| বৃহস্পতিবার, ২০ মে ২০২১
সাংবাদিকের কাজ ঝুঁকিপূর্ণ। তারা প্রায়ই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুর্নীতি ও অসঙ্গতির তথ্য তুলে ধরেন। প্রতিটি যুদ্ধে অসংখ্য সাংবাদিকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। তবে সাংবাদিকরা সমগ্র বিশ্বে ইমিউনিটি বা দায়মুক্তির সুযোগ পেয়ে থাকেন। তাদের সরকারি নথিপত্রসহ পাওয়া গেলেও তাদের সঙ্গে সদাচরণ করা হয় সর্বত্র। গত ১৭ মে বাংলাদেশ সচিবালয়ে একটি ঘটনা ঘটে, যাকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ‘চুরি’ বলে আখ্যায়িতই শুধু করেননি, একজন নারী সাংবাদিককে ছয় ঘন্টা আটকে রেখে, তাার গায়ে হাত তুলে, তার বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা দায়ের করে হুলস্থুল কান্ড বাঁধিয়ে ফেলা হয়েছে। সাংবাদিকতায় পৃথিবীর কোথায় অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট প্রযোজ্য তা আমরাও হয়তো জানি না!
খোদ ব্রিটেনে কখনো কোনো সাংবাদিককে কোনো সরকারি নথি প্রকাশ, দুর্নীতি প্রকাশ, এমনকি সামরিক তথ্যাদি প্রকাশের জন্য অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্টের আওতায় আনা হয়নি। ধরা পড়লেও সাংবাদিকতায় ইমিউনিটি আছে যা বিশ্ব স্বীকৃত। দৈনিক প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার রোজিনা ইসলামও সেই ইমিউনিটির বাইরে নন। ঘটনাটি যখন ঘটছে তখন সাংবাদিকরা জানতে পারেন, রোজিনাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আটকে রাখা হয় একটি ঘরে। অভিযোগ ওঠে, তাকে সেখানে নির্যাতনও করা হয়েছে। পরে সোস্যাল মিডিয়ায় যেসব ছবি প্রকাশিত হয় তাতে দেখা যায় বিধ্বস্ত রোজিনাকে একজন মহিলা শারীরিকভাবে হেনস্থা করছেন। একজন অতিরিক্ত সচিবের নামও ছড়িয়ে পড়ে মিডিয়ায়। তিনিও নারী!
মিডিয়ায় প্রতিবাদী কণ্ঠকে সরকার হরহাশো রাষ্ট্রবিরোধী, গোপন তথ্য চুরির জন্য অভিযুক্ত করে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা হয়। রোজিনার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতির ওপর খবর প্রকাশের জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হলে তা কিভাবে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে আসে। সাংবাদিক তথ্য সংগ্রহ করবেন, তা সে নথিপত্র সংগ্রহই হোক বা অন্য কিছু। সেটিও আর দশটা চুরির মতো চুরি হয়ে গেল! কোনো সাংবাদিক কি যার ওপর বা যে বিভাগের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ জানার পর সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর অনুসন্ধানী রিপোর্ট করতে চান তা হলে কি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা উক্ত বিভাগীয় প্রধানের কাছে গিয়ে বলবেন যে তিনি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সংবাদপত্রে রিপোর্ট প্রকাশ করতে চান এবং সংশ্লিষ্ট অভিযোগপত্রগুলো তার প্রয়োজন? সাংবাদিকরা কখনোই কোনো দুর্নীতি বা অপকর্মের তথ্য, নথিপত্র এভাবে সংগ্রহ করতে পারেন না। তাকে তা জোগাড় করতে হয় যেভাবেই হোক। সোজা কথায় এটা গোয়েন্দাবৃত্তি। ঝুঁকিপূর্ণ। তবে হ্যাঁ, তথ্য সংগ্রহের পর অভিযুক্ত বা যার সম্পর্কে রিপোর্ট করা হবে তার মতামত চাইতে পারেন সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক। সব সাংবাদিকই তা করেও থাকেন।
বাংলাদেশে বর্তমানে সবার উপরে আমলাতন্ত্র, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা। রাজনীতি ও রাজনীতিবিদ ব্যাকবেঞ্চে চলে গেছে। এ জন্যই ‘গোপন তথ্য চুরি’, ‘গোয়েন্দা সূত্রে প্রকাশ’, ‘দেশদ্রোহিতা’র মতো শব্দগুলো এখন অতি সাধারণ হয়ে গেছে। কোনো কিছু স্বার্থবিরোধী হলেই, কোনো কিছু পছন্দ না হলেই রাষ্ট্রদ্রোহিতা! এসব বুদ্ধি যে করিৎকর্মা কিছু আমলার মাথা থেকে আসে তা বলাই বাহুল্য। আবার রাজনৈতিক কারণে কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমে রাজনীতিবিদ ও অন্য পেশার মানুষকে নিয়ে প্রায়শ চটকদার সংবাদ ছাপানো হয় না, তা নয়। অন্য পক্ষের সাংবাদিক বিপদে পড়লে আরেকপক্ষ চুপ থাকে, পর্দার আড়ালে হেসে হেসে মজা দেখে। ক্ষমতার কেন্দ্রের কত কাছে থাকা যায়, কত সুবিধা নেয়া যায় সেটিই লক্ষ্য! সেখানে জাহান্নামে যাক পেশার মর্যাদা। এ জন্যই একসময় কয়েকটি বড় দৈনিক ও মিডিয়া হাউজ বন্ধ করে দেয়া হলেও ওই সব সাংবাদিক মুখ খোলেননি। তারাও ওই আমলাতন্ত্র, সংস্থার বৃত্তে ঘুরেছেন ব্যক্তিস্বার্থে, দলীয় স্বার্থে।
এখন নিজেরা সবাই পড়তে শুরু করেছেন বিপদে। এখন প্রায়ই শোনা যায়, ওই জেলার ডিসি সাংবাদিক নির্যাতন করেছে, জেলে দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ওই সাংবাদিক নাস্তানাবুদ হয়েছেন, পেশাদার সংগঠনের নির্বাচনে অদৃশ্য হাতের স্পর্শ পাওয়া যাচ্ছে! কেউ ভাবে না যে পেশার মর্যাদা হারিয়ে গেলে কেউ রক্ষা করতে আসবে না। রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ সামগ্রিক অবস্থা থেকে ব্যতিক্রম কিছু নয়।
Posted ১১:৩৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২০ মে ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh