বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৫ নভেম্বর ২০২১
যুক্তরাষ্ট্রমুখী হাজার হাজার বিদেশি দলবদ্ধভাবে পায়ে হেঁটে মেক্সিকো অতিক্রমের সময় নিরাপত্তা রক্ষীদের বাধার সম্মুখীণ হলে মেক্সিকোতে অবস্থান করার ভিসার বিনিময়ে দলবদ্ধ যাত্রা বন্ধ করতে সম্মত হয়েছে। রয়টার্সের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, এসব বিদেশি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করার জন্য মেক্সিকো হয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার সময় অপরাধী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে সম্ভাব্য নিগ্রহ থেকে বাঁচতে দলবদ্ধভাবে চলতে থাকে। এ ধরনের কয়েক হাজার বিদেশি মেক্সিকোর উত্তপ্ত ও আদ্র উপকূলীয় চিয়াপাস স্টেটের তাপাচুলা শহর থেকে ত্রিশ মাইল পায়ে হেঁটে মাপাসতেপেক শহরে পৌছার পর মেক্সিকো কর্তৃপক্ষের বাধার মুখে পড়ে আলোচনায় বসে।
দ
লের সংগঠক লুই গর্সিয়া রয়টার্সকে বলেন, মেক্সিকো সরকারের সঙ্গে তাদের সমঝোতা হয়েছে যে তারা তাদের দেশে প্রবেশকারী বিদেশিদের বিভিন্ন স্টেটে অবস্থানের জন্য ভিসা প্রদান করবে, যদি তারা ভবিষ্যতে দলবদ্ধভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তের উদ্দেশ্যে যাত্রা না করার প্রতিশ্রুতি দান করে। মেক্সিকোর ন্যাশনাল মাইগ্রেশন ইন্সটিটিউট এক বিবৃতিতে বলেছে যে, অভিভাসন প্রত্যাশী বিদেশিরা তাদেরকে মানবিক ভিসা প্রদান করে মেক্সিকোতে অবস্থান করার ব্যাপারে একমত হয়েছে।
মেক্সিকো এসব বিদেশিকে দেশটির সোস্যাল ইন্সটিটিউট পরিচালিত আশ্রয় কেন্দ্রে বসবাসের প্রস্তাব দিয়েছে। এজন্য মেক্সিকোর যে স্টেটগুলোর কথা সরকার উল্লেখ করেছে, সেগুলো সেন্ট্রাল ও সাউদার্ন মেক্সিকোতে অবস্থিত। এলাকাগুলো গুয়েতেমালা ও যুক্তরাষ্ট্র সীমান্ত থেকে বেশ দূরে। দলবদ্ধ বিদেশিরা চলতি মাসের প্রথম দিকে তাদের পদযাত্রার দুটি উদ্যোগ নিয়েছিল, তারা অভিযোগ করেছে যে, তাপাচুলা শহরটি রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য এক উন্মুক্ত কারাগার ছিল। কারণ তাদেরকে দারিদ্র পীড়িত সীমান্তবর্তী শহর ত্যাগ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। এসব অভিভাবসন প্রত্যাশীর মধ্যে বহুসংখ্যক সেন্ট্রাল আমেরিকান অথবা হাইতির নাগরিক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করার প্রচেষ্টাকারী হাইতির নাগরিকদের সংখ্যা গত অক্টোবর মাসে এক লাখ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তাদের মধ্যে সাউথ আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারী হাইতির লোকজনও ছিল, যারা এখন সেন্ট্রাল আমেরিকা ও মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পথ ধরেছে।
শিশুদের বিচ্ছিন্ন করা ইমিগ্রান্ট পরিবারগুলো ক্ষতিপূরণ পাবে
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়াদে সীমান্ত পথে অনুপ্রবেশ বন্ধ করার “জিরো টলারেন্স” কৌশল হিসেবে যেসব ইমিগ্রান্ট পরিবারের সঙ্গে শিশু সন্তান ছিল, সেসব শিশুদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করার কারণে প্রশাসনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে সাড়ে চার লাখ ডলার থেকে দশ লাখ ডলার পর্যন্ত পরিশোধ করা হতে পারে। চলতি মাসের গোড়ার দিকে নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ৫,৬০০ এর বেশি শিশুকে মেক্সিকো সীমান্তে তাদের পরিবারের নিকট থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। ট্রাম্প প্রশাসনের এই নীতিকে অমানবিক ও জঘন্য হিসেবে বর্ণনা করে আমেরিকার মানবাধিকার ও ইমিগ্রান্ট অধিকার সংগঠনগুলো সোচ্চার হয়ে ওঠেছিল এবং এক পর্যায়ে প্রশাসনকে এ নীতি অনুসরণ পরিহার করতে হয়েছিল। শিশুদের শুধু পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করাইু নয়, বিচ্ছিন্ন শিশু এবং শিশুদের শানক্তকরণ নিয়েও সমস্যা হয় এবং কিছু শিশুকে পরবর্তী সময়ে পাওয়া যায়নি বলে অনেক ইমিগ্রান্ট পরিবার অভিযোগ করেছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো প্রশাসনের এই অমানবিক সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে অনেকগুলো মামলা দায়ের করেছিল তা আলোচনার মাধ্যমে নিস্পত্তি করার উদ্যোগ গ্রহণ করে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বাইডেন প্রশাসন এবং প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সাংবাদিক সম্মেলনে ফক্স নিউজের রিপোর্টার তাঁকে প্রশ্ন করেন যে, বিচ্ছিন্ন পরিবারগুলোকে পরিবার পিছু সাড়ে চার লাখ অথবা সম্ভবত দশ লাখ ডলার হারে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হচ্ছে মর্মে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত খবর সত্য কিনা। প্রেসিডেন্ট উত্তর দেন যে, “এটি সত্য নয়, এমনটি হতে যাচ্ছে না।” তবে হোয়াইট হাউজের এক মুখপাত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে কিছু পরিবার ক্ষতিপূরণ হিসেবে স্বল্প পরিমাণ অর্থ পেতে পারে।
উল্লেখ্য, ইমিগ্রেশন প্রশ্নে ট্রাম্প প্রশাসনের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করার ফলে মেক্সিকো সীমান্তে বর্ডার পেট্টোল এজেন্টরা অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমকারী বয়স্ক বিদেশিদের আটক করে তাদের শিশু সন্তানদের যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় শিবিরে পাঠিয়ে দেয়। এর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলো যে মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করেছেন এবং তাদের সন্তানরা যে ক্ষতির সম্মুখীণ হয়েছে, সেজন্য প্রশাসনের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবী করে। সাংবাদিক সম্মেলনে জো বাইডেনের বক্তব্যের পর ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিসের আইনজীবীরা আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের আইনজীবীসহ ক্ষতিগ্রস্থ ইমিগ্রান্ট পরিবারগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আলোচনা শুরু করেন বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় তার উপর প্রথম রিপোর্ট করে সিএনএন। পরবর্তীতে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর অ্যান্থনি রোমেরো এক বিবৃতিতে বলেন, প্রেসিডেন্টের মন্তব্য এবং কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া নিস্পত্তি আলোচনাকে প্রভাবিত বা ব্যাহত করতে পারে।
উল্লেখ্য, ট্রাম্প প্রশাসন ২০১৮ সালের জুলাই মাসে বিচ্ছিন্ন পরিবারগুলোতে দ্রুত পুনর্মিলিত করার ব্যবস্থা করতে পারেনি। এখনো আনুমানিক এক হাজারের অধিক পরিবার তাদের সন্তানদের থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বিচ্ছিন্ন শিশুদের মা-বাবাকে অনেক ক্ষেত্রে তাদের নিজ নিজ দেশে ডিপোর্ট করা হলেও তাদের শিশুসন্তানরা যুক্তরাষ্ট্রেই রয়ে গিয়েছিল। কোর্ট রেকর্ড অনুসারে তিনশ’র অধিক বিচ্ছিন্ন শিশুর মা-বাবাকে এখন পর্যন্ত শণাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
Posted ১০:৫৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৫ নভেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh