বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৩
ওয়াশিংটন দূতাবাসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন।
যথাযোগ্য মর্যাদায় উৎসবমুখর পরিবেশে নিউইয়র্ক সিটিসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সিটিতে প্রবাসী বাংলাদেশীরা বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস উপদযাপন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ: ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস, নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন ও বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল বিজয় দিবস উদযাপনের উদ্দেশ্যে পৃথক পৃথক কর্মসূচির আয়োজন করে। এসব কর্মসূচির মধ্যে ছিল জাতীয় পতাকা উত্তোলন, পুস্পস্তবক অর্পণ, জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন, প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বাণী পাঠ, মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী সময়ে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশ দূতাবাস
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহিদের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার নতুন শপথ গ্রহণের মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর শনিবার ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে যথাযোগ্য মর্যাদায় ৫৩তম বিজয় দিবস উদযাপিত হয়েছে।
দূতাবাসের দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে ছিল চ্যান্সারি প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ, সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন এবং বিশেষ মোনাজাত। সন্ধ্যায় দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিজ আফরিন আক্তার এবং এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান।
আফরিন আক্তার তার বক্তব্যে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের অসাধারণ অগ্রগতির প্রশংসা করেন এবং উল্লেখ করেন বাংলাদেশের এই অভিযাত্রায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী। তিনি বলেন, একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যে অগ্রগতি অর্জন করেছে তা সত্যিই অসাধারণ। মার্কিন উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত ৫২ বছরে বাংলাদেশ লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে বের করে এনেছে । তিনি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্কের কথাও উল্লেখ করেন।
বিভিন্ন সময়ে তার বাংলাদেশ সফরের কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রতিটি সফরেই তিনি বাংলাদেশি জনগণের শক্তি, সহনশীলতা ও দৃঢ়তার কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, যেসব গুণাবলী বাংলাদেশের মুক্তির পথ দেখিয়েছে সেগুলোই বাংলাদেশকে তার কাঙ্খিত অভিযাত্রার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। রাষ্ট্রদূত ইমরান তার স্বাগত বক্তব্যে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। তিনি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহিদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের জন্য তাদের প্রতিও গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। এই সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহী বলেও তিনি জানান। পরে একটি বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় যেখানে দূতাবাসের কর্মকর্তা ও তাদের সহধর্মিণী এবং কর্মচারীবৃন্দ প্রথমে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন।
বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন
গত ১৬ ডিসেম্বর শনিবার যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসবমূখর পরিবেশে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে মহান বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রবাসী বাংলাদেশী। সন্ধ্যায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্ম-উৎসর্গকারী বীর শহীদগণের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন ও তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়। আলোচনা পর্বে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তাঁরা তাঁদের অর্জিত অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্পসমূহের বাস্তবায়নে স্ব স্ব ক্ষেত্রে অবদান রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সমাপনী বক্তব্যে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে রূপকল্প ২০২১, রূপকল্প ২০৪১ ও ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। ইতোমধ্যে আমরা স্বল্পোন্নত দেশের ক্যাটেগরি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করেছি যা জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের মর্যাদা ও সক্ষমতার স্বাক্ষর। বিগত কয়েক বছরে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন, মেট্রো রেল ও দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল নির্মাণসহ নানাবিধ মেগা প্রজেক্টের বাস্তবায়ন আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতার অন্যতম নির্দেশক।বাংলাদেশ আজ ৩৫ তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।”
রাষ্ট্রদূত মুহিত বলেন, বাংলাদেশে দারিদ্র হার ২০২২ সালে কমে হয়েছে ৫ শতাংশ যা ২০১০ সালে ছিল ১১.২ শতাংশ। রাষ্ট্র হিসেবে সামষ্টিক অর্থনীতিতে সক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সকলের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিতকরনে দিয়েছেন বিশেষ অগ্রাধিকার। প্রবাসী বাংলাদেশীদৈর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জনবহুল বাংলাদেশের প্রধান শক্তি তাঁর জনগণ আর প্রবাসীরা দেশের মায়া পেছনে ফেলে রাত দিন কষ্ট করে বাংলাদেশের উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছেন। প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার অন্যতম চালিকাশক্তি। এ প্রসঙ্গে তিনি বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য প্রবাসীদের আহ্বান জানান।প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদানের পাশাপাশি আপনাদের দেশের সংস্কৃতি ও দেশের ইতিহাসকে লালন করতে হবে যাতে বিদেশে জন্মানো এবং বড় হওয়া আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন এই সংস্কৃতিকে ধারণ করে আর প্রকৃত ইতিহাস জেনে বড় হয়। আলোচনা পর্ব শেষে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশনা করেন নিউইয়র্কস্থ বহ্নিশিখা সংগীত নিকেতনের একদল শিল্পীবৃন্দ।
বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল
গত ১৬ ডিসেম্বর শনিবার নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে যথাযথ মর্যাদা ও উৎসাহ উদ্দীপনায় মহান বিজয় দিবস উদযাপন করে। জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। কনসাল জেনারেল মোঃ নাজমুল হুদা উপস্থিত অতিথিবৃন্দসহ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ ১৫ আগস্টের সকল শহিদ ৭১-এর সকল শহিদ, জাতীয় চার নেতা ও শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। কনসাল জেনারেল তাঁর বক্তব্যে বলেন, একটি সুখী, সমৃদ্ধ, শোষণমুক্ত ও বৈষম্যহীন ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। উন্মুক্ত আলোচনায় নিউইয়র্ক এ্যাসেম্বলী মেম্বার ক্যাটালিনা ক্রুজ, মুক্তিযোদ্ধাগণ এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সকল শহিদ সদস্য, ৭১-এর সকল শহিদ, শহিদ বুদ্ধিজীবী এবং শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।
Posted ১২:৩৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh