বাংলাদেশ অনলাইন : | বৃহস্পতিবার, ০২ জুন ২০২২
যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশে স্কুলে আগ্নেয়াস্ত্রধারীর প্রবেশ ও নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ছাত্র-শিক্ষক হত্যার ঘটনা নতুন নয়। বছরের পর বছর ধরেই ঘটছে। নিস্পাপ শিশুরা প্রাণ হারাচ্ছে ঘাতকের গুলিতে, শিক্ষকরা বাদ পড়ছে না। সবচেয়ে হতবাক করার মতো বিষয় হচ্ছে, ঘাতকরা প্রায় ক্ষেত্রেই তারা যে স্কুলকে তাদের হত্যার লীলাভূমি হিসেবে নির্ধারণ করছে, তারা ওই স্কুলের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে জড়িত ছিল। অতি সাম্প্রতিক ভয়াবহ ঘটনাটি ঘটেছে টেক্সাসের প্রত্যন্ত এক জনপদ উভালেড এর রব এলিমেন্টারি স্কুলে।
ঘাতক সালভাদর রামোস তার শৈশবে ওই স্কুলেরই ছাত্র ছিল। সে সহসা স্কুলে প্রবেশ করে ১৯ শিশুছাত্র ও দু’জন শিক্ষককে হত্যা করে। এক দশক আগে কানেকটিকাটের স্যান্ডি হুক এলিমেন্টারি স্কুলে যে ঘাতক গুলি চালিয়ে ২০ ছাত্রসহ মোট ২৬ জনকে হত্যা করেছিল, তার মা ওই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। স্কুলের সবকিছু তাদের চেনা, নখদর্পনে। অতএব তারা মানসিকভাবে অসুস্থ হলেও স্কুলের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্টতা মুছে যাওয়ার কারণ নেই। কিন্তু স্কুলে ছাত্রশিক্ষকদের নিরাপত্তা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন বার বার কেন ব্যর্থ হচ্ছে তা বিরাট এক প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। দেশের সিংহভাগ মানুষ মনে করে যে যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্র কেনা ও বহন করার আইন এত সহজ, খুব সাধারণ আইনি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে যে কেউ আগ্নেয়াস্ত্রের মালিক হতে পারে।
সবচেয়ে শক্তিশালী যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পারমাণবিকসহ সবধরণের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে সাফল্য দেখালেও নিজ দেশের অভ্যন্তরে বন্দুক সহিংসতা ঠেকাতে পারছে না। এর কারণ বেসরকারিভাবে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার শিথিল আইন। ন্যাশনাল রাইফেলস এসোসিয়েশন এত শক্তিশালী একটি সংগঠন, তারা তাদের শক্তিবলে যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশে কংগ্রেসে উত্থাপিত বিল পাস হওয়ার পথে বার বার অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং কখনও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত কোনো বিল আইনে পরিণত হতে পারেনি। এক একটি ভয়াবহ ঘটনা ঘটে, বহু সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটে, প্রেসিডেন্ট ও প্রভাবশালী সকল রাজনীতিবিদ নিহতদের জন্য শোক ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থান গ্রহণের কথা জানান। কিন্তু ক’দিন পরই তারা তা ভুলে যান। এভাবে চলতে পারে না।
এর রাশ টানা আবশ্যক হয়ে পড়েছে। যদি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে অদূর ভবিষ্যতে অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসের কবলে পড়তে হবে পারে এবং সে ধরনের ভয়ঙ্কর একটি পরিস্থিতি কাউকে নিস্তার দেবে না। টেক্সাসের ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর পুলিশ গণমাধ্যমকে জানিয়েছে যে এক সপ্তাহ আগে ঘাতক সালভাদর রামোস হিউস্টনের আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রয়ের দোকান থেকে অনলাইনে ৩৭৫ রাউন্ড বুলেটসহ রাইফেলটি কিনেছিল। তার গাড়িতে আরেকটি রাইফেল ছিল। যে রাইফেলটি গুলিবর্ষণে ব্যবহৃত হয়েছে সেটি রামোসের মৃতদেহের কাছে পড়েছিল। তার সঙ্গে ৩০টি করে বুলেট ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন সাতটি ম্যাগাজিন ছিল। স্কুলে হত্যাকান্ড চালাতে যাওয়ার আগে ঘাতক তার দাদিকে গুলি করে আহত করেছে।
নিউইয়র্ক টাইমস ১৯৭০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলে ১৮৮টি গুলিবর্ষণের ঘটনার উল্লেখ করেছে, যেসব ঘটনায় ছাত্রসহ নিহত হয়েছে কমপক্ষে দু’শ জন। এক সমীক্ষা অনুযায়ী রোগব্যাধি ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে বেশি সংখ্যক শিশু-কিশোরের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে, যা সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু মৃত্যুর চেয়ে বেশি। এটি সবার জানা যে যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে এবং সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো করোনা মহামারীর সময়েও গত দুই বছরে আগ্নেযাস্ত্র বিক্রয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পাশাপাশি বৃদ্ধি পেয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে হত্যার ঘটনা। এ অবস্থার আশু সমাধান প্রয়োজন।
Posted ৭:৫৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ জুন ২০২২
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh