বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারি ২০২১
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম একশ’ দিনের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ইমিগ্রেশন ইস্যুকে অগ্রাধিকার দিয়ে অবৈধ ইমিগ্রান্টদের ডিপোর্টেশন স্থগিত রাখার যে আদেশ দিয়েছেন, তাতে রক্ষণশীলরা বাধার সৃষ্টি করছে। এর অংশ হিসেবে সে আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত করে দিয়েছেন টেক্সাসের এক ফেডারেল জজ। টেক্সাসের এটর্নি জেনারেল কেন প্যাক্সটন গত ২২ জানুয়ারি শুক্রবার প্রেসিডেন্ট বাইডেনের একশ দিনের কার্যক্রমে ইতিপূর্বে ডিপোর্টেশনপ্রাপ্ত সকলের ডিপোর্টেশন স্থগিত রাখার যে আদেশ দিয়েছেন তা রদ করার জন্য ইউএস ডিষ্ট্রিক্ট জজ ড্রু টিপটনের আদালতে আর্জি পেশ করেন। ট্রাম্পের মনোনীত টিপটন গতবছর জুন মাসে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। প্যাক্সটন এক টুইটার বার্তায় বলেছেন যে, ‘এটি বাইডেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত প্রথম মামলা এবং আমরা এ মামলায় জয়ী হবো।’ বাইডেনের শপথ গ্রহণের ছয় দিনের মাথায় টেক্সাসের আদালত ডিপোর্টেশন স্থগিত করার আদেশকে অবৈধ বলে বর্ণনা করে আদেশটি রদ করে। প্যাক্সটন বলেছেন, ‘এটি বামপন্থী একটি বিদ্রোহ ছিল এবং আমি ও আমার টিম তা বন্ধ করেছি।’
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারী ডেভিড পেকোসকি বলেছেন, এটি ইমিগ্রেশন আইন প্রয়োগের ব্যাপক পর্যালোচনার অংশ, বিশেষ করে কোভিড ১৯ এর হুমকির মধ্যে আমরা সময় পার করছি। আমাদেরকে সকল দিক বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে। বিচারক ড্রু টিপটন বলেছেন, বাইডেন প্রশাসন এবং ইমিগ্রেশন নিয়ে যেসব ফেডারেল এজেন্সি কাজ করে তাদের পক্ষে কোনভাবেই ফেডারেল আইন সম্পূর্ণভাবে অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই।
ফেডারেল আইনে বলা হয়েছে, যখন কোন বিদেশিকে ডিপোর্ট করার আদেশ প্রদান করা হয় এটর্নি জেনারেল তাকে ৯০ দিনের মধ্যে দেশ থেকে ডিপোর্ট করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য। তিনি তার রায়ে আরো উল্লেখ করেছেন যে, ডিপোর্টেশনের উপর স্থগিতাদেশের কারণে টেক্সাস সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। টেক্সাসের ইমিগ্রান্ট বিরোাধী বিক্ষোভকারীরা দীর্ঘদিন থেকেই বলে আসছে যে তারা অবৈধ ইমিগ্রান্টদের পেছনে স্বাস্থ্যসেবা, সমাজসেবা, শিক্ষাসহ অন্যান্য বিষয়ে বিপুল অর্থ ব্যয় করছে, যা টেক্সাসের অধিবাসীদের জন্য ব্যয় করার কথা। অতএব ডিপোর্টেশন বন্ধ করা হলে তাতে টেক্সাসের উপর আর্থিক বোঝা বৃদ্ধি করা ছাড়া আর কোন অবদান রাখবে না এবং টেক্সাসকে ইমিগ্রান্টদের অভয়াশ্রম বিবেচনা করে টেক্সাসে অবৈধ ইমিগ্রান্ট স্রোত বৃদ্ধি পেতে থাকবে। বিচারক টিপটনের আদেশ চৌদ্দ দিনের জন্য কার্যকর থাকবে।
ধারণা করা হচ্ছে যে বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফেডারেল কোর্টের আদেশ স্থগিত করার জন্য উচ্চতর আদালতে অর্থ্যাৎ সুপ্রিম কোটে আপিল করা হবে। আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিলের আইনজীবী অ্যারন রিচলিন মেলনিক বলেছেন, এখন দেখার বিষয় যে ট্রাম্পের মেয়াদে সুপ্রিম কোর্ট হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সাথে যেমন আচরণ করেছে, নতুন প্রশাসনের সময়েও তা করে কিনা। এ ব্যাপারে হোমল্যান্ড সিকিউরিটির কর্মকর্তারা কোন কথা বলেননি। টেক্সাসের এটর্নি জেনারেল প্যাক্সটন বলেছেন যে তিনি নতুন প্রশাসনের অসাংবিধানিক ও অবৈধ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে লড়ে যাবেন যাতে টেক্সাসবাসী ও আমেরিকানদের স্বার্থ অক্ষুন্ন থাকে। নতুন প্রশাসনের আইনহীনতাকে কিছুতেই প্রশ্রয় দেয়া হবে না বলে তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন।
এর আগে বারাক ওবামার সময় তার অফিস প্রশাসনে বিভিন্ন উদ্যোগের বিরুদ্ধে ২৭টি মামলা দায়ের করেছিল। প্যাক্সটন বলেছেন যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শেষ দিনগুলোতে স্বাক্ষরিত আদেশ অনুযায়ী কোন ইমিগ্রান্টকে ডিপোর্ট করতে হলে ফেডারেল কর্তৃপক্ষকে ১৮০ দিন আগে নোটিশ দেয়ার যে বিধান করা হয়েছে বাইডেন প্রশাসন সেটিও অনুসরণ করেনি। ডিপোর্টেশন স্থগিত করা হলে তা স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্যও হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে তিনি বর্ণনা করেন।
ইমিগ্রান্ট অধিকার গ্রুপসমূহের কোয়ালিশন গত মঙ্গলবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মিরিয়াম জে নামে এক ইমিগ্রান্টের বক্তব্য প্রকাশ করেছে। মিরিয়াম বলেছেন, ‘আমি এবং আমার বাবা মা আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রান্ট। আমার স্বামীকে গতবছর ডিপোর্ট করা হয়েছে। আমার সন্তানরা আমেরিকান সিটিজেন। কিন্তু আমার কমিউনিটির বিরুদ্ধে সার্বক্ষণিক হুমকি ও নিপীড়নের কারণে আমার সন্তানরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তাদের হামলায় আমরা বিপজ্জনক অবস্থার মুখোমুখি হয়েছি।
ফেডারেল জজের রায়ের প্রেক্ষিতে টেক্সাসের ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকানরা নিজ নিজ রাজনৈতিক অবস্থান থেকে মন্তব্য করেছেন। রিপাবলিকানরা রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং ডেমোক্রেটরা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আদেশের যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন।
বাইডেনের বৈপ্লবিক ইমিগ্রেশন উদ্যোগ!
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কি সত্যিই আনডকুমেন্টেড ইমিগ্রান্টদের বৈধতা প্রদান করতে বৈপ্লবিক কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছেন? বিভিন্ন জরিপে দেখা যায় যে, যারা দীর্ঘদিন যাবত যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাস করছে, তাদেরকে বৈধতা দানের পক্ষে আমেরিকান জনগণের বিপুল সমর্থন রয়েছে। কিন্তু সকল ক্ষেত্রে এ অবস্থা এক নয়। বিপুল সংখ্যক আমেরিকান অবৈধ ইমিগ্রান্টদের ঢালাওভাবে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর পক্ষেও সোচ্চার। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার ইমিগ্রেশন আইন সংস্কারের নামে আইনের মধ্যে যে জট পাকিয়ে রেখেছে, সে কারণে ইমিগ্রান্টদের ভাগ্য অনিশ্চয়তার মধ্যে ঝুলে আছে।
এই জট খোলার একমাত্র উপায় হিসেবে অনেক নীতিনির্ধারক, আইন প্রণেতা এবং ইমিগ্রান্ট অধিকার প্রবক্তা অবৈধ ইমিগ্রান্টদের বৈধতা দেয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট রিগ্যানের আমলের মত ইমিগ্রান্টদের প্রতি অ্যামনেষ্টি বা ক্ষমা ঘোষণা করে সরকারের বেঁধে দেয়া শর্ত পূরণ সাপেক্ষে বৈধতা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। তাহলে বিপুল সংখ্যক অবৈধ ইমিগ্রান্ট বৈধতা লাভ করে ধীরে ধীরে নাগরিকত্ব লাভের পথে অগ্রসর হতে পারে। রিগ্যানের দেয়া অ্যামনেষ্টিতে ওই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ৫০ লক্ষাধিক অবৈধ ইমিগ্রান্টের মধ্যে প্রায় ৩০ লাখ অবৈধ ইমিগ্রান্ট বৈধতা লাভ করেছিল। তখন বৈধতা দেয়ার পেছনে প্রধান একটি শর্ত ছিল যে ভবিষ্যতে কৃষিকাজে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ করা হবে না।
কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি প্রতিপালন করা হয়নি এবং অ্যামনেস্টি দেয়ার অল্প কিছুদিনের ব্যবধানেই এ আইনের লংঘন শুরু হয়, যাদেরকে অ্যামনেষ্টির আওতায় নেয়া হয় তাদের স্থলে অন্য অবৈধরা নিয়োজিত হতে থাকে। ১৯৮৬ সালের ইমিগ্রেশন আইন কার্যকারিতার ব্যর্থতার কারণে নীতি নির্ধারকরা ধরেই নিয়েছেন যে, ভবিষ্যতেও কোনো ইমিগ্রেশন আইন অবৈধদের বৈধতা দেয়ার ক্ষেত্রে পুরোপুরি কার্যকর হবে না। নতুন নতুন সমস্যা এসে বরং ইমিগ্রেশনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করবে। এ কারণেই যখনই কংগ্রেসে ইমিগ্রেশন আইনের সংস্কারের বিল তোলা হয় তখনই প্রবল বিরোধিতা আসে যে প্রথমেই অ্যামেনেষ্টি ঘোষণা করার পরিবর্তে বিদ্যমান আইনের কার্যকারিতা দেখা আবশ্যক।
কংগ্রেসে ইমিগ্রেশন আইনের অধিকতর সংস্কারের বিরোধিতাকারীদের মূল বক্তব্য হচ্ছে, নতুন করে যাদেরকে কোন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেয়ার প্রশ্ন আসবে তাদের বৈধতা আগে যাচাই করে নিতে হবে যে আসলেই তারা যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার আইনানুগ যোগ্যতা পূরণ করেছেন কিনা; বিদেশিদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ও নির্গমণের রেকর্ড যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে কিনা; এবং যেসব বিদেশি যুক্তরাষ্ট্রে আসেন তারা তাদের অনুমোদিত সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করছেন কিনা। তাছাড়া ফেডারেল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর পূর্ণ সহযোগিতা নিশ্চিত করা; অর্থ্যাৎ স্যাংকচুয়ারি সিটির অবসান ঘটানো প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইমিগ্রেশন আইনে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার কথা বলছেন তাতে প্রথমে বিদ্যমান ইমিগ্রেশন আইন প্রয়ো বা দ্বিতীয় ধাপে প্রয়োগের ধারণাকে বাতিল করে আইন প্রয়োগ না করার পক্ষে বলা হচ্ছে, তাকে অসার ও অবান্তর বলছেন ইমিগ্রেশন আইন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে এ ধরনের কোনো ধারণা কখনো ইমিগ্রেশন আইনের সংস্কার আনতে পারবে না। প্রেসিডেন্টের বক্তব্য থেকে কিছুই পাওয়া যাবে না, কিন্তু কথাগুলো শুনতে ভালো লাগে বলে অনেকেই তা পছন্দ করবে।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যমান অবৈধ ইমিগ্রান্ট এবং ভবিষ্যতে যারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করবে তারা যদি মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানো ছাড়া অন্য ধরনের ফৌজদারি অপরাধ না করে তাহলে তাদেরকে চিরদিনের মত যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের সুযোগ দেয়া হবে। তিনি যে ধরনের একটি বিলের প্রস্তাব করছেন তা যদি আইনে পরিণত হয় তাহলে ইমিগ্রেশন আইনে অনেক বিদ্যমান বিধিবিধান বাতিল করার প্রয়োজন পড়বে, যা সম্ভব হবে বলে মনে করেন না ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞরা। বাইডেন যে প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন, তা আইনে পরিণত হোক বা না হোক অবৈধদের ঢালাওভাবে বৈধতা দানের প্রস্তাবের কারণেই অবৈধ ইমিগ্রান্টদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের হার বৃদ্ধি পাবে এবং ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাকে আরও জটিল পরিস্থিতির মধ্যে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন তারা।
Posted ১১:১৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারি ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh