আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু : | বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১
আমাদের দেখা সময়ের মধ্যেই জলবায়ুর লক্ষ্যণীয় পরিবের্তন ঘটে গেছে। উজান থেকে আসা পলিতে নদীগুলো ভরাট হয়ে সারাবছর প্রায় পানিশূণ্য থাকে এবং বর্ষার পানি ধারণ করতে না পারায় গ্রামগঞ্জকে প্লাবিত ও ফসলের ব্যাপক ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। খাল-বিল ভরাট হয়ে গেছে, পাহাড়ে ধস বেড়েছে। যেসব এলাকায় একসময় প্রচুর বৃষ্টিপাত হতো সেসব স্থানে বৃষ্টিপাত কমে গেছে, শীতের দেশগুলোতে উষ্ণতা বেড়েছে; নাতিশীতোষ্ণ এলাকায় হয় গরম বাড়ছে অথবা শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঝড়, টর্নেডো, জলোচ্ছাস যখনতখন হচ্ছে এবং এসব কারণে জানমালের ক্ষয়ক্ষতিও বেড়েছে। বাংলাদেশের মত নদীনালা ও খালবিলের দেশের উত্তরাঞ্চলে মরুময় আবহাওয়া বিরাজ করে শীত মওসুমে। এ চিত্র শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বের প্রায় সব এলাকার। উন্নত বিশ্বের শিল্পোন্নয়নের পরিণতিতে বিশ্বে উত্তাপ বেড়েছে, ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় দ্রুত গলছে, যা পানির স্তর বৃদ্ধি করে চলেছে।
ফলে বহু সমুদ্র উপকূলবর্তী ও নিচু দেশ পানির নিচে তলিয়ে যাবে বলে বিজ্ঞানিরা আশ্কংা করছে। এ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে ২৫ শতাংশ এলাকা আগামী একশ বছরে পানির নিচে হারিয়ে যাবে। এতদিন পর্যন্ত বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে যে যুদ্ধ সংঘাত, গোত্র ও জাতিগত কলহে মানুষ উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়ে নিজ দেশ থেকে ভিন্ন দেশে আশ্রয় গ্রহণ করছে। আগামী শতাব্দীতে বিপুল সংখ্যক মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শরণার্থী হবে বলেও পরিবেশবিদদের আশংকা।
ড: আশরাফ উদ্দিন আহমেদ এর বিশ্বের পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ভাবনার ফসল তাঁর গ্রন্থ “পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন।” এটি তাঁর পরিবেশ ও জলবায়ু নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত নিবন্ধের নির্বাচিত সংকলন। তাঁর পড়াশোনা করেছেন সমাজ বিজ্ঞানে, শিক্ষকতা করেছেন সমাজ বিজ্ঞান ও লোক প্রশাসনে। দীর্ঘদিন পর্যন্ত তিনি বগুড়ার পল্লী উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। উচ্চতর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে। তিনি নানা অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ এবং পরিবেশ নিয়েও তিনি তাঁর পড়াশোনা ও কাজের মধ্য দিয়ে সমৃদ্ধ। তাঁর নিবন্ধগুলো দীর্ঘ সময় ধরে লেখা নিবন্ধগুলোতে তিনি পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ এবং এর প্রভাব ও উদ্ভুত পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাঁর বেশ কিছু নিবন্ধে বাংলাদেশের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব-প্রতিক্রিয়া নিয়েও আলোচনা করেছেন তিনি।
জন্মসূত্রে বাংলাদেশী হওয়ার কারণে তিনি বাংলাদেশের নদীগুলোর অবস্থা এবং বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অভিন্ন নদীগুলোর উপর ভারতের একতরফা নিয়ন্ত্রণ ও ভারত কর্তৃক উজানে পানি প্রত্যাহার করার ফলে শুকনো মওসুমে বাংলাদেশ যেভাবে পানির ন্যায্য অংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং এর প্রভাব পড়ছে কৃষিতে ও জনজীবনে যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে, তা নিয়ে তিনিও তাঁর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ব্যক্ত করেছেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে কি করণীয় তিনি সেসব উপায়ও বাতলে দিয়েছেন। তাঁর সদ্য প্রকাশিত ‘পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন’ একটি তথ্যবহুল বই। পরিবেশ নিয়ে আগ্রহী যে কারো জন্য সুখপাঠ্য। ড. আশরাফ উদ্দিন আহমেদের গ্রন্থের বহুল প্রচার আশা করি। চমৎকার প্রচ্ছদ শোভিত গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘ভূজপত্র’। মূল্য: ৩০০ টাকা এবং যুক্তরাষ্ট্রে ১০ ডলার।
Posted ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh