সোমবার, ১৮ মার্চ ২০২৪ | ৫ চৈত্র ১৪৩০

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক টাইমসের চোখে

জ্যাকসন হাইটস প্রবাসে এক টুকরো বাংলাদেশ

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু   |   বৃহস্পতিবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

জ্যাকসন হাইটস প্রবাসে এক টুকরো বাংলাদেশ

বিশ্বের রাজধানী হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্ক সিটির বর্ধিষ্ণু এলাকা জ্যাকসন হাইটস গত দেড় দশক থেকেই নগরীতে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের মিলনকেন্দ্র। এমনকি বাংলাদেশ থেকেও যারা নিউইয়ের্কে আসেন তারা দেশ থেকেই তাদের দর্শনীয় স্থানের তালিকায় জ্যাকসন হাইটসকে রাখেন এবং সেখানে এসে দেখতে পান একটি বাংলাদেশকে। তাদের কাছে আমেরিকা হয়ে যায় বাংলাদেশ। সেই সিঙ্গারা-সমুচা, বিরিয়ানি ও কাবাবের সুবাস, বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে চিৎকার-চেচামেচি, ফুটপাতে দাঁড়িয়ে পান চিবানো ও সিগারেট টানা।

সিটির যে প্রান্তেই বাংলাদেশীরা বসবাস করুন না কেন, সময় কাটাতে, বন্ধুবান্ধবের সাথে দেখা করতে এবং মাছ-মাংসসহ দেশী শাকসব্জি কিনতে জ্যাকসন হাইটসে আসা চাই। জ্যাকসন হাইটসে ভারতীয়, পাকিস্তানি, নেপালি ও তিব্বতিসহ আরো অনেক জাতিগোষ্ঠীর মানুষ আছে। কিন্তু ৭২,৭৩, ৭৪ ষ্ট্রিট জুড়ে বাংলাদেশীদের দোকানপাট, রেষ্টুরেন্টের সমারোহের কারণে শুধু নিউইয়র্কবাসী বাংলাদেশী নয় বরং আপষ্টেট নিউইয়ক, নিউ জার্সি, কানেকটিকাট ও পেনসিলভেনিয়া থেকেও বাংলাদেশীরা প্রতি উইকএন্ডসে সপরিবারে এসে ভিড় করেন জ্যাকসন হাইটসে। কেনাকাটা করে নিয়ে যান। গত ২৮ আগস্ট নিউইয়র্ক টাইমসে “জ্যাকসন হাইটস: গ্লোবাল টাউন স্কোয়ার” শিরোনামে প্রকাশিত রিপোর্টে প্রতিবেদক মাইকেল কিমেলম্যান সিটির এই বিশেষ স্থানটির বৈশিষ্ট তুলে ধরেছেন।
তিনি লিখেছেন: জাতি-বৈচিত্রের বৈশিষ্টে সমৃদ্ধ নিউইয়র্কের অন্যতম বাংলাদেশী অধ্যুষিত স্থান জ্যাকসন হাইটসের আয়তন সেন্ট্রাল পার্কের আয়তনের বড়জোর অর্ধেক। কুইন্স কাউন্টির উত্তর-মধ্যবর্তী অবস্থানে ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষের বসবাস জ্যাকসন হাইটসে, যারা প্রায় ১৬৭টি ভাষায় কথা বলে। পৃথিবীতে না হলেও এটি নি:সন্দেহে নিউইয়র্কে সবচেয়ে বেশি সংস্কৃতিক ও জাতিগত বৈচিত্রপূর্ণ স্থান। বিগত শতাব্দীর প্রথম দিকে বাণিজ্যিক রিয়েল এস্টেট ডেভেলপাররা আশা করেছিলেন যে তারা শ্বেতাঙ্গদের এই এলাকায় আনতে সক্ষম হবেন, বিশেষত মধ্যবিত্তদের মধ্যে যারা ম্যানহাটানে বসবাস করে একঘেঁয়েমি বোধ করছে এবং সংক্ষিপ্ত সাবওয়ে দূরত্বের উপশহরীয় জীবন কাটাতে আগ্রহী। কিন্তু জ্যাকসন হাইটস ল্যাটিনো যারা নিজেদেরকে এলজিবিটিকিউ হিসেবে পরিচয় দেয়, এবং ক্রমবর্ধমানভাবে দক্ষিণ এশীয়দের কেন্দ্রে পরিণত হয়।


নিউইয়র্ক সিটিতে যে গতিতে পরিবর্তন ঘটেছে, জ্যাকসন হাইটসের পরিবর্তনের দ্রুততা তার চেয়েও বেশি এবং স্থানটি ধারণ করেছে পৃথিবীর অসংখ্য কমিউনিটিকে। কোথাও দেখা যাবে ল্যাটিন আমেরিকান সাংস্কৃতিক দৃশ্য, কোথাও দল বেঁধে আড্ডা দিচ্ছে, নেপালি ও তিব্বতিরা, শহুরে এটিক্টভিষ্টরা স্থানীয় রাস্তায় গাড়ি চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আন্দোলন করছে। এটি কংগ্রেসওম্যান আলোকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ এর নির্বাচনী এলাকা এবং দীর্ঘদিন যাবত এখানে সিটি কাউন্সিলম্যান হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করছেন নিজেকে প্রকাশ্যে সমকামী ঘোষণাকারী ড্যানিয়েল ড্রম। সাম্প্রতিক মহামারী কোভিড-১৯ এর কথা বলা হলে জ্যাকসন হাইটস ছিল নিউইয়র্ক সিটির সবচেয়ে বেশি উপদ্রুত এলাকা।

নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির প্রফেসর সুকেতু মেহতার বেশ ক’টি গ্রন্থ রয়েছে, যেগুলো তিনি রচনা করেছেন তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে। এগুলোর মধ্যে আছে “ম্যাক্সিমাম সিটি: বোম্বে লষ্ট এণ্ড ফাউন্ড,” “দিস ল্যাণ্ড ইজ আওয়ার ল্যাণ্ড: অ্যান ইমিগ্রান্ট মেনিফেষ্টো,” এবং “ওয়াকস এরাউন্ড দ্য সিটি।” প্রফেসর মেহতার জন্ম ভারতের কলকাতায় এবং তিনি বেড়ে উঠেছেন মুম্বাইয়ে। ১৯৭৭ সালে তিনি তার পরিবারের সঙ্গে জ্যাকসন হাইটসে আসেন। তার বাবা এসেছিলেন তাদের পারিবারিক হীরকের ব্যবসার সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে। মেহতার বয়স ছিল ১৪ বছর এবং সিটির মতো জ্যাকসন হাইটসকেও বেড়ে উঠতে দেখেন।


গত ২৮ আগস্ট নিউইয়র্ক টাইমসে “জ্যাকসন হাইটস: গ্লোবাল টাউন স্কোয়ার” শিরোনামে প্রকাশিত রিপোর্টে প্রতিবেদক মাইকেল কিমেলম্যানের সঙ্গে সুকেতু মেহতার ভার্চুয়াল সাক্ষাত ঘটে ডাইভারসিটি প্লাজায়, ২০১২ সালে রাস্তাটি বন্ধ করে প্রকৃত অর্থে জ্যাকসন হাইটসের ‘টাউন স্কোয়ার’ এবং নগরীর সবচেয়ে আন্তর্জাতিক বরো কুইন্সের অহঙ্কারের প্রতীক হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। অদূরেই ৭৪ ষ্ট্রিটের উপর ভারতীয় মালিকানাধীন প্যাটেল ব্রাদার্সের অতিব্যস্ত গ্রোসারি ষ্টোর। সাবওয়ে ষ্টেশনের কাছে বলে ডাইভারসিটি প্লাজা ট্যুরিষ্টদের কাছেও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে, কারণ আশপাশে বহু রেষ্টুরেন্ট ও ফুডকার্ট, যেখানে স্বল্প মূল্যে নানা ধরনের খাবার পাওয়া যায়। স্থানীয়দের জন্য এটি একটি সমাবেশস্থল, ঘুরে বেড়ানো ও আ্ড্ডা দেয়ার এবং যার যার দেশের রাজনীতি নিয়ে বিতর্ক করার উপযুক্ত স্থান। লোকজন বাংলাদেশী ফার্মেসি থেকে ওষুধ সংগ্রহ করছে, এবং সাইডওয়াক সংলগ্ন দোকান ও রেষ্টুরেন্ট থেকে মমো ও সিঙ্গারা-সমুচা কিনছে এবং ভিড় জমিয়ে উভয় পাশের সাইডওয়াক বন্ধ করে রেখেছে। এ দৃশ্য নিত্যদিনের এবং তা দৃষ্টিতে পড়বে গভীর রাত পর্যন্ত।

সুকেতুর কাছে মাইকেল কিমেলম্যান বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ব্যাপারটি প্রায় অলৌকিক যে যানবাহনের জন্য একটি রাস্তার খানিকটা বন্ধ করে দেয়ার কারণে গোটা পরিবেশই বদলে গেছে। মেহতা তাকে বলেন, আমি যদি বোদলেয়ার হতাম তাহলে এটাই হতো আমার ঘুরাঘুরির জায়গা। কাজ সেরে নিতাম। মাত্র এক ডলারে আপনি কিছু পান এবং গুজব শুনতে পারবেন। প্লাজার স্থানে স্থানে আপনি পানের পিক না ফেলার জন্য অনুরোধ জানিয়ে সাইন সাটানো দেখবেন, কিন্তু এ অনুরোধে কেউ পাত্তাও দেয় না। নিজ নিজ দেশের মতো এখানেও আবেদন নিবেদন শোনার পরিবর্তে অগ্রাহ্য করাকেই অধিক প্রাধান্য দেয়া হয়। মেহতা আরো বলেন, ডাইভার্সিটির প্লাজা সংলগ্ন ইত্যাদি রেষ্টুরেন্ট, ইত্যাদি গ্রোসারি এবং উপরতলায় কাবাব কিং রেষ্টুরেন্টস বড় আকৃতির ভবনটি একসময় “দ্য আর্ল” নামে একটি মুভি হাউজ বা সিনেমা হল ছিল। আমি যখন বড় হচ্ছিলাম তখন ‘দ্য আর্ল’ এ পর্নোগ্রাফিক মুভি দেখানো হতো। আশির দশকের মধ্যে এটিকে বলিউড থিয়েটারের রূপ দেয়া হয়। নতুন মালিকরা নতুন করে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হননি বলে পুরোনো মুভি হাউজের ইংরেজি বানানের মধ্য থেকে শুধু ‘আর’ এর স্থলে ‘জি’ অক্ষরটি বসান এবং নতুন নাম হয় ‘দ্য ঈগল’। কেউ ভালো করে নামটি দেখলেই বুঝবেন যে, ‘জি’ অক্ষরটির প্যাটার্ন সম্পূর্ণ ভিন্ন। মুভি হাউজে যে মুভি দেখানো হচ্ছিল আশপাশের ভিডিও স্টোরগুলো সেই মুভির পাইরেটেড সস্তা কপি বিক্রি শুরু করার পূর্ব পর্যন্ত ‘দ্য ঈগল’ বেশ জনপ্রিয় ছিল। আমার মনে আছে আমি বলিউডের একজন চলচ্চিত্র পরিচালক বিনোদ চোপড়ার সঙ্গে একবার ওই স্টোরগুলোর কোনো একটি যাই। তিনি নিজের পরিচয় না দিয়ে তার নিজের নির্মিত মুভির পাইরেটেড কপি চান। যখন তিনি দেখতে পান প্রচুর পাইরেটেড কপি সেখানে বিক্রি করা হচ্ছে, তখন তিনি দোকানির উদ্দেশে চিৎকার করে বলতে থাকেন যে তারা তার জিনিস চুরি করছেন। তারা তাকে চা পানের জন্য আমন্ত্রণ জানায় এবং তাকে দোকানে পেয়ে সম্মানিত বোধ করছেন।


“তারা কি পাইরেটেড কপি বিক্রি বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল?” মাইকেল কিমেলম্যানের প্রশ্নের উত্তরে সুকেতু মেহতা বলেন, না, তারা অবশ্যই একথা বলেনি। তারা ওগুলো বিক্রি না করলে পোষাতে পারবে না। তারা বলে যে তারা বিনোদ চোপড়ার মুভির অসংখ্য পাইরেটেড কপি করছে এবং তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় পরিচালক, অতএব তার উচিত এটিকে প্রশংসা হিসেবে বিবেচনা করা। জ্যাকসন হাইটসের ‘স্যাম এণ্ড রাজ’ থেকে ১০ মিনিটের হাঁটা দূরত্বে ৮৩ ষ্ট্রিট ও ৩৭ এভিনিউয়ে বসবাস করতেন। তিনি যখন যুক্তরাষ্ট্রে আসেন তখন তাকে বলা হয়েছিল যে প্রত্যেক ভারতীয়ের নিউইয়র্কে তিনটি জিনিস দেখা অবশ্যই দেখা উচিত: ষ্ট্যাচু অফ লিবাটি, এমায়ার ষ্টেট বিল্ডিং এবং স্যাম এন্ড রাজ। ৭৪ ষ্ট্রিট ও ৩৭ এভিনিউয়ের উপর স্যাম এন্ড রাজ একটি ইলেক্ট্রিক্যাল এপ্লায়েন্সেস এর দোকান, যেখানে ১১০ ও ২২০ ভোল্ট বিদ্যুৎ ব্যবহারের সরঞ্জাম পাওয়া যায়। ভারতীয়রা যেসব জিনিস দেশে নিয়ে যেত তার সবই সেখানে পাওয়া যেত। কেউ যদি গুজরাটি ভাষায় কথা বলে তাহলে তারা তার কাছ থেকে সেলস ট্যাক্স নেয় না। মেহতার পরিবারের কেউ ভারত থেকে এলে তাকে কাহিনী তূল্য স্যাম এন্ড রাজে নিয়ে যাওয়া হতো। ভারত থেকে তারা নিয়ে আসতো চমৎকার সিল্কের দামী বস্ত্র ও মশলা এবং ব্যাগ ভর্তি করে নিয়ে যেতো সস্তা ইল্কেট্রনিক সামগ্রী। মাউন্ট ফুজি নামে এক বার্মিজ গ্রোসারি ষ্টোর ছিল। বড় ফ্রিজারে রাখা হতে বার্মার নদীর মাছ এবং চা-পাতার সালাদ। বার্মা তখন আমেরিকান অবরোধের আওতায় থাকায় তাদেরকে সবকিছু বার্মা থেকে পাচার করে আনতে হতো। মেহতা সেই দোকানে বেশ কিছু সঙখ্যক বার্মিজের কাছে জানতে চেয়েছিল তারা কুইন্স থেকে বার্মাায় কি নিয়ে যায়, তাদের সকলে উত্তর দিয়েছে, “সেনট্রাম।” দৃশ্যত সেন্ট্রাম নামের এই মাল্টিভিটামিন খাওয়ার প্রতি ঝোঁক ছিল বার্মিজদের।

জ্যাকসন হাইটস মূলত একটি বেসরকারি উন্নয়ন পরিকল্পনা ছিল। ম্যানহাটানবাসী শ্বেতাঙ্গদের আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে কুইন্সবরো কর্পোরেশন ফরাসি রেনেসাঁ যুগের ও ইংল্যাণ্ডের টিউডর ধাচের সুন্দর নগরী গড়ে তোলে। কিন্তু নিউইয়র্কে ইহুদি ও এলজিবিটিকিউ কমিউনিটি চল্লিশের দশকে এবং ল্যাটিনো পঞ্চাশের দশকে এখানে আসতে শুরু করে। কুইন্সবরো কর্পোরেশন জায়গাটির নামকরণ করে মূল কুইন্স পরিবারের একজন উত্তরসূরীর নামে এবং সঙ্গে “হাইটস” শব্দটি যোগ করে, কারণ তাতে নামটি শ্রুতিমধুর শোনায়। পঞ্চাশের দশকে জ্যাকসন হাইটসে আগত ল্যাটিনোদের অধিকাংশ ছিল কলম্বিয়ান এবং অন্যান্য সাউথ আমেরিকান। এখন সেন্ট্রাল ও উত্তর আমেরিকান ল্যাটিনোরাও আছে। এশিয়ানদের উপর বিধিনিষেধ সম্বলিত ১৯৬৫ সালের ইমিগ্রেশন অ্যাক্ট থেকে বাধা তুলে নেয়ার পর মেহতার পিতার মতো ভারতীয় পেশাজীবীরা দলে দলে যুক্তরাষ্ট্রে আসতে শুরু করে। কিন্তু মেহতা তার পিতার হীরকের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত না হয়ে শিক্ষকতা ও লেখালেখির সঙ্গে জড়িয়ে থাকেন।

নিউইয়র্ক সিটির এক অভিনব স্থানে পরিণত হয়েছে বর্তমান জ্যাকসন হাইটস। এখানে অধিকাংশ বাণিজ্যিক ভবনের দোতলায় প্রায় সবই অফিস রুম। প্রতিটির জানালায় বহু ভাষায় সাইনবোর্ড টানিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছে কোন অফিসে কি কাজ করা হয। তারা ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত কাজ, সহজে গ্রীনকার্ডের ব্যবস্থা করা, সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়তা, আইআরএস এর ট্যাক্স ফাইলিং, ড্রাইভার্স লাইসেন্স পাওয়ার জন্য ট্রেনিং এর ব্যবস্থা, ডিভোর্স, ফিউনারেল এবং স্কুল ছাত্রদের ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতিকরণের কোচিং সেন্টার ইত্যাদি। জ্যাকসন হাইটসের নতুন ইমিগ্রান্টরা সবসময় জানে না যে কিভাবে আমেরিকান সিষ্টেমের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হবে অথবা কার ওপর আস্থা স্থাপন করা যাবে। অতএব বিশেষ করে যারা ব্যবসায়ী, তারা এ ধরনের নতুন ইমিগ্রান্টকে এখানে দেখতে তাকে দিয়ে সব কাজ করিয়ে নেয়।

জ্যাকসন হাইটসের রুজভেল্ট এভিনিউয়ে অবস্থিত ‘রোমানটিকোস’ এর মতো বেশ কিছু ল্যাটিনো বার আছে, যেগুলোকে তারা বলে ট্যাক্সি ড্যান্স হল। যে সম্পর্কে ১৯২০ এর দশকে হেনরি মিলার লিখেছেন। এসব বারে ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আগত স্বল্প বসনা ইমিগ্রান্ট তরুণীরা নাচে এবং অতিরিক্ত কয়েকটি ডলার পরিশোধ করলে তারা আরো বেশিসময় নৃত্য প্রদর্শন করে। যারা সেখানে যায় তাদের অধিকাংশের ইমিগ্রেশনের বৈধতা নেই এবং অনেক যাতনার মধ্যে থাকে। সামান্য ক’টি ডলারের বিনিময়ে হলেও সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য তারা তাদের একাকীত্ব ভুলে থাকতে পারে।

নগরীর সবচেয়ে বড় এলজিবিটিকিউ বার ও নাইটক্লাব জ্যাকসন হাইটসে রুজভেল্ট এভিনিউয়ের উপর গড়ে উঠেছে। ১৯২০ এর দশকে ম্যানহাটান থেকে সমকামীরা জ্যাকসন হাইটসে ভিড় করতে থাকে এবং এখন সিটির দ্বিতীয় বৃহত্তম ‘প্রাইড প্যারেড’ অনুষ্ঠিত হয় জ্যাকসন হাইটসে, যে এলাকাকে একসময় সিটির বাংলাদেশী মুসলিম ও ল্যাটিনো ক্যাথলিকদের মতো সবচেয়ে রক্ষণশীল ধর্মীয় কমিউনিটির লোকজন বলে বিবেচনা করা হতো। নব্বইয়ের দশকে জ্যাকসন হাইটসে একটি চরম বর্ণবিদ্বেষী ঘটনা ঘটে, যখন জুলিও রিভেরা নামে ২৯ বছর বয়স্ক এক সমকামী বারটেন্ডারকে এক পাবলিক স্কুল চত্তরে ডেকে নিয়ে হত্যা করে স্কিনহেড হিসেবে খ্যাত শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদীরঅ। রিভেরা নামে ৭৮ ষ্ট্রিট ও ৩৭ এভিনিউয়ের একটি কর্ণারের নামকরণ করা হযেছে।

ভারত থেকে নিউইয়র্কে আসার পর মেহতা জ্যাকসন হাইটসের যেখানে বসবাস করেন সেই ভবনের মালিক ছিলেন তুর্কি এবং সুপার গ্রীক। তার মতে তখনকার অবস্থার চেয়ে এখনকার অবস্থার তেমন কোনো পার্থক্য নেই। ভবনের ভাড়াটেরা ছিলেন ভারতীয়, পাকিস্তানি, ডোমিনিকান. পুয়োর্টেরিকান, মুসলিম, উবেক, ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আগত ইহুদি। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে বিমানের আগেও যারা একজন আরেকজনকে হত্যা করছিল, তারা এখানে আসার পর পাশাপাশি অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস করছিল। প্রতি রোববার সকালে স্পেনিশ ভাষার টেলিভিশনে ‘ভিশন অফ এশিয়া’ প্রোগ্রামে বলিউডের মুভির গানে ভবন কেঁপে উঠতো। ডোমিনিকান, ভারতীয়, পাকিস্তানি ও রুশসহ সকলে গানের তালে তালে সুর মিলাতো। মেহতা দু:খ করে বলেন, আমরা সকল ইমিগ্রান্ট নতুন বিশ্বে জীবন গড়তে চেষ্টা করছি, কিন্তু আমাদের কেউ কেউ দেশে সবচেয়ে বিদ্বেষপরায়ণ সংগঠনগুলোতে অর্থ প্রেরণ করছি। এখানে আমরা হিন্দু, মুসলিম সবাই সমুচার মত একই খাবার খাই, এখানে হেট ক্রাইম আইন আমাদের দেশে চেয়ে অনেক প্রায়োগিক ও কঠোর। অতএব এখানে আমরা আইন মান্য করি।

আনডকুমেন্টেড বা অবৈধ ইমিগ্রান্টদের একটি বড় অংশ জ্যাকসন হাইটস এলাকায় বাস করে। মনে হয় তাদের সাথে বেসামরিক কর্তৃপক্ষের নীরব সমঝোতা রয়েছে, যে কারণ তার অনেক ইমিগ্রেশন আইনের কঠোর প্রয়োগ করে না। কেউ যদি এখানে থাকে তাহলে তার অবস্থানের বৈধতা সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা হয় না। তারা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিতে পারে এবং চাকুরি পেতে পারে। ভাড়া দেয়ার জন্য ও দেশে পাঠানোর জন্য পর্যাপ্ত আয় করে। জ্যাকসন হাইটসে রুজভেল্ট এভিনিউ বরাবর অনেক ষ্টোরে ইমিগ্রান্টদের দেশে অর্থ পাঠানোর ব্যবস্থা রয়েছে। সেজন্য রেমিট্যান্স অর্থনীতি বেশ চাঙ্গা। গত বছর সারাবিশ্বে ইমিগ্রান্টরা ৫৫৪ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ নিজ দেশে পাঠিয়েছে। রেমিট্যান্সের পরিমাণ ৫০ বা ১০০ ডলারের ছোট অংক হতে পারে। কিন্তু সে অর্থ সরাসরি দাদিমার কাছে যায় তার চিকিৎসার জন্য অথবা বোনের কাছে যায় তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফি দেয়ার জন্য। এতে সরকারের দুর্নীতির আওতামুক্ত থাকে রেমিট্যান্সের অর্থ।

৩৭ এভিনিউ থেকে এক ব্লক উত্তরেই দেখা যাবে ‘সাইডওয়াক ব্যালে’, যা পথচারিরা উপভোগ করে। প্রাণবন্ত এভিনিউ, রুজভেল্ট এভিনিউয়ের মতো ভিড়াক্রান্ত নয়- কোরিয়ান গ্রোসারি ও গুরমেট চিজ ও মদের দোকান থেকে শুরু করে ব্রাজিলিয়ান ও কলম্বিয়ান বুটিকের দোকানে সস্তা দামের জিনস ও লিঙারি বিক্রয় হচ্ছে।

advertisement

Posted ৯:১৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আমরা মরি কেন?
আমরা মরি কেন?

(631 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.