বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৩
সেমিনারে বক্তব্য রাখছেন অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান। পাশে অতিথিবৃন্দ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার অন্যতম রূপকার, বিশিষ্ট রাষ্ট্রচিন্তক প্রয়াত সিরাজুল আলম খানের রাজনৈতিক দর্শনের উপর এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে নিউইয়র্ক সিটিতে। সেমিনারে বক্তাগণ বলেন, সিরাজুল আলম খান ছিলেন বাংলাদেশের রাজনীতির রহস্য পুরুষ। কিন্তু স্বাধীনতার বায়ান্ন বছর পরও উদঘাটিত হয়নি এই রহস্য। সময় এসেছে এই রহস্য উন্মোচন করে তাকে মূল্যায়িত করার।
‘বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে সিরাজুল আলম খানের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে সিরাজুল আলম খান স্মৃতি পরিষদ। গত ১৭ ডিসেম্বর জ্যাকসন হাইটসের একটি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সিরাজুল আলম খানের জীবন ও আদর্শের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচন করেন বক্তাগণ।
সেমিনারের আহবায়ক অধ্যাপক ড. মহসীন পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব শাহাবুদ্দিনের পরিচালনায় সেমিনারে ড. সুফিয়ান এ খন্দকার প্রধান অতিথি এবং মুহাম্মদ ফজলুর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সেমিনারে বাংলাদেশী কমিউনিটির বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন এডভোকেট মুজিবুর রহমান, ডা: মুজিবুল হক, লিগ্যাল কনসালট্যান্ট মুজিবুর রহমান, মতিয়ুর রহমান, মোল্লাহ মনিরুজ্জামান, মুর্শেদ আলম, হাকিকুল ইসলাম খোকন, অধ্যাপিকা হোসনে আরা, হাজী আনোয়ার হোসেন লিটন, জামান তপন, আলী ইমাম শিকদার, মোহাম্মদ হোসেন খান, শহীদ রেজা, নাসির আলী খান পল, সাংবাদিক মঈনুদ্দীন নাসের, মোজাহিদ আনসারি, ও মোশারফ খান ।
আলোচকগণ ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণের পাশাপাশি সিরাজুল আলম খানের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অনেক অজানা তথ্য তুলে ধরেন। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধে সিরাজুল আলম খানের অসামান্য অবদান বাংলাদেশের ইতিহাসে তাকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে বলে তারা মন্তব্য করেন। বাংলাদেশের বর্তমান ইতিহাসের সমালোচনা করে আলোচকগণ বলেন, দু:খজনকভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করে সবকিছুকে এক ব্যক্তি ভিত্তিক করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে যাদের অবদান রয়েছে তাদের সকলকে যার যার অবদান অনুযায়ী ইতিহাসে স্থান করে দেয়ার আহবান জানান বক্তাগণ।
তারা বলেন, সিরাজুল আলম খানকে রাষ্ট্র যথাযথ মর্যাদা প্রদর্শন করেনি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মুজিব বাহিনী গঠন করে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। আন্দোলন ও সংগ্রামের নেপথ্য নায়ক সিরাজুল আলম খানকে বাদ দিয়ে স্বাধীনতার ইতিহাস হবে অসম্পূর্ণ । আজকের ইতিহাস বিকৃতির যুগে এই কথাগুলো জাতির সামনে তুলে ধরতে হবে। স্বাধীনতার পর তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ গঠন করেছিলেন। নবগঠিত দেশে বৃটিশের রেখে যাওয়া আমলাতান্ত্রিক সমাজের পরিবর্তন করে গরীব মেহনতি মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে একটি শ্রেণিহীন ও শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে। সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে ভূল ভ্রান্তি হয়েছে। তাই বলে তার দেশপ্রেম বা নেতৃত্বের ব্যাপারে প্রশ্ন তোলা অবান্তর। গরীব মেহনতি মানুষের মুক্তি গণতান্ত্রিক চর্চার জন্য, বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠনসহ বিভিন্ন সময়ে তার চিন্তাধারা নিয়ে তিনি মূল্যবান বইপত্র লিখে গেছেন। এইগুলো সংগ্রহের মাধ্যমে দেশ ও জাতির স্বার্থে গবেষণা করার আহ্বান জানান।
সেমিনারের প্রধান অতিথি ও মূল আলোচক ড, সুফিয়ান খন্দকার সিরাজুল আলম খানকে বাংলাদেশ সৃষ্টির গুরুত্বপূর্ণ কারিগর বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, সিরাজুল আলম খান ১৯৬২ সালে আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের সাথে প্রথম স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস গঠন করেন। তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান এর মধ্য দিয়ে ১৯৬৪ সালে ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসেন। এর আগে ১৯৬৩ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনকালে শেখ মুজিবুর রহমানের নৈকট্য লাভ করেন সিরাজুল আলম খান। তিনিই শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন বলে জানান ড, সুফিয়ান খন্দকার। পরবর্তীতে উনসত্তরের গণ অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন তিনি। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও আকাংখার সঙ্গে বাস্তবতার অমিল তাকে রাজনীতির ভিন্ন ধারায় নিয়ে যায়। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল গঠনের নেপথ্যের মূল কারিগর ছিলেন সিরাজুল আলম খান। সেমিনার শেষে সবাইকে ধন্যবাদ জানান ড. মহসীন পাটোয়ারী।
Posted ১২:৪৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৩
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh