শনিবার, ৪ মে ২০২৪ | ২১ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

দেশে ঈদে দুই লাখ কোটি টাকা লেনদেন

বাংলাদেশ ডেস্ক   |   বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল ২০২৪

দেশে ঈদে দুই লাখ কোটি টাকা লেনদেন

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা : ঈদ উৎসব মানেই আনন্দ। প্রতি বছর এ আনন্দ লালন করতে সব পরিবারেই থাকে বাড়তি কেনাকাটার চাপ। আবার রমজানজুড়েই সেহরি ও ইফতার বাবদও অতিরিক্ত ভোগব্যয় হয়ে থাকে। সব মিলে এবার রোজায় ভোগব্যয়সহ ঈদকেন্দ্রিক বিভিন্ন ধরনের কেনাকাটায় সারা দেশে মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলোর ২৫ লাখ দোকানে অতিরিক্ত প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে সারা দেশে ৭৫ লাখ দোকান কর্মচারী, ১৪ লাখ সরকারি চাকরিজীবী এবং ৪৫ লাখ পোশাক শ্রমিক এবং অন্যান্য বেসরকারি খাতের আরও প্রায় দেড় কোটি কর্মজীবী ঈদ কেনাকাটা বাবদই জোগান দিয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির নিজস্ব উদ্যোগে পরিচালিত এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে এমন তথ্য ওঠে এসেছে।
জানা গেছে, দেশে মোট পরিবারের (খানা) সংখ্যা ৩ কোটি ৯৩ লাখ ৩০ হাজার। এর মধ্যে ২ কোটি ৮২ লাখ ৬০ হাজার পরিবার গ্রামে, ১ কোটি ১০ লাখ ৭০ হাজার পরিবার শহরে বাস করে। পর্যবেক্ষণ বলছে, রোজা শুরুর সপ্তাহখানেক আগে থেকেই ক্রেতা-ভোক্তার ভোগব্যয়কেন্দ্রিক বাড়তি খরচ শুরু হয়, যা চলে মাসজুড়ে। এ ছাড়া ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়ে যায় রোজার প্রথম সপ্তাহ থেকেই, যা চলে চাঁদ রাত পর্যন্ত। আর এ কেন্দ্রিক ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ প্রস্তুতি শুরু হয় তারও মাসখানেক আগে। এভাবে ঈদ দিন যত ঘনিয়ে আসে, সব শ্রেণির মানুষের কেনাকাটার চাপও তত বাড়ে। ফুটপাত থেকে অভিজাত–সব ধরনের মার্কেটে থাকে উপচে পড়া ভিড়। এই কেনাকাটায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়ে থাকে নতুন পোশাক এবং জুতো। এ ছাড়া গহনা সামগ্রী, কসমেটিকস থেকে চুড়ি-ফিতা সবই কেনা চাই। শুধু কি সাজপোশাক। ঈদের দিনে রসনা বিলাস খাবার ছাড়া কি আনন্দের ষোলকলা পূর্ণ হয়? তাই তো মুখরোচক বিভিন্ন খাবারও ঈদের কেনাকাটায় গুরুত্ব পায়। আবার প্রতি বছর যে হারে মূল্যস্ফীতি ঘটে, সব ধরনের কেনাকাটায় তার বাড়তি দামও গুনতে হয়। ফলে প্রতি বছর ঈদকেন্দ্রিক লেনদেনে টাকার অঙ্কও কিছুটা বেশি হয়। ঈদ উৎসব ঘিরে বিভিন্ন খাতে বিপুল অঙ্কের অর্থ ঘন ঘন হাতবদল হওয়ায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেমন বাড়ে, দেশের অর্থনীতিও তেমনি চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি পরিচালিত সমীক্ষা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ঈদ কেন্দ্র করে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়ে আসছে। তবে এ বছর মূল্যস্ফীতির কারণে সব ধরনের পণ্য ও সেবার দাম অতিরিক্ত ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। দাম বাড়ার কারণে আগের বছরগুলোর তুলনায় এবার কেনাকাটা কিছু কম হয়েছে। ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর ঈদকেন্দ্রিক লেনদেনের পরিমাণ ৫ শতাংশের মতো বেড়েছে। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। গত বছর এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা, যা ২০১৫ সালে ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। জরিপ তথ্যমতে, এ বছর ঈদকেন্দ্রিক লেনদেনে মার্কেটে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৬০ কোটি টাকার যে অতিরিক্ত টাকা ঢুকেছে, তার মধ্যে জাকাতের টাকা রয়েছে ৭০ হাজার ১২৫ কোটি। পোশাক কেনাকাটায় অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে ৩৪ হাজার কোটি টাকা। সর্বনিম্ন ব্যয় ৮ হাজার টাকা ধরে দেশে প্রায় চার কোটি খানা পরিবারের মধ্যে ২৫ ভাগ মানুষের কেনাকাটায় এই ব্যয় হয়েছে। এ ছাড়া মোট ১৭ কোটি জনসংখ্যার ৪০ শতাংশকে রোজাদার ধরে এবং জনপ্রতি ৪০ টাকা ব্যয় ধরে রমজানে ইফতার ও সেহরিবাবদ ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ১৬০ কোটি টাকা।
সাধারণত মানুষ স্বজনদের সঙ্গেই ঈদ করতে পছন্দ করে। তাই নানা কষ্ট উপেক্ষা করে নাড়ির টানে স্বজনদের কাছে যায় সবাই। এক্ষেত্রে সারা দেশে ৭০ লাখ লোক ঈদে বাড়ি গেছে এমন তথ্য ধরে এবং গাড়ি ভাড়াবাবদ ৮০০ টাকা গড় ব্যয় হিসাবে ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা পরিবহন খাতে অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে। রমজান মাস ও ঈদ কেন্দ্র করে অতিরিক্ত খাদ্য ব্যয় হয়েছে গড়ে ৬ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ রোজাদার হিসেবে ৪ কোটি ২৫ লাখ লোকের জন্য এবার খাদ্যবাবদ অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে ২৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ঈদ আনন্দকে বহুগুণ বাড়িয়ে তুলতে আনন্দপ্রেমী মানুষ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যায়। অর্থাৎ বিনোদনবাবদ এবার ব্যয় ধরা হয় ৪ হাজার ৬৭ কোটি টাকা।
গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চিত্র বদলেছে। একসময় ঈদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ ছিল পোশাক, জুতা, অলংকার ও সেমাই-চিনির মধ্যে। এখন তা গৃহস্থালি থেকে পৌঁছেছে প্রসাধনীতে। ঈদ ঘিরে বেড়েছে দেশ-বিদেশে ভ্রমণের প্রবণতাও। ফলে প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদ ঘিরে অর্থপ্রবাহ বাড়ছে। জরিপে বলা হয়, ঈদ কেন্দ্র করে বিক্রি অনেকগুণ বেড়েছে। এ লক্ষ্যে ঈদের চাহিদা পূরণের জন্য ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার গার্মেন্ট পণ্য আমদানি করা হয়। পোশাকের দোকানে আগে যেখানে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা বিক্রি হতো, ঈদ সামনে রেখে সেই বিক্রি ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। ঈদে বাংলাদেশ ব্যাংকও নতুন নোট ছাড়ে ৬ থেকে ৭ হাজার কোটি টাকার। এবারের বেচাকেনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্বরঙের স্বত্বাধিকার বিপ্লব সাহা বলেন, ‘অন্য উৎসবের তুলনায় ঈদে কেনাকাটা একটু বেশি করা হয়। অন্য উৎসবের জন্য বাজেট তেমন একটা না থাকলেও ঈদের জন্য বাজেট রাখা হয়। আর যেহেতু পহেলা বৈশাখ পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে, তাই একই বাজেট দুই ভাগ হয়ে গেছে। যার একটু বেশি সামর্থ্য আছে, সে দুটি আর যার একটু কম, সে একটি পোশাকই কিনছেন। তবে আশানুরূপ ব্যবসা হয়েছে কি না তা বলা যাচ্ছে না, কিন্তু মোটামুটি আছে। তিনি বলেন, মধ্যবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্তরাই আসলে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা দিচ্ছে সংসার চালাতে গিয়ে। আমি মনে করি, শপিংমলের তুলনায় ভ্যান, ফুটপাত এসব জায়গায় বিক্রি-বাট্টা বেশি হয়। মানুষ চেষ্টা করছে কোনো না কোনোভাবে সার্ভাইভ করতে এবং একই সঙ্গে উৎসবগুলো পালন করতে। তাই সবকিছু মিলিয়ে মনে হয় মোটামুটি একটা ব্যবসা হচ্ছে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ঈদুল ফিতরে সবচেয়ে বেশি কেনাবেচা হয়। মানুষের কেনার সামর্থ্য বাড়ছে, অস্বীকারের সুযোগ নেই। ফলে ঈদ অর্থনীতির আকারও বড় হচ্ছে। তবে মানুষের আয়ের বেশির ভাগ খরচ হয়ে যায় দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে। সে কারণে ঈদে বিক্রি বাড়লেও তার হার গতবারের তুলনায় কম। উচ্চ মূল্যস্ফীতিই তার অন্যতম কারণ।পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, যে কোনো উৎসবেই কেনাকাটা বাড়ে। এটা বৈশ্বিক রেওয়াজ। আমাদের এখানেও সেটি হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি কেনাকাটা হয় দুই ঈদেই। ফলে এ সময় মার্কেটে অতিরিক্ত লেনদেন হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে এই লেনদেন অর্থনীতিকে কিছুটা চাঙ্গা করলেও সেটি বর্তমান মূল্যস্ফীতির জন্য সহায়ক নয়।


advertisement

Posted ৮:৩০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল ২০২৪

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

কাঁঠাল সমাচার
কাঁঠাল সমাচার

(1406 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.