনিয়ারের ভূমিকা পালন করেন। কমিউনিটির বয়স্কদের স্বাস্থ্যসেবার লক্ষে গড়ে তুলেন বাংলা সিডিপ্যাপ ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ার সার্ভিস। বর্তমানে তিনি প্রতিষ্ঠান দু’টির প্রধান নির্বাহী ও প্রেসিডেন্ট বলে জানান জাহাঙ্গীর ডিকেন্স। তিনি বলেন, আবু জাফর মাহমুদ দীর্ঘ তিন দশক ধরে বাংলাদেশী আমেরিকান কমিউনিটিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। একই সমান্তরালে অবস্থান করছেন তিনি মূলধারার রাজনীতিতে। আবু জাফর মাহমুদ কুইন্স কমিউনিটি বোর্ড নাম্বার-৪ এর অন্যতম সদস্য। জাহাঙ্গীর শাহনেওয়াজ ডিকেন্স বলেন, এতোসব গুণে গুণান্বিত আমাদের একজন সতীর্র্থকে যদি সম্মানিত না করা হয় তা হলে সংগঠনের কর্মকান্ড অসম্পূর্ন থেকে যাবে। এসময় একটি প্রক্লেমেশনও তুলে দেয়া হয় আবু জাফর মাহমুদের হাতে।
আলোচনা পর্বের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এসএম ইকবাল ফারুক। চবি এলামনাইয়ের সহ সভাপতি হাসান মাহমুদের উপস্থাপনায় এ পর্বে বক্তব্য রাখেন সভাপতি মাহমুদ আহমেদ। সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডাঃ ওয়াজেদ খান, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রানা ফেরদৌস, চবি এলামনাই কর্মকর্তা কলামিস্ট সামসুদ্দিন আজাদ, বিষ্ণু গোপ, কবিতা আবৃত্তি করেন সংগঠনের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ফাহমিদা জিগর জাহান ও সৈয়দা পারভীন পলি। বরষার গান পরিবেশন করেন হাসান মাহমুদ, শারমীন, উম্মে জান্নাাতুল, ফেরদৌস বাধন, প্লামি দাস ও ছোটমনি প্রমতি গোপ প্রমুখ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালীন আবু জাফর মাহমুদের শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বক্তাগণ। তারা বলেন, সন্দ্বীপের সন্তান আবু জাফর মাহমুদের মাঝে সমাজ পরিবর্তন ও সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের একটি চিন্তা চেতনা বরাবরই বিদ্যমান ছিলো। মাত্র ১৮ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ তারই সাক্ষ্য বহন করে। আবু জাফর মাহমুদের ক্ষুরধার লেখনীর মাঝেও তার বৈপ্লবিক চেতনা ও মানবিক মুল্যবোধের বিষয়টি প্রাধান্য পেয়ে আসছে। সাপ্তাহিক বাংলাদেশ এ প্রকাশিত আবু জাফর মাহমুদের লেখা প্রবন্ধগুলো সংকলিত করে অচিরেই একটি বই প্রকাশ করা হবে বলে জানান পত্রিকাটির সম্পাদক ডাঃ ওয়াজেদ খান। বক্তাগণ বলেন, হোম কেয়ার সার্ভিস ব্যবসার পাশাপাশি তিনি মানব সেবায় নিয়োজিত রেখেছেন নিজেকে। একাজে তিনি অর্থও ব্যয় করছেন দু’হাতে। বাংলাদেশে বর্ন্যার্ত মানুষের পাশে নিউইয়র্ক থেকে সরাসরি দাঁড়িয়েছেন তিনি। বিশেষ করে সুনামগঞ্জ ও সিলেটের দুর্দশাগ্রস্থ ১২০০ পরিবারের মাঝে খাবার পৌছে দিয়েছে তার প্রতিষ্ঠান বাংলা সিডিপ্যাপ। প্রবাসের বিত্তবান অন্যদেরকেও বিপন্ন মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন আবু জাফর মাহমুদ। নিউইয়র্কের স্থানীয় বাংলাদেশী আমেরিকান কমিউনিটির বিভিন্ন কার্যক্রমে তার সক্রিয় ভূমিকা জন প্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করেছে বলেও জানান বক্তাগণ। মিডিয়া বান্ধব আবু জাফর মাহমুদকে একজন আলোকিত মানুষ বলে আখ্যায়িত করেন বক্তাগণ।
সম্মাননা প্রাপ্তির পর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আবু জাফর মাহমুদ বলেন, আমি অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত ও গর্বিত। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আবু জাফর মাহমুদ বলেন, আমি মনে করি এটা সম্মাননা নয় এটা আমার প্রতি তাদের ভালোবাসার নির্দশন। তিনি বলেন, এই সংগঠনকে কখনোই ভুলা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে আবু জাফর মাহমুদ বলেন, আমাদের স্বাধীনতা প্রাপ্তির অবদান গোটা জাতির। কোন ব্যক্তির নয়। জীবনের কাঙ্খিত লক্ষ্য এখনো পূর্ণ হয়নি। তাই সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতি গভীর মমত্ববোধ থেকে তিনি এখনো শেখ মুজিব ও জিয়া হত্যাকান্ডের নেপথ্য কাহিনী খুঁজছেন। আবু জাফর মাহমুদ বলেন, ব্যবসায়ের মধ্য দিয়ে আমি নিজেকে মানব সেবায় নিয়োজিত রাখতে চাই আমৃত্যু। চলমান বন্যায় বাংলাদেশের মানুষের দুর্দশার বর্ণনা করতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে উঠেন তিনি।
‘মানুষ মানুষের জন্য দেশ প্রেম স্বদেশের জন্য’ বলে মন্তব্য করেন আবু জাফর মাহমুদ। বাংলাদেশের শিক্ষিত সমাজকে তিনি বিশ্বাসঘাতকতার জন্য দায়ী করেন। বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের আহ্বান জানান তিনি। সংগঠনের বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ চট্টগ্রাম এলামনাই এসোসিয়েশনের উপর গুরুত্বারোপ করেন আবু জাফর মাহমুদ।
ঋতু বৈচিত্রের বাংলাদেশে এখন বর্ষাকাল। ভিন্ন সাজে সেজেছে দেশের প্রকৃতি। বিরামহীন বৃষ্টির মাঝে বনে বনে ফুটে আছে হরিৎ হিরন্ময়-কদম ফুল। বর্ষার রূপ-রস-গন্ধ সুষমা কোন কিছুই নেই নিউইয়র্কের প্রকৃতিতে। তারপরও সেদিন চবি এলামনাই’র অনুষ্ঠানের গান ও কবিতায় মূর্ত হয়ে উঠে বরষার আবহ ও আমেজ। ক্ষণিকের জন্য হলেও নষ্টালজিয়ায় ভোগেন দর্শক শ্রোতাগণ। সব কিছু মিলিয়ে চমৎকার আয়োজন ছিলো চবি এলামনাই’র। অনুষ্ঠান শেষে সমবেতদের আপ্যায়িতও করেন আয়োজকগণ।
Posted ৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh