বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট ২০২৪
শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনে গত দেড় দশকে আওয়ামী ঘরানার কতিপয় প্রবাসী বাংলাদেশী অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। নামে-বেনামে তারা বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক বনেছেন দেশ ও প্রবাসে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের এসব নেতাকর্মীরা এজন্য বিভিন্ন রকম প্রতারণা ও কৌশল অবলম্বন করেন। এদের অনেকে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সংস্পর্শে আসেন এবং বাংলাদেশে বাগিয়ে নেন বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য। মালিক হন-ব্যাংক, বীমা, পাওয়ার প্ল্যান্ট, টিভি চ্যানেল, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল সহ বিশাল আকৃতির কোম্পানীর। নিউইয়র্ক সহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বসবাসকারী এসব ব্যক্তি যাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতো হতো তারা রাতারাতি বনে যান মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের মালিক।
বদলে যায় তাদের জীবন যাত্রা। নানাবিধ জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে এসব লুটেরারা দেশের ব্যাংক ও অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান থেকে হাতিয়ে নেন শত সহস্র কোটি টাকা। হাসিনা সরকার সব ধরণের সুযোগ সুবিধা ও নিশ্চয়তা বিধান করে তাদের এসব ভূয়া ও অবৈধ ব্যবসায় কার্যক্রমে। উন্মুক্ত করে দেন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারের পথ। এজন্য লুটেরাদেরকে পাচারকৃত অর্থের নির্দিষ্ট একটি পরিমাণ প্রদান করতে হতো হাসিনার পরিবারের সদস্যদেরকে। শেখ হাসিনা বিগত তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালীন প্রতিবছরই যোগদান করেছেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে।
এসময় তার সফরসঙ্গী হিসেবে কয়েক’শ নেতাকর্মী, ব্যবসায়ী, আমলা নিউইয়র্কে আসতেন। ম্যানহাটানের বিলাসবহুল হোটেলে যেখানে হাসিনা থাকতেন সেখানে বসতো আওয়ামী হাট। এসময়টায় সব অবৈধ ব্যবসা বাণিজ্যের লেন-দেন ও ভাগ বাটোয়ারা হতো ম্যানহাটানে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের আয়োজনে সংবর্ধনার নামে বড় ধরণের চাঁদাবাজি হতো নিউইয়র্কে। জিইয়ে রেখেছেন অভ্যন্তরীন কোন্দল। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে বিদেশে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের শাখা কমিটি গঠন ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ। তারপরও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে হাসিনা বছরের পর বছর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিজ হাতে নিয়ন্ত্রণ করেছেন।
গত ৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ও পলায়নের মধ্য দিয়ে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে বাংলাদেশে। হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলেও তার সব অনুসারীরা রয়েছেন আত্মগোপন করে। এসব আত্মগোপনকারীদের তালিকায় রয়েছে প্রবাসী লুটেরা ও দুর্নীতিবাজদের অনেকে। তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আদালতে আনা হচ্ছে দুর্নীতি, প্রতারণা ও অর্থপাচারের অভিযোগ। এসব কারণে ফুল টাইম এসব প্রবাসীদের পরিবারে বিরাজ করছে ভয়াবহ আতঙ্ক।
অপরদিকে পার্টটাইম প্রবাসী একশ্রেনীর লুটেরা রাষ্ট্রীয় অর্থ লুন্ঠন করে বসতি গেড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে। এদের মাঝে আছে ব্যবসায়ী আওয়ামী মন্ত্রী, এমপি, সামরিক ও বেসামরিক আমলা। এদের অনেকেই হাসিনা সরকারের অধীনে কর্মরত ছিলেন নিজ পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দিয়ে। বাংলাদেশের টাকায় আমেরিকা থাকার মজা লুটেছেন তারা। নিউইয়র্কের বনেদী এলাকায় নগদ অর্থে বাড়ি ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। ডিবির হারুন, আশরাফুল আলম খোকন, সাউদার্ন ব্যাংকের আমজাদ এবং স্বাস্থ্য বিভাগের ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল মিঠু, হাসিনার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক জাহাঙ্গীর আলম এদের অন্যতম। এসব দুর্নীতিবাজদেরও অনেকে দেশে আত্মগোপনে আছেন এখন। এদিকে প্রবাসী বাংলাদেশীরা উভয়শ্রেনীর লুটেরাদের তালিকা করে তাদের তথ্য উদঘাটনের চেষ্টা করছেন। প্রবাসে এসব লুটেরাদের চিহ্নিত করে তাদেরকে সামাজিকভাবে একঘরে করার বিষয়েও ভাবছেন প্রবাসীরা।
অবৈধভাবে অর্থ সম্পদের মালিক এসব ব্যক্তিরা বলেন, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক এর সাবেক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার ফরাসত আলী, এনআরবি গ্লোবাল (বর্তমানে এনআরবি ইসলামী ব্যাংক) এর চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী, মধুমতি ব্যাংক এর পরিচালক আবুল কাশেম, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডেপুটি প্রেস মিনিষ্টার আশরাফুল আলম খোকন, আওয়ামী নেতা মুহাম্মদ ফজলুর রহমান, ড. শাহাজাহান মাহমুদসহ আরো অনেকের নাম ইতোমধ্যে তালিকায় স্থান পেয়েছে। এছাড়া বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেবার অভিযোগে অভিযুক্ত সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক এর চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন দেশের সীমান্ত পাড়ি দেয়ার সময় এরই মধ্যে ধরা পড়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপ-প্রেস সচিব খোকনের অবৈধ সম্পদের খোঁজে দুদক
খোকনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা উপার্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে দুদকে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাক্তন উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকনের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। মঙ্গলবার তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা উপার্জনের এক অভিযোগ দুদক অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সংস্থাটির সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন জানিয়েছেন। দুদকে আসা অভিযোগে বলা হয়েছে, “২০১৩ সালে শেখ হাসিনার উপ-প্রেস সচিব হওয়ার পর থেকে পদ বাণিজ্য, স্বর্ণ ও মুদ্রা চোরাচালানের সিন্ডিকেট, ম্যাক্স গ্রুপ ও নগদের মত বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেন। এ ছাড়া অবৈধভাবে ভিওআইপি ব্যবসা পরিচালনাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা উপার্জন করে নিজ নামের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের নামেও অবৈধ সম্পদ গড়েন।”
আশরাফুল আলম খোকন ২০১৩ সালের ১৮ অগাস্ট শেখ হাসিনার উপ-প্রেস সচিব পদে চুক্তিতে যোগ দেন। পরে বিভিন্ন সময় তার মেয়াদ ও গ্রেড বাড়ানো হয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার করা অব্যাহতির আবেদন গ্রহণ করে তাকে ছুটিতে পাঠানোর খবর পাওয়া যায়। আশরাফুল আলম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। তিনি দীর্ঘদিন চ্যানেল আইয়ে কর্মরত ছিলেন। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ২০০৪ সালের একুশ অগাস্টে শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলায় আহতও হয়েছিলেন তিনি। ক্যাম্পাস জীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন খোকন।
Posted ১:১১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh