সম্পাদকীয় | বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২০
আমেরিকানগণ তাদের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন ৩ নভেম্বর, মঙ্গলবার। এ নির্বাচনে যে প্রার্থী ইলেকটোরাল কলেজের ২৭০টি ভোট লাভ করবেন তিনি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট। মঙ্গলবারের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ছাড়াও ভাইস প্রেসিডেন্ট, কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভের ৪৩৫টি এবং উচ্চকক্ষ সিনেটের ৩৫টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিভিন্ন রাজ্যে গভর্নরসহ স্থানীয় সরকার পর্যায়েও জনপ্রতিনিধি বাছাই করা হবে এই নির্বাচনে। ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচন নানা কারণেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরবর্তী অবস্থায় জনজীবন ও অর্থনীতি বিপর্যস্থ। ইতোমধ্যে ঘাতক ব্যাধি করোনা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ২ লাখ ২৭ হাজার আমেরিকানের। আক্রান্ত হয়েছেন আরো প্রায় ৮৭ লাখ মানুষ। সংক্রমণের প্রথম ধাক্কা না সামলাতেই বিভিন্ন রাজ্যে শুরু হয়েছে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ। কোটি কোটি মানুষ হারিয়েছেন চাকুরি।
গোটা দেশজুড়ে এখনো বিরাজ করছে ভয়াবহ অস্বাভাবিকতা। এমন একটি সময়ে সঠিক ও সময়োচিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমেরিকানদেরকে। বেছে নিতে হবে বিতর্কমুক্ত সত্যিকারের একজন যোগ্য প্রার্থীকে। যিনি আগামী চার বছর যুক্তরাষ্ট্রকে শক্ত হাতে সঠিক নেতৃত্ব প্রদান করবেন। দেশটিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করবেন বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্র হিসেবে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় প্রার্থী হয়েছেন রিপাবলিকান পার্টি থেকে। তার রানিং মেট বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। পক্ষান্তরে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ডেমোক্রেট দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। সিনেটর কামালা হ্যারিস তার রানিং মেট। নির্বাচনী প্রচারণা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। উভয় প্রার্থী ও তাদের নির্বাচন প্রচারণা পরিষদ চষে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন রাজ্যে। বিশেষ করে ব্যাটল গ্রাউন্ড স্টেটস অ্যারিজোনা, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, মিশিগান, নর্থ ক্যারোলিনা, পেনসিলভেনিয়া ও উইজকনসিন। ভাগ্য নির্ধারণী এসব রাজ্য নিয়ে ঘুম নেই প্রার্থীদের।
দুই দফা প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে ইতোমধ্যে। যদিও করোনার কারণে আগের মতো জমে উঠেনি এসব বিতর্ক। এবারের নির্বাচনে আমেরিকানদের নিকট সবচেয়ে বড় ইস্যু হয়ে দেখা দিয়েছে কোভিড-১৯। আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন জনগণ এই মরণব্যাধির হাত থেকে মুক্তি চায়। করোনা প্রতিরোধে ব্যর্থতার বড় ধরনের অভিযোগ রয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উপর। অন্যান্য ইস্যু হচ্ছে অর্থনীতি, হেলথ কেয়ার, ইমিগ্রেশন, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন, চাকুরি, পরিবেশ নীতি, শিক্ষা, এনার্জি এবং পরিবেশ পররাষ্ট্র নীতি, বাণিজ্য, বর্ণবাদ ও গর্ভপাত। উভয় প্রার্থী এসব ইস্যুতে তাদের ভবিষ্যত করণীয় নিয়ে চালাচ্ছেন প্রচারণা। বিগত প্রায় চার বছরে ট্রাম্পের শাসনামলে বহির্বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে না জড়ালেও নিজ দেশের অভ্যন্তরে বর্ণবাদ, বিদ্বেষ, বিভক্তি উসকে দিয়েছেন তিনি। জাতি এখন কার্যত দ্বিধাবিভক্ত। ট্রাম্পের অরাজনৈতিক ও গণবিরোধী নানা ধরনের নীতির কারণে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে সর্বত্র। গণমাধ্যমের প্রতি তার বৈরী আচরণ ও জাতিগত দ্বন্দ্ব দেশকে অনেকটাই পিছিয়ে দিয়েছে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধকল্পে জণগণের নিকট ভ্যাকসিন পৌছে দেয়া এখন সবচেয়ে জরুরী। ভয়াবহ মন্দা কাটিয়ে উঠে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। নতুন করে সৃষ্টি করতে হবে চাকুরির সুযোগ। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ ইমিগ্রান্টদেরকে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ জাতীয় নেতৃত্বকেই সৃষ্টি করতে হবে। বহির্বিশ্বে পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রকে মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে দাঁড়াতে হবে মাথা উচু করে। আর এজন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ না করে বিভক্তির দিকে ঠেলে দেয়ার যে হীন প্রয়াস নিয়েছেন ট্রাম্প তা তাকে জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত ও সমালোচিত করে তুলেছে। বিলম্বে হলেও সাধারণ ভোটাররা জেগে উঠেছেন। আগাম এবং এবসেন্টি ভোট প্রদানে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এবার ১৫ কোটির অধিক ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। যদি তাই হয় তাহলে ভোট প্রদদানের হার দাঁড়াবে ৬৫ শতাংশ, যা ১৯০৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মতো রেকর্ড সৃষ্টি করবে। শুধু প্রেসিডেন্ট নির্বাচনই নয়, হাউজের মতো সিনেটেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে ডেমোক্রেটদেরকে। সুপ্রীম কোর্ট ইতোমধ্যে হয়ে পড়েছে ভারসাম্যহীন। সবকিছু মিলিয়ে ৩ নভেম্বর সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ হলে জনগণকে পরবর্তী চার বছর কাটাতে হবে কঠিন সময়।
Posted ১০:১৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২০
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh