বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
নিউইয়র্কের বাংলাদেশী কমিউনিটিতে বাড়ছে মাদক সমস্যা। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের বড় একটি অংশ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকজন তরুণ মারা গেছে মাত্রাতিরিক্ত মাদক সেবনের প্রতিক্রিয়ায়। বিরাজমান এ সমস্যা নিয়ে অভিভাবকদের মাঝে ক্রমশই বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। এ সমস্যা থেকে কিভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যায় তা উদ্ভাবনের জন্য মুক্ত আলোচনার আয়োজন করে নিউইয়র্কের বাংলাদেশী সচেতন সমাজ। এরই আলোকে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে মাদক সমস্যা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় গত ১২ সেপ্টেম্বর, রোববার সন্ধ্যায় জ্যামাইকার একটি রেস্টুরেন্ট মিলনায়তনে। ‘স্টপ ড্রাগস এন্ড সেভ আওয়ার চিলড্রেন’ ছিলো আলোচনার মূল বিষয়বস্তুু। বিশিষ্ট কমিউনিটি এ্যাক্টিভিস্ট নাসির আলী খান পল’র আহ্বানে আয়োজিত আলোচনা সভায় নিউইয়র্কের বাংলাদেশী আমেরিকান পুলিশ এসোসিয়েশন ছিলো বিশেষ সহযোগিতায়। এনওয়াই পিডি পুলিশ প্রিসিঙ্কট-১০৩ ও ১০৭ এর কমিউনিটি বিষয়ক কমান্ডিং অফিসারগণ এতে অংশ নেন। এরা হলেন, ১০৭ প্রিসিঙ্কটের ক্যাপ্টেন সাওয়াল আহমেদ ও ১০৩ প্রিসিঙ্কটের অফিসার নিলাদ্রী দাস। এছাড়া আলোচনায় ছিলেন বাংলাদেশী আমেরিকান পুলিশ এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ক্যাপ্টেন কারাম চৌধুরী।
মাদক সমস্যা ও দিক নির্দেশনামূলক মুক্ত এ আলোচনায় কমিউনিটির চিকিৎসক, সাংবাদিক, সোস্যাল এ্যাক্টিভিস্ট সহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ অংশ নেন। বক্তাগণ উদ্বেগ প্রকাশ করেন কমিউনিটিতে মাদকের বিস্তার এবং তরুণ প্রজন্মের আসক্তি নিয়ে। আলোচনা সভার আহ্বায়ক নাসির আলী খান পলের উপস্থাপনায় শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত এবং মাদকাসক্তি নিয়ে আলোচনা করেন ইমাম কাজী কাইয়্যূম। স্বাগত বক্তব্যে নাসির আলী খান পল আলোচনা সভার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে ভয়াবহ এ সমস্যা কিভাবে সমাধান করা যায়-সে বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেয়ার আহ্বান জানান আলোচকদের প্রতি। তিনি জানান, লোকলজ্জার বা সামাজিক ভীতির কারণে বাবা মায়েরা সন্তানদের এসব মৃত্যুর ঘটনাকে হৃদরোগ বা অন্য কারণ হিসেবে তুলে ধরছেন। ফলে সংকটের সঠিক চিত্র সামনে আসছে না”।তিনি পুলিশ কর্মকর্তা, আলোচক এবং অন্যান্যদেরকে ধন্যবাদ জানান।
বাংলাদেশী কমিউনিটির তরুণ প্রজন্মের মাঝে মাদকের বিস্তার কিভাবে রোধ করা যায় সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় অংশ নেন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ জুন্নুন চৌধুরী, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ আকতার হাসান, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডাঃ ওয়াজেদ এ খান, ঠিকানার চেয়ারম্যান এম এম শাহীন, পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, লেখক হাসান ফেরদৌস, জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের সেক্রেটারী মঞ্জুর চৌধুরী, মুলধারার রাজনীতিক মুর্শেদ আলম, নবযুগ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন সাগর, সাংবাদিক রওশন হক, অধ্যাপিকা হোসনে আরা, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী মোঃ আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ সোসাইটির কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাহ নেওয়াজ, লেখক ও সাংবাদিক ফাহিম রেজা নূর, কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার আহনাফ আলম, কবি সালেম সুলেরী, সাংবাদিক-লেখক ফাহিম রেজা নূর, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাহ নেওয়াজ, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট মিনহাজ আহমেদ সাম্মু, সাবুল উদ্দিন, ইউএস আর্মীর শেখ আল আমীন, নতুন প্রজন্মের অনুভা শাহীন প্রমুখ।
বক্তাগণ বলেন, শুধু বাংলাদেশী কমিউনিটি বা গোটা যুক্তরাষ্ট্র নয়, সারা বিশ্বই এখন মাদকের ভয়াবহ ছোবলে বিপর্যস্ত। তবে নিউইয়র্কের বাংলাদেশী কমিউনিটির তরুণ প্রজন্ম যেভাবে মাদকের দিকে ঝুঁকছে তাতে অভিভাবকদের উৎকন্ঠা বাড়ছে দিন দিন। একধরণের অসহায়ত্বে ভুগছেন তারা। মাদকের সংকট বাড়ার পেছনে নানা কারণ তুলে ধরেন। তার মধ্যে পরিবারের ভেতরে সম্পৃক্ততার অভাব, বাবা মায়ের অতি প্রত্যাশা, সন্তানদের সঙ্গে দূরত্ব, হতাশা এবং বন্ধুদের চাপ উল্লেখযোগ্য। পারিপার্শি¦কতা, সন্তানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ এবং তাদের বন্ধু সংস্পর্শের বিষয়টি ক্রমশই পরিবারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। ফলে অনেক পরিবারের সন্তানরা বখে যাচ্ছে। অসৎ সঙ্গে মিশে জড়িয়ে পড়ছে মাদকাসক্তিতে। এতে তারা শারীরিক ও মানসিক বৈকল্যের শিকার হচ্ছে। হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে বেছে নিচ্ছে আত্নহননের পথ।
এ অবস্থা থেকে সন্তানদের মুক্ত রাখতে হলে অবশ্যই বাবা-মাকে অধিক সময় দিতে হবে সন্তানদেরকে। যত্নবান হতে হবে তাদের প্রতি। এক্ষেত্রে পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি সন্তান আকৃষ্ট করার পরামর্শ দেন আলোচকগণ। সন্তানদের সাথে খোলামেলা আলোচনা এবং প্রয়োজনে তাদের সমস্যা, নিয়ে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করারও উপদেশ দেন বক্তাগণ। বক্তারা বলেন, কেবল তরুণদের সচেতন করলেও চলবে না। মাদকের উৎস বন্ধ করতে হবে। তার জন্য প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপও চেয়েছেন তারা। সেই সঙ্গে অতি প্রত্যাশার চাপে সন্তানদের ভারাক্রান্ত না করে উৎসাহ জোগানো এবং সৃজনশীল কাজে সম্পৃক্ত করারও পরামর্শ দেয়া হয়।
মাদক সমস্যা রোধে কমিউনিটির বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তারা। মাদকের ভয়াবহতার কথা জানালেনস্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের প্রতিনিধিরাও। এ নিয়ে গুরুত্ব দিয়েই কাজ করছে তারা। এ সময় বক্তব্য রাখেন ১০৭ প্রিসেঙ্কট এর পুলিশ কর্মকর্তা সাওয়াল আহমেদ এবং ১০৩ নম্বর প্রিসেঙ্কট এর পুলিশ কর্মকর্তা নিলাদ্রী দাস। পুরো অনুষ্ঠানটিতে সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ এসোসিয়েশন-বাপা। সংগঠনটির সভাপতি ক্যাপ্টেন কারাম চৌধুরী মাদক সমস্যা সমাধানে তাদের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “এই সংকটে কারো সহায়তা প্রয়োজন হলে, আমরা পাশে আছি”। আলোচনা সভার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন কুইন্স কমিউনিটি বোর্ড-১২ এর মেম্বার আহনাফ আলম ও পৃষ্ঠপোষকতায় ছিলেন মোঃ আনোয়ার হোসেন।
Posted ৮:০৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh