নিউইয়র্ক : | বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০২৪
বক্তব্য রাখছেন আমির খান
চলতি বছরের পবিত্র হজের সময় ঐতিহাসিক আরাফা’র দিনে নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় উদ্বোধন হলো ‘আরাফা ইসলামিক সেন্টার’-এর নতুন ভবন। ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে শনিবার (১৫ জুন) বাদ আসর আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে দৃষ্টি নন্দন এই ভনটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্র শুরু হয়।
এর আগের দিন শুক্রবার প্রথম জুমার নামাজ আদায় করা হয়। সর্বস্তরের বিপুল সংখ্যক মুসল্লী নর-নারী ভবনটিতে আয়োজিত জুমার নামাজ ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এদিকে তিন তলা বিশিষ্ট আলাফা ইসলামিক সেন্টারের উদ্যোগে নবনির্মত মসজিদ ভবনে (৮৮-৪৯ ১৭৯ প্লেস, জ্যামাইকা, নিউইয়র্ক ১১৪৩২) রোববার (১৬ জুন) ঈদুল আজহার তিনটি জামাত অনুষ্ঠিত হয় যথাক্রমে সকাল সাড়ে ৭টায়, সাড়ে ৮টায় এবং সাড়ে ৯টায়। সংশ্লিস্টরা জানান, ‘আরাফা ইসলামিক সেন্টার’টি একটি পূর্নাঙ্গ ইসলামিক সেন্টার হিসেবে প্রতিষ্ঠা ও ভবন নির্মান করা হয়েছে। এখানে ইসলামিক ক্লাস ছাড়াও নিয়মিত ওয়াক্ত নামাজ আদায় সহ অন্যান্য ইসলামিক কর্মকান্ড পরিচালনা করা হবে। খবর ইউএনএ’র।
আলাফা ইসলামিক সেন্টারের নবনির্মত মসজিদ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ মুনাজাত করেন জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের ইমাম ও খতিব মওলানা মির্জা আবু জাফর বেগ। ব্যতিক্রমী এই অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কের বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির কর্মকর্তা ছাড়াও নিউইয়র্কের জনপ্রতিনিধি, কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং বিপুল সংখ্যক মুসল্লী উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্ক ষ্টেট সিনেটর জন ল্যু, স্থানীয় পিএস ৯৫কিউ-এর প্রিন্সিপ্যাল কিম হিল, জাজ জনসন, নিউইয়র্ক সিটির আসন্্ন নির্বাচনে কুইন্সের সিভিল কোর্ট জাজ পদপ্রার্থী অমিস আর ডোসী এবং স্থানীয় পুলিশ প্রিসেক্ট’র ডিটেকটিভ জন। অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ডা. মোহাম্মদ এম রহমান, অন্যতম পরিচালক ইমাম শামসী আলী, মসজিদ মিশন সেন্টার (হাজী ক্যাম্প মসজিদ) সহ বিভিন্ন মসজিদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ইমাম ও হাফেজ রফিকুল ইসলাম, ইমাম জাফর, বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ, আলাফা ইসলামিক সেন্টারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আজিজুর রহমান, মদিনা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি এডভোকেট নাসির উদ্দিন, সাবেক সিটি ড্যানিক মিলার, তারিকুর রহমান প্রমুখ।
মাগরিবের নামাজের পর ‘আরাফা ইসলামিক সেন্টার’-এর চেয়ারম্যান আমীর খান ধন্যবাদ সুচক বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে বক্তারা ‘আরাফা ইসলামিক সেন্টার’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং জ্যামাইকায় একাধিক মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এলকার পরিবেশ ভিন্নতর হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। পাশাপাশি বক্তারা বলেন, শুধু মসজিদ প্রতিষ্ঠা করলেই হবে না, এই মসজিদ পরিচালনা এবং খেদমত করতে নতুন প্রজন্মকে মসজিদমুখী করতে হবে।
বক্তারা জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারটি কে নিউইয়র্ক সিটির জ্যামাইকা এলাকার ইসলামিক জাগরণের অগ্রদূত হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, এক মসজিদ আরেক মসজিদের সাথে প্রতিযোগিতা নয়, বরং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে ইসলামের খেদমতে কাজ করতে হবে। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ‘আরাফা ইসলামিক সেন্টার’-এর ইমাম শোয়েব শেখ। আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন তারিকুল ইসলাম।
তিনতলা ভবনের মসজিদটির রয়েছে বেসমেন্ট। সেন্টারটির নির্মাণকাজে এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৭ মিলিয়ন ডলারের অধিক। যার পুরোটাই সংগৃহীত হয়েছে সাধারণ মুসল্লিদের অনুদান থেকে। আরাফা ইসলামিক সেন্টার নিউইয়র্ক সিটির বৃহত্তর ও অত্যাধিুনিক একটি বহুমুখী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। এতে রয়েছে মসজিদ আল-আরাফা, ইসলামিক স্কুল ও কমিউনিটি সেন্টার। জ্যামাইকার বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকায় ২০ হাজার ১৫৬বর্গফুটের মোট আয়তনের জমির উপর ৮ হাজার ৮ শত বর্গফুটের ৩ তলা ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।
২৫টি মসজিদ নির্মাণকাজে অভিজ্ঞ এমন একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ করেছে। সেন্টারের নির্মাণশৈলী অত্যন্ত চমৎকার। যাতে রয়েছে ইসলামী ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মৃতি চিহ্ন ও আধুনিকতার ছাপ। মূল ভবনের প্রতি তলার আয়তন ৪ হাজার বর্গফুট। প্রথম তলায় পুরুষদের নামাজের স্থান। দ্বিতীয় তলায় ব্যবস্থা রয়েছে মহিলাদের নামাজ আদায়ের।
তৃতীয় তলার পুরোটাই নির্মিত হয়েছে ইসলামিক স্কুলের জন্য। সেখানে রয়েছে ৬টি ক্লাসরুম, যেখান থাকবে সর্বাধুনিক সুযোগ সুবিধা। ৮ হাজার বর্গফুটের অধিক বিশালাকার বেসমেন্টের পুরোটাই ব্যবহৃত হবে কমিউনিটির বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমে। সেখানে থাকবে পূণাঙ্গ কিচেনসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা। আরাফা ইসলামিক সেন্টারের ছাদেও নামাজ আদায় করা যাবে। সিটি কর্তৃপক্ষ থেকে এজন্য অনুমতি নেয়া হয়েছে। প্রশস্ত এলিভেটর, প্রতি তলায় পর্যাপ্ত বাথরুম, গেস্টরুম, শিশুদের বসার পৃথক রুমসহ নানা আধুনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অত্যন্ত মজবুত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ভবনটি স্থানীয় মুসলিম কউিনিটিতে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে বলে জানান এআইসি’র সেক্রেটারী খন্দকার তারিকুল ইসলাম।
মসজিদকে কেন্দ্র করে মুসলিম আবাসনসহ আর্থিক এবং সামাজিক সমৃদ্ধি ঘটবে। আশপাশ এলাকায় সৃষ্টি হবে মুসলিম বান্ধব একটি পরিবেশ। সেন্টারটির প্রতিষ্ঠায় যারা মুক্তহস্তে দান করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান খন্দকার তরিকুল ইসলাম। সেন্টারটির চেয়ারম্যান ও অন্যতম দাতা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আমীর খান। নিউইয়র্ক (ইউএনএ)
Posted ১১:০১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh