শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
ধাক্কা আতংকে যাত্রী সংখ্যা কমেছে ৬০ শতাংশ

নিউইয়র্ক সাবওয়ে এখন বিপজ্জনক

বাংলাদেশ রিপোর্ট :   |   বৃহস্পতিবার, ২০ জানুয়ারি ২০২২

নিউইয়র্ক সাবওয়ে এখন বিপজ্জনক

ধাক্কায় নিহত মিশেল অ্যালিসা

নিউইয়র্ক সিটির সাবওয়ে যাত্রীদের জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে বিপজ্জনক হয়ে পড়ছে, অপরদিকে যাত্রীসংখ্যা হ্রাসের কারণে অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে সাবওয়ে । গত শনিবার সাবওয়ের টাইমস স্কোয়ার স্টেশনে চল্লিশ বছর বয়সী এক নারীকে ট্রেন আসার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে ট্রেনের সামনে ধাক্কা দিয়ে ট্র্যাকে ফেলে দেওয়ার ফলে তার মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে নতুন করে তুলকালাম কান্ড শুরু হয়েছে।

সিটির সদ্য দায়িত্ব গ্রহণকারী মেয়র এরিক অ্যাডামস তার পূর্বসূরী মেয়রদের মতই কোন ঘটনা ঘটার পর জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে প্রযোজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। উল্লেখ্য, একটি কনসালটিং প্রতিষ্ঠান ‘ডেলোইট’ এর কর্মী মিশেল অ্যালিসা (৪০) গত শনিবার টাইমস স্কোয়ার স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করার সময় ট্রেন আসার পূর্ব মুহূর্তে এক ব্যক্তি তাকে জোরে ধাক্কা দেয় এবং তিনি নিচে ট্র্যাকে পড়ে গেলে ট্রেনটি তাকে পিষ্ট করে। ঘটনার জন্য সন্দেহভাজন একষট্টি বছর বয়স্ক সাইমন মার্শালকে পুলিশ গ্রেফতার করার পর আদালতে তুলেছে। বিচারক অভিযুক্তের মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।


শনিবারের সাবওয়ের ঘটনা সাবওয়ে ব্যবহারকারী সিটিবাসীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস গত মঙ্গলবার টাইমস স্কোয়ারে আয়োজিত এক সমাবেশে সাবওয়ে ব্যবহারকারী নিউইয়র্কারদের সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরার আহবান জানিয়ে বলেছেন যে, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে এমনকি তিনি নিজেও সাবওয়ে ব্যবহার করতে নিরাপদ বোধ করেন না।

তিনি বলেছেন যে, তিনি তার দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই সাবওয়ে ব্যবহার করেন এবং তিনি মোটেও নিরাপদ বোধ করেননি। তিনি সর্বত্র হোমলেদের দেখেছেন, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি লক্ষ্য করেছেন। তিনি বলেন, অপরাধের সমস্যা মোকাবিলার পাশাপাশি আমাদের অনুভব করতে হবে যে সিটিবাসী নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে। আমরা অবশ্যই অপরাধ হ্রাসে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো এবং নিউইয়র্কারদের জন্য সাবওয়ে সিস্টেমকে নিরাপদ করবো।


প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন পুলিশকে বলেছেন যে লোকটি ধাক্কা দিয়েছে তিনি একজন হোমলেস এবং মানসিক সমস্যাগ্রস্থ। করোনা পরিস্থিতিতে সিটির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কাজে যথেষ্ট বিঘ্ন ঘটছে এবং এখন পর্যন্ত অর্থনীতি আগের পর্যায়ে আসেনি। এখনো বহু মানুষ কর্মহীন এবং সরকারি সহায়তা দান বন্ধ করা হয়েছে। সেজন্য গত কয়েক মাস ধরেই এরিক অ্যাডামস এবং অনেক প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীরা বলে আসছিলেন যে অপরাধ সংঘটন এবং অপরাধের শিকার হওয়ার ভয় অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সেক্ষেত্রে ম্যানহাটান মিডটাউনের বাণিজ্য ও বিনোদন কেন্দ্রের হৃদপিন্ডে ট্রেনের নিচে ফেলে হত্যা করার মত ন্যাক্কারজনক অপরাধ পরিস্থিতিকে আরো অনিশ্চিত করে তুলেছে। কর্তৃপক্ষ কঠোর হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে অফিসগুলো খুলতে এবং বিনোদন কেন্দ্রে প্রাণ সঞ্চার করতে আরো দীর্ঘ সময় লেগে যাবে।


অনেকে বলছেন যে নতুন মেয়রের জন্য সিটির অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করে সিটিকে নিরাপদ করে তোলাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। সিটির ব্যবসা-বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট সংগঠন ‘পার্টনারশিপ ফর নিউইয়র্ক সিটি’র প্রধান ক্যাথরিন ওয়াইল্ড বলেছেন, মেয়র হওয়ার আগে তিনি সিটিকে নিরাপদ ও অপরাধমুক্ত করতে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা পূরণ করা বাস্তব জীবনে কঠিন হলেও সিটিবাসীর অবাধে চলাফেরার ন্যূনতম নিরাপত্তা বিধান করতে হবে।

সিটিবাসী তাকে নির্বাচিত করেছে তাকে বিশ্বাস করে এবং এখন তাকে তার নীতি নির্ধারক ও নীতি কার্যকর করার জন্য দায়িত্বশীলদের সঙ্গে নিয়ে এগুতে হবে। কারণ অপরাধ এখনই ঠেকানো না হলে অপরাধীরা আস্কারা পেয়ে যাবে। সিটি মেয়র দায়িত্ব গ্রহণের পর আরো বেশ কটি মারাত্মক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, যার মধ্যে একটি ইস্ট হারলেমে বার্গার কিং এ কর্মরত ১৯ বছর বয়সী এক তরুণীকে গুলি করে হত্যা এবং কর্তব্য পালন শেষে গাড়িতে ঘুমিয়ে থাকা এক পুলিশ অফিসারকে গুলি করা।

অপরাধ দমনে মেয়র বরাবর যে পদ্ধতির কথা বলে এসেছেন তার মধ্যে রয়েছে পুলিশের সম্প্রসারিত ভূমিকা পালন। ম্যানহাটান ডিষ্ট্রিক্ট এটর্নি অ্যালভিন ব্র্যাগ বলেছেন যে পুলিশের উচিত ছোটখাট অপরাধে গ্রেফতারকৃতদের কারাগারে দীর্ঘ সময় আটকে না রেখে মারাত্মক অপরাধীদের আটকে রাখার জন্য অনুরূপ মামলা দায়ের করা। এমনকি তিনি নগন্য অপরাধের কারণে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের বন্ধ করতে পরামর্শ দিয়েছেন। মেয়র অ্যাডামস আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট অপরাধ মোকাবিলার জন্য সাদা পোশাকে পুলিশ নিয়োগে সংষ্কার আনার বিষয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন।

গত সোমবর এক সাক্ষাৎকারে মেয়র বলেছেন, আমাদের সিটির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার নির্ভর করে জননিরাপত্তা ও সাবওয়ে সিস্টেমের ওপর। আমরা ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং মানসিক স্বাস্থ্য সংকটে ভুগছে এমন ব্যক্তিদের সহায়তা করার মাধ্যমে অপরাধ প্রবণতা হ্রাসে ভূমিকা রাখতে পারি। ‘আমি চাই সিটিবাসী কম অপরাধের মুখোমুখি হোক এবং সিটি যে নিরাপদ সেই ধারণা পোষণ করুক। তিনি দাবী করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের বিগত দশকগুলোর তুলনায় নিউইয়র্ক সিটিতে অপরাধ হার এখন কম। কিন্তু করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঘটার পর থেকে কিছুদিন অপরাধ প্রবণতা কমে থাকলেও তা আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরাধের যে ভীতি তা বিদ্যমান, এ অবস্থায় আমাদের ব্যবস্থা নিরাপদ নয় এমন ধারণার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। মেয়র অ্যাডামসের দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম সপ্তাহেই স্টেট গভর্নর ক্যাথি হকুল বলেছেন যে তারা সাবওয়ে সিস্টেমে পুলিশে নিয়মিত টহল ও অনুসন্ধান চালানোর পরিকল্পনা করছেন এবং হোমলেসদের সমস্যা সমাধানেও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছেন।

সাবওয়ের যাত্রী সংখ্যা ৪০ শতাংশ নেমেছে

সকালে কর্মস্থলে গমণ এবং বিকেলে কর্মস্থল থেকে ফেরার সময়, যাকে পিক আওয়ার বলা হয়, সেই সময়ে নিউইয়র্ক সাবওয়ের ট্রেনগুলোতে এখন আর প্রথম স্টেশন থেকে শেষ স্টেশন পর্যন্ত যাত্রীদের অধিকাংশকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না। পিক আওয়ারেও অফ-পিক আওয়ারের মতোই যে কোন স্টেশন থেকে উঠলেই বসার জায়গায় পাওয়া যায়।

দু’চার জন যাত্রী দাঁড়িয়েও থাকে, কিন্তু তা আসন ঘাটতির কারণে নয়, বরং ঘেষাঘেষি করে বসলে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ভয়ের কারণে। সাবওয়ের বেশ কিছু লাইনে ট্রেন সংখ্যা কমানো হয়েছে, কিন্তু তাতেও অবশিষ্ট ট্রেনগুলো যাত্রীপূর্ণ থাকে না। তাছাড়া যাত্রী স্বল্পতার কারণে সাম্প্রতিককালে চলন্ত ট্রেনে বেশ কিছু অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। ফলে সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি সৃষ্টি হয়েছে সাবওয়ে ব্যবহারের ক্ষেত্রে। বলা যায় দেশের বৃহত্তর পরিবহনকে অধিকাংশ যাত্রী কার্যত পরিহার করেছে। বাড়ি থেকে কাজ করার সুবিধা এর একটি কারণ। কিন্তু নিম্ন আয়ের লোকজন, যাদের সশরীরে কর্মক্ষেত্রে হাজির হতে হয়, এখন মূলত তারাই সাবওয়ে ব্যবহার করে।

২০০০ সালের মার্চের ২১ মাস পর গত নভেম্বরে সাবওয়ের যাত্রীসংখ্যা ৫৬ শতাংশে পৌছে বলে মেট্টোপলিটান ট্রানজিট অথরিটি-এমটিএ’র পরিসংখ্যানে দেখা যায়। কিন্তু ওমিক্রনের বিস্তারে তা আরো হ্রাস পেয়েছে এবং এ বছরের শুরুতে যাত্রী সংখ্যা মহামারী পূর্ব অবস্থার চেয়ে কমে ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে।

ওয়াল স্ট্রিট স্টেশনের হিসাব থেকে দেখা যায় যে করোনা ভাইরাস মহামারী শুরু হওয়ার আগে ওয়াল স্ট্রিট স্টেশন থেকে প্রতিদিন গড়ে ২৪ হাজার যাত্রী ট্রেনে ওঠতো, গত নভেম্বরে তা নয় হাজারে নেমে এসেছে, যা ২০১৯ এর তুলনায় ৩৭.৫ শতাংশ হ্রাস। দৈনিক যাত্রী সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি না পেলে সিটির সাবওয়ে ব্যবস্থা চরম সংকটের মধ্যে পড়বে এবং আরো অধিক সংখ্যক সার্ভিস হ্রাস করার প্রয়োজন হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত মাসে এমটিএ’র অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় দেখানো হয়েছে যে সাবওয়ে ব্যবহারকারী যাত্রীসংখ্যা চলমান অবস্থায় থাকলে ২০২৫ সালে গিয়েও যাত্রীসংখ্যা ২০১৯ সালের যাত্রী সংখ্যার চেয়ে ২২৩ মিলিয়ন যাত্রী কম থাকবে, যা বার্ষিক ১৩ শতাংশ হ্রাস। তবে কর্তৃপক্ষ আশা করছেন যে সাম্প্রতিক যে যাত্রী ঘাটতি তা ওমিক্রন ভাইরাসের সংক্রমণ হ্রাস পেলে দূর হয়ে যাবে।

advertisement

Posted ৭:৪৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২০ জানুয়ারি ২০২২

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.