বিএনিউজ : | বৃহস্পতিবার, ০৬ জুন ২০২৪
বাঁ থেকে- ডা. ওয়াজেদ খান, আনিসুর রহমান, কাজী সামসুল হক, জয়নাল আবেদীন, মাহাথির ফারুকী, মমিনুল মজুমদার, আমিনুর রসুল জামসেদ
কমিউনিটি সাংবাদিকতা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। স্থান-কাল পাত্রভেদে পাঠকদের পরিবর্তনশীল চাহিদা পূরণে একজন সাংবাদিক রাখতে পারেন গুরুত্ব ভূমিকা। প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বাধীন, বস্তুনিষ্ঠ ও বিবেকনির্ভর সাংবাদিকতা এখন সময়ের দাবি। গত ২ জুন রোববার মুনা নিউইয়র্ক মিডিয়া বিভাগের কর্মশালায় এসব কথা বলেন সাপ্তাহিক বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান। নিউইয়র্ক নর্থ ও সাউথ জোন কর্তৃক আয়োজিত কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয় মুনা সেন্টার অফ জ্যাকসন হাইটসে।
এতে সভাপতিত্ব করেন মুনা ন্যাশনাল এসিস্টেট এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর আনিসুর রহমান গাজী। রিপোর্ট লেখার পদ্ধতি ও কমিউনিটি সাংবাদিকতার উপর আলোচনা করেন সাপ্তাহিক বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান,। রিপোর্ট তৈরিতে বাংলা বানান ও উচ্চারণ বিষয়ে আলোচনা করেন ইটিভির সাবেক নিউজ এডিটর মাহাথির ফারুকী। কর্মশালায় আমন্ত্রতি অতিথি ছিলেন এমসিটিভি ইউএস’র সিইও ও প্রেসিডেন্ট প্রবীণ সাংবাদিক কাজী সামসুল হক, সাপ্তাহিক রানার পত্রিকার সম্পাদক জয়নাল আবেদীন। শুরুতে দারসুল কুরআন পেশ করেন মুনা জ্যাকসন হাইটস চ্যাপ্টারের সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্ক সাউথ জোন মিডিয়া বিভাগের পরিচালক আমিনুর রসুল জামসেদ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাংবাদিক মমিনুল ইসলাম মজুমদার।
ডা. ওয়াজেদ এ খান সাংবাদিকতা, সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। বিশেষ করে সমাজ ও রাষ্ট্রে সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের ভূমিকা ও দায়বদ্ধতা প্রসঙ্গে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাক, ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাহীনতা মুক্ত গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সাংবাদিকার নীতিমালা মেনে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করাই সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের কাজ।
ডা. খান বলেন, রিপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে সাংবাদিককে সুনির্দিষ্ট ছক বা নিয়ম মেনে তা পাঠকের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলতে হয়। সেক্ষেত্রে ভাষার প্রয়োগ, শব্দ চয়ন ও বাক্য বিন্যাসে সাংবাদিককে যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
রিপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে সাংবাদিককে সাধারণত ৫ ডব্লিউএইচ তথা হু, হোয়াট, হোয়েন, হোয়ার, হোয়াইÑ দ্বারা প্রশ্নের মাধ্যমে সংবাদের বিষয় বস্তুতে স্পষ্টতা আনতে হয়। উপযুক্ত পর্যবেক্ষণ, যথাযথ পর্যালোচনা, প্রয়োজনীয় বিচার-বিশ্লেষণ ও যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে রিপোর্ট লিখতে হয়। একটি আদর্শ রিপোর্ট দুই থেকে তিন পৃষ্ঠার মধ্যে শেষ করতে হয়। এছাড়াও ঘটনাকে সহজ ও সাবলিলভাবে উপস্থাপনের করাই উত্তম। সাধারণ পাঠকদের কথা বিবেচনায় রেখে কঠিন শব্দ চয়ন না করে সহজভাবে রিপোর্ট লেখাটাই শ্রেয়।
তিনি বলেন, একজন রিপোর্টারকে প্রত্যক্ষ ঘটনার সাক্ষী, প্রেস বিজ্ঞপ্তি অথবা বিশ্বস্ত সূত্র থেকে ঘটনার সতত্যা যাছাই করতে হয়। অনেক সময় প্রতিবেদন রচনার ক্ষেত্রে হয়তো অতীতে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনার সঙ্গে তার যোগসূত্র রচনাও করতে হয়। এ ক্ষেত্রে রিপোর্টার পালন করেন ইতিহাস লেখকের ভূমিকা।
ডা. খান বলেন, কমিউনিটি সাংবাদিকতা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাবে সাম্প্রাতিকালে সিরিয়াস কনটেন্টের ব্যাপারে পাঠকদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। স্থান-কাল পাত্রভেদে পাঠকদের পরিবর্তনশীল চাহিদা পূরণে একজন সাংবাদিক বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে। বিবেকনির্ভও স্বাধীন সাংবাদিকতাই বর্তমান সময়ের দাবি। তিনি বলেন, একজন রিপোর্টার প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে আলোকবর্তিকা হয়ে উঠুক এই প্রত্যাশা করছি।
মাহাথির ফারুকী বলেন, বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এই ভাষাটি যে অনেক সুন্দর ও মধুর তাতে কোন সন্দেহ নেই। ভাষাটিতে অনেকগুলো বর্ণ এবং তার সঙ্গে আরও অনেক সহযোগী চিহ্ন ব্যবহৃত হওয়ায় প্রায় সকল ধরনের উচ্চারণ বাংলা ভাষাতে করা যায়, যা পৃথিবীর অনেক ভাষাতেই সম্ভব হয় না।
তিনি বলেন, বর্ণ ও সহযোগী চিহ্নের আধিক্যের কারণে অনেক সময় আবার জটিলও হয়। এছাড়া আছে সংযুক্ত অক্ষর, শব্দের উৎপত্তিগত বিষয় ইত্যাদি। এগুলোও প্যাঁচ লাগিয়ে দেয়। সব মিলিয়ে প্রচুর বানান ভুল হয়। রিপোর্টের ক্ষেত্রে বানান ভুল হলে যিনি পড়বেন তিনি উচ্চারণ ভুল করবেনÑ এটাই স্বাভাবিক। তবে বাংলা উচ্চারণে আঞ্চলিকতা পরিহার করতে পারলেই সুন্দর রিপোর্ট উপহার দেওয়া সম্ভব।
কাজী সামসুল হক বলেন, সত্য ও স্বাধীন সংবাদ প্রকাশ এবং পরিবেশন করা ইবাদত। কারও আজ্ঞাবহ বা পক্ষ নিয়ে অসত্য ও অন্যায় সংবাদ প্রকাশ করা নিন্দনীয়। গুনাহের কাজ। তিনি বলেন, ইসলামে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আছে। তবে মতপ্রকাশ করতে গিয়ে জনগণ, সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্ষতি করা যাবে না। কারও সম্মানে আঘাত হানা যাবে না।
আনিসুর রহমান গাজী বলেন, গণমাধ্যম হলো জাতীয় জীবনের আয়না। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। আর্থসামাজিক উন্নয়নে গণমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সংবাদের তথ্য যাচাই ও সত্যতা নিরূপণ করা সাংবাদিকের অপরিহার্য দায়িত্ব। অনুষ্ঠান শেষে বিশ্বশান্তি কামনা করে দোয়া করেন সাংবাদিক রশীদ আহমদ।
Posted ২:০০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৬ জুন ২০২৪
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh