রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

Weekly Bangladesh নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত
নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত

যা ঘটেছিল সেদিন আ’লীগের সাংবাদিক সম্মেলনে

বিশেষ সংবাদদাতা   |   বৃহস্পতিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১

যা ঘটেছিল সেদিন আ’লীগের সাংবাদিক সম্মেলনে

নিউইয়র্ক প্রবাসী সিনিয়র সাংবাদিক এনসিএন’র নির্বাহী সম্পাদক ফরিদ আলমের উপর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ কর্মিদের হামলার নিন্দায় সরব সাধারণ মানুষ। নিউইয়র্কসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকরা ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন। যে ঘটনা নিয়ে এত তোলপাড় সেই ঘটনাটি আসলে কি ছিলো ?

আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলন : ড. সিদ্দিকুর রহমান সমর্থিত আওয়ামী লীগ ঘটনার দিন গত ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের কুইন্স প্যালেসে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে সর্বশেষ অবস্থা জানানোর জন্য। উল্লেখ্য, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আওয়ামী লীগের বিবদমান দুটি গ্রুপ শেখ হাসিনার সফর উপলক্ষে আয়োজিত সভা-সমাবেশগুলোতে নিজেদেরকেই প্রকৃত প্রতিনিধি হিসেবে জাহির করে আসছিলেন। একইসাথে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি গঠন নিয়েও ছিলো তাদের মধ্যে প্রকাশ্য দ্বদ্ধ। তার প্রমাণ পাওয়া যায় একাধিক সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের মধ্যে মারামারি ও হাতাহাতির ঘটনায়। এরই মধ্যে কুইন্স প্যালেসে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হলে সেখানে সাংবাদিকদের চেয়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগের কর্মিই ছিলো বেশি। সেখানে ড. সিদ্দিকুর রহমানকে একটা বেকায়দায় ফেলার জন্য অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী নেতা-কর্মিও হাজির ছিলেন।


সংবাদ সম্মেলনে যারা উপস্থিত ছিলেন : সংবাদ সম্মেলন সাড়ে ছয়টায় শুরু হলেও ৭/৮ জন সাংবাদিক ছয়টার মধ্যে সেখানে উপস্থিত হন। তাদের মধ্যে ছিলেন আওয়ামী কর্মীদের হামলার শিকার সাংবাদিক ফরিদ আলমসহ পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, বর্ণমালা সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, নবযুগ সম্পাদক শাহাবউদ্দীন সাগর, সন্দ্বীপ টিভির সিইও সোহেল মাহমুদ, আজকালের বিশেষ প্রতিনিধি সন্জীবন কুমার, মাই টিভির মল্লিকা খান মুনাসহ আরও কয়েকজন। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ এমপি, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি বিপ্লব বড়ুয়া, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সামাদ আজাদসহ আরও অনেকেই।

মঞ্জে বসেই যে ঈংগিত দিয়েছিলেন আব্দুস সোবহান গোলাপ : সংবাদ সম্মেলন শুরু হবার পরেই পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে বিমান চলাচল নিয়ে একটি প্রশ্ন করার সাথেই তিনি বলে উঠেন, ”আমরা আর এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না। গতকাল ফরিদ আলম বিমান নিয়ে” টুইস্ট’ করে নিউজ করেছেন। এ সময় তার সামনে এনসিএন’র মাইক্রোফোন ছিলো। একই সাথে তিনি ফরিদ আলমের একটি বিজনেস কার্ড হাতে নিয়ে বারবার দেখছিলেন। সংবাদ সম্মেলনের শুরু থেকেই ওই কার্ডটি তার হাতেই ছিলো। আব্দুস সোবহান গোলাপ বিমান নিয়ে করা নিউজের প্রতিক্রিয়া দেখানোর সাথে সাথেই পেছনে বসে থাকা শ’খানেক কর্মি চিৎকার করে উঠে এবং ফরিদ আলমকে বের করে দিতে বলে। এ অবস্থা কয়েক মিনিট চলার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়। তবে সে সময় আব্দুস সোবহান গোলাপ তাদেরকে শান্ত হতে বলেন। একই সাথে তিনি বলেন, আমরা বলার স্বাধীনাকে বিশ্বাস করি। সুতরাং তিনি বলতে পারেন। এরপর আরও দুএকজন সাংবাদিক দু’একটি প্রশ্ন করেন গোলাপকে।


ফরিদ আলমের যে প্রশ্নে আওয়ামী কর্মীরা ক্ষেপে যায় : কয়েকজন সাংবাদিকের প্রশ্নের পর ফরিদ আলম একটি প্রশ্ন করার অনুমতি চান। অনুমতি পেয়ে ফরিদ আলম গোলাপের একটু আগে দেয়া বক্তব্যের রেশ টেনে প্রশ্ন করেন,” দেখুন সবাই বাঘের প্রশংসা করেন, কিন্তু বিড়াল পুষতে পছন্দ করেন। যাই হোক, এ অবস্থায় আমার প্রশ্ন করা ঠিক হবে কিনা জানি না। তবু আমি জানতে চাই, অন্য সব দেশ থেকে রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানরা চার থেকে ছয়জন করে এসেছেন জাতিসংঘের ৭৬তম অধিবেশনে যোগ দিতে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই পেন্ডামিকের সময়ও এসেছেন বিশাল বহর নিয়ে (১৪১ জনের বহর)। তিনি এসে একটা গাছে পানি ঢেলে উদ্বোধন করছেন, একটি বেঞ্চে ছোট্ট এক টুকরো কাগজ লাগিয়ে উদ্বোধন করেছেন। আপনাদের ভাষায় সরকারের এত উন্নয়নই যদি থাকে তাহলে এসব উদ্বোধন কার পরামর্শে হচ্ছে ? তার এই সফরের অর্জনটাই বা কি ?” এই প্রশ্ন শুনে গোলাপ একটু ইতস্তত করে তার নিজের হাতে থাকা ফরিদ আলমের বিজনেস কার্ডটায় বারবার চোখ রেখে বলেন, “আপনার টিভির নাম কি ? এটা কোথায় দেখা যায় ? কারা দেখে ? ফরিদ আলম উত্তরে বলছিলেন, “এটা নিউইয়র্ক-বেজড টিভি। সবাই সব জায়গা থেকেই দেখতে পারে। ফরিদ আলমের এ কথা শেষ হতে না হতেই পরিদ আলমের বা দিকের সাড়িতে বসে থাকা জয়নাল আবদীন জয় নামের এক কর্মি প্রথমে অশ্লীল গালি দিয়ে গন্ডগোলের সূত্রপাত ঘটায়। এর পর যে যা পারে কুৎসিত ভাষায় গালি দিয়ে ফরিদ আলমের উপর হামলা করে। হামলাকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন, সেবুল মিয়া, ওয়াহেদুজ্জামান লিটন, হেলালউদ্দিনসহ আর অনেকেই।

নেতাদের ভূমিকা : কুইন্স প্যালেসে যখন চরম উত্তেজনা তখন আক্রান্ত ফরিদ আলমকে রক্ষার জন্য সহকর্মি সাংবাদিকদের প্রাণান্তকর চেষ্টা ব্যর্থ চেষ্টা তখনও মঞ্চে বসে বসে পুরো ঘটনা অবলোকন করছিলেন নেতারা। অসহায় ফরিদ আলমকে বামে, ডানে, পিছনে, সামনে সবদিক থেকে আক্রমণ করা হলেও নেতারা বসে বসে শুধু দেখছিলেন। ফরিদ আলমকে মারপিট করার সময় একাধিকবার হলের লাইট বন্ধ করে দিয়ে তাকে মারধর করা হয়। পরে কয়েকজন তাকে হল থেকে বের করে আহত ফরিদ আলমকে অনেকদুর পর্যন্ত এনে রেখে যান।


যে কারণে ক্ষিপ্ত ছিলেন আব্দুস সোবহান গোলাপ : এই ঘটনার আগেরদিন এনসিএন টিভিতে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমান নিয়ে ফরিদ আলমের একটি রিপোর্ট নিয়ে গোলাপ উষ্মা প্রকাশ করেন সংবাদ সম্মেলনেই। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটি যে বাংলাদেশের কোনো কাজেই আসছে না আর সে কারণেই বিমানটি প্রধানমন্ত্রী নিয়ে এসেছেন সে কথা গোলাপ নিজেই বলেছিলেন আরেকটি সংবাদ সম্মেলনে। এনসিএন তার বলা কথাগুলোর রেকর্ডই প্রচার করেছিলো। ভাইরাল হয়ে প্রায় আট মিলিয়ন দর্শক খবরটি দেখে। ৭০ হাজার মানুষ সেটি শেয়ার করে সোস্যাল মিডিয়ায়। ফলে তাকে তার অবিবেচক কথার জন্য নানামুখী প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় বিভিন্ন মহল থেকে। এ জন্যই গোলাপ ফরিদ আলমের উপর ক্ষুব্ধ হন, যার বহি:প্রকাশ ঘটে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই।

আহত ফরিদকে হাসপাতালে নেয়া হয় এ্যাম্বুলেন্সে : আহত ফরিদ বহু কষ্টে হেঁটে হেঁটে জ্যাকসন হাইটস এ তার অফিসে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং এ্যাম্বুলেন্স কল করেন। পরে তাতে অফিসেই প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে নিকটস্থ এলমহার্স্ট হাসপাতালে নেয়া হয়। রাতভর তার শরীরের বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা করা হয়। পরে তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হলেও এখনও তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি। তিনি মেন্টাল ট্রমায় ভূগছেন বলেও জানান। তার সাথে অন্য দুএকজন সাংবাদিকও সেদিনের ঘটনায় মানসিক চাপে আছেন। তাদের দীর্ঘ প্রবাস জীবনের সাংবাদিকতার জীবনে কখনো এমন ঘটনার মুখোমুখি তারা হননি বলে জানান।

মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের চেষ্টা ও মানিব্যাগ চুরি : ঘটনার সময় বারবার ফরিদ আলমের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয়। মোবাইল ফোন তার কব্জায় রাখতে পারলেও েেকউ একজন তার পেছন পকেট থেকে মানিব্যাগ টি নিয়ে নেয়। যেখানে তার প্রয়োজণীয় কিছু ছোট কাগজ, ড্রাইভিং লাইসেন্স , আইডি, ব্যাংক কার্ডসহ অফিস স্টাফদের ওই সপ্তাহের বেতনসহ প্রায় চার হাজার ডলার ছিলো। যে অর্থ তিনি ঘটনার দিনই দুপুরের দিকে ব্যাংক থেকে উত্তোলন করেছিলেন।

সাংবাদিকের প্রতিবাদ ও আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠান বর্জন : এই ঘটনায় নিউইয়র্কের সাংবাদিক সমাজ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। তারা পরেরদিন জ্যাকসন হাইটস এর ডাইভারসিটি প্লাজায় প্রতিবাদ সমাবেশ করে। সাংবাদিকরা নি:শর্ত ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি দোষীদের বিরদ্ভে সাংগাঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। অন্যথায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সব ধরনের খবর বর্জনের ঘোষণা দেন, যা এখনও অব্যাহত আছে।

ঘটনার দায় কার : এই ঘটনার জন্য কি ফরিদ আলমের কাছে ফোন করে সহানুভূতি জানিয়েছেন আব্দুস সোবহান গোলাপ, ড. সিদ্দিকুর রহমান বা অন্য কেউ । না । আমরা যতটুকু জানি এখনও পর্যন্ত নুন্যতম ভদ্রতার খাতিরেও তারা সহানুভূতি দেখানোর প্রয়োজন বোধ করেন নি আওয়ামী লীগের কোনো তরফ থেকেই।

যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা : ঘটনার পরদিনই যুক্তরাষ্ট্র স্টেট ডিপার্টমেন্ট এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি দেয়। সেখানে তারা জানায়, সাংবাদিক নির্যাতন বা তার উপর হামলা কোনোভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়। একই সাথে বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকের স্বার্থ নিয়ে কাজ করে এমন অনেকগুলো সংগঠন ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। পাশাপাশি তারা ঘটনার আগের পরে তথ্যগুলো সংগ্রহ করে একটি প্রতিবেদন তৈরির কাজও করছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে আক্রান্ত সাংবাদিক ফরিদ আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, যৌক্তিক প্রশ্ন করার অধিকার আমার রয়েছে। তাদের উত্তর না দেবার অধিকারও রয়েছে। কিন্তু সংবাদ সম্মেলন ডেকে প্রশ্ন করার অপরাধে কাউকে মারধোর করা মেনে নেয়া যায় না।

advertisement

Posted ৭:০৪ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১

Weekly Bangladesh |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
Dr. Mohammed Wazed A Khan, President & Editor
Anwar Hossain Manju, Advisor, Editorial Board
Corporate Office

85-59 168 Street, Jamaica, NY 11432

Tel: 718-523-6299 Fax: 718-206-2579

E-mail: [email protected]

Web: weeklybangladeshusa.com

Facebook: fb/weeklybangladeshusa.com

Mohammed Dinaj Khan,
Vice President
Florida Office

1610 NW 3rd Street
Deerfield Beach, FL 33442

Jackson Heights Office

37-55, 72 Street, Jackson Heights, NY 11372, Tel: 718-255-1158

Published by News Bangladesh Inc.