বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২
এক মাসের কম সময়ের মধ্যে সিটির বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ অফিসারসহ ১৯ ব্যক্তির ওপর প্রাণঘাতী হামলা ও দস্যুতায় জড়িত তিন ব্যক্তিকে খুঁজছে নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট। গুরুতর আহতদের একজন এনওয়াইপিডি’র অফিসার, যিনি গত ২৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ব্রঙ্কসের লাফায়েতি এভিনিউয়ের কাছে তিন দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হন। পুলিশ জানিয়েছে, এনওয়াইপিডি’র অফিসার মোহাম্মদ চৌধুরী (৪৮) ব্রঙ্কসের সাউন্ডভিউ এলাকায় ওলমস্টেড এভিনিউ ধরে জগিং করছিলেন। তিন দুর্বৃত্ত তাকে লাফায়েতি এভিনিউয়ের কাছে থামায় এবং তার মাথায় আঘাত করে ও তার মানিব্যাগ, চাবি ও ফোন কেড়ে নিয়ে একটি কালো রঙের হোন্ডা সেডান গাড়িতে ওঠে সটকে পড়ে।
ঘটনার সময় অফিসার মোহাম্মদ চৌধুরী সেদিন কর্তব্যরত ছিলেন না। তাকে গুরুতর অবস্থায় সাইডওয়াকে পড়ে থাকতে ও কান থেকে ররক্তক্ষরণ হতে দেখে জ্যাকোবি মেডিকেল সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দুর্বৃত্তদের আঘাতে অফিসার মোহাম্মদ চৌধুরীর মাথার খুলি ফেটে গেছে এবং মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। তবে তার স্ত্রী নাদিরা শিরিনি জানিয়েছেন যে তার স্বামী কোমা থেকে বের হয়ে এসেছে এবং তার অবস্থার উন্নতি হয়েছে। অফিসার চৌধুরীর ভাগনে জামিল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছেন, আমাদের পরিবার অত্যন্ত মর্মাহত। আমরা এমনটি আশা করতে পারি না যে পুলিশ অফিসাররা, যারা আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজে নিয়োজিত, তারা এভাবে দুর্বৃত্তদের হাতে জীবনের ঝুঁকির মুখে পড়বেন। তারা যদি এভাবে আক্রান্ত হন তাহলে আমাদের পক্ষে কীভাবে নিরাপদ বোধ করা সম্ভব?’
উল্লেখ্য, গত ১ আগস্ট থেকে সন্দেহভাজন তিন দুর্বৃত্ত ব্রঙ্কস ও কুইন্সে কমপক্ষে ১৯ ব্যক্তির ওপর হামলা করেছে ও তাদের জিনিসপত্র লুন্ঠন করেছে। তারা লোকজনকে হামলা করার আগে রাস্তার পাশে পার্ক করা কোনো গাড়ি প্রস্তুত রাখে এবং তাদের উদ্দেশ্য সফল হওয়া মাত্র সেই গাড়িতে ওঠে পালিয়ে যায়। অফিসারের স্ত্রী নাদিরা শিরিন বলেছেন, অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা সম্ভব হলে তাদেরকে একই দিনে জামিনে ছেড়ে দেওয়া সঠিক হবে না। তাদেরকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হোক। তাদের যদি সেদিনই ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে ভয়াবহ হামলার শিকার আমার স্বামীর প্রতি সুবিচার করা হবে না। তিনি আরও বলেন যে তার স্বামী নিউইয়র্কারদের নিরাপত্তায় তার ভূমিকা রাখার জন্য ১৮ বছর আগে এনওয়াইপিডি’র চাকুরি বেছে নিয়েছিলেন। সুবিচার লাভ তার প্রাপ্য।
আহত পুলিশ অফিসারের এক বন্ধু মোহাম্মদ আলী বলেছেন, সিটিতে অপরাধ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে নিউইয়র্কের জামিন আইনের ত্রুটির উল্লেখ করে এ আইন সংশোধনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি অপরাধীদের সিটিতে অপরাধের ঘটনার পেছনে আমি অপরাধীদের দায়ী করি না, এজন্য দায়ী রাজনীতিবিদরা, যারা আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। বর্তমান আইনের সুযোগ নিয়ে গুরুতর অপরাধীরাও জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও অপরাধ কর্মে লিপ্ত হয়। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে ক্লান্ত।
পুলিশ অফিসার তাহের চৌধুরীর ওপর হামলার প্রতিবাদ ব্রঙ্কসে
নিউইয়র্কে এনওয়াইপিডি’র বাংলাদেশী আমেরিকান পুলিশ অফিসার তাহের চৌধুরীর ওপর হামলার প্রতিবাদে বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ২৩ আগস্ট মঙ্গলবার ব্রঙ্কসের ওলমস্টেড অ্যাভিনিউ এলাকায় বাংলাদেশী কমিউনিটি এই কর্মসূচির আয়োজন করে। সমাবেশে বর্বরোচিত এ হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান হয়। এদিকে এনওয়াইপিডি অফিসার তাহের চৌধুরীকে হামলার অভিযোগে গত ২৬ আগস্ট শুক্রবার ওসোয়ান লোগান (১৮) নামে একজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। সিটি গোয়েন্দা বিভাগ এ ঘটনায় জড়িত আরও দু’জনকে খুঁজছে বলে জানা গেছে। তবে গ্রেপ্তারকৃত ওসোয়ান লোগান নিজেকে ঘটনার সাথে জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন।নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে ১৮ বছর ধরে কাজ করা তাহের চৌধুরী (৪৮) গত ২৩ আগস্ট ব্রঙ্কসের ওলমস্টেড অ্য্যাভিনিউ এলাকায় তাঁর বাসার কাছেই দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হন। তার শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে। তার ব্রেইন সাড়া দিচ্ছে বলে শুক্রবার জ্যাকবি হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশী-আমেরিকান কমিউনিটি কাউন্সিলের সভাপতি মোহাম্মদ এন মজুমদারের পরিচালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ব্রঙ্কস বরো প্রেসিডেন্ট ভেনেসা গিবসন, নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটে ডেমোক্রেটিক প্রাইমারী বিজয়ী ন্যাথালিয়া ফার্নানদেজ, বাংলাদেশী আমেরিরান ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুস শহিদ, সাধারণ সম্পাদক জামাল হুসেন, বাংলাবাজার বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের আব্দুল ওয়াহিদ চৌধুরী জাকি, সাধারণ সম্পাদক মোঃ খলিলুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক এমবি হোসেন তুষার, মুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল চৌধুরী, বাংলাদেশ সোসাইটি অব ব্রঙ্কস নিউইয়র্ক’র সভাপতি সামাদ মিয়া জাকের, ব্রঙ্কস বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এ ইসলাম মামুন, সাধারণ সম্পাদক কাজী রবি-উজ-জামান, উপদেষ্টা খবির উদ্দিন ভূইয়া, সহ সভাপতি এমডি আলাউদ্দিন, কুমিল্লা সোসাইটি অব ইউএসএ’র সহ সভাপতি মিয়া মোহাম্মদ দাউদ, ব্রঙ্কস চ্যাপ্টারের সেক্রেটারী ইব্রাহিম বারো ভূইয়া, স্টার্লিং ফার্মেসীর জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ আলী, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট হাসান আলী, আব্দুল গাফফার চৌধুরী খসরু, নূরে আলম জিকু, সারোয়ার চৌধুরী প্রমুখ। এ সময় বিভিন্ন কমিউনিটির উল্লেখযোগ্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা এ সন্ত্রাসী ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, নিউইয়র্ক সিটিতে এখন পুলিশ কর্মকর্তাও নিরাপদ নয়। সাধারণ মানুষের কি অবস্থা তা সহজেই অনুমেয়। কমিউনিটি সদস্যদের নিরাপত্তার জন্য সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে তারা এ ধরনের সন্ত্রাসী ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণেরও দাবী জানান।
উল্লেখ্য, পুলিশ অফিসার তাহের চৌধুরী গত ২৩ আগস্ট মঙ্গলবার সকালে জগিং করার জন্য ঘর থেকে বেরিয়ে যান। বাংলাদেশি বহু অভিবাসীর বসবাসের এলাকা ব্রঙ্কসের ওলমস্টেড অ্যাভিনিউতে ছিনতাইয়ের শিকার হন তিনি। তিন দুর্বৃত্ত তাঁকে হামলা করে সঙ্গে থাকা সবকিছু নিয়ে যায়। পথচারীদের ফোন কলের পর অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি হিসেবে মাথায় মারাত্মক আঘাতে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকা তাহের চৌধুরীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় বলে তাহের চৌধুরীর স্ত্রী নাদিরা শেহরিন।নিত্যদিনের মতো স্বামী ঘরে ফিরে না এলে কর্মস্থলে যোগাযোগ করা হয়। তাঁকে জানানো হয় তাহের চৌধুরী কাজে যাননি। অনেক পরে ব্রঙ্কসের স্থানীয় প্রিসেঙ্কট থেকে একটি ছবি পাঠিয়ে জানতে চাওয়া হয়, ছবিটি চেনা যাচ্ছে কি না। এ ছবি দেখেই স্ত্রী নাদিরা হাসপাতালে স্বামীর অবস্থা জানতে পারেন। তাঁকে সংকটাপন্ন অবস্থায় জ্যাকবি হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু করা হয়। খবর ছড়িয়ে পড়লে নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ব্যাপক উদ্বেগ ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তাহের চৌধুরীকে একজন দক্ষ পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর সহকর্মীরা উল্লেখ করেন। মেয়র এরিক অ্যাডামসসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা দ্রুত হাসপাতালে ছুটে যান। তাঁরা বলেন, যে করেই হোক হামলাকারীদের গ্রেফতার করা হবে। তাহের চৌধুরীর ওপর হামলা ঘটনায় বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন উদ্বেগ জানিয়ে তাঁর সুস্থতায় দোয়া কামনা করেছে।
Posted ৮:২৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh