বাংলা প্রেস, নিউইয়র্ক : | বৃহস্পতিবার, ০৫ মে ২০২২
বিভিন্ন ঈদ জামাতে জামাতে উপস্থিত হয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদরা। তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আজ মুসলিমদের জন্য গর্বিত। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই মুসলিম আমেরিকানরা আমাদের দেশের সমৃদ্ধিতে অবদান রেখে চলেছেন। তারা যে আমেরিকা তৈরিতে সহায়তা করছেন, মুসলমানরা নিজেরাও সেই আমেরিকার মতোই বিচিত্র ও প্রাণবন্ত। যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী বাংলাদেশিরা আনন্দঘন পরিবেশে দেশীয় আমেজে উদযাপন করেছে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। স্থানীয় সময় সোমবার সকালে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে বাংলাদেশি পরিচালিত মসজিদ, মসজিদ সংলগ্ন মাঠ, পার্কের মাঠে ও গির্জার মিনলায়তনে ঈদের জামাতে অংশ নেন লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি। যেসব এলাকায় মসজিদ নেই সেসব এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে গির্জার মিনলায়তনেই জুমা ও ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বাংলাদেশিদের পরিচালনাধীন পাঁচ শতাধিক মসজিদ বা তৎসংলগ্ন মাঠে ঈদ জামাতগুলো শুরু হয় সকাল ৭টা থেকে। এ ছাড়া অন্যান্য দেশের নাগরিকদের পরিচালনাধীন মসজিদেও পালা করে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ১০টা পর্যন্ত। ঈদ জামাতের নিরাপত্তায় স্থানীয় প্রশাসন বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের শতাধিক ঈদগাহ মাঠে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন মার্কিন সিনেটর, কংগ্রেসম্যান, কংগ্রেসওমেন, গভর্ণর, সিটি মেয়র ও কাউন্সিলম্যান। তারা বলেন, আমেরিকান মুসলিমরা আমাদের কোভিড-১৯ মোকাবেলা কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, ভ্যাকসিন তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন এবং সম্মুখসারির স্বাস্থ্যসেবাদানকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তারা উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ের মালিক হিসেবে কর্মসংস্থান তৈরি করছেন, প্রথম সাড়াদানকারী হিসেবে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন, আমাদের স্কুলগুলোতে শিক্ষাদান করছেন, নিবেদিত সরকারি কর্মচারি হিসেবে দেশজুড়ে কাজ করছেন এবং জাতিগত সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য আমাদের চলমান সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন।
নিউ ইয়র্কের পার্শ্ববর্তী অঙ্গরাজ্য কানেকটিকাটের গভর্ণর নেড ল্যামন্ট গত ২ মে সোমবার সকালে হার্টফোর্ডের এক্সএল সেন্টারের ঈদুল ফিতরের বিশাল জামাতে অতিথি হয়ে এসেছিলেন। তিনি উপস্থিত মুসলিমদের ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, শুধু কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যেই নয়, গোট যুক্তরাষ্ট্র আজ মুসলিমদের জন্য গর্বিত। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সর্বস্তরেই মুসলিমরা দেশের সমৃদ্ধিতে অবদান রেখে চলেছেন। মুসলিমরা নিজেরাও সেই আমেরিকার মতোই বিচিত্র ও প্রাণবন্ত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫ সহস্রাধিক মুসল্লির অংশ গ্রহণে উক্ত জামাতে ইমামতি করেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত তরুণ ইমাম খায়রুল আলম (নোয়েল)। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের শতাধিক ঈদগাহ মাঠে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন মার্কিন রাজনীতিবিদরা বলেন, এখনো মুসলিম আমেরিকানরা গালাগালি, অন্যায় ও ঘৃণার মতো অপরাধের শিকার হচ্ছেন। (তাদের সম্পর্কে) এই ধরনের পূর্ব-ধারণা এবং তাদের উপর আক্রমণ করা ভুল (কাজ)। যা অগ্রহণযোগ্য। এবং এগুলো অবশ্যই বন্ধ করা উচিত। আমেরিকাতে কারো নিজের বিশ্বাস প্রকাশ করার ভয় থাকা উচিত নয় এবং আমার প্রশাসন সকল মানুষের নিরাপত্তা এবং অধিকার রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করবে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমে রয়েছে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ও পরেই অবস্থান করছে ইহুদিরা। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল ৩.৪৫ মিলিয়ন, যা মোট জনসংখ্যার শতকরা ১.১ ভাগ।২০১৫ সালে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি জনগোষ্ঠীর পরিমাণ ছিল ১.৮ শতাংশ। অন্যদিকে মুসলিমদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ ছিল। ৫ বছর আগে মুসলিম জনগোষ্ঠীর এই সংখ্যা ছিল ০.৯ শতাংশ।গবেষণায় দেখানো হয়, আগামী দুই দশকে মুসলিমদের সংখ্যা দাঁড়াবে ১.৮ শতাংশ। মুসলিম জনগোষ্ঠীর মোট সংখ্যা হবে ৮০ লাখের বেশি। ওই সময় ইহুদি জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দাঁড়াবে ১.৪ শতাংশ। গবেষণায় আরও বলা হয় সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। এ ধারা অব্যাহত থাকলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় গোষ্ঠী হিসেবে মুসলমানরা আবির্ভূত হবে। আর তা ২০৪০ সালের মধ্যেই হবে।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, প্রতি বছর ১ লাখ মুসলিম যোগ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। মুসলমান অভিবাসী এবং একই সঙ্গে আমেরিকান মুসলমানদের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি থাকার কারণে এমনটা হচ্ছে। ইহুদি জনগোষ্ঠীর তুলনায় মুসলমানদের সংখ্যা অনেক দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
Posted ৭:১৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৫ মে ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh