বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩ তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে গত ১৮ মার্চ শনিবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনের বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এসবের মধ্যে ছিল শিশু-কিশোর আনন্দমেলা, কেক কাটা, চিত্রাঙ্কন, রচনা প্রতিযোগিতা, মোনাজাত ও আলোচনা সভা।
বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস-২০২৩ পালনের দ্বিতীয় পর্বের অংশ হিসেবে গত ১৮ মার্চ শনিবার জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে দিনব্যপী শিশু-কিশোর আনন্দমেলা অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় সংগীত পরিবেশনা ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে এই শিশু-কিশোর আনন্দমেলা শুরু হয়। পরবর্তীতে জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয় এবং জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এছাড়া অনুষ্ঠানে জাতির পিতার জীবন ও কর্মের উপর একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয় ও জাতির পিতার ১০৩ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কেক কাটা হয়।
শিশু-কিশোর আনন্দমেলায় আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় শিশু-কিশোরেরা বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশের গ্রামীন দৃশ্য ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলে। এছাড়াও “বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ও স্মার্ট বাংলাদেশ” বিষয়ে শিশু কিশোরদের জন্য বয়সভিত্তিক রচনা প্রতিযোগিতা এবং বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ পাঠ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদআব্দুল মুহিত বক্তব্য প্রদান করেন এবং চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা ও বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ উপস্থাপনে বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেন। বক্তব্যের শেষে রাষ্ট্রদূত মুহিত নতুন প্রজন্মকে, প্রবাসে থেকেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে জানা ও ধারণ করার মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশের গড়ে তোলায় অবদান রাখার আহবান জানান। রাষ্ট্রদূত মুহিতের বক্তব্যের পূর্বে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবর্গ অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করেন।
দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কে বসবাসরত শিশু-কিশোরগণ ও তাদের অভিভাবকগণ, স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবর্গ, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশী কমিউনিটির সদস্যবৃন্দ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বগণ এবং স্থায়ী মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারিগণের সন্তান ও পরিবারের সদস্যগণ অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ দূতাবাস
যথাযোগ্য মর্যাদা এবং ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে গত ১৭ মার্চ শুক্রবার ওয়াশিংটন ডিসিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপিত হয়েছে। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষ্যে দূতাবাস বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করে। যার মধ্যে ছিল জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ মূর্তিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনাসভা, শিশুদের জন্য রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর দুটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন। সকালে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান কর্তৃক দূতাবাস প্রাঙ্গনে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। এ সময় দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে রাষ্ট্রদূত মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু কর্নারে জাতির পিতার আবক্ষ মূর্তিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। আলোচনায় অংশ নিয়ে রাষ্ট্রদূত ইমরান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং বাঙালি জাতির বহুল প্রত্যাশিত স্বাধীনতা অর্জনে মহান ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত তাঁর দীর্ঘ সংগ্রামের কথা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে নয় মাসব্যাপী সশস্ত্র যুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে আত্মপ্রকাশ করে। রাষ্ট্রদূত বলেন, সরকার দেশকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে গড়ে তুলতে জাতীয় শিশু নীতি-২০১১ প্রণয়নসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি অভিভাবকদের প্রতি দেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস, কৃষ্টি এবং স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধুর মহান আত্মত্যাগ সম্পর্কে তাদের সন্তানদের জানানোর জন্য অনুরোধ করেন । রাষ্ট্রদূত ইমরান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
মিনিস্টার (প্রেস) এজেডএম সাজ্জাদ হোসেনও আলোচনায় অংশ নেন এবং স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ সংগ্রাম এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পূনর্গঠনে তার অসামান্য অবদানের কথা তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্টের অন্যান্য শহিদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত এবং জাতির অব্যাহত শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে সকালের অনুষ্ঠান শেষ হয়। পরবর্তীতে সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে কেক কাটেন। এরপর একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গ্রেটার ওয়াশিংটন মেট্রো এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশি শিশু-কিশোররা দেশাত্ববোধক গান ও নৃত্য পরিবেশন করে। পরে রাষ্ট্রদূত ইমরান রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। এ উপলক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পিঠা তৈরি প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়। রাষ্ট্রদূতের সহধর্মিনী জাকিয়া হাসনাত পিঠা তৈরি প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. এ. এন. সিদ্দিক, বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক ড. আহমদ কায়কাউস, এবং সড়ক পরিবহন এবং জনপথ বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী উপস্থিত ছিলেন।
তিন পর্বের অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন কাউন্সেলর (পলিটিক্যাল-১) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, কাউন্সেলর (পলিটিক্যাল-৩) শামীমা ইয়াসমিন স্মৃতি এবং ফার্স্ট সেক্রেটারি মোঃ আতাউর রহমান।
বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল
গত ১৭ মার্চ শুক্রবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩ তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন করা হয়। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বসহ বাংলাদেশ কমিউনিটির গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠৈ। অনুষ্ঠানের সূচনালগ্নে কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে কনস্যুলেটের অন্যান্য কর্মকর্তা ও আমন্ত্রিত অতিথিগণ জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। অনুষ্ঠানে দিবসটি উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর উপর নির্মিত একটি প্রামান্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। ১৯৭১ ও ১৯৭৫ এর সকল শহিদের আত্মার মাগফিরাত ও দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
প্রধান অতিথি মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলামতাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতাসহ সকল আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসাধারণ নেতৃত্ব ও অবদানের কথা তুলে ধরেন। তিনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে সাম্প্রতিক সময়ে গৃহিত বিভিন্ন অত্যাধুনিক সেবার কথা উল্লেখ করে ”স্মার্ট বাংলাদেশ“ গঠনে সকলকে তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। স্বাগত বক্তব্যে কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম দিবসটির বিশেষ তাৎপর্যের কথা তুলে ধরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি “সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়”- উল্লেখপূর্বক বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশ্বশান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও নীতির গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতার উপর আলোকপাত করেন। তিনি নতুন প্রজন্মের কাছে জাতির পিতার আদর্শ ও দর্শন ছড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশের গৌরবময় ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রসারে অবদান রাখার জন্য সকলকে অনুরোধ জানান।
দিবসটি উপলক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে একটি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও কন্ঠযোদ্ধা শহীদ হাসানসহ শিশু-কিশোরদের পরিবেশনায় একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মঞ্চস্থ হয়। কেক কাটার মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।
Posted ১:০৫ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh