বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৩
“বিশ্বনবীর বিশ্ব উম্মত ঐক্যবদ্ধ মুসলিম মিল্লাতের বিশ্ব” ঘোষণার মহা আয়োজনের মধ্য দিয়ে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হলো ১৬তম ইন্টারন্যাশনাল ইউনাইটেড সীরাত কনভেনশন-২০২৩। বিশ্ব শান্তি ও সামাজিক ন্যায় বিচারের শ্লোগান সামনে রেখে গত ১ অক্টোবর, রোববার জ্যামাইকার এডগারটন বুলেবার্ডের একটি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে আলোচনায় অংশ নেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আলেম ও ইসলামি চিন্তাবিদগণ। অতীতের ধারাবাহিকতায় এবারো আমেরিকান মুসলিম সেন্টার আয়োজন করে ইন্টারন্যাশনাল ইউনাইটেড সীরাত কনভেনশন। ইন্টারন্যাশনাল ইউনাইটেড সীরাত কনভেনশনে ইসলামিক আলেম ও স্কলারগণ আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনাদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে ইহকাল ও পরকাল সুন্দর করার। বক্তাগণ বলেন, মুহাম্মদ (সা.) শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্য নন তিনি সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য আদর্শ। বিশ্বের চলমান যেকোন সংকট সমাধানে মহানবীর আদর্শ অনুসরণ অনস্বীকার্য। বক্তাগণ কোরআন-হাদিসের আলোকে বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এবং রাসুলের (সা.) জীবনাদর্শ প্রত্যেক মুসলমানকে অবশ্যই অনুসরণ করার পাশাপাশি বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অন্যান্য ধর্মের মানুষদের কাছে তা পৌছে দেওয়ার আহ্বান জানান।
ইংরেজী এবং বাংলা দুই পর্বে বিভক্ত সীরাত সম্মেলনের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হাফেজ রফিকুল ইসলাম। অনুবাদ সহ পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন কারী হাফেজ আহমেদ আব্দুল হাদী। সীরাত কনভেনশনের উপর গুরুত্বারোপ করে বক্তব্য রাখেন ড. জহিরুল আলম এবং ইমাম আতাউর রহমানের ইমামতিতে অনুষ্ঠিত হয় আসরের নামাজ। মুফতি আব্দুল মালেকের উপস্থাপনায় আনুষ্ঠানিক আলোচনা পর্বে অংশ নেন বক্তাগণ। নবী করিম (সাঃ) এর জীবনীর উপর বিষয় ভিত্তিক জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় অংশ নেন বক্তাগণ। ব্যক্তি জীবনের পাশাপাশি পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ইসলামের আদর্শ ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার দাবি উচ্চারিত হয় সীরাত সম্মেলনে। মক্কায় হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন মুফতি ফারহান ও ইমাম ফায়েকউদ্দিন। ইসলামের আলোকে সন্তান লালন-পালনের উপর বক্তব্য রাখেন আবু সাঈদ মাহফুজ। বিশ্বব্যাপী বিরাজমান সমস্যা সমূহের সমাধান রসুল (সাঃ) নির্দেশিত পথে হতে পারে বলে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করনে ডঃ আব্দুল ফাত্তাহ আল আযহারী। আমেরিকান মুসলিম সমাজে সীরাহ’র গুরুত্ব ও এর প্রতিফলন সমাজে কিভাবে ঘটতে পারে এ সম্পর্কে আলোচনা করেন সীরাত সম্মেলনের প্রধান অতিথি ফার্মাসিষ্ট আমীর খান।
মাগরিবের নামাজের পর বিশ্ব নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর নির্দেশনা অনুযায়ী ইসলামের দাওয়াত মানুষের মাঝে পৌছে দেয়ার প্রসঙ্গে আলোচনা করেন ক্বারী মুস্তফা আবু সাইফ। আদর্শ পারিবারিক জীবন ইসলামের আলোকে কিভাবে যাপন করা যায় এ নিয়ে আলোচনা করেন ইমাম সামসী আলী। ইমাম ফখরুদ্দিন আল মাদানী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) দৃষ্টিতে সবাইকে মাফ করে দিয়ে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় রসুল (সাঃ) এর ভূমিকা প্রসঙ্গে আলোচনা করেন আব্দুল্লাহ কামাল আল আজহারী। মহান আল্লাহ তায়ালা প্রেরিত শেষ নবী। ‘দ্য সীল অব প্রফেট’ এর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন জেএমসির ইমাম মির্জা আবু জাফর বেগ। মুসলিম উম্মাহ’র উপর বিশ্ব নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর অধিকার নিয়ে বিশদ আলোচনা করে মুফতি আব্দুল মালেক। মুনার ন্যাশনাল লীডার ইমাম দেলোয়ার হোসেন রাসুল (সাঃ) এর জীবনাদর্শের উপর আলোকপাত করেন। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আধুনিক সমাজ ও বিশ্ব প্রতিষ্ঠার অনন্য আদর্শ বলে মন্তব্য করেন ডঃ আনসারুল করিম আল আযহারী। দোয়া এবং অমুসলিমদের প্রতি রাসুল (সাঃ) এর আচরণ সম্পর্কে আলোচনা করেন মুফতি মোজাম্মেল। নবীর জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে বক্তব্য রাখেন মুফতি লুৎফর রহমান। বিশিষ্ট কমিউনিটি এ্যাক্টিভিষ্ট ও ইসলামী চিন্তাবিদ আব্দুল লতিফ সম্রাট মহানবীর জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
ইমাম আবু জাফর বেগ বলেন, জীবনের সকল ক্ষেত্রেই রাসুল (সা.)-কে অনুসরণ-অনুকরণ করা আমাদের কর্তব্য। নামাজ-দোয়ায় দরুদ শরীফ না পরলে তা কবুল হবে না। মুখে মুখে রাসুলের উম্মত দাবী করলে হবে না। তাঁর সুন্নাহ অনুসরণ করতে হবে। জীবনকে সুন্দর করতে আর শান্তিময় জীবনের জন্য আল্লাহ-রাসুল (সা.)-কে ভালবাসতে হবে সমানভাবে । তাঁর ভালবাসা পেলে হলে মহব্বতের সাথে আল্লাহ-রাসুল (সা.)-এর আদেশ-নিষেধ মানতে হবে। নবী-রাসুল (সা.)-কে ২৪ ঘন্টাই রাত-দিন সকল কাজেই অনুসরণ করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। অন্যান্য বক্তাগণ বলেন, মহানবীর (সা.) জীবন চরিত নিজেদের মধ্যে ধারণ করে আমাদের জীবনকেও মানবিকগুনাবলী সম্পন্ন করে তুলতে হবে। একজন আরেকজনকে সম্মান দিতে হবে, সম্মান জানাতে হবে। ইহকাল-পরকালের জীবন সুন্দর করতে হবে আল কোরআন ও রাসুলের আদর্শ অনুসরণ করে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মানতে হবে। মসলিম ও নন মুসলিম সবার জন্যই মহানবীর আদর্শ অনুসরণীয়।
বক্তাগণ বলেন, রসুল (সা.) হচ্ছেন পৃথিবীর সকল মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মানুষ। তাঁর সুন্নাহ তথা জীবনাচরিত পালনের মধ্য দিয়ে প্রত্যেকেই আল্লাহতায়াল সন্তুষ্ট লাভ করতে হবে। আর এজন্য নবীকে সত্যিকারার্থেই জানতে হবে, বুঝতে হবে। সেই সাথে আল্লাহর কথা মানতে হবে। াসুল (সা.) সমগ্র মানবজাতির জন্য আদর্শ। তিনি রহমাতাল্লিল আলামীন অর্থাৎ সমগ্র বিশ্বাসীর জন্য রহমত স্বরূপ। আজকের তরুণ প্রজন্মের কাছে রাসুল (সা.)-এর আদর্শ পৌছে দিতে হবে। নবী করীম (সা:) এর জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। বিশেষ করে পিতা-মাতার সাথে সন্তান আর সন্তান্তের সাথে পিতা-মাতার সম্পর্কের পাশাপাশি খাঁটি মুসলিম হওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেন। বক্তারা বলেন, পরিবার থেকেই প্রথম শিক্ষা নিতে হবে। আর মা-বাবই হচ্ছেন সন্তানদের প্রথম শিক্ষক। তাই সকল মা-বাবার দায়িত্ব ইহকাল-পরকালের কথা ভেবে সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা। বক্তারা নবী করিম (সা:)-কে নিজের চেয়ে বেশী ভালোবাসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দুনিয়ার লালসা দুনিয়াকে যেমন ধ্বংস করে, তেমনী আখেরাতকে ধ্বংস করে। একমাত্র নবীকে (সা.) অনুসরণ, অনুকরণ ও মহব্বত করেই আল্লাহকে সন্তষ্ট করা সম্ভব। বক্তাগণ ইসলামের আলোকে রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার ও ব্যক্তিজীবনে বিশ্বনবীর জীবনাদর্শ মেনে চলার আহ্বান জানান। পরিবারে স্ত্রী-সন্তান, প্রতিবেশী এবং সমাজের অন্যান্য মানুষের প্রতি কি ধরণের আচরণ করতে হবে রসুল (সা.) এর জীবনী অনুসরণ করলেই তা পূর্ণতা পাবে। বক্তাগণ বলেন, ইসলামে শিক্ষাকে ফরজ করা হয়েছে। সর্বোচ্চ মর্যাদা দেয়া হয়েছে নারীকে। নারী শিক্ষার ক্ষেত্রও করা হয়েছে অবারিত। বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু মরক্কোয় ফেজ শহরের একটি মসজিদ থেকে। আর এই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা একজন নারী। যার নাম ফাতিমা আল ফাহরি। মহানবী (সা.) প্রদর্শিত জীবন ব্যবস্থা থেকে বিচ্যুত হওয়ার কারণেই আজ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় অশান্তি ও অবক্ষয় দৃশ্যমান বলে মন্তব্য করেন বক্তাগণ।
আমেরিকান মুসলিম সেন্টারের আয়োজনে সীরাত সম্মেলনে সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন ইমাম মির্জা আবু জাফর বেগ। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন হাফেজ রফিকুল ইসলাম ও মুফতি আব্দুল মালেক। বিশেষ মুনাজাতের মধ্যদিয়ে কনভেনশনের সমাপ্তি ঘটে। বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ প্রায় রাত ১০টা পর্যন্ত গভীর ্আগ্রহ নিয়ে উপভোগ করেন সীরাত সম্মেলনের আলোচনা।
Posted ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh