নিউইয়র্ক : | বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৩
মহান মুক্তিযুদ্ধের মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন কমান্ডার, বীর মুক্তিযোদ্ধা, গ্লোবাল পিস অ্যামব্যাসেডর স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ আগামীর নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ ও মানবিক বাংলাদেশ রচনার জন্য জাতীয় একতার নতুন ডাক দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যে প্রশ্নে সব মানুষের মত ও চিন্তা এক সেই দিকটাকে বিবেচনায় রেখেই সবাইকে এক হতে হবে। যারা বাংলা ভাষায় কথা বলি, ভাষার প্রশ্নে সবাই এক। এই একটি বৈশিষ্ট্য নিয়ে হলেও প্রতিটি মানুষকে এক হতে হবে। বাংলাদেশ ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ। জাতীয় একতার জন্যে সকল মুসলমানদের একতা গড়ার উদ্যোগ নেয়া একটি রাজনৈতিক সমাধান।
বহি:শত্রু থেকে দেশ রক্ষার জন্য দেশপ্রেমিকদের একতার কোনো বিকল্প নেই। দেশ রক্ষায় অনৈক্য ও বিভেদের মেরুদণ্ডে আঘাত হানতে হবে। সবাইকে এক ও অভিন্ন প্লাটফরমে দাঁড়াতে হবে। এর উদ্যোগ নিতে হবে রাষ্ট্রকে। অংশীদার হতে হবে রাজনৈতিক দলসহ সকল সমাজশক্তিকে। তিনি নিউইয়র্কের ব্রংকস এ বাংলাদেশি আমেরিকান কালচারাল এসোসিয়েশন আয়োজিত বিজয় উৎসব ও সংগঠনের অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যেই লাল সবুজের পতাকা উড়িয়ে জাতীয় সংগীত গেয়ে বিজয় শোভাযাত্রায় অংশ নেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ, সংস্কৃতিক কর্মী ও সাধারণ নারী পুরুষ। ব্রংকস গোল্ডেন প্যালেস এ প্রথমবারের মতো বৃহদাকার এলইডি মনিটর স্থাপন করে সেখানে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনসহ বিভিন্ন আয়োজন এক নতুন মাত্রা যুক্ত করে। এই আয়োজনগুলো মুগ্ধ করে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সব দর্শকদের।
দুটি পর্বে বিভক্ত প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বিদায়ী সভাপতি রাজরীতিক ও লেখক আহবাব চৌধুরী খোকন ও সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সারওয়ার চৌধুরী । দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন নব নির্বাচিত সভাপতি সারওয়ার চৌধুরী ও সঞ্চালনা করেন নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক শাহ বদরুজ্জামান রুহেল।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ও বাংলাদেশ সোসাইটির বোর্ড অব ট্রাষ্টি আব্দুল হাসিম হাসনু, বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল চৌধুরী, বীরমুক্তিযোদ্ধা মনসুর আহমদ,, বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান, বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকি, সিলেট বার এসোসিয়েশন এর প্রাক্তন সভাপতি এডভোকেট এ টি এম ফয়েজ, বাংলাদেশ সোসাইটির প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান সেলিম, প্রাক্তন সহ সাধারণ সম্পাদক সিরাজ উদ্দিন আহমদ সোহাগ , রাজনীতিবিদ আব্দুর রহিম বাদশা, ফয়েজ চৌধুরী, এজিএম জাহাঙ্গির হোসাইন, আবুল লেইছ চৌধুরী চেয়ারম্যান , আনোয়ারুল আলম ভূইয়া ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ বলেন, আল্লাহর কসম আমি এখনও যুদ্ধে আছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষার যুদ্ধে। আমার এই সরূপ এখনও দেখানোর সময় হয়নি। যারা সংগঠন করেন তারা আমার ভাই। ভিন্ন ভিন্ন দল, ভিন্ন ভিন্ন মতামতের ভেতরেও ভালোবাসা ও কল্যাণ থাকে। আমাদের দেশে একদল করলে আরেকদলের লোককে হত্যা করা হয়। এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নয় বরং এই ধারা বৈদেশিক শক্তিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের জন্য। মুক্তিযুদ্ধ আমরা সমগ্র দেশবাসীর জন্য করেছি। আমরা ব্যক্তিগত জীবনাচারে যদি এক হই, একই হাট-বাজারে যদি বাজার করি, একই, রাস্তায় চলাচল করি, নামাজের জায়গায় যদি এক হই, তাহলে দেশের প্রশ্নে কথা বলতে গিয়ে কেন আমরা একটি অভিন্ন নীতিতে এক থাকতে পারি না।
ড. আবু জাফর মাহমুদ অতীত ও বর্তমান অবস্থার ভেতরে থেকে দ্বন্দ্ব সৃষ্টির সমালোচনা করে বলেন, ভবিষ্যৎ ও আগামী নিয়ে আমাদের কোনো অঙ্গীকার ও কার্যক্রম নেই। তিনি বলেন, আমাদের সীমান্ত রক্ষা করতে হবে, প্রতিরক্ষা বাহিনীকে রক্ষা করতে হবে, কারণ তারাই দেশ রক্ষা করবে। সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যেকটি কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে রাজনৈতিক লেজুরবৃত্তি দূর করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যারা অভিজ্ঞ ও দক্ষ শিক্ষক তাদেরকে দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালাতে হবে। রাজনৈতিক দলের লেজুড় ও কোনো ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।
তিনি ব্রংকস এ বাংলা সিডিপ্যাপ সার্ভিসেস ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ারের নতুন অফিসে সকল জনকল্যানমুখি কাজের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্য্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, আমাদের কাচারিঘরে প্রত্যেক উন্নয়ন সংগঠনের কর্মীদের আমন্ত্রণ। মায়েরা বোনেরা যারা মূলধারার রাজনীতি করছেন, নিজেদেরকে সামাজিক ও সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যে রাখছেন তাদের জন্য কাচারিঘর হবে আপন একটি ক্ষেত্র।
বাংলাদেশী আমেরিকান কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন ইনক এর নব নির্বাচিত কর্মকর্তাদের শপথ বাক্য পাঠ করান সংগঠনটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক গ্লোবাল পিস অ্যাম্বাসেডর স্যার আবু জাফর মাহমুদ। তিনি সংগঠনের এ যাবৎকালের সকল কর্মকর্তা ও বর্তমান কর্মকর্তাদের একসঙ্গে জনকল্যানমুখি কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সমাজকর্মে সাবেক শব্দের কোনো জায়গা নেই। এই সংগঠনের কেউ সাবেক হবেন না। সবাই এক হয়েই সমাজ পরিবর্তনে অবদান রাখবেন।
সাংস্কৃতিক আয়োজনে মুক্তিযুদ্ধের কবিতা আবৃত্তি করেন বাপার শিশু শিল্পীরা। আগামী প্রজন্মের বাংলাদেশী আমেরিকান শিশুদের নৃত্য মুগ্ধ করে অতিথিদের। প্রবাসের বিশিষ্ট শিল্পীদের মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের গান উপভোগ্য করে তোলে শীতের সন্ধ্যা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথিসহ সকল বক্তা বাকা’র সকল সামাজিক কাজেরর প্রশংসা করে বলেন,দেশে ও প্রবাসে বাকা মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে যেভাবে কল্যানমুখি কাজ করে চলেছে তা অতুলনীয়।
Posted ১২:৪৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh