বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট ২০২২
জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার জেএমসি নিউইয়র্কে বাংলাদেশী মুসলিম কমিউনিটির বৃহত্তম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। বহুমুখী এ প্রতিষ্ঠানের অন্যতম জামিয়া কুরানিয়া একাডেমি। ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর প্রতিবছর এই একাডেমি থেকে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী কুরআনে হাফেজ হিসেবে ডিগ্রীপ্রাপ্ত হচ্ছেন। চলতি বছর কুরআনে হাফেজ হয়েছেন চারজন। এরা হলেন গত ১২ আগষ্ট বাদ মাগরেব অনুষ্ঠিত হয় নূতন হাফেজদের গ্রাজুয়েশন। জেএমসির মূল ভবনে অনুষ্ঠিত অনাড়ম্বর এ গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠানে চার হাফেজকে পাগড়ী পড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি প্রদান করা হয় সনদ পত্র। চার পর্বে অনুষ্ঠিত গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থী, তাদের পরিবার এবং অতিথিসহ মুসল্লিগণ অংশ নেন এবং তা চলে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত। জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারী আফতাব মান্নানের উপস্থাপনায় প্রথম পর্বে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করে শিক্ষার্থী শরীফ মারুফ।
স্বাগত বক্তব্য দেন জেএমসি’র প্রেসিডেন্ট ডাঃ মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান। স্বাগত বক্তব্যে নূতন হাফেজ এবং তাদের অভিভাবকদের অভিনন্দন জানান ডাঃ রহমান। তিনি বলেন, কোরআনে হাফেজরা আমাদের সমাজের গর্ব। তিনি বলেন, জেএমসি জামিয়া কুরানিয়া একাডেমি থেকে এ পর্যন্ত ৯৫ জন কোরআনে হাফেজ হয়েছেন। হিফজ স্কূল থেকে বের হয়ে তারা সিটির স্পোশালাইজ্্ড স্কুলগুলোতে ভর্তির জন্য প্রতিযোগিতা করছে এবং সেখানেও ভর্তির ক্ষেত্রে তারা এগিয়ে আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন, জেএমসি’র হিফজ স্কুল থেকে যারা হাফিজ হিসেবে উত্তীর্ণ হয়েছেন তারা ইতোমধ্যে নিউইয়র্কের বিভিন্ন মসজিদে ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং অনেক ইসলামী সেমিনারে প্রধান বক্তা হিসেবে ইসলামের দাওয়াত পৌছে দিচ্ছেন। মাদ্রাসায় লেখাপড়া করলে শুধু মসজিদে ইমামতিই নয় এখন আমাদের ছাত্ররা প্রচলিত ধারার অনেক ক্ষেত্রে ভালো চাকুরী করছে।এই পর্বে নাশিদ পরিবেশন করে নাফিজ ও তার গ্রুপের সদস্যরা।
দ্বিতীয় পর্বে হাফেজ শেখ আকিব চৌধুরীর উপস্থাপনায় পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন এবং হাফেজ হওয়াকালীন তাদের শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন দিক ও অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন হাফেজ এহসান সায়ীদ, হাফেজ আইয়ান হাসান ও হাফেজ মোহতাসিম জাহেরী। এই পর্যায়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন-জেএমসি ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং এডুকেশন ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী। প্রাত্যহিক আচার-ব্যবহার, উপস্থিতি এবং শিক্ষাক্ষেত্রে কৃতিত্বের জন্য বিভিন্ন শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন জেএমসির নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহাদাত হোসেন, জয়েন্ট সেক্রেটারী মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, কোষাধ্যক্ষ বাবুল মজুমদার, সেক্রেটারী আফতাব মান্নান, ভাইস প্রেসিডেন্ট মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী, ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ডাঃ মাহমুদুর রহমান তুহিন, সাবেক প্রেসিডেন্ট খাজা মিজান হাসান, সাবেক সেক্রেটারী জুন্নুন চৌধুরী, সাবেক কর্মকতা মোসতাহিজ বিল্লাহ, হাফেজ আকীব চৌধুরী, হাফেজ মামুন, মাওলানা আবু সুফিয়ান প্রমুখ।
মাওলানা শেখ ফয়সালের পরিচালনায় তৃতীয় পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ড. মুফতি মোহাম্মদ ফারহান। আইসি এল আই এর নির্বাহী পরিচালক, মসজিদ আল বাকী’র আধ্যাত্নিক উপদেষ্টা এবং ‘চিলড্রেন অব আদম’র কো ফাউন্ডার ও প্রেসিডেন্ট ড. মুফতি ফারহান নূতন গ্রাজুয়েশন প্রাপ্তদেরকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, কোরআনে হাফেজ হতে হলে কঠোর অধ্যয়ন ও একাগ্রতা প্রয়োজন। তিনি পবিত্র কোরআনের বাণী মানুষের মাঝে পৌছে দেয়ার ব্রত নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান হাফেজ ও অন্যান্য শিক্ষার্থীদের প্রতি। তিনি তার বক্তব্যে বিভিন্ন হাদিস থেকে উদ্ধৃতি দেন। এই পর্বে আরবীতে নিজ অভিজ্ঞতা ও পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন হাফেজ মোঃ ফাসিহ। বর্ষ সেরা শিক্ষার্থীর হাতে এওয়ার্ড তুলে দেন জেএমসি’র ইমাম মাওলানা মির্জা আবু জাফর বেগ ও জেএমসি’র পরিচালক ইমাম শামসী আলী। তিনি সমবেতদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
জামিয়া কোরআনিয়া একাডেমির প্রিন্সিপাল হাফেজ মুজাহিদুল ইসলামের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত হয় চতুর্থ পর্ব। সদ্য গ্রাজুয়েশন প্রাপ্ত হাফেজ আয়ান হাসান, হাফেজ মুহতাসিম জাহেরী, হাফেজ এহসান সায়ীদ ও হাফেজ মোহাম্মদ ফাসিহ’র হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে সার্টিফিকেট তুলে দেন জেএমসি’র প্রেসিডেন্ট ডাঃ মো: সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক প্রেসিডেন্ট খাজা মিজান হাসান, ইমাম মির্জা আবু জাফর বেগ ও হাফিজ মামুনুর রশীদ। অনুষ্ঠানের শুরুতে জামিয়া কোরানিয়া একাডেমির প্রিন্সিপাল হাফেজ মুজাহিদুল ইসলাম পবিত্র কোরআন এবং ধর্মীয় শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করে নূতন প্রজন্মকে এ শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে অভিভাবকদের আরো যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এই একাডেমির কর্মসূচীর লক্ষ্য হচ্ছে চার বছরের মধ্যে কোরআন হিফজ করা।
এ সময়ে নিউইয়র্ক বোর্ড অফ এডুকেশন এর একাডেমিক কারিকুলামে অন্তর্ভূক্ত অন্যান্য বিষয়ের পাঠও দেয়া হয়। হিফজ স্কুলের ছাত্ররা সিটিওয়াইড টেস্ট ও টেরানোভা টেস্টের জন্য জেএমসি’র অন্য প্রতিষ্ঠান আল মামুর স্কুলের সাথে তালিকাভূক্ত হয়, যাতে তারা বোর্ড অফ এডুকেশনের শিক্ষার দিক থেকে কোনভাবেই পিছিয়ে না থাকে। টেরানোভা ও ইএলএ দু’টি পরীক্ষায়ই আমাদের ছাত্রদের সাফল্য অত্যন্ত সন্তোষজনক। ইমাম মির্জা আবু জাফর বেগের পরিচালনায় দোয়া মুনাজাতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানা হয়।
Posted ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh