বুধবার, ৮ মে ২০২৪ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

তরুণ প্রজন্মের মাঝে আত্মহনন প্রবণতা

  |   বৃহস্পতিবার, ২৬ মে ২০২২

তরুণ প্রজন্মের মাঝে আত্মহনন প্রবণতা

নিউইয়র্কের বাংলাদেশী আমেরিকান কমিউনিটিতে তরুণ প্রজন্মের মাঝে আত্নহনন প্রবণতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। আমেরিকান সমাজে বিদ্যমান এই মানসিক ব্যাধিতে অভিবাসী পরিবারের সন্তানরা আক্রান্ত হওয়ায় অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশী কমিউনিটির বেশ কয়েকজন তরুণ-তরুণী আত্মহননের পথ বেছে নেয়ায় অভিবাসী পরিবার ও কমিউনিটিতে এনিয়ে উৎকন্ঠা দিন দিন বাড়ছে। চলতি মাসে এক সপ্তাহে তিনজন তরুণ-তরুণীর অপমৃত্যুর ঘটনা নূতন করে ভাবিয়ে তুলেছে সবাইকে। মানুষ যেখানে স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নিয়ে প্রতিনিয়ত দাবি জানিয়ে আসছে সেখানে তরুণ প্রজন্মের সন্তানরা কেন নিজেদেরকে স্বেচ্ছায় অপমৃত্যুর হাতে সপে দিচ্ছে এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বিবেকবান মানুষের মনে। সমাজে কেন এমনটি ঘটছে এবং এর প্রতিকারই বা কি তা নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির প্রতি গুরুত্বাারোপ হয়ে উঠেছে অপরিহার্য ।

আত্মহননের বিষয়টিকে অন্যখাতে প্রবাহিত না করে এর কারণ উদঘাটন এবং সুরাহারা পথ বের করতে অভিভাবক, সমাজ ও মনোবিজ্ঞানীদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। স্বাভাবিক মৃত্যু ছাড়া অন্যান্য যেসব কারণে যুক্তরাষ্ট্রে মানুষের মৃত্যু ঘটে সেগুলোর মধ্যে ১০ম স্থানে রয়েছে আত্মহত্যা। জাতিগোষ্ঠী ও বয়স অনুযায়ী ভাগ করলে এশিয়ান-আমেরিকান তরুণদের মৃত্যুতে আত্মহত্যার স্থান প্রথমে। জাতিগত বিদ্বেষের কারণে এশিয়ান-আমেরিকানরা শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ এবং হিসপানিকদের দ্বারা গুলির শিকার হচ্ছে সাধারণভাবে ধারণা করা হলেও সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন -সিডিসি এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী এশিয়ান-আমেরিকানরা সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ।


সিডিসি’র সংজ্ঞা অনুযায়ী আত্মহত্যা হচ্ছে, “ডেলিবারেট অ্যাক্ট অফ সেলফ-ডাইরেক্টেড ভায়োলেন্স।” বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে এশিয়ান-আমেরিকানরা ছাড়া আমেরিকায় বসবাসকারী অন্য কোনো জাতিগোষ্ঠীর তরুণদের মধ্যে এত ব্যাপক আত্মহত্যাপ্রবণতা দেখা যায় না। এ ব্যাপারে কোনো গবেষণা প্রতিষ্ঠান খুব মনোযোগী হয়েছিল এমনও দেখা যায় না। এ গবেষণা না হওয়ার আরেকটি কারণ ছিল এশিয়ান-আমেরিকানদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে তারা মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের ব্যাপারে তেমন আগ্রহ প্রদর্শন করেনি।

আমেরিকান কিশোর ও তরুণদের মধ্যে অবসাদগ্রস্ততা, নিজের ক্ষতি সাধন এবং আত্মহত্যার প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে এ প্রবণতা সবচেয়ে। আমেরিকান কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বিরাট এক পরিবর্তন এসেছে এবং একটি অংশের পরিবর্তন সর্বনাশা প্রমাণিত হচ্ছে। তিন দশক আগে আমেরিকার জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়েছিল মাত্রাতিরক্ত এলকোহল সেবন, মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানো, কিশোরীদের গর্ভসঞ্চার এবং ধূমপান। এ প্রবণতাগুলো যত দ্রুত এসেছিল তেমন দ্রুত শেষ হয়েছে এবং এর স্থলে এসেছে নতুন জনস্বাস্থ্য হুমকি: মানসিক স্বাস্থ্য বৈকল্যের শিকার বিপুল সংখ্যক কিশোর-কিশোরী ও ওঠতি বয়সের তরুণ-তরুণী। গত বছরগুলোতে অর্থ্যাৎ করোনা ভাইরাস মহামারীর সময়ে কমবয়সীদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সিডিসির পরিসংখ্যানে পাওয়া যাচ্ছে, যা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে জাতি ও বর্ণগত গ্রুপ, শহুরে ও গ্রামীণ গ্রুপ ও আর্থ-সামিাজিক গ্রুপের মধ্যে।


গত ডিসেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সার্জন জেনারেল কিশোর ও তরুণ বয়সীদের মধ্যে বিপর্যয়কর মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের ব্যাপারে সতর্কতামূল্যক বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। তিনি এ সংকট বেড়ে চলা এবং পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় সংকট থেরাপিষ্ট, ও চিকিৎসা সুবিধা না থাকা এবং এই প্রবণতা ব্যাখ্যার মতো যথেষ্ট গবেষণা কার্যক্রমের ঘাটতির উল্লেখ করেন। কিন্তু তা সত্বেও অবসাদগ্রস্থতা, আত্মহত্যা প্রবণতার মতো দিকগুলো প্রকৃতপক্ষেই উদ্বেগজনক। এ পরিস্থিতি আমাদেরকে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে আটকে দেয়, যা দূর করা অত্যাবশ্যক। কারণ এটি আমাদের বাচ্চাদের জীবন ও মৃত্যুর প্রশ্ন।

এই সঙ্কটকে প্রায়শ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিস্তারকে দায়ী করা হয়। কিন্তু পরিসংখ্যান তা বলে না, বরং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে দায়ী করার বিরুদ্ধেই বেশি যুক্তি আসে, বরং তরুণরা কম্পিউটার ও মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা থেকে নিজেদেরকে ক্ষতি করা দিকে টেনে নেয়ার চেয়ে অন্যান্য কারণে নিজের সবর্ণাশ ডেকে আনার কথা ভাবে। ফেডারেল গবেষণায় দেখা যায় ওঠতি বয়সীরা কম সময় ঘুমায়, কম ব্যয়াম করে অথবা আদৌ ব্যায়াম করে না এবং বন্ধুদের সঙ্গে একত্রে কম সময় কাটায় Ñ এসব বিষয় মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলে।


এই বিচ্ছিন্নতা ওঠতি বয়সীদের আচরণের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে, একাকীত্বের যন্ত্রণা নিজের ক্ষতি করা এমনকি আত্মহত্যা পথ বেছে নেয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ওরা কী ভাবছে সেই ভাবনার ওপর কারও নিয়ন্ত্রণ নেই। কৈশোরে উপনীত হওয়ার সাথে সাথে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও অবস্থানগত তথ্য জানা জন্য মস্তিস্ক অতি সক্রিয় হয়ে ওঠে: “আমি কে? আমার বন্ধুরা কে? আমার স্থান কোথায়?” ইত্যাদি। সব প্রশ্নের উত্তর সে পায় না। ফলে অনেকের চেতনায় এক শূন্যতার সৃষ্টি হয় এবং নিবিড়তম মানুষ- মা বাবা, ভাইবোনের সঙ্গ ছাড়া এ ব্যবধান ক্রমে বাড়তে থাকে, এবং এর অনুপস্থিতিতে তার পক্ষে স্থিরতা বজায় রাখা সম্ভব হয় না এবং ভিন্ন পথ বেছে নেয়।

এ পথ নিজের ক্ষতি সাধন। বহু কারণেই এশিয়ান-আমেরিকানদের পক্ষে আত্মহত্যা সম্পর্কে আলোচনা করা কঠিন- সামাজিক লজ্জা ও কলঙ্ক, কুসংস্কার অন্যতম। মরণশীলতা ও মৃত্যু নিয়ে বিভিন্ন এশীয় সংস্কৃতিতে কথা বলা অশুভ বিবেচনা করা হয়। আমাদেরকে এই নীরবতা ভেঙে বাইরে আসতে হবে। আত্মহত্যা এবং বৈষম্য কীভাবে এশিয়ান আমেরিকান জীবনকে প্রভাবিত করছে তা জানা ও সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে বের করা জরুরী হয়ে পড়েছে। তা না হলে এশিয়ান তরুণ সমাজের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা দিনে দিনে আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

Posted ৬:২২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৬ মে ২০২২

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

কাঁঠাল সমাচার
কাঁঠাল সমাচার

(1412 বার পঠিত)

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.