নিউইয়র্ক : | বৃহস্পতিবার, ০৫ নভেম্বর ২০২০
নিউইয়র্কের ব্যাপক উৎসাহ ও যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছে পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী। বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-এর পূণ্যময় জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা, মিলাদ মাহফিল, দোয়া-মুনাজাত এবং তবারক বিতরণের মধ্যে দিয়ে দিবসটি উদযাপন করা হয়। খবর ইউএসএনিউজঅনলাইন’র।
বাংলাবাজার জামে মসজিদ
নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসে বাংলাবাজার জামে মসজিদে গত ২৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যে ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ব্রঙ্কস ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল মিলাদুন্নবী উদযাপন কমিটির আয়োজনে দ্বিতীয়বারের মত উদযাপিত হয় ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী। উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা আবুল কাশেম মোহাম্মদ ইয়াহইয়ার সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব হাফিজ মাওলানা ওয়াহি আহমেদ চৌধুরীর পরিচালনায় মাহফিলে তাৎপর্যপূর্ণ ওয়াজ পেশ করেন বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার ড. শেখ রাব্বি ওসমান এবং মুফতি মাওলানা মইনুল ইসলাম। শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মোহাম্মদ আবু সাঈদ।
মাহফিলে বক্তারা মহানবী (সঃ)-এর বর্ণাঢ্য জীবনের বিভিন্ন দিক ও আদর্শের উপর আলোকপাত করে বলেন, রাসূল (সা.) ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। মহান আল্লাহ বিশ্বজগতের শান্তির দূত হিসেবে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে এ পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। তিনি প্রচার করেন শান্তির ধর্ম ইসলাম। বিশ্ববাসীকে মুক্তি ও শান্তির পথে আহ্বান জানান। প্রতিষ্ঠা করেন মানুষের মর্যাদা ও অধিকার। মহানবীর (সঃ)-এর আদর্শ আজকের বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে উল্লেখ করেন তারা। মহানবীর আদর্শ অনুসরনের মাধ্যমে ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে সমাজের সকল স্তরেই শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
অনুষ্ঠানে এরপর মাওলানা আবুল কাশেম মোহাম্মদ ইয়াহইয়া ও হাফেজ আবদুল কাদের মিলাদ মাহফিল পরিচালনা করেন। মাহফিলে মুসলিম উম্মা ও বিশ্ব মানবতার শান্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া-মুনাজাত পরিচালনা করেন ড. শেখ রাব্বি ওসমান। বিশ্বে করোনায় শহীদদের রুহের মাগফিরাত এবং আক্রান্তদের দ্রুত আরোগ্য কামনায় দোয়া করা হয়।উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা আবুল কাশেম মোহাম্মদ ইয়াহইয়া এবং সদস্য সচিব হাফিজ মাওলানা ওয়াহি আহমেদ চৌধুরী অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার জন্য সকলকে বিশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
পার্কচেস্টার জামে মসজিদ
নিউইয়র্কে বাঙালী অধ্যুষিত ব্রঙ্কসের প্রাচীনতম মসজিদ পার্কচেস্টার জামে মসজিদে গত ২৮ থেকে ৩০ অক্টোবর বুধবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার প্রতিদিন বাদ আসর থেকে এশা পর্যন্ত যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায় ভাবগম্ভীর পরিবেশে উদযাপিত হয় পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী। কর্মসূচির মধ্যে ছিল আলোচনা, মিলাদ মাহফিল, দোয়া এবং তবারক বিতরণ। ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী সম্পর্কে তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা করেন বিশিষ্ট ইসলামিক চিন্তাবিদ পার্কচেস্টার জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মো: মাসহুদ ইকবাল। এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন মসজিদের মুয়াজ্জিন মাওলানা নুরুল ইসলাম, নতুন প্রজন্মের জিশান ইকবাল ও রাশেদ মজুমদার।
আলোচনায় মাওলানা মো: মাসহুদ ইকবাল পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)’র ফজিলত ও হযরত মোহাম্মদ (স.) এর জীবন আদর্শের উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরে বলেন, দু’জাহানের বাদশা হযরত মোহাম্মদ (স.) এর এই ধরাপৃষ্ঠে আবির্ভাব উপলক্ষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতি বছর ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) উদযাপন করেন। মুসলিম দুনিয়ায় চৌদ্দশত বছর ধরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রিয়নবীর শুভাগমনের ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপিত হয়ে আসছে।
মাওলানা মো: মাসহুদ ইকবাল বলেন, মহান আল্লাহ বিশ্বজগতের শান্তির দূত হিসেবে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে এ জগতে প্রেরণ করেন। রাসূলুল্লাহ (সা:)-ই সর্বপ্রথম ঘোষণা করেন মানুষের মুক্তি-বাণী। মানুষের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা:) স্বীয় কর্মে ও আচরণে তা প্রমাণও করে গেছেন।
মাওলানা মো: মাসহুদ ইকবাল বলেন, রাসূল (সা.) কে যে যত কাছে নিয়ে আসবেন, আল্লাহর দ্বীনও তিনি তত কাছে পাবেন। শুধু মিলাদ আর মিষ্টি-তবারক খাওয়ার মধ্যে সীমবদ্ধ না থেকে মহানবী (সা.) এর জীবনাদর্শ অনুসরণ করে ভ্রাতৃত্ববোধ ও মানব কল্যাণে ব্রতী হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নিজ সন্তানদের ইসলামী শিক্ষার মাধ্যমে আদর্শ জীবন যাপনে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে।
মাওলানা মো: মাসহুদ ইকবাল বলেন, বর্তমানে একশ্রেণীর আলেম ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) পালনের ঘোর বিরোধিতা করেন। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ঈদে মিলাদ্দুন্নবী (স.)কে কেন্দ্র করে নানা ধরনের বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল (সা.) কে সাধারণ মানুষের সাথে তুলনা করেন। রাসূল (সা.) সাধারণ মানুষ বললে ঈমান থাকবে না। পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে মাহফিল শুরু হয়। আলোচনা, মিলাদ, দোয়া মুনাজাত ও তবারুক বিতরণের মধ্য দিয়ে এ আয়োজন শেষ হয়। দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন মাওলানা মো: মাসহুদ ইকবাল। মোনাজোতে করোনাভাইরাসে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত এবং কমিউনিটি, দেশ, জাতি ও বিশ্ব মানবতার কল্যাণে আল্লাহর রহমত কামনা করা হয়। করোনাকালের এ মিলাদ মাহফিলে স্বাস্থ্য বিধি মেনে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি উপস্থিত ছিলেন।
পার্কচেস্টার জামে মসজিদের সভাপতি মোস্তাক আহমদ চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক আম্বিয়া মিয়া তিনদিন ব্যাপি ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী মাহফিলে অংশ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।মাহফিলের সার্বিক তত্ত্বাবিধানে ছিলেন পার্কচেস্টার জামে মসজিদের সভাপতি মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, সহ সভাপতি হারুন আলী, মো: আব্দুল মতিন, সাধারণ সম্পাদক আম্বিয়া মিয়া, সহ সাধারণ সম্পাদক শেখ মজনু মিয়া, কোষাধ্যক্ষ মাজলুল আহমেদ, সহ কোষাধ্যক্ষ তারেক মিয়া, কালচারাল সেক্রেটারী মোহাম্মদ রেজাউল ইসলাম, ফিউনারেল সেক্রেটারী মোঃ নুরুল আহিয়া, মেইনটেনেন্স সেক্রেটারী মোঃ ফটিক মিয়া, এডুকেশন সেক্রেটারী মো: আব্দুল গফুর, কার্যকরী সদস্য সোহান আহমদ, রোকন আহমেদ ময়নুল ও নুরুল চৌধুরী।
নর্থ ব্রঙ্কস ইসলামিক সেন্টার অ্যান্ড জামে মসজিদ
নিউইয়র্কের নর্থ ব্রঙ্কস ইসলামিক সেন্টার অ্যান্ড জামে মসজিদে গত ২৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার জশনে ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ইউএসএ এবং নর্থ ব্রঙ্কস ইসলামিক সেন্টার অ্যান্ড জামে মসজিদ ইনকের উদ্যোগে যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায় মাগরিব থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত এ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ইউএসএর সভাপতি আল্লমা সৈয়দ জুবায়ের আহমদের সভাপতিত্বে এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ইউএসএর প্রচার সম্পাদক মাওলানা শেখ মোস্তফা কামালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ইসলামিক চিন্তাবিদ আল্লামা মুফতি সৈয়দ আনসারুল করিম আল আজহারী। না’ত খাঁ পরিবেশন করেন শায়ের মুহাম্মদ শাখের আশরাফী কাদেরী।
শুরুতেই পবিত্র কোরআনুল কারীম থেকে তেলাওয়াত করেন মোহাম্মদ হানিফ এবং নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিবেশন করেন সৈয়দ আব্দুল মতিন, মোঃ নুরুল আমিন মুকুল, আতাউর রহমান, রহমান শাহ আলম, মুহাম্মদ শাহ আলম প্রমুখ।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ইউএসএর মহাসচিব আলহাজ্ব মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, নর্থ ব্রঙ্কস ইসলামিক সেন্টারের সভাপতি আলহাজ্ব সৈয়দ জামিন আলী, নর্থ ব্রঙ্কস ইসলামিক সেন্টারের সেক্রেটারী আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন। বক্তব্য রাখেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ইউএসএর সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা আতাউর রহমান, সহ-সভাপতি আলহাজ আসলাম হাবিব, সাংগঠনিক সম্পাদক মুরাদুল আলম চৌধুরী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ ইউসুফ আলী, অর্থ সম্পাদক আরিফ চৌধুরী, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মুহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক মুহাম্মদ শাহ আলম, প্রযুক্তি ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মুহাম্মদ উসমান গণি তালুকদার শামীম, নর্থ ব্রঙ্কস ইসলামিক সেন্টারের এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি শাহ জাকারিয়া, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ মাহবুব হোসাইন, সৈয়দ বশারত আলী, সৈয়দ রাহুল ইসলাম, বদরুল হক প্রমুখ।
জশনে ঈদে মিলাদুন্নবী মাহফিলে আলোচকবৃন্দ বলেন, মহান আল্লাহ তায়ালা মহানবী রাসূল (সা.) কে শান্তি, মুক্তি, প্রগতি ও সামগ্রিক কল্যাণে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত হিসেবে প্রেরণ করেন। তিনি ছিলেন শান্তি, নিরাপত্তা ও কল্যাণের মূর্ত প্রতীক ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’। বক্তারা বলেন, দল-মত-গোত্র নির্বিশেষে আরবের জাতি-ধর্ম-বর্ণ সবার মধ্যে শান্তি চুক্তি ও সন্ধি স্থাপনের মধ্য দিয়ে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে মহানবী (সা.) সন্ত্রাসমুক্ত শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। অথচ ফ্রান্স আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সা.) কে নিয়ে ব্যঙ্গ করার দু:সাহস দেখিয়েছে। বক্তারা ফ্রান্সের এমন ঘৃণ্য কর্মের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তাদের পণ্য বয়কট করার জন্য মুসলিম উম্মাহর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে আল্লামা জুবায়ের আহমদ বলেন, আজ আমরা প্রিয়নবী হযরত মুহম্মদ (স)’র ভালবাসা এবং আদর্শ থেকে বিচ্যূত হওয়ার কারণে মুসলমানদের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। তারই অংশ হিসেবে ফ্রান্সে হযরত মুহম্মদ (স)কে নিয়ে ব্যঙ্গ করা হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। তিনি বলেন, এভাবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশ জাতি প্রিয়নবী হযরত মুহম্মদ (স) এবং মুসলমানদের ঈমান আক্বিদার বিরুদ্ধে আরও গভীর ষড়যন্ত্র চালাবে। তাই এ সমস্ত ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে মুসলিম মিল্লাতকে প্রিয় নবীজির প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা বৃদ্ধি এবং তার প্রতি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আনুগত্য করতে হবে।
শেষে সকলের সুখ শান্তি এবং সুস্বাস্থ্য কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে পবিত্র জশনে ঈদে মিলাদুন্নবী মাহফিলের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। আল্লমা সৈয়দ জুবায়ের আহমদ মোনাজাত পরিচালনা করেন। মোনাজোতে করোনভাইরাসে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত, আক্রান্তদের সুস্থতা এবং বিশ্বকে মারাত্মক এই ভাইরাস থেকে নিরাপদ রাখার জন্য আল্লাহর রহমত কামনা করা হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিপুল সংখ্যক মুসল্লী এ মাহফিলে যোগ দেন। সবশেষে তাবারক বিতরণ করা হয়।
মোহাম্মদ (সাঃ)-এর পূণ্যময় জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা, মিলাদ মাহফিল, দোয়া-মুনাজাত এবং তবারক বিতরণের মধ্যে দিয়ে দিবসটি উদযাপন করা হয়। খবর ইউএসএনিউজঅনলাইন’র।
বাংলাবাজার জামে মসজিদ
নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসে বাংলাবাজার জামে মসজিদে গত ২৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যে ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ব্রঙ্কস ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল মিলাদুন্নবী উদযাপন কমিটির আয়োজনে দ্বিতীয়বারের মত উদযাপিত হয় ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী। উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা আবুল কাশেম মোহাম্মদ ইয়াহইয়ার সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব হাফিজ মাওলানা ওয়াহি আহমেদ চৌধুরীর পরিচালনায় মাহফিলে তাৎপর্যপূর্ণ ওয়াজ পেশ করেন বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার ড. শেখ রাব্বি ওসমান এবং মুফতি মাওলানা মইনুল ইসলাম। শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মোহাম্মদ আবু সাঈদ।
মাহফিলে বক্তারা মহানবী (সঃ)-এর বর্ণাঢ্য জীবনের বিভিন্ন দিক ও আদর্শের উপর আলোকপাত করে বলেন, রাসূল (সা.) ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। মহান আল্লাহ বিশ্বজগতের শান্তির দূত হিসেবে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে এ পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। তিনি প্রচার করেন শান্তির ধর্ম ইসলাম। বিশ্ববাসীকে মুক্তি ও শান্তির পথে আহ্বান জানান। প্রতিষ্ঠা করেন মানুষের মর্যাদা ও অধিকার। মহানবীর (সঃ)-এর আদর্শ আজকের বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে উল্লেখ করেন তারা। মহানবীর আদর্শ অনুসরনের মাধ্যমে ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে সমাজের সকল স্তরেই শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
অনুষ্ঠানে এরপর মাওলানা আবুল কাশেম মোহাম্মদ ইয়াহইয়া ও হাফেজ আবদুল কাদের মিলাদ মাহফিল পরিচালনা করেন। মাহফিলে মুসলিম উম্মা ও বিশ্ব মানবতার শান্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া-মুনাজাত পরিচালনা করেন ড. শেখ রাব্বি ওসমান। বিশ্বে করোনায় শহীদদের রুহের মাগফিরাত এবং আক্রান্তদের দ্রুত আরোগ্য কামনায় দোয়া করা হয়।উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা আবুল কাশেম মোহাম্মদ ইয়াহইয়া এবং সদস্য সচিব হাফিজ মাওলানা ওয়াহি আহমেদ চৌধুরী অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার জন্য সকলকে বিশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
পার্কচেস্টার জামে মসজিদ
নিউইয়র্কে বাঙালী অধ্যুষিত ব্রঙ্কসের প্রাচীনতম মসজিদ পার্কচেস্টার জামে মসজিদে গত ২৮ থেকে ৩০ অক্টোবর বুধবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার প্রতিদিন বাদ আসর থেকে এশা পর্যন্ত যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায় ভাবগম্ভীর পরিবেশে উদযাপিত হয় পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী। কর্মসূচির মধ্যে ছিল আলোচনা, মিলাদ মাহফিল, দোয়া এবং তবারক বিতরণ। ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী সম্পর্কে তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা করেন বিশিষ্ট ইসলামিক চিন্তাবিদ পার্কচেস্টার জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মো: মাসহুদ ইকবাল। এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন মসজিদের মুয়াজ্জিন মাওলানা নুরুল ইসলাম, নতুন প্রজন্মের জিশান ইকবাল ও রাশেদ মজুমদার।
আলোচনায় মাওলানা মো: মাসহুদ ইকবাল পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)’র ফজিলত ও হযরত মোহাম্মদ (স.) এর জীবন আদর্শের উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরে বলেন, দু’জাহানের বাদশা হযরত মোহাম্মদ (স.) এর এই ধরাপৃষ্ঠে আবির্ভাব উপলক্ষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতি বছর ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) উদযাপন করেন। মুসলিম দুনিয়ায় চৌদ্দশত বছর ধরে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রিয়নবীর শুভাগমনের ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপিত হয়ে আসছে।
মাওলানা মো: মাসহুদ ইকবাল বলেন, মহান আল্লাহ বিশ্বজগতের শান্তির দূত হিসেবে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে এ জগতে প্রেরণ করেন। রাসূলুল্লাহ (সা:)-ই সর্বপ্রথম ঘোষণা করেন মানুষের মুক্তি-বাণী। মানুষের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা:) স্বীয় কর্মে ও আচরণে তা প্রমাণও করে গেছেন।
মাওলানা মো: মাসহুদ ইকবাল বলেন, রাসূল (সা.) কে যে যত কাছে নিয়ে আসবেন, আল্লাহর দ্বীনও তিনি তত কাছে পাবেন। শুধু মিলাদ আর মিষ্টি-তবারক খাওয়ার মধ্যে সীমবদ্ধ না থেকে মহানবী (সা.) এর জীবনাদর্শ অনুসরণ করে ভ্রাতৃত্ববোধ ও মানব কল্যাণে ব্রতী হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নিজ সন্তানদের ইসলামী শিক্ষার মাধ্যমে আদর্শ জীবন যাপনে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে।
মাওলানা মো: মাসহুদ ইকবাল বলেন, বর্তমানে একশ্রেণীর আলেম ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) পালনের ঘোর বিরোধিতা করেন। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ঈদে মিলাদ্দুন্নবী (স.)কে কেন্দ্র করে নানা ধরনের বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল (সা.) কে সাধারণ মানুষের সাথে তুলনা করেন। রাসূল (সা.) সাধারণ মানুষ বললে ঈমান থাকবে না। পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে মাহফিল শুরু হয়। আলোচনা, মিলাদ, দোয়া মুনাজাত ও তবারুক বিতরণের মধ্য দিয়ে এ আয়োজন শেষ হয়। দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন মাওলানা মো: মাসহুদ ইকবাল। মোনাজোতে করোনাভাইরাসে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত এবং কমিউনিটি, দেশ, জাতি ও বিশ্ব মানবতার কল্যাণে আল্লাহর রহমত কামনা করা হয়। করোনাকালের এ মিলাদ মাহফিলে স্বাস্থ্য বিধি মেনে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি উপস্থিত ছিলেন।
পার্কচেস্টার জামে মসজিদের সভাপতি মোস্তাক আহমদ চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক আম্বিয়া মিয়া তিনদিন ব্যাপি ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী মাহফিলে অংশ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।মাহফিলের সার্বিক তত্ত্বাবিধানে ছিলেন পার্কচেস্টার জামে মসজিদের সভাপতি মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, সহ সভাপতি হারুন আলী, মো: আব্দুল মতিন, সাধারণ সম্পাদক আম্বিয়া মিয়া, সহ সাধারণ সম্পাদক শেখ মজনু মিয়া, কোষাধ্যক্ষ মাজলুল আহমেদ, সহ কোষাধ্যক্ষ তারেক মিয়া, কালচারাল সেক্রেটারী মোহাম্মদ রেজাউল ইসলাম, ফিউনারেল সেক্রেটারী মোঃ নুরুল আহিয়া, মেইনটেনেন্স সেক্রেটারী মোঃ ফটিক মিয়া, এডুকেশন সেক্রেটারী মো: আব্দুল গফুর, কার্যকরী সদস্য সোহান আহমদ, রোকন আহমেদ ময়নুল ও নুরুল চৌধুরী।
নর্থ ব্রঙ্কস ইসলামিক সেন্টার অ্যান্ড জামে মসজিদ
নিউইয়র্কের নর্থ ব্রঙ্কস ইসলামিক সেন্টার অ্যান্ড জামে মসজিদে গত ২৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার জশনে ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ইউএসএ এবং নর্থ ব্রঙ্কস ইসলামিক সেন্টার অ্যান্ড জামে মসজিদ ইনকের উদ্যোগে যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায় মাগরিব থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত এ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ইউএসএর সভাপতি আল্লমা সৈয়দ জুবায়ের আহমদের সভাপতিত্বে এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ইউএসএর প্রচার সম্পাদক মাওলানা শেখ মোস্তফা কামালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ইসলামিক চিন্তাবিদ আল্লামা মুফতি সৈয়দ আনসারুল করিম আল আজহারী। না’ত খাঁ পরিবেশন করেন শায়ের মুহাম্মদ শাখের আশরাফী কাদেরী।
শুরুতেই পবিত্র কোরআনুল কারীম থেকে তেলাওয়াত করেন মোহাম্মদ হানিফ এবং নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিবেশন করেন সৈয়দ আব্দুল মতিন, মোঃ নুরুল আমিন মুকুল, আতাউর রহমান, রহমান শাহ আলম, মুহাম্মদ শাহ আলম প্রমুখ।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ইউএসএর মহাসচিব আলহাজ্ব মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, নর্থ ব্রঙ্কস ইসলামিক সেন্টারের সভাপতি আলহাজ্ব সৈয়দ জামিন আলী, নর্থ ব্রঙ্কস ইসলামিক সেন্টারের সেক্রেটারী আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন। বক্তব্য রাখেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ইউএসএর সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা আতাউর রহমান, সহ-সভাপতি আলহাজ আসলাম হাবিব, সাংগঠনিক সম্পাদক মুরাদুল আলম চৌধুরী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ ইউসুফ আলী, অর্থ সম্পাদক আরিফ চৌধুরী, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মুহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক মুহাম্মদ শাহ আলম, প্রযুক্তি ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মুহাম্মদ উসমান গণি তালুকদার শামীম, নর্থ ব্রঙ্কস ইসলামিক সেন্টারের এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি শাহ জাকারিয়া, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ মাহবুব হোসাইন, সৈয়দ বশারত আলী, সৈয়দ রাহুল ইসলাম, বদরুল হক প্রমুখ।
জশনে ঈদে মিলাদুন্নবী মাহফিলে আলোচকবৃন্দ বলেন, মহান আল্লাহ তায়ালা মহানবী রাসূল (সা.) কে শান্তি, মুক্তি, প্রগতি ও সামগ্রিক কল্যাণে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত হিসেবে প্রেরণ করেন। তিনি ছিলেন শান্তি, নিরাপত্তা ও কল্যাণের মূর্ত প্রতীক ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’। বক্তারা বলেন, দল-মত-গোত্র নির্বিশেষে আরবের জাতি-ধর্ম-বর্ণ সবার মধ্যে শান্তি চুক্তি ও সন্ধি স্থাপনের মধ্য দিয়ে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে মহানবী (সা.) সন্ত্রাসমুক্ত শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। অথচ ফ্রান্স আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সা.) কে নিয়ে ব্যঙ্গ করার দু:সাহস দেখিয়েছে। বক্তারা ফ্রান্সের এমন ঘৃণ্য কর্মের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তাদের পণ্য বয়কট করার জন্য মুসলিম উম্মাহর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে আল্লামা জুবায়ের আহমদ বলেন, আজ আমরা প্রিয়নবী হযরত মুহম্মদ (স)’র ভালবাসা এবং আদর্শ থেকে বিচ্যূত হওয়ার কারণে মুসলমানদের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। তারই অংশ হিসেবে ফ্রান্সে হযরত মুহম্মদ (স)কে নিয়ে ব্যঙ্গ করা হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। তিনি বলেন, এভাবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশ জাতি প্রিয়নবী হযরত মুহম্মদ (স) এবং মুসলমানদের ঈমান আক্বিদার বিরুদ্ধে আরও গভীর ষড়যন্ত্র চালাবে। তাই এ সমস্ত ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে মুসলিম মিল্লাতকে প্রিয় নবীজির প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা বৃদ্ধি এবং তার প্রতি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আনুগত্য করতে হবে।
শেষে সকলের সুখ শান্তি এবং সুস্বাস্থ্য কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে পবিত্র জশনে ঈদে মিলাদুন্নবী মাহফিলের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। আল্লমা সৈয়দ জুবায়ের আহমদ মোনাজাত পরিচালনা করেন। মোনাজোতে করোনভাইরাসে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত, আক্রান্তদের সুস্থতা এবং বিশ্বকে মারাত্মক এই ভাইরাস থেকে নিরাপদ রাখার জন্য আল্লাহর রহমত কামনা করা হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিপুল সংখ্যক মুসল্লী এ মাহফিলে যোগ দেন। সবশেষে তাবারক বিতরণ করা হয়।
Posted ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৫ নভেম্বর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh