বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২
দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে যেসব বিদেশি মাইগ্রেন্ট যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করছে ইমিগ্রান্ট বিরোধী টেক্স্রাসের রিপাবলিকান গভর্নর গ্রেগরি অ্যাবট ডেমোক্রেটদের ওপর চাপ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে তার স্টেট সরকারের খরচে ভাড়া করা বাসে টেক্সাস থেকে নিউইয়র্ক সিটি ও ওয়াশিংটন ডিসি’র মতো ডেমোক্রেট সিটিতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন নবাগত ইমিগ্রান্টদের। গভর্নর অ্যাবটের বক্তব্য হচ্ছে সীমান্তে অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে রিপাবলিকানদের সীমান্ত নীতি অনুসরণ করার কোনো বিকল্প নেই। নবাগত ইমিগ্রান্টদের অব্যাহত চাপ নিউইয়র্ক সিটি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলেন মত ব্যক্ত করেছেন সিটির ইমিগ্রেশন অ্যাফেয়ার্স কমিশনার ম্যানুয়েল ক্যাস্ট্রো। তিনি টেক্সাসের গভর্নর অ্যাবটের উদ্যোগের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, আমরা ডানপন্থী রিপাবলিকানদের রাজনৈতিক চরমপন্থার সংকটে পড়েছি।
কমিশনার ম্যানুয়েল ক্যাস্ট্রো মঙ্গলবার সিএনএন’কে বলেন, আমি যখন আমার বাবা-মা’র সঙ্গে পাঁচ বছর বয়সে সীমান্ত অতিক্রম করেছি, তখন আমারও একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল। অতএব, ইমিগ্রান্টদের ব্যাপারে এবং তাদের প্রয়োজন সম্পর্কে আমি এবং আমার আরও অনেক সহকর্মী আদৌ অপরিচিত নই। কিন্তু এখন আমরা রিপাবলিকানদের দ্বারা সৃষ্ট সংকটর মুখোমুখি হয়েছি। টেক্সাসের গভর্নর ইমিগ্রান্ট বিরোধী এবং তিনি ল্যাটিনোদের ঘৃণা করেন, যা আমাদের উদ্বেগের কারণ। তার ও তার প্রশাসন ও দলের ইমিগ্রান্ট বিরোধী কট্টর মনোভাব আমাদের সকলের জন্য উৎকণ্ঠার। তিনি যেভাবে ইমিগ্রান্টদের স্যাঙ্কচুয়ারি সিটি খ্যাত ডেমোক্রেট স্টেটগুলোতে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছেন তা তার উগ্র মানসিকতার প্রকাশ এবং এই মানসিকতা আজ যেমন আছে, কয়েক দশক আগেও তা ছিল।
তিনি আরও বলেছেন যে রিপাবলিকানরা বরাবর অভিযোগ করে আসছে যে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশকারীরা রাজনৈতিক আশ্রয় বা এসাইলাম আবেদন করার নামে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে এবং একটি অংশ এসাইলাম পেয়েও যায়। এ সম্পর্কে সিটি ইমিগ্রেশন কমিশনার সিএনএন’কে বলেছেন যে, রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য যারা আবেদন করেন, তাদেরকে একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা হয় এবং প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ যাদেরকে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের উপযুক্ত, তাদের আবেদন মঞ্জুর করেন। আবেদনকারীদের একটি বড় অংশেরই এসাইলাম আবেদন মঞ্জুর হয় না এবং তাদের আবেদন পুনর্বিবেচনা করার জন্য ইমিগ্রেশন আদালতে পাঠানো হয়। আদালত মঞ্জুর না করলে তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী ডিপোর্ট করে। আইনের বাইরে ইমিগ্রান্টরা অনুপ্রবেশ করছে বা অবস্থান করছেন বিপাবলিকানদের এমন অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই বলে তিনি দাবী করেন।
তিনি গভর্নর অ্যাবটের উদ্যোগকে হটকারী ও দুর্ভাগ্যজনক বলে বর্ণনা করে বলেন, রাজনীতির একটি সীমারেখা থাকে, যা অতিক্রম করা উচিত নয় এবং গভর্নর অ্যাবট যা করছেন তা সহ্য করা উচিত নয় এবং তার মত অন্য যারা এ ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন তাদেরকেও সহ্য করা উচিত নয়। কমিশনার ক্যাস্ট্রো হাত বাড়িয়ে নবাগত ইমিগ্রান্টদের সিটিতে স্বাগত জানাচ্ছেন, এমন প্রশ্নের প্রেক্ষিতে ক্যাস্ট্রো বলেন, যেকোনো ব্যক্তিকে এভাবেই স্বাগ জানানো উচিত। কারণ এখানো পৌছতে অনেকে বহু দেশের সীমান্ত অতিক্রম করেছেন, জঙ্গল-নদী পাড়ি দিয়েছেন, পথে রাহজানির মুখে পড়েছেন। ক্ষুধা তৃষ্ণায় কাটিয়েছেন, অসুস্থ হয়েছেন Ñ এ ধরনের দুর্ভোগের অভিজ্ঞতার পর যারা আসেন, তাদের হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানানো উচিত এবং তারা যাতে বৈধভাবে এদেশে অবস্থান করতে পারে সেজন্য আমাদের উচিত তাদেরকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করা।
ম্যানুয়েল ক্যাস্ট্রো জানান, টেক্সাস থেকে পাঠানো ইমিগ্রান্টদের বসবাসের জন্য সিটি কর্তৃপক্ষ ১৩টি নতুন আশ্রয়কেন্দ্র চালু করেছে এবং এ সামর্থ আরও বৃদ্ধি করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেছেন গত রোববারও গভর্নর গ্রেগরি অ্যাবট আরেকটি ইমিগ্রান্ট ভর্তি বাস পাঠিয়েছেন, যাদের অনেকে নিউইয়র্কে না এসে টেক্সাসে বসবাসরত তাদের বন্ধু ও পরিজনদের সঙ্গে থাকার ইচ্ছা ব্যক্ত করা সত্ত্বেও তাদেরকে জোর করে বাসে উঠিয়ে নিউইয়র্কে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন এমনও বলেছেন যে তিনি যদি বাসে না ওঠতেন তাহলে তাকে সোজা সীমান্তে নিয়ে ডিপোর্ট করার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। এর আগে গত শুক্রবার ৫৪ জন ইমিগ্রান্ট ভর্তি একটি বাস নিউইয়র্কে এসেছে। এরিক মেয়র বলেছেন, “গভর্নর অ্যাবট যা করছেন তা অকল্পনীয়। আমেরিকায় বসবাসকারী, যারা মনে করেন এই দেশ ওইসব মানুষের জন্য বরাবর উন্মুক্ত ছিল, যারা অত্যাচার-নিপীড়ন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পালিয়ে আসছেন, আমরা তাদেরকে সবসময় স্বাগ জানিয়েছি। কিন্তু টেক্সাসের গভর্নর তা করছেন না। কিন্তু আমরা তাকে এই বার্তা দিতে চাই যে তিনি ইমিগ্রান্টদের তাড়িয়ে দিলেও এই মহান দেশে তাদের আশ্রয় লাভের স্থান বিদ্যমান।
মেক্সিকোর পানশালা এখন মুসলমানদের আশ্রয়কেন্দ্র
বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা নিজ নিজ দেশে রাজনৈতিক, ধর্মীয়, জাতিগত বিদ্বেষের শিকার হয়ে নানাভাবে নিপীড়নের শিকার হন। অনেকে নিহত হয়, গুম হয়, কারাগারে আটকে থাকে বিনা বিচারে। এভাবে নিজ দেশে অনেকের জীবন অতীষ্ঠ হয়ে ওঠে। এ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অনেকে দেশ ছেড়ে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়। এক দেশের নাগরিকদের আরেক দেশে যাওয়ার প্রক্রিয়া খুব সহজ নয়। বৈধভাবেও বহু দেশে যাওয়ার সুযোগ অনেকেই ঘটে না। অতএব বাধ্য হয়ে অনেকে মোটামুটিভাবে উদার কোনো দেশ, যেখানে অন্তত আশ্রয় পাওয়ার ক্ষীণ সম্ভাবনা থাকে, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে সেসব দেশে প্রবেশ করতে পারলেই অনেকে স্বস্তি বোধ করেন। একটু থিতু হয়ে ইমিগ্রেশনের দ্বারে হাজির হন বৈধভাবে সেসব দেশে অবস্থানের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে।
বর্তমান বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম ইমিগ্রান্ট গ্রহণকারী দেশ হিসেবে বিবেচিত। তাই যেসব দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিরাজমান, গৃহযুদ্ধ ও জাতি-বর্ণবিদ্বেষমূলক অঘটন অব্যাহত, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা প্রবল সেসব দেশে থেকে আমেরিকা অভিমুখী হওয়া মানুষের সংখ্যা বিপুল। তারা নানা ধর্মাবলম্বী, নানা ভাষায় কথা বলে এবং শরীরের রং ভিন্ন ভিন্ন। বহু মুসলিম দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করার কারণে দেশত্যাগী মুসলিম নারী পুরুষ কষ্টকর পথ পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের আশায় মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তের কাছাকাছি স্থানে আশ্রয় নেন। মেক্সিকো সরকার তাদের ভূখন্ডে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে শরণার্থী মুসলমানদের জন্য নীল গম্বুজ ও মিনারসহ একটি মসজিদ নির্মাণ করেছে।
যে ভবনটিকে মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়েছে, সেটি আগে একটি বার বা মদ বিক্রয় ও পান করার স্থান ছিল, এখন একটি পরিপূর্ণ মসজিদ। শরণার্থী আশ্রয় কেন্দ্রের পরিচালনাকারী ল্যাটিনা মুসলিম ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট সোনিয়া গর্সিয়া বলেন, এটি ছিল শূড়িখানা, আমরা বলি যে আমরা হারামের পরিবর্তে এটিকে কল্যাণকর হালাল কাজের জন্য রূপান্তরিত করেছি। সোনিয়া গর্সিয়া কয়েক বছর আগে অন্য একটি শরণার্থী আশ্রয় কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার সময় কিছু হিসাব পরিহিতা নারীকে দেখে মুসলমান মাইগ্রেন্টদের জন্য এমন একটি স্থানের কথা ভাবেন, যেখানে তারা আরও স্বচ্ছন্ন বোধ করতে পারে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় ও হালাল খাবার খেতে পারে। গত জুন মাসে তিনি মুসলমানদের জন্য আট হাজার বর্গফুটের একটি স্থান বরাদ্দ নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্র ও মসজিদের ব্যবস্থা করেন। এখন সেখানে ইয়েমেন, আফগানিস্তান ও রাশিয়াসহ আরও কিছু দেশের মুসলিম দেশত্যাগীরা বাস করছে।
সোনিয়া গর্সিয়ার নেতৃত্বে এই আশ্রয়কেন্দ্র হালাল খাবার পরিবেশন ছাড়াও শরণার্থীদের আইনগত সহায়তা, চিকিৎসা সেবা, ভাষা ও কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে। তিনি বলেন, মেক্সিকো তেমন মুসলিম নেই। ২০২০ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী মেক্সিকোর জনগোষ্ঠীর ৭৮ শতাংশ ক্যাথলিক, ১১ শতাংশ প্রোটেস্টান্ট ও ইভানজেলিক্যাল এবং মুসলিমসহ অন্যান্য ধর্মবিশ্বাসী মাত্র ০.২ শতাংশ। কিন্তু তা সত্ত্বেও মসজিদসহ পৃথক মুসলিম আশ্রয়কেন্দ্র পরিচালনা করতে কোনো বাধার সম্মুখীণ হতে হয়নি।
Posted ১০:১৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh