বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩
নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস সিটি কাউন্সিল এবং প্রগতিশীলদের পক্ষ থেকে বড়ো ধরনের ধাক্কার মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন, এখন তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আগামী সিটি নির্বাচনে নিউইয়র্কের বিশিষ্ট ডেমোক্র্যাটরা মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন, যার মধ্যে তার পুরোনো বন্ধু সাবেক স্টেট গভর্নর অ্যান্ড্রু ক্যুমোও আছেন। মেয়র এরিক অ্যাডামস সাম্প্রতিককালে নবাগত ইমিগ্রান্টদের জন্য অর্থ ব্যয়ে বাড়াবাড়ি করাসহ অন্যান্য আরো কিছু কারণে উদ্ভুত সমস্যার তার সংশ্লিষ্টতা না থাকার প্রমাণের সন্ধানে থাকেন, তাহলে তাহলে তাকে খুব বেশিদূরে সন্ধান করতে হবে না।
সিটি কম্পট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডার সম্প্রতি ইমিগ্রান্ট সংকটে মেয়রের ব্যয়ের এখতিয়ার সীমিত করেছেন, এবং গত মেয়র নির্বাচনে ডোনারদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ বিষয়ে এফবিআই’র তদন্তের বিষয়ে কৌতুকপূর্ণ ইঙ্গিত করেছেন, যার কোনোটাই তার অনুকূলে যায় না। সিটি কাউন্সিল সিটির সার্ভিসগুলোর বাজেট হ্রাসের কারণে ক্ষুব্ধ কাউন্সিলম্যানরা মেয়রের সাথে লড়াই করার প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন।
নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট অনুসারে, মেয়র অ্যাডামসকে ঘিরে অসন্তোষের কারণ অনেক। তিনি তার নির্বাচনী প্রচারাভিযানে তহবিল সংগ্রহে অনৈতিক পন্থা গ্রহণ করেছেন মর্মে ফেডারেল তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন। ইগ্রিান্ট সংকট সমাধানে তার ঢালাও অর্থ ব্যয় করার কারণে তিনি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
১৯৯৩ সালে তাকে যৌন নিপীড়নের ঘটনা আদালতে উঠলে সেখানে তার নাম এসেছিল এবং তিনি পুলিশ, স্কুল এবং লাইব্রেরির বাজেট কাটছাঁট করে সকলকে ক্ষুব্ধ করেছেন। চলতি সপ্তাহে কুইনিপিয়াক ইউনিভার্সিটির এক জরিপে তার অজনপ্রিয়তা যাচাই করা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, অ্যাডামস যে কাজগুলো করছেন মাত্র ২৮ শতাংশ নিউইয়র্কবাসী তা সমর্থন করে। ১৯৯৬ সাল থেকে কুইনিপিয়াক সিটি মেয়রদের ওপর যে জরিপগুলো পরিচালনা করে আসছে, একই ধরনের প্রশ্নের উত্তরে মেয়র এরি অ্যাডামসের পক্ষে সমর্থন জানানো নিউইয়র্কবাসীর সবচেয়ে কম।
এফবিআই এর তদন্তে এখনো মেয়র অ্যাডামসকে অভিযুক্ত করা হয়নি। তাছাড়া এ ধরনের তদন্তের মুখোমুখি হওয়া তিনি নিউইয়র্ক সিটির একমাত্র মেয়র নন। তার পূর্বসূরি বিল ডি ব্লাজিও নির্বাচনী প্রচারণার তহবিল নিয়ে একই ধরনের তদন্তের সম্মুখীন হয়েছেন। কিন্তু এফবিআই এরিক অ্যাডামসের মোবাইল ফোন রাস্তা থেকে নিয়ে নেওয়ার পর থেকে তার ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করছে এবং সামনের নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
একটি রাজনৈতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তার ব্যাপারে এতটা কৌতুহিলি হয়ে উঠেছিল যে, তারা নিজেদের উদ্যোগেই একটি জরিপ পরিচালনা করে জানতে চায় যে মেয়র অ্যাডামসের কতগুলো ভাগ্য তারকার পতন ঘটেছে। তারা একটু আগ বাড়িয়ে তাদের জরিপে অংশগ্রহণকারী নিউইয়র্কবাসীদের কাছে জানতে চায় যে, অ্যাডামস যদি পদত্যাগ করেন, এবং যদি বিশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে তারা কাকে সমর্থন করবেন।
স্লিংশট স্ট্র্যাটেজিসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ইভান রথ স্মিথ নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, ‘আমরা এক বড় ধরনের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছি। একটি বিশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন নিশ্চয়তা নেই, তবে স্পষ্টতই এটি একটি সম্ভাবনা হিসেবে রয়ে যায়। জরিপে দেখা যায়, সাবেক স্টেট গভর্নর অ্যান্ড্রু ক্যুমো ২২ শতাংশ ভোটে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থী হবেন, সিটি পাবলিক অ্যাডভোকেট জুমান উইলিয়ামস এর পক্ষে ১৫ শতাংশের, প্রাক্তণ স্যানিটেশন কমিশনার ক্যাথরিন গার্সিয়া, যিনি ২০২১ ডেমোক্র্যাটিক মেয়র প্রাইমারিতে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছিলেন, তার পক্ষে সমর্থন ১২ শতাংশ।
গত শনিবার মেয়র অ্যাডামসের মুখপাত্র ফেবিয়ান লেভি এ ধরনের একটি জরিপের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, মেয়র অ্যাডামসকে নিবার্চিত করা হয়েছে শ্রমজীবী নিউইয়র্কারদের জন্য লড়াই করতে এবং মেয়র হিসেবে তিনি তাদের জন্য লড়ে যাচ্ছেন।
কোনো জরিপের ফলাফল কি এবং তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষগণ কি বললেন, তা বিবেচ্য কোনো ব্যাপার নয়। এমনকি তার দিকে অন্যায়ের অন্যান্য তীর নিক্ষেপ করলেও তাতে কিছু আসে যায় না। নির্লজ্জ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক সিটির দ্বিতীয় কৃষ্ণাঙ্গ মেয়রকে ছিন্নভিন্ন করার প্রচেষ্টা অত্যন্ত লজ্জাজনক একটি ব্যাপার।
নিউইয়র্কবাসীদের মাদক সঙ্কট থেকে রক্ষা করতে হবে: মেয়র অ্যাডামস
নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস ভয়াবহ মাদক ‘ওপিওড’ এর ক্রমবর্ধমান ব্যবহার এবং অনেক ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় ব্যবহারের বিরুদ্ধে সতর্কতা উচ্চারণ করে এর অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। তিনি তার সাপ্তাহিক মতামত নিবন্ধে বলেন যে, নিউইয়র্ক সিটিতে প্রতি ৩ ঘন্টায় ওপিওডের একটি করে ভয়াবহ ধরনের অতিরিক্ত মাত্রার ব্যবহারের ঘটনা ঘটে।
ওপিওড মাদক সিটির জন্য মহামারীর রূপ নিয়েছে এবং একটি ক্রমবর্ধমান জনস্বাস্থ্য সংকট সৃষ্টি করেছে, যা আমাদের অবশ্যই নির্মূল করতে হবে। তিনি বলেন, এটি আমাদের সিটিতে অত্যধিক হৃদয় বেদনার সৃষ্টি করেছে। ওপিওড প্রস্তুতকারী ও পরিবেশকরা হাজার হাজার নিউ ইয়র্কবাসীকে ওপিওড ও অন্যান্য ব্যথানাশক ওষুধের সাথে যুক্ত করেছে। তারা মাদকাসক্তি ও মানুষের জীবনের দু:খজনক পরিণতিকে পুঁজি করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করেছে।
তারা মুনাফা কামাইয়ের জন্য যে ফাঁদ তৈরি করেছে, সে ফাঁদে শিকার হয়ে মানুষের জীবন নষ্ট ও ধ্বংস হয়ে গেছে। গতবছর আমাদের সিটিতে অতিরিক্ত মাত্রায় ওপিওড ব্যবহারের কারণে মৃত্যুর রেকর্ড ছিল শঙ্কাজনক। তিনি উল্লেখ করেন, ২০২২ সালে ৩,০০০ এর বশি নিউইয়র্কবাসী অতিমাত্রায় মাদক সেবনের কারণে মারা গেছে, যে সংখ্যা ২০২১ সালের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি।
এছাড়া ফেন্টানাইল নামে আরেকটি মাদকের অতিমাত্রায় সেবন বেড়েছে ৮১ শতাংশ। মেয়র এরিক অ্যাডামস তার নিজ অভিজ্ঞতার উল্লেখ করে বলেন, মাদকের সেবন অতিমাত্রা বা ওভারডোজ হলে তার মহামারীর মতো ধ্বংসাত্মক হয়ে যেতে পারে, সে সম্পর্কে আমার জানান আছে। কারণ, ১৯৮০’র দশকে আমি নিউইয়র্ক সিটিতে একজন পুলিশ অফিসার ছিলাম, এবং আমি নিজে দেখেছি, মাদক সেবন মাত্রাহীন হয়ে গেলে তার পরিণতি কতটা ধ্বংসাত্মক হতে পারে। আমরা চুপ করে বসে থাকতে পারি না। পূর্ববর্তী প্রজন্মের সাথে যা ঘটেছিল, তা আমাদের পরিবারের সাথে ঘটতে দিতে পারি না।
এখনই আমাদেরকে ওপিওড ব্যবহার জনিত সংকট মোকাবিলা করা এবং অনিবার্যভাবে এ ধরনের মাদকের অপব্যবহার রোধে প্রয়োজনে আমাদের সকল শক্তি নিয়োজিত করতে হবে।
মেয়র অ্যাডামস তার নিবন্ধে মাদক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমসের প্রচেষ্টার জন্য তাকে ধন্যবাদ ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, যারা ওপিওড প্রস্তুতকারক এবং পরিবেশকদের কাছ থেকে যে বিপুল অর্থ আদায়ের ব্যবস্থা করেছেন, আমরা সেই অর্থ মাদকের অপব্যবহার থেকে আমাদের তরুণদের রক্ষা করার লড়াইয়ে ব্যবহার করবো।
তাদের জীবন বাঁচাতে সিটির পাঁচটি বরো জুড়ে আমরা এ অর্থ বিনিয়োগ করবো। গত সপ্তাহে আমাদের প্রশাসন স্ট্যাটেন আইল্যান্ডে ওপিওডের ওভারডোজের পরিণতি মোকাবিলার জন্য ১২ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার কথা ঘোষণা করেছে। ওই এলাকায় এই ভয়াবহ মাদক ব্যবহার মহামারীর মতো বিস্তার লাভ করেছে। অতিরিক্ত মাত্রায় এই মাদক ব্যবহারের কারণে সিটিতে যে মৃত্যুহার, স্ট্যাটেন আইল্যান্ডে এ কারণে মৃত্যু হার সিটির পরিসংখ্যান থেকে পাঁচ শতাংশ অধিক এবং ওপিওড ওভারডোজের ঘটনায় সিটিতে স্ট্যাটেন আইল্যান্ডের অবস্থান দ্বিতীয়।
আমরা স্ট্যাটেন আইল্যান্ডের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছি এবং আশা করছি আমাদের বিনিয়োগ সুফল বয়ে আনবে। আমরা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবো যে আরো অধিক সংখ্যক নিউইয়র্কবাসী তাদের প্রিয়জনের সঙ্গে আরো দীর্ঘদিন সুস্বাস্থ্য নিয়ে কাটাবে।
মেয়র আরো বলেন, ‘ওপিওড’ মাদক সংকট মোকাবিলায় আমরা ইতোমধ্যে যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছি এবং কাজ চলছে। এ বছরের শুরুতে দিকে, আমরা মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক এজেন্ডা প্রকাশ করেছি, যাতে দেখানো হয়েছে যে, মাদক সেবনের ক্ষতি হ্রাসে আমরা কীভাবে উচ্চমানের সেবার বিস্তার ঘটাবো।
আমরা ২০২৫ সালের মধ্যে ওপিওডের ওভারডোজ সেবনজনিত মৃত্যুহার ১৫ শতাংশ হ্রাস করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। আমরা ফেন্টানাইল সংকট নিয়ে প্রথমবারের মতো দুই দিনের শীর্ষ সম্মেলনও আয়োজন করেছি ,যা ফেন্টানিল ওভারডোজের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি জাতীয় কৌশলের দিকে কাজ করার জন্য সারা দেশ থেকে নির্বাচিত নেতা, জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং আইন প্রয়োগকারী পেশাদারদের নিউ ইয়র্ক সিটিতে নিয়ে এসেছিল।
আমরা শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী ও পাচারকারীকে গ্রেফতার করেছি। পাশাপাশি, আমরা প্রতিরোধ, ক্ষতি হ্রাস এবং পুনরুদ্ধার কর্মসূচির জন্য সিটিব্যাপী আমাদের সহযোগিতা বৃদ্ধি করেছি, এবং দুই লাখের বেশি ন্যালেক্সোন কিট, কয়েক হাজার ফেন্টানাইল এবং জাইলাজিন পরীক্ষার স্ট্রিপ বিতরণ করা হয়েছে।
Posted ৬:৩৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh