বাংলাদেশ ডেস্ক : | বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারি ২০২১
ফারাহ আহমদ
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনে নিয়োগ পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফারাহ আহমদ। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের আওতাধীন পল্লী উন্নয়ন আন্ডার সেক্রেটারির কার্যালয়ে চিফ অব স্টাফ হিসেবে তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সময় গত ২১ জানুয়ারি মার্কিন কৃষি বিভাগের প্রদত্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। ফারাহ আহমদ এর আগে গ্রাহক শিক্ষা অফিসে সিনিয়র প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর এবং গ্রাহক আর্থিক সুরক্ষা ব্যুরোতে (সিএফপিবি) চিফ অপারেটিং অফিসারের সিনিয়র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ফারাহ আহমদ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খানের ভাগ্নি বলে জানা গেছে।যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারী ফারাহ মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) পল্লী ব্যবসায় সমবায় পরিষেবায় কমিউনিটি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন দলের প্রোগ্রাম ম্যানেজার এবং আমেরিকান অগ্রগতির সেন্টারে সিনিয়র পলিসি অ্যানালিস্টের দায়িত্ব পালন করেছেন।
ফারাহ আহমদের বাবা ড. মাতলুব আহমেদ ও মা ড. ফেরদৌস আহমেদ। তারা দুজনেই যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ফারাহ আহমেদের নানা ড. আব্দুল বাতেন খান বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। প্রবাসী বাংলাদেশি ফারাহ আহমদ ছাড়াও একই সময়ে মার্কিন কৃষি বিভাগে অন্যান্য পদে আরও ৫ জন নিয়োগপ্রাপ্তরা হলেন- জেনারেল কাউন্সিল অফিসে ডেপুটি জেনারেল কাউন্সিল পদে ডেভিড গ্রাহন, পল্লী উন্নয়ন আন্ডার সেক্রেটারির কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা পদে অনুগবেনগা আজিলোর, আন্ডার সেক্রেটারির কার্যালয়ের খামার উৎপাদন ও সংরক্ষণের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা পদে মাইক স্মিডথ, ফার্ম সার্ভিস এজেন্সিতে ফিল্ড অপারেশনের উপ-প্রশাসক পদে মারকাস গ্রাগাম এবং যোগাযোগ দফতরের যোগাযোগ পরিচালক পদে ম্যাট হেরিক নিয়োগ পেয়েছেন। এর আগে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান জাইন সিদ্দিক হোয়াইট হাউজের ডেপুটি চিফ অব স্টাফের সিনিয়র এডভাইজার হয়েছেন। জাইনের মা-বাবা ময়মনসিংহের নান্দাইলের সন্তান। বাইডেনের ট্র্যাঞ্জিশন টিমে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম টিমেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন আরেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান রুমানা আহমেদ। রুমানা বারাক ওবামার সময়েও হোয়াইট হাউজে কাজ করেছেন। ফারাহ আহমেদও বারাক ওবামার আমলে ভিন্ন একটি দায়িত্বে ছিলেন।
রুমানা আহমেদ
বাংলাদেশ ডেস্ক : ডোনাল্ড ট্রাম্পের টিমে টিকতে না পারা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুমানা আহমেদ আবার হোয়াইট হাউসে ফিরেছেন। রুমানা ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর গ্লোবাল মিডিয়ার (ইউএসএজিম) রিভিউ প্যানেলের সাত সদস্যের অংশ হয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। রুমানা হিজাব পরায় ট্রাম্পের লোকজনের কাছে প্রায়ই অপদস্ত হতেন। তাকে কেউই স্বাভাবিকভাবে নিতে পারত না। ২০১৭ সালে পদত্যাগের নেপথ্য এই কারণগুলো জানিয়ে দ্য আটলান্টিকে একটি কলাম লেখেন রুমানা। ওই লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়।
রুমানা জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনে যোগ দেন। ওবামার আমলে দেশটির ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলে কাজ করতে থাকেন। রুমানা তার সেই আলোচিত কলামে জানান, ওবামা ক্ষমতা ছাড়লে হোয়াইট হাউসে তার অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে। সপ্তাহ পার হতে না হতে তাকে চাকরি ছেড়ে দিতে হয়।তিনি বলেন, আমার কাজ ছিল দেশের সেবা করা। ওয়েস্ট উইংয়ে আমি ছিলাম একমাত্র হিজাবী। ওবামা প্রশাসন সব সময় আমাকে স্বাগত জানিয়েছে। অন্য মুসলিমদের মতো ২০১৬ সালে আমিও ট্রাম্পের কাজকর্ম দেখতে থাকি। আমি ভেবেছিলাম, দেশের জন্য তার প্রশাসনে আমার থাকা উচিত। আমি আটটা দিন টিকতে পেরেছিলাম।
রুমানা বলেন, ট্রাম্প যখন সাতটি মুসলিম-প্রধান দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেন, তখনই বুঝে যাই আমার আর সময় নেই। ভাবতে থাকি, এমন একটা প্রশাসনে কাজ করি, যারা আমাকে অধীনস্ত নাগরিক মনে করে, হুমকি হিসেবে দেখে।
কাজী সাবিল
বংশোদ্ভূত আমেরিকান ও সিলেটী কাজী সাবিল রহমান (৩৮)। হোয়াইট হাউজে এক্সিকিউটিভ অফিসের ম্যানেজমেন্ট এ্যান্ড বাজেট ডিভিশনে ইনফরমেশন এ্যান্ড রেগুলেটরি এফেয়ার্সের সিনিয়র কাউন্সেলর হিসেবে ২৫ জানুয়ারি নিয়োগ পেয়েছেন তিনি। নিউইয়র্ক সিটিতে জন্মগ্রহণকারি কাজী সাবিল ব্রুকলীন ল’ স্কুলের এসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ছিলেন ‘ডেমজ’ নামক একটি থিঙ্ক ট্যাংকের প্রেসিডেন্ট। বর্ণ ও জাতিগত সাম্য, অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি, নীতিগত গবেষণার আলোকে গণতান্ত্রিক চেতনায় সর্ব সাধারণকে উজ্জীবিত করার অভিপ্রায়ে কর্মরত এই থিঙ্ক ট্যাংকের মাধ্যমেই কাজী সাবিলের প্রতি দৃষ্টি প্রসারিত হয়েছে জো বাইডেনের।
উল্লেখ্য, বাইডেন-কমলা ট্র্যাঞ্জিশন টিমে আমেরিকার অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর গভীর পর্যবেক্ষণ আলোকে সুদূর প্রসারি কর্ম-কৌশল গ্রহণের অভিপ্রায়ে কর্মরত ৮টি ওয়ার্কিং গ্রুপের একটির কো-চেয়ারম্যান ছিলেন সাবিল। এরও আগে ছিলেন হার্ভার্ড ল’ স্কুলে ভিজিটিং প্রফেসর, রুজভেল্ট ইন্সটিটিউটের ফেলো এবং নিউ আমেরিকানের ফেলো। সাবিলের গবেষণার সেক্টর হচ্ছে গণতান্ত্রিক সমাজ-ব্যবস্থায় আর্থিক সমৃদ্ধি প্রদানের পাশাপাশি সমগ্র জনগোষ্ঠিকে উন্নয়ন আর গণতন্ত্রের ধারায় সম্পৃক্ত করে একবিংশ শতাব্দির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রয়াস। টেকসই উন্নয়নের গতিধারা ত্বরান্বিত করতে কর্মক্ষম মানুষদের উজ্জীবিত করার কাজেও সাবিলের লেখা রয়েছে বেশ কটি গবেষণাকর্মও।
সাবিল একইসাথে সুশাসনের জন্যে কর্মরত ‘দ্য নিউ প্রেস’র পরিচালনা পর্ষদের মেম্বার, ‘ইউনাইটেড টু প্রটেক্ট ডেমোক্রেসি’ এবং ‘দ্য ন্যারেটিভ ইনিশিয়েটিভ’রও সক্রিয় সদস্য হিসেবে মাঠে রয়েছেন। আমেরিকানদের জীবন-মানের উন্নয়ন আলোকে গবেষণামূলক তার লেখা প্রকাশিত হয় ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য আটলান্টিক, স্টানফোর্ড সোস্যাল ইনোভেমন রিভিও, বস্টন রিভিউ, ডেমোক্রেসি জার্নাল, দ্য আমেরিকান প্রসপেক্টে। বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড থেকে সমাজবিজ্ঞান, জেডি এবং পিএইচডি করেছেন সাবিল। রোড স্কলার হিসেবে ওক্সফোর্ড থেকে এমএসসি, অর্থনীতি এবং সামাজিক বিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন মেধাবী সাবির। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের পর ২০১৪-২০১৫ সালে নিউইয়র্ক সিটির অন্তভূক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন কৌশল সম্পর্কিত স্পেশাল এডভাইজার এবং নিউইয়র্ক সিটি রেন্ট গাইডলাইন বোর্ডেরও মেম্বার ছিলেন কাজী সাবিল। কাজী সাবিলের বাবা কাজী আফজালুর রহমান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ক্যাডার হিসেবে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনে ইকনোমিক কাউন্সেলর হিসেবে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ৫ বছর চাকরি করেছেন। এরপর এস্কেপ-বাংলাদেশেও চাকরি করেছেন তিনি।
Posted ১১:৩৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারি ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh