বাংলাদেশ অনলাইন : | বৃহস্পতিবার, ২১ অক্টোবর ২০২১
১৬ অক্টোবর শনিবার সন্ধ্যায় ডালাসের আর্ভিং আর্ট সেন্টার হয়ে উঠেছিল এক টুকরো বাংলাদেশ। হেমন্তের রঙিন সন্ধ্যা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে রঙবেরঙের শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া পরা বাঙালিদের পদচারণায়। হাইওয়ের ওপর বিলবোর্ডে স্ক্রল করছিল “ডালাস বাংলা উৎসব” যা দৃষ্টি কাড়ে নানান ভাষা ও জাতির মানুষের। উৎসব প্রাঙ্গনে খাবারের স্টল ছাড়াও গ্রন্থসম্ভারে সজ্জিত ছিল একটি টেবিল, যেখানে বঙ্গললনাদের হুমড়ি খেয়ে পড়তে দেখা যায়। কবি কাজী জহিরুল ইসলাম নিজের লেখা গ্রন্থে সই করে তুলে দিচ্ছিলেন ক্রেতাদের সাথে, উৎসুক সেল্ফি শিকারিদের ক্যামেরার সামনে ফাঁকে ফাঁকেই ধরা পড়ছিল তার হাস্যোজ্জ্বল মুখ।
ছয়টায় মূল অনুষ্ঠান শুরুর ঘোষণা ছিল। আয়োজক প্রতিষ্ঠান সানাম টিভির প্রযোজক সাবেরা কাদের স্পট লাইটের নিচে এসে দাঁড়ান ছয়টা বেজে ১১ মিনিটে। শুরু হয়ে যায় ডালাস বাংলা উৎসব। দ্বিতীয় প্রজন্মের শিল্পীদের গান, কবিতা ও নাচের পারফর্মেন্সে মুগ্ধ দর্শকদের করতালি প্রমাণ করে দ্বিতীয় প্রজন্মের শিল্পীরা বাংলা সংস্কৃতির চর্চায় একটুও পিছিয়ে নেই। শুরুতেই ঐশী ‘কফি হাউজের আড্ডাটা’ গেয়ে দর্শকদের মন জয় করে নেয়। দুই ভাই আলভি ও জারিফ পরিবেশন করে ‘রাঙামাটির রঙে’। ওয়াফি গায় ‘আমি তোমাকেই বলে দিব’। নোভা এবং নোরা দ্বৈত নাচ প্রদর্শন করে ‘আজ ধানের ক্ষেতে’ রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গে। অহনা জয় গোস্বামীর ‘মেঘবালিকা’ কবিতা আবৃত্তি করে তাক লাগিয়ে দেয়।
শিশু-কিশোরদের পর্বে দর্শকদের সবচেয়ে মুগ্ধ করে তাহিয়া। ভারতনাট্যমের নৃত্য-মূর্ছনাগুলো ছিল দেখার মত। ডালাসের স্থানীর বাঙালি শিল্পীরা অসাধারণ গান করেন এবং কবিতা আবৃত্তি করেন। এ-পর্যায়ে গান করেন ফারহানা হোসেন লিপি, মাফিয়া রহমান, লিমন রশিদ, নাসরীন রেজা এবং জসীম উদদীনের নিমন্ত্রণ কবিতা আবৃত্তি করেন সাবিরা কেয়া।
অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ সম্মানিত অতিথি কবি কাজী জহিরুল ইসলাম নিজের লেখা চারটি কবিতা ‘পা’, ‘রাত্রিকে আলোদিও’, ‘নষ্ট হবে?’ এবং ‘বাড়ি আছ?’ পড়ে শোনান। প্রতিটি কবিতা পাঠের আগে তিনি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু মানবিক ও দার্শনিক বক্তব্য উপস্থাপন করেন যা ডালাসের বোদ্ধা দর্শকগণ ব্যাপক করতালির মাধ্যমে গ্রহন করে। দাম্পত্য সুসম্পর্কের সুফল ব্যাখ্যা করে কবি অত্যন্ত নাটকীয়ভাবে দর্শক সারিতে বসা তাঁর স্ত্রী মুক্তি জহিরকে মঞ্চে আমন্ত্রণ জানান এবং তিনি ঘোষণা করেন ‘বাড়ি আছো’ কবিতাটি তিনি তাঁর স্ত্রীর হাত ধরে পড়তে চান। এ-পর্যায়ে দর্শক মুহূর্মুহু করতালি দিয়ে তার এই ঘোষণাকে স্বাগত জানান।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, রবীন্দ্র সঙ্গীতের কিংবদন্তী গায়ক কাদেরী কিবরিয়া মঞ্চে উঠে তার মন খারাপের কথা বলেন, কেননা ঠিক আগের দিনই তার ছোটো ভায়েরা ইন্তেকাল করেছেন। পুরো হলে কিছুটা বিষাদের ছায়া নেমে এলেও তার দরাজ কণ্ঠের গান তা কিছুক্ষণের মধ্যেই দূর করে দিয়ে উৎসবের আমেজ ফিরিয়ে আনে। সানাম টিভির প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী প্রযোজক খন্দকার তৌফিক কাদের পূর্ব ঘোষিত “স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার ২০২১” তুলে দেন শিল্পী কাদেরী কিবরিয়া এবং কবি কাজী জহিরুল ইসলামের হাতে। পুরস্কৃত অন্য আরেকজন ড. নুরুন নবী আসতে না পারায় তার পক্ষ থেকে পুরস্কার গ্রহন করেন জালাল আহমেদ। পুরো অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সঞ্চালনা করেন এবং একটি কবিতা আবৃত্তি করেন ফারহানা রেজা।
অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত দর্শনার্থীরা পুরস্কৃত দুই গুণী ব্যাক্তিত্ব শিল্পী কাদেরী কিবরিয়া এবং কবি কাজী জহিরুল ইসলামকে ঘিরে ধরেন। তাদের সঙ্গে ছবি তোলেন এবং ব্যাক্তিগত পর্যায়ে আলাপে লিপ্ত হন। দর্শনীর বিনিময়ে আয়োজিত একটি পরিচ্ছন্ন এবং সফল ‘বাংলা উৎসব’ আয়োজন করতে পেরে তৃপ্ত আয়োজক সংগঠনের ব্যক্তিবর্গ। তারা প্রত্যাশা করছেন এখন থেকে প্রতি বছর সানাম টিভি ডালাসে এই আয়োজন অব্যাহত রাখবে। ডালাস (টেক্সাস)
Posted ২:৪৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২১ অক্টোবর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh