বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট ২০২৪
‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ এর প্রবক্তা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন ঘটেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন তিনি। স্বৈরশাসন দীর্ঘায়িত করতে বিভিন্ন সময় শেখ হাসিনা চটকদার শ্লোগান ছুঁড়ে দিতেন দেশবাসীর মাঝে। নিজ পরিকল্পনার সঙ্গে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ শব্দ দুটি জুড়ে দিতেন তিনি। গত ৫ আগস্টের পতনের মধ্য দিয়ে হাওয়া হয়ে গেছে তার সরকারের গৃহীত সকল কর্মকাণ্ড ও শ্লোগান। কিন্তু নিউইয়র্কে একটি চক্র এখনও কৌশলে শেখ হাসিনার ‘স্মার্ট’ শ্লোগান নিয়ে এগিয়ে চলছে।
‘স্মার্ট ইকোনমি’ শ্লোগান সামনে রেখে আয়োজন করছে ‘বাংলাদেশী অভিবাসী দিবস ও বাণিজ্য মেলা ২০২৪’। নিউইয়র্কের ম্যানহাটানস্থ বিলাসবহুল ম্যারিয়ট মারক্যুইস হোটেলে আসন্ন এই মেলা অনুষ্ঠানের সংবাদে স্থানীয় বাংলাদেশী কমিউনিটিতে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া।
যুক্তরাষ্ট্রে আওয়ামী স্বৈরশাসনামলে সুবিধাভোগী বিশ্বজিৎ সাহার ইউএসএ বাংলাদেশ বিজনেস লিঙ্ক ও মুক্তধারা নিউইয়র্ক এই মেলার মূল আয়োজক সংগঠন। দুটি সংগঠনেরই প্রেসিডেন্ট বিশ্বজিৎ সাহা। মেলার আয়োজনকে আন্তর্জাতিক মোড়ক দিতে বিশ্বজিৎ চাতুর্যের সঙ্গে ‘গ্রেটার নিউইয়র্ক চেম্বার অফ কমার্স’ নামে একটি সংগঠনকে সাথে রেখেছেন কাগজে কলমে। অপরদিকে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর মেলা ও প্রদর্শনী বিভাগ আগের মেলাগুলোতে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করেছে। এজন্য রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর কিছু কর্মকর্তা ও বিশ্বজিৎ সাহার ঢাকাস্থ প্রতিনিধি মিলে গড়ে তুলেছে একটি সিন্ডিকেট । তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক, অর্থ-লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক।
বিগত তিন বছর যাবত টাইমস স্কোয়ারের ম্যারিয়ট মারক্যুইস হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এই মেলা। গত বছর এই হোটেল ছাড়াও ভাড়া নেয়া হয়নস্থানীয় হিলটন হোটেল। শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর তিন মেয়াদে টানা ১৫ বার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে অংশ নেন। সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে সাধারণত বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয় এ অধিবেশনে।
এবারও রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে ২৪ সেপ্টেম্বর। বিশ্বজিৎ সাহা মোক্ষম সময় হিসেবে বেছে নিয়ে আয়োজন করেন এই মেলার। বাংলাদেশী অভিবাসী দিবস ও বাণিজ্য মেলায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের ন্যূনতম কোনো অংশগ্রহণ নেই। শেখ হাসিনার শত শত সফর সঙ্গীর মধ্যে একটি শ্রেনি এবং মেলার জন্য পৃথকভাবে বিভিন্ন ব্যাংক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিদের একটি মিলন মেলার আয়োজন করেন বিশ্বজিৎ। এই মেলায় অতীতে আতিথ্য গ্রহণ করেছেন হাসিনা সরকারের পররাষ্ট্র ও বাণিজ্যসহ বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, আইএফআইসি, ইউবিবিএল ও ঢাকা ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের মালিক, পরিচালক ও এমডি গণ।
মেলা আয়োজনকে কেন্দ্র করে বিশ্বজিৎ সাহা প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে সক্রিয় আওয়ামী ঘরানার কতিপয় বুদ্ধিজীবী ও অ্যাক্টিভিষ্টদের ব্যবহার করেন ঢাল হিসেবে । তিনি তাদেরকে দিয়েই অনেক কথা বলিয়ে থাকেন, নিজের অসদুদ্দেশ্যকে আড়াল করার জন্য।
নিউইয়র্কের এই বাণিজ্য মেলার আড়ালে চলতো বড় ধরনের অর্থ পাচার, সরকারী কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকদের মাঝে লেনদেন ও ভাগ-বাটোয়ারা রাষ্ট্রীয় অর্থের। এর সাথে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর অসাধু অনেক কর্মকর্তা জড়িত। মেলার মওসুমে তাদের অনেকে অর্থের বিনিময়ে আদম পাচার করে এসেছেন। এবারও এই চক্রটি বেশ সক্রিয়। নতুন অন্তবর্তীকালীন সরকার বিষয়টি হয়তো জানে না। ইতোমধ্যে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর উপপরিচালক মাহমুদা খাতুন বাণিজ্য মেলা সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন। ঢাকার কয়েকটি সংবাদপত্রে এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে মেলায় অংশগ্রহণকারীদের স্টলের জন্য প্রত্যেককে ৫ লাখ ৭৫ হাজার ডলার করে দিতে হবে।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশী অভিবাসী দিবস ও বাণিজ্য মেলা আয়োজনের মূল লক্ষ্য ছিলো শেখ মুজিবের স্মৃতি ও তার কন্যার জাতিসংঘ জয়ের বিষয়টি প্রতিবছর বাংলাদেশীদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া। শেখ মুজিব ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেন। আর এই দিবসটি স্মরণীয় করতেই অভিবাসী দিবস ও মেলার আয়োজন। ২০২২ সালের মেলায় ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বঙ্গবন্ধুর আলোকচিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন। বিগত দুই বছরের মেলায় শেখ হাসিনা সরকারের উপদেষ্টা ও মন্ত্রীদের উপস্থিতি ছিল প্রতিটি সেমিনারে।
বাণিজ্য মেলার নামে সরকার লক্ষ লক্ষ ডলার ব্যয় করেছে। বিভিন্ন ব্যাংক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান মোটা অংকের অর্থ দিয়ে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে বিশ্বজিৎ সাহাকে। মেলার মাধ্যমে বিশ্বজিৎ সাহা হাতিয়ে নিয়েছে বিরাট অংকের অর্থ। মেলা প্রসঙ্গে বিশ্বজিৎ সাহার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গত বছর শুধু ম্যারিয়ট মারক্যুইস হোটেলকেই ভাড়া বাবদ ৬৫ হাজার ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এছাড়াও মোটা অংকের অর্থব্যয় হয়েছে মেলা আয়োজনে। আয়োজক সংগঠন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে বিশ্বজিৎ বলেন, ইউএসএ বিজনেস লিঙ্কের ৯ সদস্যের একটি কাঠামো রয়েছে। কিন্তু তিনি তাদের নাম বলতে পারেননি। পরে বিস্তারিত তথ্য জানানোর কথা থাকলেও আর যোগাযোগ করেননি বিশ্বজিৎ। এই বাণিজ্য মেলার মাধ্যমে গত দুই বছরে কত ডলারের বাণিজ্য সুবিধা বাংলাদেশ পেয়েছে সে সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই বিশ্বজিৎ সাহার কাছে। তবে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো যেসব রপ্তানি পন্যের তালিকা দিয়েছে মেলার জন্য এসব পন্য কার্যত ২০১৩ সালের জুনে আমদানি নিষিদ্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
জেনারালাইজড সিস্টেম প্রেফারেন্স প্রোগ্রাম-জিএসপির সুবিধা বাতিল করায় এসব পন্য রফতানি যোগ্য নয় যুক্তরাষ্ট্রে। তবে ট্যারিফ দিয়ে রপ্তানির সুযোগ থাকলেও কোনো সাড়া মেলেনি।পুরো বাণিজ্য মেলা ছিলো সালমান এফ রহমানের আইএফআইসি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে।
বিশ্বজিৎ সাহা দীর্ঘ তিন দশ যাবত মুক্তধারা বইমেলার নামে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা ও আদম ব্যবসা করে আসছে। অবৈধভাবে মুক্তধারার নাম ব্যবহার করার কারণে বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। শেখ মুজিব হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’র প্রবক্তা বিশ্বজিৎ হাসিনা সরকারের আমলে বিপুল পরিমাণ অর্থবিত্তের মালিক বনেছেন। তিনিই আবার কৌশলে স্বৈরাচার মুক্ত বাংলাদেশের অপচেষ্টা করছেন প্রতিনিধিত্ব করার । সচেতন প্রবাসী বাংলাদেশীরা ইতোমধ্যেই এই প্রচেষ্টা রুখে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
Posted ১২:৫৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh