বাংলাদেশ রিপোর্ট : | বৃহস্পতিবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২১
আমেরিকান মুসলিম সেন্টার এর উদ্যোগে প্রতিবছরের মত এবারও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সের আগ্রা প্যালেসে অনুষ্ঠিত হয়েছে।সীরাত সম্মেলন সিরাত সম্মেলনে ইসলামী চিন্তাবিদ ও উলামাবৃন্দ বলেন, সমস্যা ও চরম সংকটে নিপতিত বর্তমান বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার মূলমন্ত্র হচ্ছে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পবিত্র কোরআন এবং তার প্রেরিত মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর আদর্শ। এর মাঝেই নিহিত রয়েছে মানবতার মুক্তি। তারা আরো বলেন, বিশ্ব মুসলিম আজ অধ:পতিত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, তার মূল কারণ তারা মহানবীর আদর্শ পরিত্যাগ করে মানব রচিত আদর্শকে গ্রহণ করে নিজেদের বিকাশ ঘটাতে চেয়েছে। কিন্তু আজ এটা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে মানুষের মনগড়া মতবাদ কখনো মানুষের কল্যাণ করতে পারে না এবং চিরস্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করতে পারে না।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট সমাজসেবক, ফার্মাসিষ্ট মসজিদ দাওয়াহর চেয়ারম্যান আমির খান। সভাপতিত্ব করেন নিউইয়র্কের স্বনামধন্য আলেমে দ্বীন, জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের ইমাম, আমেরিকান মুসলিম সেন্টার এর চেয়ারম্যান মির্জা আবু জাফর বেগ। প্রধান আলোচক ছিলেন যুক্তরাজ্য থেকে আগত বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার টিভি ওয়ান ইউকে’র ডাইরেক্টর, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এসেক্স জামে মসজিদ এর গ্রান্ড ইমাম খতীব ও প্রিন্সিপাল শাইখ মাহমুদুল হাসান। বিশেষ বক্তা ছিলেন মাওলানা আব্দুললাহ ইমাম সেলডেন জামে মসজিদ, শাইখ শামসি আলি ইমাম জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার, মুফতি মোজাম্মেল হোসেন ফারুকি ইমাম ইসলামিক সেন্টার অব ট্রিপলেকস টেক্সাস, ডঃ মুফতি ফারহান ইমাম এন্ড এক্সিকিউটিভ ডাইরেকটর ইসলামিক সেন্টার অব লং আইল্যান্ড, নিউইয়র্ক দারুল কোরআন ওয়াস সুন্নাহর মুহাদদিস ইমাম হাম্মাদ আহমেদ, মুফতি আব্দুল মালেক ইমাম বেলাল মসজিদ ও আমীর সুন্নাতি হজ্জ এন্ড উমরাহ গ্রুপ এবং প্রধান উপদেষ্টা আমেরিকান মুসলিম সেন্টার, ওয়াশিংটন থেকে আগত বিশিস্ট আইটি ইঞ্জিনিয়ার ইসলামিক স্কলার ও লেখক আবু সাঈদ মাহফুজ ।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর আদর্শই মানবতার মুক্তির একমাত্র পথ যা বিশ্ব শান্তি নিশ্চিত করতে পারে। মানবজাতির ত্রাণকর্তা হিসেবে বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.) এর আগমন ঘটেছিল।তিনি ছিলেন মানব জীবন ব্যবস্থার মহান শিক্ষক ও মডেল ।তিনি এ জীবন ব্যবস্থা প্রচার করেছেন, শিক্ষাদান করেছেন, নিজে এর অনুসরণ ও প্রয়োগ করে নমুনা স্থাপন করেছেন। সমগ্র মানবজাতির জন্য শান্তি, কল্যাণ, নিরাপত্তা ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একমাত্র অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় আদর্শ রেখে গেছেন যা কেয়ামত পর্যন্ত চিরভাস্বর ও অমলিন থাকবে। রাসূল (সাঃ) তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সর্বযুগের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ একটি মানবকল্যাণমূলক রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।
প্রধান আলোচক বলেন, হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন সর্বযুগের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। পৃথিবীতে তিনি আগমন করেছেন মানবজাতির মুক্তির দূত হিসেবে। তার আদর্শ অনুসরণের মধ্যেই নিহিত আছে সকল মানুষের মুক্তি ও কল্যাণ। তার আদর্শ অনুসরণ করলে সকল ধর্মের মানুষ সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। মহানবী (সা.) এর আদর্শ ছিল মহান আল্লাহ তায়ালার নাজিলকৃত সর্বশেষ আসমানি কিতাব আল-কুরআন। বর্তমান অশান্ত পৃথিবীতে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন এবং রাসূল (সা.) এর সুন্নাহর কোন বিকল্প নেই। মানুষের রচিত কোন মতবাদই পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না। তাই রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক মুক্তি ও শান্তির পথ খুঁজে পেতে গোটা মানবজাতিকে কুরআন ও সুন্নাহর পথে ফিরে আসতে হবে। তিনি জীবনের সকল ক্ষেত্রে রাসূল (সা.) আদর্শ অনুসরণ করতে সকলের প্রতি আহবান জানান।
বিশেষ আলোচক মুফতি আব্দুল মালেক রাসুল (দঃ) এর বিদায় হজ্জের ভাষণের তাৎপর্য এবং ২০২২ সালের হজ্জ নীতি ঘোষনা করেন। বক্তারা বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনাদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে ইহকাল ও পরকাল সুন্দর করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মুহাম্মদ (সা.) শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্য নয় তিনি সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য। বিশ্বের চলমান যেকোন সংকট সমাধানে মহানবীর আদর্শ অনুস্মরণ অনস্বীকার্য। বক্তারা রাসুলের (সা.) জীবনাদর্শ প্রত্যেক মুসলমানকে অবশ্যই অনুসরণ করার পাশাপাশি বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অন্যান্য ধর্মের মানুষদের কাছে তা পৌছে দেওয়ার আহ্বান জানান। বক্তারা বলেন, মুখে মুখে রাসুলের উম্মত দাবী করলে হবে না। তাঁর সুন্নাহ অনুসরণ করতে হবে। ইমাম দেলোয়ার হোসাইন বলেন, জীবনকে সুন্দর করতে আর শান্তিময় জীবনের জন্য আল্লাহ-রাসুল (সা.)-কে সমানভাবে ভালবাসতে হবে। তাঁর ভালবাসা পেলে হলে মহব্বতের সাথে আল্লাহ-রাসুল (সা.)-এর আদেশ-নিষেধ মানতে হবে। তারা বলেন, রসুল (সা.) হচ্ছেন পৃথিবীর সকল মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মানুষ। তাঁর সুন্নাহ তথা জীবনাচরিত পালনের মধ্য দিয়ে প্রত্যেকেই আল্লাহতায়াল সন্তুষ্ট লাভ করতে হবে। আর এজন্য নবীকে সত্যিকারার্থেই জানতে হবে, বুঝতে হবে।
সেই সাথে আল্লাহর কথা মানতে হবে। তবেই না ইহকাল-পরকাল শান্তিময় হবে। আজকের তরুণ প্রজন্মের কাছে রাসুল (সা.)-এর আদর্শ পৌছে দিতে হবে। বক্তারা উল্লেখ্য করেন, মহান আল্লাহর সুবিচার তার সকল সৃষ্টির জন্য। তিনি মানুষে মানুষে ভেদাভেদ দূর করার জন্য যুগে যুগে নবী রাসুলদের প্রেরণ করেছেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে বিশেষভাবে প্রেরণ করেছেন তার সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য এবং তিনি শুধু ইসলামের অনুসারীদের নবী হিসেবে তাকে পাঠানটি, তাকে মানবজাতির নবী হিসেবে পাঠিয়েছেন। তারা বলেন, ইসলামে নারী সমাজকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয় বলে পাশ্চাত্যে প্রচার করা হয় অথচ ইসলাম নারীকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে, স্বামীর সম্পদের অংশীদার করে এবং স্বামীর উপর স্ত্রীর অধিকারের স্বীকৃতি দিয়ে। তারা বলেন, অমুসলিম প্রধান পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি যে সংকট সৃষ্টি হচ্ছে তা হলো মুসলিম পরিবারের সন্তানরা আল্লাহ, রাসুল ও ইসলামকে সঠিকভাবে জানতে না পেরে বিপথে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে আগামী মুসলিম প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে তাদেরকে পরিবার ভিত্তিক, মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। অভিভাবকদের আরো সতর্ক হতে হবে সন্তানদের সুশিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য। তারা আমাদের ভবিষ্যত, তাদেরকে ভালোভাবে গড়ে তোলার উপরই নির্ভর করবে আগামী দিনে কিভাবে রাসুলের আদর্শ মানবসমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এই সম্মেলন সফল হয়েছে তারা হলেন, আয়োজক কমিটির প্রধান আহ্বায়ক ও সভাপতি আমেরিকান মুসলিম সেন্টার জনাব মাওলানা হাফেজ রফিকুল ইসলাম ,মির্জা মুশিউর রহমান , মাওলানা আতাউর রহমান জালালাবাদী ,মাওলানা ফয়সল নেওয়াজ ,মাওলানা আব্দুল্লাহ কামাল আজহারী ,মাওলানা মাসুক আহমেদ , মুফতি লুৎফুর রহমান কাছেমী , জাকির হাওলাদার ,মাওলানা মানজুরুল করিম , মফিজুর রহমান , আব্দুল হাদী , খালেদ মাসুদ,বাকি বিল্লাহ, মোস্তাফ। কামাল, নুর আলম, সিদদিকুল ইসলাম, হাফেজ উমর ফারুক প্রমুখ।
Posted ৯:০৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২১
Weekly Bangladesh | Weekly Bangladesh